Cancel Preloader

নামাজ মানুষকে পাপ থেকে মুক্ত রাখে


ড. মোবারক হোসেন
মহান রাব্বুল আলামিনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের বিনয় প্রদর্শন ও আত্মসমর্পণের মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যম হলো নামাজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম। ‘সালাত’ আরবি শব্দ, ফার্সিতে নামাজ বলা হয়। সালাত বা নামাজের আভিধানিক অর্থ হলো- দোয়া, রহমত, সংযোগ স্থাপন ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। নামাজের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে বান্দার গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে। সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত রাসুল (সা.) ২৭ রজব তারিখে মি‘রাজের সময় আল্লাহর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ লাভ করেন। মহান রাব্বুল আলামিন উম্মতে মোহাম্মাদীর উপর তাঁর রহমত বর্ষণ করার জন্য নামাজের বিধান প্রবর্তন করেন। নামাজের মাধ্যমে মু’মিন ব্যক্তিদের মি‘রাজ লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ এবং বান্দার কথোপকথনকে নামাজ বলে। এ প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) বলেন “নামাজ মু’মিন ব্যক্তির জন্য মি‘রাজ।” (তাফসীরে মাজহারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৩) যিনি ইমানদার হয়েছেন তাকে মু’মিন বলে। মু’মিন ব্যক্তি নামাজে আল্লাহর দিদার পেতে সক্ষম।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে হযরত রাসুল (সা.) নিজেই সাহাবায়ে কেরামকে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন। নামাজ শিক্ষার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। অতঃপর যখন তারা পরিপূর্ণ মু’মিনে পরিণত হয়েছেন, তখন নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে আল্লাহর দিদার লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।


বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)-এর ভাষায়- “সালাত হচ্ছে এমন একটি ইবাদত যা বান্দাকে দিনে ৫ (পাঁচ) বার মহান প্রভুর সামনে হাজির করে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায়।”


পবিত্র কুরআনে নামাজ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন “[হে রাসুল (সা.)!] বলে দিন আমার প্রতিপালক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেকে তোমাদের নামাজের সময় লক্ষ্য স্থির রাখবে এবং তাঁরই আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্তে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ডাকবে। তাহলে তোমরা সেই ভাবেই ফিরে আসবে, যেভাবে তিনি তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছিলেন।” (সূরা আ‘রাফ ৭: আয়াত ২৯)
নামাজের এমনি গভীর মাহাত্ম্য আছে বলেই পবিত্র কুরআনে নামাজের সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন-“অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মু’মিনগণ যারা নিজেদের নামাজে ‘বিনয়-নম্র’।” (সূরা আল মু’মিনুন ২৩: আয়াত ১-২)


মানুষ তার লালন ও পালনকর্তা মহান প্রভুর সমীপে বিনীতভাবে দণ্ডায়মান হয় নামাজের সময়। সেই মহান প্রেমময় সত্তার স্মরণে বিভোর হয়ে নামাজরত অবস্থায় আশেক তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় মাশুকের প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও আত্ম সম্মানের শপথ গ্রহণ করে নামাজের সময়।
নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের মনকে আল্লাহর দরবারে হাজির রাখা পূর্বশর্ত। এ কাজটি করতে হলে ক্বালবে আল্লাহ্ নামের জি¦কির জারি থাকতে হবে। তাহলেই সম্ভব আল্লাহ্ পাকের দরবারে মনকে হাজির রাখা। আমিত্ব ভুলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ উপায় হলো- ক্বালবে আল্লাহ্ নামের জি¦কির জারি অবস্থায় নামাজ আদায় করা। হাদিস শরীফে আছে, ‘‘মু‘মিন ব্যক্তি নামাজের মাধ্যমে তার পালন কর্তার সাথে কথোপকথন করে থাকে।” অন্য আর এক হাদিসে আছে যে, “আল্লাহ্ পাক ঐ ব্যক্তির নামাজের দিকে লক্ষ্য করেন না, যে ব্যক্তি তার শরীর ও মন দিয়া নামাজ আদায় করে না।” (এহিয়াউল উলুম এর সূত্রে: আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ পথ, পৃষ্ঠা ২৩) মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ৮২ বার নামাজ কায়েম করার কথা বলেছেন।


