Cancel Preloader

জ্ঞানীগুণী বিজ্ঞজনদের দৃষ্টিতে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী


ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান
মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের ঐক্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির দর্শন আজ বিশ্বময় প্রচারিত হচ্ছে। তাঁর বিশ্বখ্যাত আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান দেওয়ানবাগ শরীফ থেকে এই ঐশী দর্শন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষও যুক্ত হয়েছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান তাঁর সুফি দর্শনের
মাধ্যমে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। তিনি এমনই একজন মহান দার্শনিক, সংস্কারক, যুগের ইমাম এই বাংলাদেশে আগমন করেছেন, যার উপমা তিনি নিজেই। এই মহাসম্পদ বিশ্বে আর কারও নেই। যার কারণে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে এসে সুফিবাদের শিক্ষা লাভ করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করছে। তাঁর শান্তি ও অহিংসার দর্শন বিশ্বের শতাধিক দেশে প্রচারিত হচ্ছে।
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের গৌরবময় জীবন দর্শন ও বিভিন্ন অমূল্য গ্রন্থসমূহে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রফেসর-সহ বিশ্বের বহুসংখ্যক মনীষী ও পণ্ডিতগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
আবদুল জব্বার চাখারী, সভাপতি, জাতীয় ইমাম সমিতি
জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি আবদুল জব্বার চাখারী বলেন, পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বর্ণনার পাশাপাশি সুফি সাধকগণের অত্যন্ত মূল্যবান ব্যাখ্যা সম্বলিত ‘আল্লাহ্ কোন পথে?’ গ্রন্থখানি সত্যিই একটি অমূল্য সৃষ্টি। এতে সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লার প্রজ্ঞা সম্পন্ন এলমে তাসাউফের সুন্দর, সুস্পষ্ট ও হৃদয়গ্রাহি ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে, যা অধ্যয়ন করে আমি সত্যিই অবিভূত হয়েছি। এ গ্রন্থখানি পাঠ করে পাঠক সমাজ উপকৃত হবে এবং আমাদের সমাজের
প্রচলিত বহু ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটবে বলে মনে করি। আমি মহান সাধক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লার এ অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং গ্রন্থখানির বহুল প্রচার কামনা করি।
প্রফেসর মুহাম্মদ কায়েস উদ্দিন, সাবেক ভাইস-চ্যন্সেলর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যন্সেলর প্রফেসর মুহাম্মদ কায়েস উদ্দিন বলেন, ‘আল্লাহ্ কোন পথে?’ গ্রন্থখানি পাঠে সূফী সম্রাট হযরত মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.)-এর ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে।
প্রফেসর আব্দুল মান্নান সৈয়দ, কবি ও সাহিত্যিক
খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক মরহুম প্রফেসর আব্দুল মান্নান সৈয়দ বলেন, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.)-এর ‘সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান- ‘আল্লাহ্ কোন পথে?’ বইটি পাঠ করলাম। এতে ধর্মের অনেক নিগৃঢ় বিষয় আছে যা একমাত্র ধর্ম বিশেষজ্ঞদের অধিগত।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জহিরুল হক ভূইয়া, প্রাক্তন ভাইস-চ্যান্সেলর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জহিরুল হক ভূইয়া বলেন, আমাদের সমাজের মানুষের বদ্ধমুল ধারণা- আল্লাহ্ সম্পর্কে চিন্তা করা যাবে না। এ বিষয়ে চিন্তা করলে ইমানহারা হতে হবে। আমারও ছোটো বেলা থেকে এ ধারণা ছিল। শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন শেষ করে ফেলেছি, কিন্তু এ ধারণার কোনো পরিবর্তন হয়নি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ইমান নিয়ে কিভাবে কবরে যাব, এ চিন্তা আমার অন্তরে তোলপাড় সৃষ্টি করলে ছুটে এলাম মোহাম্মদী ইসলামের
পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে রহমতে। তাঁর সানিড়বধ্যে কিছু সময় আল্লাহ্র পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা শুনে নিজের অতীত জীবনের নিস্ফলতার জন্য আক্ষেপ করতে থাকি। সেই দিন সূফী সম্রাটের প্রশ্ন ছিল- মানুষ আল্লাহ্র প্রতিনিধি। প্রতিনিধি কি তার মালিকের পরিচয় জানবে না? আমি বললাম, নিশ্চয়ই; আমি আল্লাহ্ সম্পর্কে জানতে চাই। তখন তিনি আল্লাহ্র স্বরূপ উদঘাটন সম্পর্কে একটি গ্রন্থ রচনা করার কথাও জানালেন। ‘স্রষ্টার স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট: আল্লাহ্কে সত্যিই কি দেখা যায় না?’ গ্রন্থটির একটি পাণ্ডুলিপির কপি পেয়ে, তা পড়ে আমি বিস্ময়ে অভিভূত হলাম। স্রষ্টাকে স্বরূপে দেখা যায়- সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফের অসংখ্য দলিলের সমাহার গ্রন্থটি ১২টি অধ্যায়ের সবগুলো আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। আমি এই গ্রন্থটির বহুল প্রচার এবং সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
মুহাম্মদ মহবুব উজ্জামান, সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব মুহাম্মদ মহবুব উজ্জামান বলেন, মানুষ আল্লাহ্র প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহ্স ম্পর্কে জানা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রতিনিধি তাঁর মালিক সম্পর্কে না জানলে মালিকের প্রতিনিধিত্ব করবে কীভাবে? সত্য কথা বলতে কি, আমাদের সমাজে আল্লাহ্ সম্পর্কে গবেষণা করে জানার সুযোগ কারো নেই। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লা আল্লাহ্র স্বরূপ উদঘাটন করে একটি অনবদ্য গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। যার নাম দিয়েছেন- স্রষ্টার স্বরূপ উদঘাটনে সূফী সম্রাট : আল্লাহ্কে সত্যিই কি দেখা যায় না? এ গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি আমি পাঠ করেছি। এতে পবিত্র কুরআন, বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস ও জগদ্বিখ্যাত আওলিয়ায়ে কেরামের সাধনালব্ধ জ্ঞানের আলোকে প্রাপ্ত তথ্যাদি গবেষণার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্র পরিচয় ও স্বরূপ পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। স্বধর্মীদের অজ্ঞতা ও বিধর্মীদের চক্রান্তের শিকার হয়ে পরম সুন্দর মহান আল্লাহ্র পরিচয় মানুষের কাছে নিরাকার হিসেবে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। এ বিষয়ে গবেষণা, পর্যালোচনা ও
উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে যুগ যুগান্তের সে ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটেছে এবং অকট্য দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি নিরাকার নন এবং তিনি এক অপরূপ সত্তা নিয়ে স্বরূপে বিরাজমান।
বিচারপতি মো. ফারুক, হাইকোর্ট বিভাগ
বিচারপতি মো. ফারুক (এম ফারুক) বলেন, মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে কোনো মানুষ ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করতে পারে না। এ সন্তুষ্টি অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মানবদেহের কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য নামীয় ৬টি রিপু।
রিপুগুলো আত্মার রোগ হিসেবে চিহ্নিত। রিপুতাড়িত মুক্তি ও কল্যাণকামী মানুষেরা যখন সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুরের সান্নিধ্য লাভ করে, তখন তিনি অগাধ পাণ্ডিত্য ও অসাধারণ ধর্মীয় আধ্যাত্মিক শক্তির বদৌলতে মানুষগুলোকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। ফলশ্রুতিতে তারা হয়ে ওঠেন মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল
(সা.)-এর প্রেমিক আশেকে রাসুল এবং তারা জীবনের প্রতিটি ধাপে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানকে সুখে-দুঃখে নিজের পরম শ্রদ্ধেয় অভিভাবক ও মোর্শেদ বলে গণ্য করে। তাঁর অপার মহিমা সম্বলিত নির্দেশনা পালন করে ইহকাল ও পরকালে সফলতা অর্জনের পথ খুঁজে পায়। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান তাঁর তাওয়াজ্জোহ এত্তেহাদি দ্বারা মানুষের পশু প্রবৃত্তি
দমন করে আত্মার ঐশী ভাব প্রস্ফুটিত করে মানুষকে সুপথগামী করে তোলেন।
সূফী সম্রাটের শিক্ষা হচ্ছে- উপরোক্ত সফলতার জন্য রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.) এবং পাক পাঞ্জাতন ও আহলে বায়েতকে ভালোবেসে আশেকে রাসুল হওয়া, ক্বালবে আল্লাহ্র জ্বিকির জারি করা, আত্মশুদ্ধি লাভ করা এবং নামাজে একাগ্রতা অর্জন করা। সূফী সম্রাট তাঁর সাধনালব্ধ জ্ঞান থেকে বলেন- ‘আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর নুরের রূপ আছে, আকার
