Cancel Preloader

টাইফয়েড থেকে আরোগ্য লাভ


শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু)
রোগ-শোক বালা-মসিবত মানুষের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্র্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের মতে, প্রধানত তিনটি কারণে মানুষের বালা-মসিবত এসে থাকে। যথা- (১) মানুষ যখন আল্লাহর সাথে নাফরমানি করে তখন মসিবত আসে গজব হিসাবে (২) কঠিন বিপদ হতে উদ্ধারের নিমিত্তে মসিবত আসে রহমত হিসাবে এবং (৩) আল্লাহর প্রতি ইমানি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে মসিবত আসে।


কোনো রোগ বা মসিবত কেন আসে, তা সাধারণ মানুষ অনুধাবন করতে পারে না। কিন্তু অলী-আল্লাহ্গণ এ বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে অবগত হয়ে থাকেন। অলী-আল্লাহ্গণ হচ্ছেন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তাঁরা মানুষকে যে কোনো কঠিন বিপদ হতে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। এমনকি মৃত্যুর ন্যায় কঠিন বিপদ থেকেও আল্লাহর ইচ্ছায় রক্ষা করতে পারেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অসংখ্য ভক্ত ও আশেকান পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁকে স্মরণ করে বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছেন। এসব ঘটনা থেকেই একটি ঘটনা উপস্থাপন করা হলো-


আশেকে রাসুল সুজন মিয়া ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন ইমেন্দীপুর এলাকায় একটি ফ্যক্টরিতে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার অন্তর্গত মুন্সিপাড়া গ্রামের সোনাতলা উপজেলায়। ঘটনাটি ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখের। ফ্যাক্টরিতে কর্মরত অবস্থায় একদিন তিনি জ্বর অনুভব করেন। স্বাভাবিক জ্বর ভেবে তিনি বাসায় চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন। পরবর্তী ৩ দিন ঔষধ খাওয়ার পরেও জ্বর না কমায় তিনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার তাকে কিছু পরীক্ষা দেন। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় তার কী হয়েছে ডাক্তার তা বুঝতে সক্ষম হননি। পরবর্তীতে তিনি সাভারের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে যান। তিনি আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন এবং ডাক্তার তার টাইফয়েড হয়েছে বলে ঐ পরীক্ষা দ্বারা জানতে পারেন। সেই অনুযায়ী আশেকে রাসুল সুজন মিয়াকে কিছু ঔষধ প্রদান করেন এবং বলেন, তিনি ৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবেন। তিনি ১০ থেকে ১৫ দিন যাবৎ ঔষধ খাচ্ছিলেন, কিন্তু তার টাইফয়েড ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা গেল না।


উপরোন্ত টাইফয়েড জ্বর দিন দিন বেড়ে যেতে থাকে এবং তাকে কাবু করে ফেলে। তিনি দুর্বল হয়ে যান। এই অবস্থায় ২রা ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যায়, জ্বরের পরিমাণ ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রির মতো হয়ে যায়, যার কারণে আশেকে রাসুল সুজন মিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এমতাবস্থায়, তার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব সবাই কান্নাকাটি শুরু করেন। তাদের মনে হলো, তিনি মারা গেছেন। তখন তার হার্টবিটও পাওয়া যাচ্ছিল না। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সুজন মিয়া যেহেতু শায়িত অবস্থায় ছিলেন, তিনি স্বপ্নে দেখেন মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান তার সামনে এসে উপস্থিত হন। তার নুরানিময় চেহারার জ্যোতিতে চারিদিকের অন্ধকার দূর করে আলোয় ভরিয়ে দিচ্ছিল। মহান মোর্শেদ তাঁর পাক জবানিতে বলেন, এই মিয়া! এতো চিন্তা করেন কেন, আমি তো আছি।


মহান মোর্শেদের অভয় বাণী শুনে তিনি কিছুটা আশার আলো ফিরে পান। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজান তাকে নির্দেশ করলেন, তার মুখ খোলার জন্য। তিনি মোর্শেদের নির্দেশ মতো হা করলেন। তিনি মুখ খোলার সাথে সাথে মোর্শেদ তাকে কিছু একটা খাওয়ালেন। তার কাছে মনে হলো নুরানিময় জগতের কিছু একটা খাওয়ার সাথে সাথে তিনি জ্ঞান ফিরে পান। সেখানে থাকা সবাই অবাক হয়ে গেলেন। যে লোকের কিছুক্ষণ আগে হার্টবিট খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না, সে কীভাবে এতো জ্ঞান ফিরে পেলো। সবাই বলাবলি শুরু করল এটা অলৌকিক ছাড়া আর কিছু নয়। নিশ্চয়ই সে কোনো পূণ্যের কাজ করেছে। কোনো অলী-আল্লাহর দরবারে সে যাতায়াত করে, যার কারণে এ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।


পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরে আসার পরে আশেকে রাসুল সুজন মিয়ার টয়লেটের বেগ পায়। তার টয়লেট এবং বমি হয়। তার মনে হয় তার পেটের ভিতর যতো আবর্জনা আছে সবকিছু বের হয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পর তার আবার প্রচণ্ড জ্বর আসলো, কিন্তু সে জ্বরে তার খারাপ লাগছিলো না। জ্বর এবং দুর্বলতার কারণে তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারতেন না। অথচ মোর্শেদের কী খেলা, এর পরেরদিন থেকে তার শরীর ভালো হতে থাকলো। তার জ্বর কমে যেতে লাগলো এবং শরীর আগের চেয়ে অনেক ভালো হতে লাগলো। তিনদিন পর ডাক্তার যথারীতি আসলেন এবং তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন যে, তার কোনো রোগ নেই।
অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তাই তাঁরা তাদের ভক্তের বিপদে আপদে যে কোনো অবস্থায় দয়ার হাত প্রসারিত করে দেন। আর তাদের দয়া পেলে সৃষ্টি সার্থক হয়। এ ঘটনা তাই প্রমাণ করে। যেখানে হার্টবিট বন্ধ হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী একজন টাইফয়েড রোগী আশেকে রাসুল সুজন মিয়াকে ডাক্তারি তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিছু করতে পারেননি, সেখানে মহান মোর্শেদ তাকে দয়া করে ভালো করে দিয়েছেন। আশেকে রাসুল সুজন মিয়া পরবর্তীতে নিজে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলার কাছে এসে ঘটনার বর্ণনা দেন।

সম্পর্কিত পোস্ট