Cancel Preloader

বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন ২০২২: একটি বিশ্লেষণী পর্যালোচনা


শাহ শিবলী মো. নোমান
বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের ইতিবৃত্ত

‘আশেকে রাসুল’ শ্রুতিমধুর এই কথাটির অর্থ হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমিক। বরং যেন আরও একটু বেশি কিছু। শুধুমাত্র ‘প্রেমিক’ শব্দটি দিয়ে আসলে রাসুল (সা.)-এর আশেক কথাটিকে পরিপূর্ণ চিত্রায়িত করা যায় না। রাহ্মাতুলি­ল আলামিন, হাবিবে খোদা হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রেমে মাতোয়ারা, দেওয়ানা, বেখুদি, বেকারার ইত্যাদি শব্দ দিয়ে হয়তো আশেকে রাসুল কথাটিকে কালির হরফে কিছুটা চিত্রায়ণ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। এটা আসলে হৃদয়ঙ্গমের একটা ব্যাপার। বোখারী শরীফের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) ফরমান: “যে ব্যক্তি নিজের পিতা-মাতা, সন্তানসন্ততি ও অন্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি ভালো না বাসবে, সে মু’মিন হতে পারবে না।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭, মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯) পবিত্র কালামুল­্লাহ শরীফে মহান আল­্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন- “নবি মু’মিনের নিকট তাদের জীবনের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৬) অন্যত্র উলে­খ করা হয়েছে, “হে রাসুল (সা.)! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল­্লাকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল­াহ্ তোমাদিগকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১) তাহলে দেখা যাচ্ছে, রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসাটা ইমানের অন্যতম প্রধান শর্ত এবং পাশাপাশি মহান আল­াহর ভালোবাসা ও ক্ষমা প্রাপ্তিরও প্রধান উপায়, যা পবিত্র কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।


অপরদিকে, ভালোবাসা ব্যাপারটা কোনো দলিল, প্রমাণ, শর্ত ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল নয়। সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো নিয়ম বা সীমা পরিসীমা হয় না। আর যেখানে ভালোবাসাটা রাহমাতুলি­ল আলামিনের প্রতি, সেখানে দলিল, সূত্র, শর্ত এগুলোর প্রশ্ন অবান্তর। একজন সত্যিকারের আশেকে রাসুল আহলে বাইত-এর সদস্য হওয়ার মর্যাদা লাভ করতে পারেন, যেমনটি পেয়েছিলেন, আশেকে রাসুল হযরত সালমান ফারসি (রা.)। উহুদের যুদ্ধে প্রিয় নবি (সা.)-এর কয়টি দাঁত মোবারক ভেঙে যাওয়ার সংবাদে নিজের সব কয়টি দাঁত ভেঙে ফেলেছিলেন আশেকে রাসুল ওয়ায়েস করনি (রহ.); জীবদ্দশায় একবারের জন্যও সামনাসামনি সাক্ষাৎ না হয়েও সেই ওয়ায়েস করনি (রহ.)-কে নবি (সা.) তাঁর পবিত্র জামা মোবারকের উত্তরাধিকার অছিয়ত করেছিলেন। জ্বলন্ত কয়লার উপর নবি প্রেমে মাতোয়ারা আশেকে রাসুল হযরত বিল­্লাল (রা.)-এর অবর্ণনীয় অত্যাচার সহ্য করার কাহিনি সবারই জানা। হিজরতের রাতে নিজের জীবনকে নির্দ্বিধায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড় করিয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর বিছানায় নিজেকে চাদরাবৃত করেছিলেন শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল­াহু ওয়াজহাহু। আসলে আশেকে রাসুল বা হযরত রাসুল (সা.)-এর আশেক কথাটিতে ‘আশেক’ বলতে সাধারণ কোনো প্রেমিক বুঝায় না। একজন আশেকে রাসুল হন নবি প্রেমে মাতোয়ারা, বেকারার ও বেখুদি।


