Cancel Preloader

সূফী সম্রাট হযরত মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলাজান ।

জ্ঞানীগুণী বিজ্ঞজনদের দৃষ্টিতে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী

ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান
নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক, হেদায়েতের আলোকবর্তিকা, বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, ইমামুল হাদী, মানবতার মুর্তপ্রতীক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে ১৪ ডিসেম্বর, বুধবার ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ, ২৭ অগ্রাহয়ণ, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দ বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর সৈয়দ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।

এ মহামানবের জন্ম মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। তাঁর প্রবর্তিত বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলাম ও সুফি দর্শন বর্তমান বিশ্বে শান্তির দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি যখন ইসলামের প্রাণ সুফিবাদের দৈনগ্রস্ত, বিশ্ব মানবতা যখন ভুলণ্ঠিত, এমনকি জাহেলিয়াত যুগের চেয়েও জাতি যখন চরম অধঃপতনে নিপতিত ঠিক তখনই মহান আল্লাহ্ মানবজাতির মুক্তির দিশারী শান্তির দূত হিসেবে এ বাংলায় প্রেরণ করেছেন সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানকে। এ মহামানব রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা দর্শন, মানবতাবাদী দর্শন ও সর্বোত্তম আদর্শ জগতবাসীর নিকট উন্মোচন করেছেন, যা অনুসরণ করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আদর্শ চরিত্র অর্জন করে রাসুলের আশেকে পরিণত হচ্ছেন এবং মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভের পরম সৌভাগ্য অর্জন করছেন। যার ফলে বর্তমান যুগটি আলোকিত যুগে (Age of Enlightenment) পরিণত হচ্ছে।

নাম ও বংশ পরিচয় :
মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, আম্বিয়া কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী, হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব লাভকারী, আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার : পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। পিতার নাম আলহাজ হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার (রহ.)। পিতামহের নাম আলহাজ হযরত সৈয়দ আব্দুর রফিক সরকার (রহ.)।

বংশ তালিকা পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় যে, সূফী সম্রাটের পূর্ব পুরুষগণ আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু-এর সম্মানিত বংশধর ছিলেন। যাঁরা ইসলাম প্রচারের জন্য সুদূর মদীনা থেকে কাতার এবং পরবর্তীতে কাতার থেকে বাংলাদেশে আগমন করেন।

পৃথিবীতে যত নবি, রাসুল ও আওলিয়ায়ে কেরাম এসেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই রূহানিয়াতের দিক থেকে যেমন রয়েছেন হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে সম্পৃক্ত, তেমনি জাহেরি বংশগত দিক থেকেও রয়েছে তাঁদের সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। হেদায়েতের এমনি চিরন্তন বিধান এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি হলেন সৈয়দ বংশীয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জন্মের সপ্তম দিবসে তাঁর আকিকা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাঁর পিতা হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার (রহ.) এই উপলক্ষ্যে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের দাওয়াত করেন। আকিকার অনুষ্ঠানে তদানীন্তন প্রখ্যাত আলেম ফখরে বাংলা মাওলানা তাজুল ইসলাম সাহেব উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় শিশুটিকে দেখে তাঁর নাম রেখেছিলেন মাহ্বুব-এ-খোদা, অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয়। তাঁর এ নাম শুনে আকিকার অনুষ্ঠানে সমাগত সব মেহমান আনন্দিত হয়ে বলেছিলেন- সত্যিই তাঁর নাম যথার্থ হয়েছে। ইনি আল্লাহর প্রিয় না হলে এত সুন্দর চেহারা দিয়ে তিনি তাঁকে বানাতেন না।

সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান একজন সুন্দর আদর্শ ও অনুপম মহত্তম চরিত্রের আদলে প্রতিষ্ঠিত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এক মানব দরদী মহামানব। তাঁর অবস্থান বর্তমানকালে সূফী সাধকদের প্রথম সারিতে। তিনি একজন অসাধারণ বাগ্মী এবং তাঁর ভাষণে সহজেই মন্ত্র-মুগ্ধ হয়ে যায় অগণিত শ্রোতার দল।

হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশধর
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর কলিজার টুকরা হৃদয়ের ধন খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রা.) ও শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু-এর পুত্র সাইয়্যেদেনা ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বংশধর। তাঁর বংশ তালিকার ক্রমানুষারে দেখা যায়- (১) বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.), (২) খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রা.), (৩) সাইয়্যেদেনা ইমাম হোসাইন (রা.), (৪) ইমাম জয়নুল আবেদীন (রহ.), (৫) ইমাম বাকের (রহ.), (৬) ইমাম জাফর সাদেক (রহ.)।

ইমাম জাফর সাদেক (রহ.) বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশধারা বজায় রেখে নবি পরিবারের মান-মর্যাদা অটুট রেখেছেন এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকেও অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। ইমাম জাফর সাদেক (রহ.) বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান আদর্শ প্রচারের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। তিনি বৃদ্ধ বয়সে তাঁর তিন পুত্র হযরত সৈয়দ আবু খালেদ বিন জাফর সাদেক (রহ.), হযরত সৈয়দ ইব্রাহীম বিন জাফর সাদেক (রহ.) ও হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ বিন জাফর সাদেক (রহ.)-কে যথাক্রমে তুরুস্কে, বসরায় ও মদীনায় প্রেরণ করেন। কিন্তু এই মোহাম্মদী ইসলামের অগ্রযাত্রাকে দমন করার জন্য খলিফা আল মুনসুর মদীনার হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ বিন জাফর সাদেক (রহ.) ও বসরার হযরত সৈয়দ ইব্রাহীম বিন জাফর সাদেক (রহ.)-কে তাঁর সশস্ত্র বাহিনীর নৃশংস হামলায় শহীদ করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, ইমাম জাফর সাদেকের ছেলে হযরত মুহাম্মদ বিন জাফর সাদেক এর বংশে যেমন সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের জন্ম তেমনি তাঁর সহধর্মিণী কুতুবুল আকতাব খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.) ও সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের মহান মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) ইমাম জাফর সাদেকের ছেলে আবু খালিদের বংশধর। অতএব ইমাম জাফর সাদেকের দুই ছেলের বংশ, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের সাথে সৈয়দা হামিদা বেগমের শুভ-পরিণয়ের মাধ্যমে যথাক্রমে তাঁদের ২৩তম ও ২৪তম প্রজন্মের একত্রে মিলন ঘটেছে।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান বর্তমান বেলায়েতের যুগে শ্রেষ্ঠ সংস্কারক ও ইমাম। তাঁর জীবন দর্শন সম্পর্কে বিশ্বের মণীষীগণ ভূয়ষী প্রশংসা করেছেন। তাছাড়া তাঁর লিখিত ধর্মীয় কিতাবসমূহ বিশেষ করে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ জাতির এক অনন্য আধ্যাত্মিক ভাণ্ডার হিসেবে বিশ্বে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর লিখিত বিভিন্ন অমূল্য গ্রন্থসমূহে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যালেন্সর ও প্রফেসরসহ বিশ্বের বহু সংখ্যক মণীষী ও পণ্ডিতগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো-
সূফী সম্রাটের প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. ওসমান গণী সাহেবের
শ্রদ্ধাঞ্জলি
হে সূফী সম্রাট!
হে মহান, হে মহৎ, তব পরিচিতি
এ জগতে মানুষের পূর্ণ পরিণতি
আল্লাহর ‘মাহ্বুব’ তুমি তোমার জীবন
মানব সমাজে যেন সূর্যের কিরণ।

