Cancel Preloader

আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব


ড. সাইফুল ইসলাম
বিশ্ববিখ্যাত আরবি অভিধানে ‘রূহ’ শব্দটির অর্থ করা হয়েছে- রূহু, পরমাত্মা, আল্লাহর সত্তা। আত্মা হলো জীবন্ত মানুষের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্থূল দেহের ইন্দ্রিয়সমূহের বাইরে থেকেও মহান স্রষ্টা আল্লাহর রহস্যময় সৃষ্টি এ আত্মা মানবদেহকে সচল ও কর্মক্ষম রাখে। দেহ থেকে আত্মা বিচ্ছিন্ন হওয়া মাত্র আমরা মৃত বলে গণ্য হই।

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “আত্মা বলতে সত্তাকে বোঝায়। মানুষের চালিকা শক্তিই হলো আত্মা। আত্মা আল্লাহর সত্তা, যা মানবদেহে তাঁরই আমানত।’’ মানুষের মান-সম্মান, ইজ্জত, ভালো-মন্দ সবকিছু এই আত্মার কারণেই। আত্মা মানবদেহের জীবনীশক্তি।

ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, “আত্মা হলো মানুষের দেহ সংশ্লিষ্ট এবং দেহোত্তীর্ণ আধ্যাত্মিক সত্তা।’’ আল্লামা ইকবাল বলেন, “আত্মা হলো এক ধরনের বাস্তব সত্তা, যাকে অতীন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমে জানা যায়।’’ হিন্দু মতে, আত্মা যা মানুষ, পশু, উদ্ভিদ, জল, স্থল, অন্তরীক্ষ, সর্বত্র পরিব্যপ্ত। এই আত্মার অপর নাম পরমাত্মা। পরমাত্মা হলো পরমেশ্বর, যা ঈশ্বরের বিশেষ রূপ। ইহুদি ধর্মের মতে, স্বর্গীয় ভাব বাণী এবং শক্তিমান সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠত্বকে বোঝাতে পবিত্র আত্মা শব্দটি ব্যবহৃত হয়। খ্রিষ্টান মতে, আত্মা স্বর্গীয় সত্তা। সেই জীবনীশক্তি যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই থাকতে হবে। সেই জীবনীশক্তিকে সক্রিয় রাখার জন্য নিঃশ্বাস বা বাতাসের প্রয়োজন। তাই একজন মানুষের মধ্যে কোনো কিছুই মৃত্যুর পর বেঁচে থাকে না। আসলে আত্মা হচ্ছে এমন একটি আধ্যাত্মিক সত্তা, যা দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। শুধু অনুভব করা যায় মাত্র এবং এর দ্বারা আল্লাহর মারেফত লাভ করা যায়।

আত্মা প্রধানত ২ প্রকার, যা প্রতিটি মানুষের মাঝে বিরাজমান। যথা- ১। জীবাত্মা এবং ২। পরমাত্মা। মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ায় পিতার শুক্রাণু থেকে যে সত্তার জন্ম হয় এবং যা দেহের ষড়-রিপুতে পরিণত হয়, এটিই জীবাত্মা। পক্ষান্তরে, মায়ের উদরে সন্তান মানবাকৃতি লাভ করার পর আল্লাহর যে সত্তা রূহ হিসেবে মানবের ভেতর ফুঁকে দেওয়া হয়, এটিই পরমাত্মা। জীবাত্মা তিন ভাগে বিভক্ত। যথা- ১। পশুর আত্মা, ২। হিংস্র জন্তুর আত্মা এবং ৩। শয়তানের আত্মা। পরমাত্মা ২ ভাগে বিভক্ত। যথা- ১। মানবাত্মা এবং ২। ফেরেশতার আত্মা।

সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর পবিত্র বাণী মোবারকে বলেন, “আগুন, পানি, মাটি ও বায়ুর সংমিশ্রণে সৃষ্ট নফস বা জীবাত্মা সর্বদা মানুষকে খারাপ পথে পরিচালিত হওয়ার ইন্ধন যোগায়। পক্ষান্তরে, রূহ বা পরমাত্মা প্রতিনিয়ত তাকে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করে এবং আল্লাহর পথে ধাবিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়।’’ ‘রূহ’ বা ‘আত্মা’ সরাসরি আল্লাহ্ হতে আগত আলমে আমরের বস্তু। মানুষের কাছে প্রেরিত ‘রূহ’ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত বিশেষ। এ কথার প্রমাণ স্বরূপ পবিত্র কোরআনে পাওয়া যায়: “আমি (আল্লাহ্) আদমের মধ্যে আমার রূহ থেকে রূহ ফুঁকে দিবো।’’ (সূরা আল হিজর ১৫: আয়াত ২৯)

আল্লাহর এ আমানত (রূহ) নিজের মাঝে ধারণ করার কারণেই মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী। সুতরাং আল্লাহর এ আমানতকে পরিশুদ্ধ রাখা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। মানবদেহের যেমন রোগ আছে, তেমনি আত্মারও রোগ রয়েছে। একটি দেহ ৪টি উপাদান ও নফসের সমন্বয়ে গঠিত এবং এটির প্রয়োজন খাদ্য ও পানীয়। অনুরূপভাবে আত্মারও খাদ্য প্রয়োজন। আত্মার প্রয়োজনীয় খাদ্য হলো ফায়েজ (প্রেমের) এবং আল্লাহর জিকির। সুফিবাদ বা তাসাউফ হলো আত্মা পরিশুদ্ধ করার সোপান স্বরূপ। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সুফিবাদ সম্পর্কে বলেন- “সুফিবাদ বা তাসাউফ হলো আল্লাহ্ সম্পর্কে জানার বিজ্ঞান। এটি হলো সেই বিজ্ঞান, যার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় জানা যায়। আসলে তাসাউফ একটি মহান আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান।”

মানব ক্বালবে আল্লাহর অস্তিত্ব-ই সুফিবাদের মূল বিষয়। এই বিষয়ে আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন, “আমি তোমাদের দিলে (ক্বালবের ৭ম স্তর নাফসির মাকামে) অবস্থান করি, তোমরা কি দেখ না?” (সূরা আয যারিয়াত ৫১: আয়াত ২১)
পৃথিবীতে আল্লাহর প্রেরিত ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবি ও রাসুল সবাই এলমে তাসাউফ অর্জন করেছিলেন। আল্লাহ্ মানুষের জন্য যেমনি শরিয়তের বিধান দিয়েছেন, তেমনি তিনি মারেফতও দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “ফিকাহ্ (শরিয়ত) মানুষের পার্থিব (বাহ্যিক) দিককে পবিত্র করে এবং তাসাউফ মানুষের বাতেনকে (অভ্যন্তরীণ) পবিত্র করে।” সুফি সাধনার মাধ্যমে মানুষ আধ্যাত্মিক ৫টি ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করতে পারে। কোনো মানুষ যখন ৫টি আধ্যাত্মিক ইন্দ্রিয়কে জাগাতে সক্ষম হয়, তখন এক এক করে তাঁর অন্তরের চোখ, কান এবং জবান খুলে যায়। ধীরে ধীরে এটি অর্জনের মাধ্যমে একজন সুফি সাধক আত্মাকে পরিশুদ্ধির মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিকভাবে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারেন। যখন একজন সুফি সাধক সাধনার উচ্চতর অর্জনে পৌঁছতে পারেন, তখন সে আল্লাহর সাথে বিলীন হতে পারেন। সাধনার এই স্তরকে তাসাউফের ভাষায় বলা হয় ‘ফানাফিল্লাহ্’।

