Cancel Preloader

পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি

মুহাম্মদ জহিরুল আলম– একমাত্র আল্লাহ্ এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। সবই তাঁর ইচ্ছার অধীন। তিনি মহা পরাক্রমশালী, যাঁর ডান হাত মোবারকের মুঠোয় সাত আসমান, আর বাম হাত মোবারকের মুঠোয় সাত জমিন। নুরময়সত্তা আল্লাহ্ স্বরূপে বিদ্যমান থেকেই জগত সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করলেন। তাই হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন, “আমি ছিলাম গুপ্ত ধনাগার। অতঃপর আমি পছন্দ করলাম যে, নিজেকে প্রকাশ করব। তারপর (নিজে পরিচয় প্রকাশের মানসে) সৃষ্টিজগত সৃজন করলাম।” (তাফসীরে মাজহারী ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮০) সকল সৃষ্টির জীবনীশক্তি আল্লাহ্ এর ঐ নুরময় সত্তা। আল্লাহ্ এর নুরময় সত্তা থেকে ‘নুরে মোহাম্মদী’ সৃষ্টি। আর ‘নুরে মোহাম্মদী’ থেকে সমগ্র সৃষ্টি জগৎ সৃজন করা হয়েছে।


“মহান আল্লাহ্র নুরময় সত্তা সর্বকালে মহামানবগণের হৃদয়ে অবস্থান করে সমকালীন যুগের মানুষকে ঐ নুর বা আলোর চরিত্রে চরিত্রবান করে যাচ্ছে। অর্থাৎ আল্লাহ্র নুরের সত্তা থেকে সৃষ্ট নুরে মোহাম্মদীকে ধারণ করেই সর্বকালে সর্বযুগে নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ হেদায়েতের মহান দায়িত্ব পালন করেন। মূলত ঐ প্রজ্বলিত প্রদীপ যখন যে মহামানব অর্থাৎ নবি-রাসুল এবং অলী-আল্লাহ্ হৃদয়ে ধারণ করেছেন, তখন ঐ মহামানবের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর প্রজ্বলিত প্রদীপের আলো দ্বারা নিজের হৃদয়কে আলোকিত করে মু’মিন হতে হয়। সর্ব যুগে মু’মিন হওয়ার এটাই খোদায়ি বিধান। এ পদ্ধতি অনুসরণ করেই সাহাবায়ে কেরাম মু’মিন হয়েছেন। তারা হযরত রাসুল (সা.)-এর সহবত লাভ করে তাঁর ক্বালবের প্রজ্বলিত প্রদীপ হতে নিজেদের হৃদয়ে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।” (তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৯) পবিত্র কুরআনে দয়াময় আল্লাহ্ বলেন, “আমি তোমাদের নাফসির মোকামে (ক্বালবের সপ্তম স্তর) অবস্থান করি, তবুও কি তোমরা দেখ না?” (সূরা আয্ যারিয়াত ৫১: আয়াত ২১) আল্লাহ্র রাসুল (সা.) ফরমান, “মু’মিনের হৃদয় আল্লাহ্র আরশ।” (তাফসীরে ইবনে আরাবী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৯) অর্থাৎ নুরময় সত্তা আল্লাহ্ মু’মিন ব্যক্তির হৃদয়কে আরশ বানিয়ে তিনি নিজে তথায় অবস্থান করেন। দয়াময় আল্লাহ্ এ আরশের প্রতিপালক। জগৎশ্রেষ্ঠ সুফিগণ বলেন- “আল্লাহ্র প্রেরিত মহামানব তথা নবি, রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণের ক্বালব বা হৃদয় আল্লাহ্র আরশ।”


নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণ মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শকরূপে প্রেরিত হয়েছেন। নবুয়ত পরবর্তী যুগে এর অবস্থা কী তা ব্যাখ্যা করে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন- “হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর জগতে আর কোনো নবি-রাসুল আসবেন না। এরপরে শুরু হয়েছে বেলায়েত বা বন্ধুত্বের যুগ। নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পর থেকে অলী-আল্লাহ্গণ হলেন মানুষের জন্য মোর্শেদ বা পথপ্রদর্শক।” হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “নিশ্চয় মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ্ এই উম্মতের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন, যিনি তাদের ধর্মকে সংস্কার করে সজীব ও সতেজ করবেন।” (আবু দাউদ শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৬)


একবিংশ শতাব্দীর শিরোভাগে পৃথিবীর মানুষকে শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তির পথ প্রদর্শন করে নুর বা আলোর চরিত্রে চরিত্রবান করে গড়ে তোলার জন্য নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহকরূপে, যুগের ইমামের সুমহান দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান। জগৎশ্রেষ্ঠ এ মহামানব ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর ২৩তম বংশধর।


সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট কুসংস্কারগুলো দূর করে হযরত রাসুল (সা.)-এর হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে জগতের বুকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি দয়াল রাসুল (সা.) সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত সত্য তুলে ধরে মানুষকে ‘আশেকে রাসুল’ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র মহামানব যিনি দয়াময় আল্লাহ্ এর প্রকৃত স্বরূপ জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরে প্রমাণ করেছেন- “মহান আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর নুরের রূপ রয়েছে।” এ বিষয়ে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক ৮খন্ড তাফসীর শরীফ রচনা করেছেন।