ওআইসি-এর সম্মেলনে সূফী সম্রাটের ধর্মীয় সংস্কারের প্রতি গুরুত্বারোপ
ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর সদস্যভুক্ত মুসলিম বিশ্বের পঞ্চাশটি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের ভুয়সী প্রশংসা করে তারা সারা বিশ্বে ঈদসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান একই তারিখে পালনের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর হতে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর আংকারা ভিত্তিক “অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান ও সামাজিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” (Statistical Economic And Social Research & Training Centre)–এর উদ্যোগে ১৫তম বিনিয়োগ বিশ্লেষণ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা” (15th Seminar on Investment Analysis And Economic Management) শীর্ষক এ সেমিনার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। পাঞ্জাবের গভর্নর জেনারেল এস খান সেমিনারের উদ্বোধনী ভাষণে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির উপর গুরুত্বারোপ করে সমস্ত মত পার্থক্য ভুল গিয়ে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার আহ্বান জানান। এ সেমিনারে বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. ফিরোজ আই ফারুকীসহ চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল যোগদান করেন। এছাড়াও পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সুদান, তুরস্ক, তাজাকিস্তান, আজারবাইজান, মরক্কো, নাইজেরিয়া, মিশর, আবুধাবি, বাহরাইন, ওমান, কাতার তানজানিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া, আলজেরিয়া, মৌরীতানিয়া, আফগানিস্তানসহ পঞ্চাশটি মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ সেমিনারে যোগদান করেন।

অর্থনীতিবিদ ড. ফারুকী বলেন, আমরা মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে এখানে সমবেত হয়েছি। আমাদের এ সমঝোতা ও ঐক্যমতের মূল ভিত্তি হলো মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতে নিজেদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধর্মীয় কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা দ্বিধা বিভক্ত। যেমন বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠান চান্দ্র মাস অনুসারে পালন করা হয়। কিন্তু তারিখ গণনার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি না থাকায় এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে একই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদ্যাপিত হয়।

উদাহারণস্বরূপ বলা যায় ঈদ পালনে সৌদি আরবের সাথে আমাদের প্রায় সব দেশেরই দুই একদিনের পার্থক্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এরূপ বিশৃঙ্খলার মধ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আমাদের কি ক্ষতি হচ্ছে তা-ও চিন্তা করে দেখার প্রয়োজন মনে করি না। আমরা মনে করি অন্যান্য দেশ হতে সৌদি আরবে দুই/এক দিন আগে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। অথচ আমরা একবারও ভাবি না যে, সারা পৃথিবীর জন্য চাঁদ একটি। এই একটি চাঁদ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন দেশে দেখার অজুহাতে বিজ্ঞানের এ চরম উন্নতির যুগেও আমরা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকি। তাছাড়া আজ যদি রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) জীবিত থাকতেন, তবে তিনি কবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেছেন, এ সংবাদ রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে পাওয়ার পরেও কি আমরা দু’ একদিন অপেক্ষা করে ঐ অনুষ্ঠান দেরীতে পালন করতাম? নিশ্চয়ই না। তাহলে এখন কেন এক/দুই দিনের ব্যবধানে ধর্মানুষ্ঠান পালন করছি? মুসলমান বিশ্বব্যাপী জু’মার নামাজ একই দিনে অর্থাৎ- শুক্রবারে আদায় করে থাকেন। কোথাও একদিন আগে কিংবা একদিন পরে জুমার নামাজ আদায় করা কি কেউ মেনে নিবেন? অনুরূপভাবে বিভিন্ন দিনে একই ধর্মানুষ্ঠান পালন করাও যুক্তিসঙ্গত নয়। তাছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবধান হলো সাড়ে এগার ঘন্টা। এজন্য তো আর চব্বিশ ঘন্টার একটি দিনের পার্থক্য হতে পারে না। আমাদের এহেন দূরবস্থার ফলে আজ পৃথিবীর অন্যান্য জাতির কাছে মুসলিম জাতি হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। কারণ খ্রিষ্টানরা সারা বিশ্বে একই দিনে তাদের নবি হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন বড়দিন পালন করেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সারা বিশ্বে একই দিনে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী পালন করে, বৌদ্ধরা সারা বিশ্বে একই দিনে গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন বুদ্ধপূর্ণিমা পালন করে। এমনিভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নিজ নিজ ধর্মের প্রবর্তকদের জন্মদিন একই সাথে উদ্যাপন করে থাকে। অথচ একমাত্র মুসলমানরাই চাঁদ গণনার বিভ্রান্তির কারণে বিভিন্ন দিনে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি উদযাপন করে থাকে।