এলমে তাসাউফ শিক্ষার মাধ্যমে হযরত রাসুল (সা.) বর্বর আরবদের সভ্য জাতিতে পরিণত করেছিলেন। হযরত মুসা (আ.) এই শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর লাঠির আঘাতের দ্বারা লোহিত সাগরের এপার থেকে ওপারে রাস্তা তৈরি করেছিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) আগুনের অগ্নিশিখার প্রজ্বলন থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। হযরত সোলায়মান (আ.) বাতাসে চলাচল করতেন। হযরত ঈসা (আ.) মৃতকে জীবিত করতেন এবং অন্ধকে দৃষ্টি দিতেন। বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) অঙুলি মোবারক দেখিয়ে চাঁদকে দ্বি-খণ্ডিত করেছিলেন। বিভিন্ন নবি-রাসুল এবং আউলিয়াদের এরূপ আরও অসংখ্য মুজিজা ও কারামত রয়েছে, যা তাসাউফ চর্চার কারণে সম্ভব হয়েছে। মূলত এই অলৌকিক কারামত তাঁদের মধ্যে উপস্থিত পরমাত্মার কার্যাবলি ছিল, যা কেবল তাসাউফ সাধনার মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে সম্ভব হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে, “যেই মানুষ তাঁর আত্মাকে বিশুদ্ধ রাখে, সে সফল এবং যে মানুষ তার আত্মাকে দূষিত রাখে সে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।” (৯১:৯-১০)
হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “সাবধান হও! নিশ্চয় মানবদেহে এক টুকরো মাংস রয়েছে, যখন সেই মাংসের টুকরোটি বিশুদ্ধ হয়, তখন পুরো দেহ বিশুদ্ধ হয় এবং যদি সেই মাংসের টুকরোটি দূষিত হয়, তখন পুরো শরীর দূষিত হয়ে যায় এবং সেই মাংসের টুকরোটি হচ্ছে ক্বালব (হৃদয়)।” (বোখারী শরীফ)। তাসাউফ হলো ইসলামের প্রাণ এবং শরিয়ত হলো তার দেহ। ২টি জিনিস আছে- একটি হলো শরীর এবং অন্যটি হলো আত্মা। আত্মা ছাড়া দেহের কোনো মূল্য নেই, কারণ আত্মা ব্যতীত দেহ একটি মৃতদেহে পরিণত হয়।

আল্লাহ্কে জানার জন্য তাসাউফ শিক্ষাই সঠিক রাস্তা। মহান সৃষ্টিকর্তা মানবের ক্বালবে অবস্থান করেন। আল্লাহকে জানার জন্য অন্তরকে জাগ্রত করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। আর এই জাগরণের অনস্বীকার্য পন্থা হলো ‘মোরাকাবা’। মোরাকাবা বা ধ্যান হলো প্রত্যয় বিশুদ্ধতার মাধ্যমে অদৃশ্য পর্যবেক্ষণ, যা আল্লাহর সাথে যোগাযোগের রাস্তা তৈরি করে। আধ্যাত্মিক বিকাশ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি ক্বালবের অন্ধকার দূর করার জন্য ধ্যান অপরিহার্য। ইতিহাস থেকে পরিলক্ষিত হয়, সমস্ত নবি ও রাসুল ধ্যান চর্চা করেছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) নবুয়তের পূর্বে ১৫ বছর হেরা গুহায় ধ্যানে নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন। এই ধ্যানের সময়ই তিনি আল্লাহর কাছ থেকে ওহি পেয়েছিলেন। হযরত মুসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.)-সহ সমস্ত মহাপুরুষ ধ্যানের মাধ্যমে তাঁদের ক্বালব (আত্মা)-কে আলোকিত করে মানবজাতিকে আল্লাহর ইচ্ছামতো সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেছিলেন। মোরাকাবার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, “এক ঘণ্টা ধ্যান ৬০ বছরের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।” আত্মাশুদ্ধির জন্য ধ্যানই একমাত্র উপায়। ধ্যানের মধ্য দিয়ে মনের অস্থির এবং অশান্তির অবস্থা দূর করা যায়। কারণ মহামানবের হৃদয় ‘নুরে মোহাম্মদী’ এর আলো বহন করে, যখন কেউ একজন মহামানবের পবিত্র মুখ স্মরণ করে, তখন তাঁর হৃদয়ের মধ্যে সেই আলো স্থানান্তরিত হয় এবং হৃদয়ের অন্ধকার দূরীভূত হয়। যার ফলস্বরূপ মহান আল্লাহ্ এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর উপর বিশ্বাস জোরদার হয়। মানুষের হৃদয়ের অশুদ্ধতা এবং অশুভ শক্তিকে মুছে ফেলতে ধ্যান সাধনা করা অপরিহার্য।