মহান রাব্বুল আলামিন সূরা বাকারার ৩নং আয়াতে নামাজ কায়েম করার কথা বলেন । রাব্বুল আলামিন বলেন, “হে ইমানদারগণ! তোমরা (আমার কাছে) সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা বাকারা ২: আয়াত ১৫৩) হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেন, “আল্লাহ্ পাক স্বীয় বান্দাদের উপর যে সমস্ত কর্তব্য আরোপ করেছেন, তার মধ্যে আল্লাহ্ পাকের একত্ববাদের বিশ্বাসের পর সর্বাপেক্ষা প্রিয় কাজ হলো নামাজ।” মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, “আমাকে স্মরন করো আমিও তোমাদের স্মরন করব।” আর এই স্মরন করা যায়- একমাত্র ক্বালবে আল্লাহ্ জিকির জারির মাধ্যমে। নামাজ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, “লা সালাতা ইল্লাবি হুজুরীল ক্বালব।” অর্থাৎ- একাগ্রতা বা হুজুরি দিল বিহনে নামাজ শুদ্ধ হয় না।

আল্লাহর বন্ধু অলী-আল্লাহ্গণ একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করতেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু উহুদ যুদ্ধের সময় তাঁর দেহ মোবারকে ১৬টি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল এবং তাঁর কদম মোবারকে তির বিদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে যখন সহাবিরা তাঁর কদম মোবারক থেকে তির বের করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণার কারণে তিরে হাত দেওয়া যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় হযরত রাসুল (সা.) সাহাবিদের বললেন, “হযরত আলী যখন নামাজরত অবস্থায় থাকবে, তখন তোমরা তাঁর কদম থেকে তির বের করবে। পরবর্তীতে দেখা গেল, হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু যখন নামাজ আদায় করছিলেন, ঠিক সেসময় সাহাবিরা তাঁর কদম মোবারক থেকে তির বের করে আনলেন, অথচ হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু বিন্দুমাত্র টেরও পেলেন না। এতটা হুজুরি দিল অর্থাৎ একাগ্রচিত্তে তিনি নামাজ আদায় করছিলেন যে, সালাতে মহান প্রভুর এশকে দেওয়ানা হয়ে প্রভুকে হাজির নাজির জেনে সালাত আদায় করছিলেন। অলী-আল্লাহর শিক্ষা বিহনে এরূপ হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়।

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনজীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের শিক্ষানুযায়ী নামাজ আদায় করলে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়। (মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়, পৃষ্ঠা ১১৬)। হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “যে নামাজে নিজের মন আল্লাহ্পাকের দরবারে হাজির হয় না, সেই নামাজের প্রতি আল্লাহ্ দৃষ্টিপাত করেন না।” বিখ্যাত সুফি সাধক হযরত সাকতি সাওয়ারি (রহ.) বলেছেন, “নামাজের সময় যার মনে ভয়ভীতি, বিনয় ও মিনতির উদ্রেক না হয়, তার নামাজই শুদ্ধ হয় না।” এ ছাড়া প্রখ্যাত সাধক হযরত হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘‘যে নামাজে মন আল্লাহ্ পাকের দরবারে হাজির হয় না, সে নামাজ শাস্তির নিকটবর্তী।”
নামাজের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে তাঁর বান্দার মধ্যে এক গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে। নামাজের মাধ্যমে ইমানদারগণ চরম আকারে সেই পরম তৃপ্তি লাভ করেন। কারণ নামাজের দ্বারা স্রষ্টার নৈকট্য লাভ সম্ভব হয়। এ জন্যই আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেন, “নামাজ হলো মু’মিন ব্যক্তির জন্য মেরাজ।” অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমে ইমানদারগণ মহান স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হতে পারে। কারণ পবিত্র শবে মি‘রাজে আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) রাব্বুল আলামিনের দরবারে উপস্থিত হয়েছিলেন, তখন আল্লাহ্ পাকের বিশেষ উপহার স¦রূপ তিনি নিয়ে এসেছিলেন নামাজের এই বিধান।