ড. ফারুকীর এ বক্তব্য উপস্থিত সবার মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তার এ আশু সমস্যার সমাধানের পদ্ধতি জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি বলেন, ইসলাম একটি বিজ্ঞানময় যুগোপযোগী ধর্ম। হযরত মুহাম্মদ (সা.) অন্য সব বিষয়ের মত চাঁদ গণনার পদ্ধতি ও রীতি বর্ণনা করে গেছেন। তাঁর দেওয়া চাঁদ গণনার পদ্ধতি অনুসারে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমেনিন হযরত ওমর ফারুক (রা.) সর্বপ্রথম মুসলিম বিশ্বে ইসলামী পঞ্জিকার প্রবর্তন করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা সে পঞ্জিকার অনুসরণ ছেড়ে দিয়েছি। ফলে চান্দ্র গণনার ক্ষেত্রে আমরা নানারকম বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এ যুগের মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান হযরত ওমর (রা.)-এর পঞ্জিকা অনুসরণের অষ্টবর্ষ চক্র চান্দ্র পঞ্জিকার উদ্ভাবন করেছেন। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব যদি এ পঞ্জিকার অনুসরণ করে তবে আমাদের চান্দ্র বর্ষ গণনার বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। এ কথা বলে তিনি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অষ্টবর্ষ চক্র চান্দ্র পঞ্জিকার গণনা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এর বর্ণনা শুনে সবাই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েন এবং এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। ড. ফারুকী মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পারস্পারিক ঐক্য, সংহতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির আবেদন জানান।

দীর্ঘ ১৯ দিনব্যাপী এ সেমিনারে বিশেষজ্ঞগণ মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সেমিনারের সমাপনী দিবস ছিল সবচেয়ে আনন্দঘন ও আকর্ষণীয়। মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিবৃন্দ ছাড়াও সেদিন স্বাগতিক দেশ পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. খাজা আমজাদ সাঈদ, প্রফেসর ড. ভিকার আহমেদসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সমাগমে বিদায়ী অনুষ্ঠানটি অত্যাধিক প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। সেদিনের বিদায়ী অনুষ্ঠানে বিশ্ব মুসলিম প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. ফিরোজ আই ফারুকীকে বিদায়ী ভাষণ দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। ড. ফারুকী বিদায়ী ভাষণে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক দিক নিয়ে আলোকপাত করে বলেন, আমরা ইসলামকে যদি মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরতে পারি তবে আমাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধ্যান সহজেই করা সম্ভব। তিনি সূফী সম্রাটের সংস্কার অনুসরণ করে সারা বিশ্বে একই তারিখে ঈদসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতিপালনের আহ্বান জানালে সবাই এতে আগ্রহী হন। এছাড়া তিনি সূফী সম্রাটের বিভিন্ন সংস্কারবলী যেমন ইসলামী রীতিতে দলিল লিখন পদ্ধতি প্রবর্তন, বাংলাদেশে শুক্রবারে সরকারিভাবে সাপ্তাহিক ছুটির বিধান, মাতৃভাষায় জুমার খুৎবার প্রচলন প্রভৃতি আলোচনা করেন। সূফী সম্রাটের সংস্কারবলীর কথা শুনে উপস্থিত সবাই খুবই প্রশংসা করেন এবং এগুলো সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য অনুসরণ ও অনুকরণীয় বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠান শেষে সবাই ড. ফারুকীর জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য ও সূফী সম্রাটের পরিচয় তুলে ধরে ধর্মীয় বিষয়ে কয়েকটি নতুন ধারণা দেওয়ার জন্য তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এ মহামানব সম্পর্কে আরো জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তাদের কেউ কেউ আফসোস করে বলেন, আমরা বাংলাদেশে গিয়েছি কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এ মহামানবের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাইনি। ব্যক্তিগতভাবে প্রায় চল্লিশটি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিগণ ড. ফারুকীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সূফী সম্রাটের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা জেনে নেন। তারা সবাই ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর সম্মেলনে সূফী সম্রাটের সংস্কারবলী বিশেষ করে চান্দ্র মাস গণনার সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
(চলবে)

সম্পর্কিত পোস্ট