এজিদী চক্রান্তে জগতের বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া রাসুল প্রেমকে পুনরায় জগতের মানুষের মাঝে সঞ্চারিত করতে হযরত রাসুল (সা.)-এর জামানার ১৪শত বছর পর ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে তাশরিফ নেন এই বাংলার বুকে মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)। মানুষের প্রতি উন্মুক্ত উদাত্ত আহবান জানালেন আশেকে রাসুল হওয়ার। নবি প্রেমের চর্চা হিসেবে রাসুলের শানে মিলাদের প্রচলনে নতুন গতি সঞ্চার করলেন। ধুমধামের সাথে ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) পালনসহ সমাজে নবি প্রেমের জোয়ার বইয়ে দিতে নিয়েছেন অসংখ্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এজিদী চক্রান্তে হাজার বছরে সমাজ থেকে অবলুপ্ত হযরত রাসুল (সা.)-এর শান মান পুনরুদ্ধারে অকাট্য দলিল প্রমাণ দিয়ে করেছেন সাড়া জাগানো সব সংস্কার। বিভিন্ন শ্রেণি গোষ্ঠীর তীক্ষ্ন বাক্যবান, রক্তচক্ষু, অপবাদ, লাঞ্ছনা, কুৎসা, নিন্দা, সমালোচনা, মামলা, হামলা মোকাবেলা করে, প্রায় দেড় হাজার বছরব্যাপী সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া রাসুল প্রেমের কালজয়ী সব নজির সৃষ্টি করেছেন এই মহামানব।


বিশ্বব্যাপী রাসুল প্রেমের ইতিহাসে ইতঃপূর্বে যা কখনো হয়নি, যা কখনো কারো চিন্তায় আসেনি তেমনি এক অদম্য স্রোতধারার গোড়াপত্তন করলেন তিনি। মানুষের চিন্তা ও মননের পাশাপাশি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নবি প্রেমের স্রোতধারা প্রবাহিত করার লক্ষ্যে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো প্রবর্তন ও আহবান করলেন ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’। ওফাতের পূর্বে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর তিনি আয়োজন করেছেন বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন। আর শুরু থেকেই তাঁর এই আয়োজনের প্রধান সহযোগী হয়ে নেপথ্য কারিগর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সূফী সম্রাটের ওফাত পরবর্তী মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর। সূফী সম্রাটের আহবানে প্রতিটি সম্মেলনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে দেশ ও বিদেশে সফর করে প্রচারণা, সম্মেলন চত্বর প্রস্তুত, সমাগত মানুষের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, তাবারুক ব্যবস্থাপনা, সকলের বসা ও নামাজের স্থানের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, ওজু-এস্তেঞ্জার ব্যবস্থা, সাধারণ জনগণ ও যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্নে রাখা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সার্বিক ব্যাপারে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা, মেধা, নিরলস শ্রম ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন।


বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন এবং ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা
শৈশবকাল থেকেই ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.)-কে শুধুমাত্র তাঁর পিতাই নয়, বরং আপন মোর্শেদ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)-এর মতো মোর্শেদ ভক্তির এমন জ্বলন্ত নজির বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। নিজের সকল আরাম আয়েশ, চাওয়া পাওয়া, ইচ্ছা অনিচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়ে এমনকি নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে আপন মোর্শেদের প্রতিটি ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছেন সর্বাগ্রে। নিজ মোর্শেদের একান্ত সহযোগী তো বটেই, পাশাপাশি প্রধান সারথি হয়ে সূফী সম্রাটের প্রতিটি কর্মযজ্ঞকে সুচারুরূপে করেছেন বেগবান ও সাফল্যমণ্ডিত।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) তাঁর স্বীয় মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমেদ (রহ.)-এর শুভ জন্মদিনকে উপলক্ষ্য করে প্রতিটি বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন আয়োজন ও উদ্যাপন করেছেন। এ প্রসঙ্গে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা উলে­খ না করলেই নয়। কেনো এক বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের পূর্বে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর সূফী সম্রাটের নিকট আরজি পেশ করে বললেন, “বাবাজান, আমি আপনার জন্মদিনকে উপলক্ষে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন করতে চাই।” একান্ত অনুরক্ত প্রাণপ্রিয় পুত্রের এমন আবদারে পুত্র স্নেহে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো সূফীদের বাদশাহর মন, উজ্জ্বল উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো তাঁর চেহারা মোবারক। স্বর্গীয় স্মিত হাস্যে মমতায় পরিপূর্ণ সুরে বললেন, শোনো পাগল ছেলের কথা! এরপর আদর মাখা কণ্ঠে বললেন, “ওটা তুমি তোমার সময়ে করো।” আশেক মাশুকের কী অভূতপূর্ব আলাপচারিতা! বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনকে প্রাধান্য দিতে দুই যুগের দুই মহান ইমামের কী অসাধারণ হৃদয়¯পর্শী আকুলতা! মারহাবা ইয়া রাসুলাল­্লাহ! মারহাবা ইয়া মোর্শেদানা! মারহাবা ইয়া কুদরত এ খোদা!