মহান আল্লাহ্ মহামানবগণকে তথা নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্দেরকে বিশেষ লকব (পদবি) প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেন, তেমনি ঘটেছে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের জীবনে। তিনি ১৯৮৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রহমতের সময় মহান আল্লাহ্ পাকের পক্ষ হতে জামানার মোজাদ্দেদ বা সংস্কারকের দায়িত্ব পান; ১৯৮৮ সালের ১০ই মহররম আশুরার দিবসে যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন; পরবর্তীতে বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.) তাঁকে ১৯৮৯ সালের ৫ই এপ্রিল রহমতের সময় ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে বিভূষিত করেন; ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর হযরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক সমস্ত নবি-রাসুলের বেলায়েত ও ধর্ম পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর, শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি মহান আল্লাহ্ চাঁদে প্রকাশ করেন। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজও এ মহামানবের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি পূর্ণিমার চাঁদে দেখতে পাচ্ছেন।


পূর্ণিমার চাঁদে একজন মহামানবের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে দয়াময় আল্লাহ্ এমন ঘটনা আর ঘটাননি। কিন্তু এ ঘটনার মধ্য দিয়ে মূলত আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে তাঁর পানেই আহ্বান করছেন। ২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদ হতে প্রতি শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে একজন মহামানবের জ্যোর্তিময় চেহারা মোবারক দেখা যাচ্ছে। সমগ্র বিশ্বের অগণিত মুক্তিকামী মানুষ পূর্ণিমার চাঁদে যে মহামানবের চেহারা মোবারক দেখছেন তিনি যুগের ইমাম, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। যুগে যুগে আল্লাহ্র প্রেরিত মহামানবগণ তাঁদের হৃদয়ে সিরাজুম মুনিরের নুর ধারণ করেন; তাঁরা মানুষ হিসেবে আমাদের মাঝে অবস্থান করলেও তাঁরা দয়াময় আল্লাহ্র বন্ধু। তাঁদের হৃদয় মহান আল্লাহ্র আরশ। এটা বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য নিয়ামত।
সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের কর্মময় গৌরবোজ্জ্বল জীবন বিশ্লেষণ করলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করেন, তিনিই যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব। যুগ যুগ ধরে আমরা সবাই বিশ্বাস করেছিলাম আমাদের স্রষ্টা অস্তিত্বহীন নিরাকার, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) একক ব্যক্তি হয়ে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের এ বিশ্বাসের বিপরীতে অবস্থান করে প্রমাণ করেছেন আমাদের মহান আল্লাহ্ অস্তিত্বহীন নিরাকার নন, তাঁর অপরূপ সুন্দর নুরের আকার রয়েছে। পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি তারই পুরস্কার। মুক্তিকামী মানুষেরা পূর্ণিমার চাঁদে মোর্শেদকে দেখে সংবর্ধনা দেন। বহির্বিশ্বের ৫০টি দেশ-সহ বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার আশেকে রাসুলেরা স্বতস্ফূর্তভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পূর্ণিমায় বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।


বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আজও প্রতি পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবির প্রকাশ জগদ্বাসীর জন্য মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। আমাদের প্রিয় পৃথিবী আজ ব্যাধিগ্রস্ত। মহান প্রভু অত্যন্ত স্পষ্টভাবে মানবজাতিকে স্মরণ করে দিচ্ছেন, সৃষ্টি তার স্রষ্টাকে ভুলে গিয়ে কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকলে তার পরিণাম কি হতে পারে। সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, “মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেননি। আমরা কৃতকর্মের জন্যই ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছি।” সমস্ত পৃথিবীর জন্য চাঁদ একটিই। পূর্ণিমার চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর ঝর্ণাধারা সমস্ত পৃথিবীকেই আলোকিত করে। দয়াময় আল্লাহ্ যেমন মহাজ্ঞানী, নিজের পরিচয় প্রকাশের জন্য ঠিক তেমনি মনোহর মাধ্যম বেছে নিয়েছেন। দয়াময় আল্লাহ্, পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাটের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক দেখিয়ে, ধর্মকে দয়া করে আরো সহজ করে দিলেন। যাতে মু’মিন নর-নারীগণ নয়নভরে তা প্রত্যক্ষ করে আল্লাহ্ এর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় লাভ করতে পারেন।


সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান ২৮শে ডিসেম্বের ২০২০খ্রি. সোমবার ওফাত লাভ করেন। সঠিকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য ২৭শে ডিসেম্বর ২০২০খ্রি., রবিবার উপস্থিত ৪ পুত্র, ২ কন্যা, তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্রবধূ ও খাদেমদের সম্মুখে কতিপয় নির্দেশনামূলক অছিয়ত প্রদান করেন। তিনি অছিয়তে স্পষ্ট ঘোষণা দেন, “আমি মেজো হুজুরকে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। আর তোমরা ৩ ভাই ও ২ বোন তাঁকে সহযোগিতা করবে।” মানবজাতির মুক্তির জন্য দয়াময় আল্লাহ্ যখন যে মহামানব প্রেরণ করেন তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যুগে যুগে এটিই ছিল বিধান, আজও এর ব্যতিক্রম নয়।
[লেখক: পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ]

সম্পর্কিত পোস্ট