পরমাত্মার কারণেই মানুষ আল্লাহর প্রেমে আকৃষ্ট হয়। মানুষ ব্যতীত অন্য কোনো প্রাণির ভেতর এই পরমাত্মা নেই। প্রকৃত মানব হওয়ার পূর্ব শর্ত আত্মশুদ্ধি লাভ করা। আত্মশুদ্ধ লাভকারী মানুষ ছাড়া সমাজের উন্নয়ন অসম্ভব। মানুষের মধ্যে কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ এবং মাৎসর্য এই ৬ রিপু বিরাজমান। রিপু কু-পথে ধাবিত হলে জীবাত্মা শক্তিশালী হয় এবং পরমাত্মা তখন হয়ে যায় নিস্তেজ। এমতাবস্থায় মানুষ ভুল পথে ধাবিত হয়ে পাপ কর্মে লিপ্ত হয় এবং অসংযমী রিপুর কারণে আত্মা ধীরে ধীরে কলুষিত হতে থাকে। কলুষিত আত্মার দ্বারা সমাজে অনিষ্ট সাধন হয়। তাসাউফ শিক্ষার মাধ্যমে মোরাকাবার মধ্য দিয়ে আল্লাহ্কে প্রাপ্তির রাস্তা উন্মোচিত হয়। আল্লাহ বলেন, “আমি তার (মানুষের) শাহরগের চেয়েও নিকটে।” (সূরা ক্বাফ ৫০: আয়াত ১৬) শুদ্ধ আত্মা সর্বোচ্চ অস্তিত্বকে প্রতিফলিত করে। আত্মার শুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহ্কে পাওয়া যায়। আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়া যায়। আর আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হলে সমাজের উন্নয়নের দ্বার হয়ে যায় উন্মুক্ত। প্রকৃত মুসলমানের আত্মা হলো পরিশুদ্ধ আত্মা। যা কু-রিপুকে বশীভূত করে নিজের মাঝে আল্লাহর প্রভুত্ব কায়েম করেছে। মানুষই হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধি। আর এ মানুষের হৃদয় জুড়ে রয়েছে আল্লাহর নুরময় সত্তা। পাপমুক্ত এবং পরিশুদ্ধ আত্মা-ই কেবল সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। আত্মা পরিশুদ্ধ না হলে বান্দার কোনো ইবাদত-ই আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না।

ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) বলেন, “আত্মা শুদ্ধ করা প্রত্যেকের জন্য ফরজ। কেননা, আত্মা শুদ্ধ না হলে নিয়ত শুদ্ধ হবে না, আর নিয়ত শুদ্ধ না হলে কোনো ইবাদত-ই শুদ্ধ হবে না।” পরিশুদ্ধ আত্মার ব্যক্তিরাই সমাজের আলোকিত মানুষ। সাদা মনের মানুষ। সাদা মানুষ। একজন সাদা মনের মানুষের জন্য সাধক বলেছেন,
“শুদ্ধ চিত্ত উচ্চ শির
মুক্ত জ্ঞান প্রেম গভীর।”
আত্মাকে পবিত্র করা প্রতিটি মানুষের জন্য সর্বাধিক বাধ্যতামূলক কর্তব্য। আত্মাকে শুদ্ধ না করলে সমাজকে শুদ্ধ করা যায় না। আর সমাজ শুদ্ধ না হলে কোনো দেশের উৎকর্ষ সাধন অসম্ভব। তাই সমাজের উন্নয়নে আত্মা শুদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম।