২০২০ সালের ২৭শে ডিসেম্বর, ওফাতের আগের দিন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান অছিয়তের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মোহাম্মদী ইসলামের পরিচালনার নেতৃত্বভার ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের নিকট অর্পণ করেন। সূফী সম্রাটের ওফাতে তাঁর সুবিশাল সংখ্যক ভক্ত অনুসারী আশেকে রাসুলগণ হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঐশী জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা, চারিত্রিক মাধুর্য ও দৃঢ়তা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, ধীশক্তি সম্পন্ন সুদৃঢ় বিচক্ষণ নেতৃত্ব এবং যুগোপযোগী ও সুদূরপ্রসারী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সকল আশেকে রাসুলকে তিনি পরম মমতায় মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শে নিজ ছায়াতলে সুশৃঙ্খলভাবে একত্রিত করতে সক্ষম হন। প্রাণাধিক প্রিয় আপন মোর্শেদ এবং পিতৃবিয়োগে গভীর শোকাহত শোকাচ্ছন্ন হলেও এক মুহূর্তের জন্যও ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর উপর অর্পিত মহান দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্মৃত হননি। একদিকে প্রাণাধিক প্রিয় মোর্শেদ ও পিতৃ শোক, অপরদিকে অর্পিত ঐশী দায়িত্ব। শোকাহত বুকে পাথর চাপা দিয়ে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়ে অহর্নিশি ডুবে যান নিজ দায়িত্ব পালনের মাঝে। মোর্শেদের আমানত কোটি আশেকে রাসুলের জীবন তরির পথকে প্রতি মুহূর্তে নিষ্কণ্টক, নির্বিঘ্ন, আলোকিত রাখার দায়িত্ব যে এখন তাঁরই উপর। আশেকে রাসুল হওয়ার দাওয়াত নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করা সহ গৃহীত নানা কার্যকরী পদক্ষেপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ-সহ সারা বিশ্বে প্রায় লক্ষাধিক নতুন আশেকে রাসুল ইমাম ড. কুদরত এ খোদার নেতৃত্বে মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শের অগ্রযাত্রায় শামিল হন।