আছে, তিনি স্বরূপে বিদ্যমান।’ হযরত রাসুল (সা.) বলেন- ‘তুমি এমনভাবে এবাদত করো যেন আল্লাহ্কে দেখছো, আর যদি তুমি না দেখ তবে তুমি বিশ্বাস করো আল্লাহ্ তোমাকে দেখছেন।’ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লা মানুষকে ইহকাল ও পরকালের সফলতার পথ দেখাচ্ছেন। আমি তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুল বাকী, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক ও লেখক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুল বাকী বলেন, ইসলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও এর অনুসারী মুসলমানগণ বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছে। মুসলিম জাতির এহেন দুরবস্থার প্রধান কারণ হলো প্রকৃত ইসলামি আদর্শ হতে বিচ্যুত হওয়া। বিশ^নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের যে সুমহান শিক্ষা দিয়ে বিপন্ন প্রায় মুসলিম জাতিকে বিশে^র বুকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী জাতিতে পরিণত করেছিলেন, আমরা সেই সুমহান শিক্ষা পরিত্যাগ করেছি। ফলে আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে যোগযোগ হারিয়ে আমরা মনগড়া ইসলাম কায়েম করে বিভিন্ন দল ও মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। মুসলিম জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের কালের অতল তলে হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামের প্রকৃত আদর্শ
মানবজাতির কাছে তুলে ধরেছেন। সমগ্র মানব জাতির শান্তি ও কল্যাণ আনয়নের লক্ষ্যে তাঁর ধর্মীয় বিভিনড়ব সংস্কারমূলক কার্যাবলী ‘সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার’ নামক গ্রন্থটিতে সুন্দর, সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এ মহামূল্যবান গ্রন্থটি পাঠ করে মানুষ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রবর্তিত প্রকৃত ইসলামের দিক-নির্দেশনা খুঁজে পাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি মহান
সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানকে ইসলামের এ মহৎ খিদমতের জন্য আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে এ গ্রন্থখানির বহুল প্রচার ও সাফল্য কামনা করি।
মেজর জেনারেল কে. এম. সফিউল্লাহ, বীর উত্তম (অব.), বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান
বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান, মুক্তিযুদ্ধের ৩নং সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কে. এম. সফিউল্লাহ, বীর উত্তম (অব.) বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী’ বইটি পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সব কথাই স্মৃতিতে ভেসে উঠেছিল। যুদ্ধকালীন আমি আমার সেক্টরে যে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, সেই ক্যাম্প থেকেই সূফী সম্রাট
হযরত মাহ্বুব-এ-খোদা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আমার সেক্টরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা ছিল প্রায় ৩০ হাজারের উপর। তাদের সবার কথা মনে রাখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়, যদি না সে ব্যক্তির সাধারণের চেয়ে কিছু অসাধারণ কাজকর্ম পরিলক্ষিত হয়। সূফী সম্রাট হযরত মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী ছিলেন তেমনই এক ব্যক্তি। তাঁর কার্যক্রম প্রথমে আমার নজরে আসে ধর্মগড় অপারেশনে। সেই অপারেশনে তাঁর বীরত্বের কারণে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। পরিবর্তীতে তিনি শুধু যুদ্ধই করেননি, তিনি আমার সেক্টরের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ধর্মীয় বিষয়ে দিক্ষা দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন। নামাজের সময় তাঁর বয়ান এতই শ্রুতিমধুর ছিল যে, তা শুনতে ইচ্ছে করত। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় শেষ
প্রান্তে আমার হেড কোয়ার্টার হেজামারাতে রোজার ঈদের (ঈদুল ফিতর) নামাজের খুৎবা এবং মুনাজাত এমনই প্রাণবন্ত ছিল যে, সেদিন সেই জামাতে এমন কোনো লোক ছিল না, যে কাঁদে নাই। সেদিন হুজুর সবারই মন কেড়ে নিয়েছিলেন এবং দোয়া করেছিলেন যে- আল্লাহ্ আমরা যেন ঈদুল আজহার নামাজ রেইস কোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পড়তে পারি। হয়েছিলও তাই। আমরা ঈদুল আজহার নামাজ রেইস কোর্স ময়দানেই পড়েছিলাম। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমি তাকে একটি
নতুন ব্যাটালিয়ানের (১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ধর্ম প্রচারে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল ধর্ম প্রচারক। আল্লাহ্ তাঁকে হেফাজত করুক।
মেজর জেনারেল আমীন আহাম্মদ চৌধুরী বীর বিক্রম (অব.)