সৎ কথাটা এসেছে ‘সত্য’ থেকে। সৎ মানে ‘হওয়া’। তার অর্থ দয়াময় খোদা-ই সত্য। শুধু মহান সৃষ্টিকর্তা-ই আছেন, আর কিছুই নাই। ‘সত্য’ হলো সত্তার অনুরূপ। সেই অনুযায়ী পরম সত্তা-ই ঈশ্বর বা দয়াময় প্রভু। আত্মা চিরস্থায়ী, কিন্তু অদৃশ্যমান। আর মানুষ স্থায়ী আত্মার দৃশ্যমান অস্থায়ী বহিঃপ্রকাশ। সমুদ্রের প্রত্যেকটি ঢেউকে যেমন আলাদা-আলাদা মনে হয়, অথচ সবই এক সমুদ্র থেকে আলাদা নয়, তেমনি প্রত্যেক আত্মা ভিন্ন ভিন্ন মনে হলেও স্বরূপে তারা এক, আলাদা নয়। আত্মার কখনো মৃত্যু হয় না। পরম সত্তার মৃত্যু হতে পারে না। মুক্তিলাভের মাধ্যমে আত্মা মৃত্যুকে জয় করে। আত্মার কোনো ভগ্নাংশ নেই। উপাদানগত খণ্ডাংশ নেই। এটাই আত্মার অমরত্বের প্রমাণ। আত্মাশুদ্ধি অর্জনকারী নিশ্চয়ই সফলকাম মানুষ। পবিত্র আত্মা বিহনে স্রষ্টার আত্মার সাথে বিলীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং আত্মা পরিশুদ্ধ করারও কোনো উপায় নেই। তাই কোনো মোকাম্মেল অলী-আল্লাহর সাহচর্যে গিয়ে তাঁর হেদায়েতের নুরে উদ্ভাসিত আত্মা থেকে ফায়েজ আহরণের মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হয়। সেজন্য মোর্শেদ হচ্ছেন আল্লাহর পথে হেদায়েত কার্যকরী পথ-প্রদর্শক। মোর্শেদ হচ্ছেন পরিষ্কারক, মুরিদ হচ্ছে ময়লা কাপড় তুল্য, আর মোর্শেদ প্রদত্ত ফায়েজ হচ্ছে সাবানতুল্য। মোর্শেদই মুরিদকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্ন করে দেন। পুতঃপবিত্র এবং আত্মাশুদ্ধির ব্যবস্থা করেন।

প্রখ্যাত সুফি দার্শনিক হযরত রুমী (রহ.) বলেন, “এক জামানা সহবতে বা আউলিয়া। বেহতের আয ছাদ ছালাতাতে বেরিয়া।’’ অর্থাৎ, এক মুহূর্ত কোনো কামেল অলীর সঙ্গ লাভ করা শত বছরের বেরিয়া (লোক দেখানো) ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়। আত্মাশুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তারাই সফলকাম হয়েছে, যারা আত্মশুদ্ধি লাভ করেছে, প্রভুর নামে জিকির ও নামাজ কায়েম করে।’’ (সূরা আলা ৮৭: আয়াত ১৪-১৫)
আধ্যাত্মিক বিকাশ, আত্মার শুদ্ধির মধ্য দিয়ে নিজের, পরিবারের, সমাজ তথাপি দেশের উন্নয়ন সাধনের জন্য যুগ শ্রেষ্ঠ তাসাউফ বিজ্ঞানী আল্লাহর প্রতিশ্রুত মহামানব সিরাজাম মুনিরার ধারক ও বাহক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের সুমহান শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করত আত্মশুদ্ধি লাভ করা একান্ত অপরিহার্য। এর কোনো বিকল্প নেই।
[লেখক: গবেষক]

সম্পর্কিত পোস্ট