এক নজরে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন-২০২২
পরপর ৩ বছর বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন না হওয়াতে আশেকে রাসুলদের মাঝে এই মহিমান্বিত সম্মেলনের জন্য তীব্র আকাংক্ষা তৈরি হয়। তৃষিত আশেক হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাতেই যেনো ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর ইচ্ছা প্রকাশ করলেন দেশ-বিদেশের আশেকে রাসুলদেরকে সাথে নিয়ে একটি মিলন মেলা করার। হৃদয়ের মণিকোঠায় বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপন মোর্শেদ, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন স্মরণে প্রথমবারের মতো আহবান করলেন বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন। ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২২ইং তারিখে সম্মেলনের দিন এবং ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলাধীন বাবে বরকত, দেওয়ানবাগ শরীফে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করেন। দীর্ঘ দিন পর বিশ্ব আশেকে রাসুল সম্মেলনের ডাক পেয়ে সারা বিশ্বের আশেকে রাসুলদের মনে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো। আনন্দে আত্মহারা আশেকে রাসুলগণ যার যার অবস্থান থেকে সম্মেলনের প্রচার ও প্রস্তুতিতে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন। দেশব্যাপী দেওয়াল লিখন, ব্যানার, ফেস্টুন, অনলাইন প্রচারণা ইত্যাদি সার্বিক প্রস্তুতিতে মনে হচ্ছিল এ যেনো এক স্বর্গীয় ঈদের আনন্দ আয়োজন। সম্মেলনের প্রায় ৩ মাস পূর্ব হতে পালাক্রমে ৫ সহস্রাধিক আশেকে রাসুল ভাইদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে প্রস্তুত হলো এই মহা মিলনমেলার সুবিস্তীর্ণ প্রান্তর। সম্মেলনের এক সপ্তাহ আগে থেকেই দেশ ও বিদেশ থেকে সম্মেলন প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকা হাজার হাজার আশেকে রাসুলদের খাওয়া, অজু গোসল ও নামাজ আদায় সহ সার্বিক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হলো। অত্যাধুনিক টেকনোলজির সর্বোচ্চ প্রয়োগে প্রস্তুত করা হলো চোখ জুড়ানো সুবিশাল মঞ্চ। অনুষ্ঠান মঞ্চের দূরবর্তী স্থানে স্থানে স্থাপন করা হয়েছে ২৮৮ ইঞ্চি মাপের দৃষ্টিনন্দন মনিটর। মূল মহাসড়ক হতে সম্মেলন প্রাঙ্গণ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরত্বের পথের স্থানে স্থানে স্থাপন করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক ক্যাম্প। বৃদ্ধ ও অসুস্থদের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে অর্ধ শতাধিক স্থানীয় যানবাহন, একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সহ মেডিকেল টিম, ইমার্জেন্সি ওষুধ এবং অ্যাম্বুলেন্স। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় স্থাপন করা হয় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। আগতদের মাঝে তাবারুক বিতরণের জন্য সম্মেলন প্রাঙ্গণের দুই পাশে প্রস্তুত করা হয় খাবারের ২টি আলাদা সুবিশাল প্যান্ডেল। সম্মেলন প্রাঙ্গণের চতুর্পাশের গ্রামের জনসাধারণ, জন প্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা ও সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে দৃষ্টি রাখা হয়েছে স্থানীয় জনসাধারণের সুবিধা অসুবিধার প্রতিটি দিক। মহাসড়ক এবং স্থানীয় সড়ক যানজট মুক্ত রাখতে সাড়ে ৩ হাজার বাস ও গাড়ি রাখার জন্য আলাদা মাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী মহাসড়কসহ প্রতিটি রাস্তা ও মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত হয়েছেন সহস্রাধিক আশেকে রাসুল। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের উল্লিখিত সকল কিছু স¤পন্ন হয়েছে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা, পরিকল্পনা, তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায়। প্রধান প্রবেশ দ্বারের সম্মুখে সম্মেলনের এক দিন আগেই সূফী সম্রাটের বর্ণাঢ্য জীবনের নানাদিক তুলে ধরে ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর উন্মুক্ত করেন ‘ঐশী দর্পণ’ নামে ফটো গ্যালারি।


বিদেশ থেকে আগত নবি প্রেমে মাতোয়ারা আশেকে রাসুলগণ পৌষের কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে ৫ দিন পূর্ব হতে সুবিশাল সম্মেলন প্রাঙ্গণে খালি পায়ে হেটে হেটে প্রস্তুতি কর্মে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক কর্মী ভাইদেরকে নিজেদের হাতে প্রস্তুতকৃত সুস্বাদু চা, কফি, বিস্কুট, কেক খাইয়ে উজ্জীবিত করেছেন দিনে রাতে সর্বক্ষণ। বহির্বিশ্বের প্রায় ৩০টিরও অধিক দেশ হতে আশেকে রাসুল প্রতিনিধিগণ অত্র সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন।