নামাজের সময় আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কী অবস্থায় হতো তার বিবরণ দিতে গিয়ে হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন- “আমি ও হযরত রাসুল (সা.) আলাপরত থাকতাম, এমন অবস্থায় যদি নামাজের সময় আসতো তবে তিনি আমাকে চিনতে পারতেন না।’’ অর্থাৎ নামাজের ডাক এলে তথা সর্ব শক্তিমান আল্লাহ্ পাকের দরবারে হাজির হওয়ার মুহূর্ত এলে, সেই পরম প্রিয়ের সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্খায় এমনই মাতোয়ারা হয়ে পড়তেন যে, তখন ইহলৌকিক কোনো বিষয় তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারতো না। পরম করুণাময় আল্লাহ্ তায়ালার অধিকতর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ হয় নামাজের মাধ্যমে। আর তাই হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- ‘‘বান্দা যখন সিজদায় রত থাকে, তখনই তাঁর প্রতিপালকের অধিকতর নিকটবর্তী হয়। অতএব, সিজদারত অবস্থায় তোমরা অধিক পরিমাণে দোয়া করো।’’ তাই আল্লাহ্ বলেন- “আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরন করব।” এই স্মরন করা যায় একমাত্র ক্বালবে আাল্লাহ্ নামের জিকির জারির মাধ্যমে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) যখন কাবা শরীফ প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় করতেন, বিশেষ করে যখন সিজদায়রত থাকতেন, তখন পবিত্র কাবার বহু কবুতর তাঁর পৃষ্ঠাদেশে উপস্থিত হতো। হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু যখন ওজু শেষ করে উঠতেন, তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থরথর করে কম্পমান হতো, চেহারা মোবারক ফ্যাকাসে হয়ে যেতো। তাঁকে এমনিভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত হতে দেখে একবার তার খাদেম বিস্ময় প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর! আপনি কি অসুস্থ হয়েই পড়েছেন? তিনি খাদেমের উদ্দেশে বললেন, তুমি জান না? আমি কোন দরবারে হাজির হবার জন্য যাচ্ছি। সেই সর্বশক্তিমান আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের মহান দরবারে উপস্থিত হতে চলেছি, যিনি বিশ্বস্রষ্টা, যিনি বিশ্বনিয়ন্তা, যিনি শেষ বিচারের মালিক। এমনিভাবে সাধককে ঐশীপ্রেমে তন্ময় হয়ে হাকিকতে সালাত অর্জনে সমর্থ হয়ে থাকেন।


হযরত রাসুল (সা.) এক হাদিসে বর্ণনা করেছেন, “তুমি এমনিভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাকে দেখছো, যদি তুমি অসমর্থ হও তবে এই কথা নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো যে, তিনি তোমাকে দেখছেন।” (বোখারী শরীফ)। মূলত এটাই হাকিকতে সালাত, যে নামাজের মাধ্যমে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে ব্যবধানকারী পর্দা উন্মোচিত হয়ে যায় ।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে নামাজ শুধু আনুষ্ঠানিকতা আর লোক দেখানো ইবাদতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে ইবাদত-বন্দেগি করেও এক দিকে যেমন পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, অপরাধির পাশবিক চরিত্রের ত্রুটি দূর হচ্ছে না, ফিরে আসছে না আন্তরিক প্রশান্তি। আজ শুধু ইসলামের লেবাস আছে, আচার-অনুষ্ঠান আছে, দেহ আছে, তবে তাতে প্রাণ নেই। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম আজ অন্তসারশূন্য হয়ে পড়েছে। আল্লাহ্পাক মানুষের নৈতিক চরিত্রকে সু-সংযত করার তথ্য নৈতিক জীবনমান উন্নত করার যে ব্যবস্থা পেশ করেছেন, তা যথারীতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা বেশ কঠিন। মহান রাব্বুল আলামিনকে পাওয়ার জন্য যত প্রকার ইবাদত ও উপাসনা আছে, তন্মধ্যে নামাজের গুরুত অত্যাধিক। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর বান্দাদের উপর কালেমার পরই নামাজের স্থান দিয়েছেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে একজন মানুষ পাঁচবার তাঁর মহান প্রভুর সাক্ষাত লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন। বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) মি‘রাজের মাধ্যমে মহান প্রভুর দিদার লাভে ধন্য হয়েছিলেন, তেমনি তার প্রিয় উম্মতগণও যেন নামাজের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের দিদার লাভ করে , তাঁর কাছে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট, আনন্দ বেদনা পেশ করে মনের জ্বালা মেটাতে পারে, সেই জন্যই এই নামাজের বিধান। আল্লাহ্ পাক নামাজের গুরুত্ব প্রসঙ্গে মু’মিনদের বলেছেন, “নামাজ কায়েম করো, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে যাবতীয় পাপ কাজ হতে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত ২৯: আয়াত ৪৫)।