প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আমীন আহাম্মদ চৌধুরী বীর বিক্রম (অব.) বলেন, জনাব মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী যৌবনে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধশেষে তিনি ব্যাটালিয়নের (১৬ ইস্ট বেঙ্গল) রিলিজিয়াস টিচার হিসাবে
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তার যুদ্ধের কাহিনী সূফী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক বিবরণসহ জনাব মাহ্বুব-এ-খোদার যুদ্ধের কাহিনী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। একজন বুজর্গ লোক ছাত্র অবস্থায় অসীম সাহসের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা-মাতা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে যুদ্ধে যাবার অনুমতি দেন। এটাই মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণার বিষয়। মা-বাবার দোয়ায় সিক্ত জনাব মাহ্বুব প্রশিক্ষণ
শেষে প্রথম সম্মুখ সমরে সফল হয়ে ফিরে এসে পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মাধবপুর, মনতলা, সিলেট মহাসড়কে অ্যাম্বুস, বাগসইর গ্রামে অ্যা¤ু^স, তেলিয়াপাড়ায় অ্যাম্বুস করা থেকে শুরু করে শত্রুর সরাসরি আক্রমণ প্রতিহত করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয় বেশে দেশে প্রবেশ করেন। এই বিজয় যে কোনো সামরিক যুদ্ধ জয়ের চেয়ে অনেক বেশি মহান, অনেক বেশি আনন্দের। এ আনন্দ স্বর্গীয় সুষমায় সুরোভিত। এর খুসবু আজও জনাব মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী তাঁর অনুসারী-
দের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে আসছেন। আল্লাহ্ তাঁর সহায় হোন।
মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূইয়া (অব.)
জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূঁইয়া (অব.) বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী’ গ্রন্থটি পড়ে চৌত্রিশ বছর পর আবার স্মৃতিতে আবারো স্বাধীনতা যুদ্ধের অক্ষত মুহূর্তগুলো ভেসে উঠেছে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশমাতৃকাকে মুক্ত ও স্বাধীন করার জন্য ১৯৭১ সালে আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারাই ছিলেন পরস্পরের সবচেয়ে আপনজন ও সাহায্যকারী।
সে বছর আগস্ট মাসে ধর্মগড়ে পাকিস্তানী বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের কৌশল নির্ধারণ করার জন্য রেকি করতে গিয়ে আমি শত্রু সৈন্যদের কবলে পড়ে গেলে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের প্লাটুনের তরুণ মুক্তিযোদ্ধা হান্নান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ অবদান রাখেন। সেদিন বোধ হয় আমি নতুন জীবন লাভ করেছিলাম, যা মনে হলে আজও আমার গা শিউরে ওঠে। এ গ্রন্থের মধ্যমণি সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরকে একজন দেশপ্রেমিক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা
হিসেবে দেখেছি। তাঁর উৎসাহ উদ্দীপনা অপরাপর মুক্তিযোদ্ধাদেরও প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। সহ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সহানুভূতি কখনও ভুলে যাবার মতো নয়। আমি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে বেঁচে আসায় আল্লাহ্ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায়ের জন্য ৩নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টারে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল।
একজন আলেম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর সেই মাহফিল পরিচালনা করেছিলেন। আল্লাহ্র প্রতি অগাধ বিশ্বাস তাঁর চরিত্রের এক ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য। রণাঙ্গনের চরম দুর্যোগময় মুহূর্তেও তিনি আল্লাহ্র ওপর ভরসা করে সাহসিকতার সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। অধীনস্ত যোদ্ধাদের কাছে শুনেছি, ১৯৭১ সালের ঈদুল ফিতরের সময় ভারতের হেজামারায় আয়োজিত ঈদের জামাতে সমবেত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে দেওয়ানবাগী হুজুর স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের
ভবিষ্যদবাণী প্রদান করে এক আবেগময়ী ও হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আল্লাহ্র কসম! আগামী বকরা ঈদের আগে আমরা দেশ স্বাধীন করব। আমরা ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে বকরা ঈদের (ঈদুল আযহার) নামাজ আদায় করবো।’’ মহান আল্লাহ্ তাঁর এই প্রার্থনা কবুল করেছেন। যুদ্ধকালীন ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন দেওয়ানবাগী হুজুর। মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও সহযোগিতা মানবতাবাদের পরিচয় বহন করে। এ গ্রন্থটিতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য রয়েছে। যেগুলো পাঠককে একদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতি মনে করিয়ে দিবে, অন্যদিকে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ইতিহাসকে অম্লান রাখবে।
বর্তমান বিশ্বে শান্তি, কল্যাণ সংহতি ও সৌহার্দের জন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের ধর্মীয় ও মানবতাবাদী দর্শন খুবই জরুরি। এই মহামানবের মানবতাবাদী দর্শনের মাধ্যমে মানুষের মুক্তি সম্ভব। তাঁর এই মহান শিক্ষাটা যদি আমরা বাস্তব জীবনে চর্চা করতে পারি, তাহলে আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব। আর এই বিষয়টি জ্ঞাণীগুণী বিজ্ঞজনদের
বিদগদ্ধ বাণীতে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
[লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক]

সম্পর্কিত পোস্ট