সম্মেলনের আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা থেকে আশেকে রাসুলেরা নিজেরা একত্রিত হয়ে বাস রিজার্ভ করে সম্মেলন চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। সম্মেলনের দিন সকালেই সম্মেলন চত্বর কানায় কানায় পুর্ণ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে দরবার শরীফের সীমানা ছাড়িয়ে আগত আশেকে রাসুলেরা গ্রামের বাজার ও আশপাশের অন্যান্য উন্মুক্ত স্থানগুলোতে অবস্থান নিতে থাকেন। অবাক করা বিষয় ছিল এই যে, স্থানীয় গ্রামবাসী আগতদেরকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অতিথির মতোই সম্মান ও সহযোগিতা করেন। আসলে সেদিন স্থানীয় ও আগত সকলের মাঝেই এক স্বর্গীয় কোমলতা পরিলক্ষিত হচ্ছিল, আশেকে রাসুলদের মিলন মেলা বুঝি এমনই হয়!


সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর স্বপ্ন ছিল মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ এবং নবি প্রেমের এই জোয়ার বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার, প্রতিটি প্রান্তে আশেকে রাসুল তৈরি করার। ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)-এর সুদূরপ্রসারী কর্ম পরিকল্পনা ও সুদৃঢ় পদক্ষেপে সূফী সম্রাটের সেই স্বপ্ন আজ আর স্বপ্ন নয়, তা আজ দিবালোকের ন্যায় বাস্তব। অন লাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মুহূর্তের মাঝেই ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) তাঁর প্রতিটি কর্মের সাথে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের প্রতিটি মানুষকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হচ্ছেন। মুহূর্তে মাঝেই মোহাম্মদী ইসলামের প্রতিটি শিক্ষা ও দিক নির্দেশনা পৌঁছে যাচ্ছে ৮০০ কোটি মানুষের মধ্য হতে প্রতিটি সত্যান্বেষী বিদগ্ধ প্রাণে। ২০২২ সালের এবারের এই যুগান্তকারী আশেকে রাসুল সম্মেলনের শুরু থেকেই অন লাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ১৩২টি দেশে সরাসরি স¤প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল, যারা সময়-সুযোগের অভাবে সম্মেলনে আসতে পারেননি, তারা সকলেই স্ব স্ব স্থানে থেকেই সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ করেছেন। বিশেষ করে আশেকা রাসুল বোনেরা নিজ নিজ বাড়িতে থেকেই অন লাইনের মাধ্যমে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বহির্বিশ্বের দেশগুলোর খানকাহ কিংবা নিজ বাড়িতে আশেকে রাসুলেরা এবং দেশের বিভিন্ন এলাকাতে শরিয়তের বিধিবিধান মেনে হাজার হাজার বোনেরা একত্রিত হয়ে নিজেরাই তাবারুক প্রস্তুত করে অন লাইনে বড় মনিটরে সম্মেলন উপভোগ করেছেন।


সকাল ৭:৪০-এ পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর জাতীয় ও মোহাম্মদী ইসলামের পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর সম্মেলন মঞ্চ হতে সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর শুভ জন্মদিনের আনন্দে ঈদ মোবারক ধ্বনিতে এবং শানে মোর্শেদ এর সংগীতে উপস্থিত সকলে আনন্দে উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের দিকনির্দেশনায় রাসুল প্রেমের যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং আশেকে রাসুলদের কর্মকাণ্ড কতটা জোরালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে ইত্যাদি বিষয় বিদেশ থেকে আগত প্রবাসী বাঙালি এবং বিদেশী আশেকে রাসুলগণ তাদের মনের আবেগ অনুভূতি ব্যক্ত করেন। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, নবীন ও প্রবীণ অধ্যাপক, পিএইচডি গবেষক, সিনিয়র আইনজীবী, সাংবাদিক, বিশিষ্ট আলেমগণ, সাবেক সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ রাসুল প্রেমের মাহাত্ম্য, সূফী সম্রাটের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন, আধ্যাত্মিকতা-সহ একে একে তাদের আবেগ অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। জুমার নামাজের পূর্বে অনুষ্ঠিত হয় মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ। এরপর সামাগত লক্ষাধিক আশেকে রাসুলদেরকে সাথে নিয়ে পবিত্র জুমার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেন মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর। নামাজের পর মনিটরে প্রদর্শন করা হয় সূফী সম্রাটের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের উপর একটি চমৎকার ডকুমেন্টারি।