সত্যিকার মু’মিন ব্যক্তি যদি একাগ্রচিত্তে মহান প্রভুর নৈকট্য লাভের জন্য নামাজ আদায় করে তাহলে অবশ্যই নামাজ যাবতীয় পাপ থেকে ফিরিয়ে রাখবে।
হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন- “লা সালাতা ইল্লাবি হুজুরীল ক্বালব।” অর্থাৎ মনের একাগ্রতা ব্যতীত নামাজ কবুল হয় না। পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে- “অতএব দারুণ দুর্ভোগ ঐসব নামাজির জন্য, যারা নিজেদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন।” (সূরা মাউন ১০৭: আয়াত ৪-৫) অর্থাৎ আল্লাহ্ কঠোরভাবে বলেছেন, ঐ সমস্ত নামাজিদের জন্য ওয়াইল দোজখ, যারা তাদের নামাজে অমনোযোগী। নামাজ আমাদের তখনই ফল দিবে যখন সত্যিকার অর্থে নামাজ আদায় করতে পারবো। ইসলামের গোড়ার দিকে তাকালে দেখব বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন নামাজের ইমাম বা নেতা। সাহাবায়ে কেরাম হযরত রাসুল (স.)-এর সহবতে যাওয়ার পর তাঁর আত্মার সূক্ষ্মাশক্তি বা ফায়েজের প্রভাবে শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত হয়ে একগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করতেন।

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনজীবনদানকারী সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন- “পবিত্র কুরআনে নামাজ কায়েম করার কথা বলা হয়েছে, নামাজ পড়ার কোনো বিষয় নয়। আমরা যখন নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে, দেহ ও মন একত্রিত করে নামাজ আদায় করব, আমাদের মাঝে তখন আহম্মদি চরিত্র ফুটে উঠবে। বস্তুত নামাজ মানুষকে আহম্মদি চরিত্র অর্জনের শিক্ষা দেয়। আর এই আহম্মদি চরিত্র অর্জনের জন্যই মুসলমানদের উপর নামাজ ফরজ করা হয়েছে।” যেমন- আমরা যখন নামাজে দাঁড়াই তখন তা আরবি ‘আলিফ’ অক্ষরের মতো, যখন রুকুতে যাই তখন তা আরবি ‘হা’ অক্ষরের মতো, যখন সিজদায় যাই তখন তা আরবি ‘মিম’ অক্ষরের মতো, আবার যখন বসি তখন উহা আরবি ‘দাল’ অক্ষরের মতো। এভাবে ‘আলিফ হা-মিম-দাল’ এই অক্ষরগুলোর সমন্বয়ে হয় ‘আহমদ’। আর এটি হলো- হযরত রাসুল (সা.)-এর চরিত্র অর্জন করা, নিজের আমিত্ব ও অহংকারকে সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য করা।


এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জীবনে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব-৩৩: আয়াত ২১) যখন আমাদের মাঝে আহম্মদি চরিত্র প্রকাশ পাবে, তখন অবশ্যই নামাজে আমাদের আল্লাহর সাথে মি‘রাজ হবে।
নবি রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ মহান আল্লাহর প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি হওয়ায় তাঁদেরকে সার্বক্ষণিক আল্লাহর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। তাঁরা জানেন কীভাবে ইবাদত করলে আল্লাহ্ কবুল করবেন। কীভাবে ডাকলে মহান প্রভু আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। হাকিকতে নামাজ আদায় করার পদ্ধতি আল্লাহর প্রেরিত মহামানব গণের সান্নিধ্যে গিয়ে শিখতে হবে। একা একা এই পদ্ধতি শিখা যাবে না।


আল্লাহর মহান বন্ধু মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মানুষকে সেই পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর নিয়ম অনুসরণ করে নামাজ আদায় করলে নামাজের মধ্যে দুনিয়ার কোনো চিন্তা আসে না। ফলে নামাজে পরিপূর্ণ ফায়েজ বরকত ও রহমত হাছিল করা যায়। এমনকি কেউ কেউ নামাজে মু’মিন ব্যক্তির জন্য মি‘রাজ এই হাদিসের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। আল্লাহর মহান বন্ধু মহান সংস্কারক, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবনদর্শন অনুযায়ী মানুষকে এলমে শরিয়তে, তরিকত, হাকিকত ও মারফতের আলোকে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ও নির্দেশনা দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করে গড়ে তুলেন।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের প্রধান চারটি শিক্ষার মধ্যে নামাজে হুজুরি অন্যতম। তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসুল হওয়ার শিক্ষা দিতেন। তাঁর কাছে এসে অন্তরের কলুষতা দূর হতো। তাঁর শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করলে পাপের চিন্তা চলে যায় এবং সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হয়ে ক্বালবে আল্লাহর নামের জিকির জারি করে দুনিয়ার চিন্তামুক্ত হয়ে একাগ্রতার সাথে নামাজ কায়েম করা সম্ভব হয় এবং একজন মানুষ প্রকৃত আশেকে রাসুল হয়ে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
[লেখক: ইসলামি গবেষক]

সম্পর্কিত পোস্ট