অবশেষে উপস্থিত হয় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। লক্ষাধিক আশেকে রাসুলের সমবেত মুহুর্মুহু স্বাগত শ্লোগানের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আহবানকারী, সূফী সম্রাটের সুযোগ্য উত্তরসূরি, মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন এবং তাঁর মহা মূল্যবান বাণী মোবারক প্রদান করেন। তিনি তাঁর নসিহতে উলে­খ করেন কীভাবে একজন মানুষ সত্যিকারের আশেকে রাসুলে পরিণত হতে পারেন। তিনি বলেন, শুধু আশেকে রাসুল নাম ধারণ করলে বা মুখে মুখে নিজেকে আশেকে রাসুল দাবী করলেই আশেকে রাসুল হওয়া যাবে না। তিনি কার্যকরভাবে আশেকে রাসুল হওয়ার তাগিদ প্রদান করেন। নিজের সারা জীবনের কৃত পাপের জন্য মহান আল­াহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, নামাজান্তে মোরাকাবার মাধ্যমে নিজের কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ ও মাৎসর্য- এই ছয়টি রিপু দমন; মিথ্যা, জুলুম, পরনিন্দা, পরচর্চা, গীবত ইত্যাদি পরিহারের মাধ্যমে নিজেকে চরিত্রবান করে গড়ে তোলার প্রতি তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। এভাবেই একজন পাপী মানুষ পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আলোকিত হৃদয়ের সত্যিকারের আশেকে রাসুলে পরিণত হতে পারেন। আল­্লাহর অলী ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের মর্ম¯পর্শী বাণী শ্রবণে উপস্থিত সকলেই অনুতাপে বিগলিত হয়ে পড়েন। অনেকেই আধ্যত্ম প্রেমের ফায়েজে চিৎকার করে গড়াগড়ি করতে থাকেন। ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের আহবানে সারা দিয়ে লক্ষাধিক আশেকে রাসুল অশ্রুসিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেদেরকে চরিত্রবান করার এবং তাঁর প্রদত্ত দিক নির্দেশনা মেনে চলার অঙ্গীকার করেন। সকলেই তাঁর সাথে সাথে উচ্চ স্বরে মহান আল­াহ্র দরবারে তওবা করে ক্ষমা চান।

অবশেষে তিনি মহান আল­্লাহর দরবারে সকলের জন্য ক্ষমা ও দয়া প্রার্থনা করে মুনাজাত করেন। মুনাজাত শেষে তিনি স্থানীয় প্রশাসন, গ্রামবাসী, স্বেচ্ছসেবক সহ সকলের সহযোগিতা ও উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের আহবানে দেশ বিদেশের লক্ষাধিক আশেকে রাসুলের অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন স্মরণে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন। এ যেন জিয়নকাঠি এক ঐশী মহাপুরুষের ছোঁয়ায় উন্মোচিত উদ্ভাসিত হলো রাসুল প্রেমের আগামী দিনের ইতিহাসের এক নয়া দিগন্ত।


বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
জগতের কোনো আদর্শই নিজে নিজে চলতে বা সম্প্রসারিত হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক কর্মযজ্ঞ, আনুষ্ঠানিকতা, আদর্শটিকে নিজের ভিতর ধারণ ও লালন এবং সর্বোপরি হাতে কলমে বাস্তব চর্চা। লাখো লোকের সমাগমে আদর্শটির গুরুত্ব, তাৎপর্য, মাহাত্ম্য আলোচনা উপস্থাপনার মাধ্যমেই সেটি ছড়িয়ে পড়ে দশ দিগন্তে। সে বিষয়ে সমাজে তখন একটি জাগরণ তৈরি হয়। আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন এর ব্যতিক্রম নয়। নবি প্রেমের আকর্ষণে একটি নির্দিষ্ট গতি ধারায় নিজেকে পরিচালিত করার লক্ষ্যেই আশেকে রাসুলগণ একত্রিত হন এই সম্মেলনে, যেখানে রাসুল প্রেমের মাহাত্ম্য বর্ণনা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। এখানে শুধু নবির গুণগানই করা হয় না; বরং এখানে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় কীভাবে একজন সাধারণ মানুষ নিজের মাঝে নবির প্রতি ভালোবাসাকে ধারণ ও লালন করতে পারেন, চর্চা করতে পারেন। কীভাবে একজন মানুষ হযরত রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জন করে নিজেকে সত্যিকারের আশেকে রাসুল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।


এই সম্মেলনে দয়াল রাসুল (সা.)-এর প্রতি একজন আশেকের প্রেম মহব্বত দেখে আরেকজন সাধারণ মানুষ উদ্বুদ্ধ হন। শুধু তাই নয়, আশেকে রাসুলগণ নিজেদের মাঝেই এক স্বর্গীয় প্রেমের খেলায় মেতে উঠেন। এক ভাই আরেক ভাইয়ের সহযোগী হয়ে উঠেন। সবার মাঝেই একটা সহযোগী মনোভাব গড়ে উঠে। অপর আশেকে রাসুল ভাইকে দেখে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। মনে হয় যেনো, ‘আহারে! তার মতো আশেক যদি হতে পারতাম’! ফলে সেই ভাইটির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে সহযোগী ও পার¯পরিক শ্রদ্ধাবোধের চর্চা হয়, ফলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে সমাজের সকল ক্ষেত্রে। অথচ আমাদের সমাজে পারষ্পারিক এই শ্রদ্ধাবোধের খুবই অভাব। আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনই পারে সমাজের চিত্র পাল্টে দিতে। শুধুমাত্র সমাজ জীবনেই নয়, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম। হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার গভীরতা ও মাহাত্ম সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের উদ্বৃতি দিয়ে পূর্বেই উলে­খ করা হয়েছে যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর আশেক হওয়াটা ইমানের অন্যতম প্রধান শর্ত। মহান আল­্লাহ ও তাঁর রাসুল আমাদেরকে আশেকে রাসুল হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর আশেক হওয়ার ব্যাপারটি শুধুমাত্র সৃষ্টির মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বয়ং স্রষ্টা মহান আল­্লাহ রাব্বুল আ’লামিন নিজেই তাঁর প্রিয়তম হাবিবকে ভালোবাসেন। সূরা আহযাবের ৫৬নং আয়াতের বর্ণনায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আল­্লাহ বলেন- “নিশ্চয় আল্লাহ্ স্বয়ং ও তাঁর ফেরেশতারা নবির উপরে দরুদ পাঠ করেন, হে মু’মিনগণ! তোমরাও তাঁর উপর দরুদ পড়ো এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো।” ভালোবাসার কী অপূর্ব প্রদর্শনী! মারহাবা ইয়া রাসুলাল­্লাহ। বিশ্ব আশেকে রাসূল (সা.) সম্মেলনে রাহমাতুলি­ল আ’লামিন দয়াল হযরত রাসুল (সা.)-এর চারিত্রিক মাধুর্য এবং তাঁর সার্বিক গুণাবলি ও আদর্শ গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়। রাসুল (সা.)-এর আলোচনার গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহান আল­্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন-“[হে রাসুল (সা.)] আমি আপনার খ্যাতিকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি।” (সূরা আল ইনশিরাহ ৯৪: আয়াত ৪) সুতরাং ¯পষ্টতই পবিত্র কুরআনে মহান আল­্লাহর ঘোষণা মতেই বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম।
শেষ কথা


আমরা অধম নালায়েক পাপী তাপী মানুষেরা যেন মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের দিকনির্দেশনায় নিজেকে চরিত্রবান আলোকিত আশেকে রাসূলে পরিণত করে মহান আল­্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি; পাশাপাশি, ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা আ) হুজুরের নেতৃত্বে বিশ্বময় আশেকে রাসুল ও মোহাম্মদী ইসলামের অগ্রযাত্রায় নিজেদেরকে শামিল রাখতে পারি – মহান আল­্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা জানাই। আমিন।
[লেখক: ইসলামি গবেষক, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট]

সম্পর্কিত পোস্ট