Cancel Preloader

‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ কিতাবটি লেখার ইতিবৃত্ত – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

ছাত্রজীবন থেকেই ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমি লিখতে পছন্দ করতাম। এই ক্ষেত্রে আমার রোল মডেল হলেন আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান। দয়াল বাবাজান তাঁর মোর্শেদের দরবারে থাকাকালীন সাধনা জীবনে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপনাপূর্বক ৬টি বাংলা ভাষায় কিতাব রচনা করেন, যার একটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় এবং পরবর্তীতে ধর্মের সংস্কারকের দায়িত্ব লাভ করার পর তিনি ১০,৯৯৩ পৃষ্ঠা সংবলিত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ ৮খণ্ডসহ আরো কিতাবাদি রচনা করেন। দয়াল বাবাজান তাঁর জীবদ্দশায় সর্বমোট ১৫টি কিতাব মানবজাতিকে উপহার দিয়েছেন, যা অধ্যয়ন করে রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ সংবলিত মোহাম্মদী ইসলামের শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফাত সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে। দয়াল বাবাজান ধর্মের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে আমাকে কিতাব লেখার জন্য উৎসাহ দিতেন। জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানবের অনুপ্রেরণায় ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০১২ সালে সর্বপ্রথম রচনা করি ‘মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়’ নামক কিতাবটি। কিতাবটি প্রকাশের পূর্বে এর পাণ্ডুলিপি দয়াল বাবাজানের হাত মোবারকে অর্পণ করি। দয়াল বাবাজান অত্যন্ত খুশি ও সন্তুষ্ট হন। দয়াল বাবাজান আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্রের সদস্যদের নির্দেশ দেন যে, কিতাবের পাণ্ডুলিপিটি পড়ে বাবাজানকে শোনানোর জন্য। তারা বাবাজানকে পাণ্ডুলিপিটি পড়ে শোনান। দয়াল বাবাজান সন্তুষ্ট হয়ে নিজেই কিতাবটির জন্য শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেন। এতে করে কিতাব লেখার প্রতি আমার আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে যায়।


এরপর আমি মনস্থির করলাম ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ নামে আরেকটি কিতাব রচনার। মুলত আধ্যাত্মিক সাধনায় সফলতা লাভের জন্য সঠিকভাবে আমল ও তালিমের পদ্ধতি জানা অত্যাবশ্যক। এই বিবেচনা থেকে কিতাবটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘তালিম’ আরবি শব্দ, এর বাংলা অর্থ শিক্ষা, চর্চা, অভ্যাস ইত্যাদি। এই কিতাবটি একজন সাধককে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে কীভাবে সাধনা করতে হবে, তারই চর্চা ও অনুশীলনের দিক নির্দেশনা দিবে। এই কিতাবের মাধ্যমে ইসলামি শরিয়তের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে যেমন জ্ঞান লাভ হবে, তেমনি ক্বালবি এলেম তথা মারেফাত হাসিলের পদ্ধতিও জানার সুযোগ হবে।


‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ কিতাব রচনার প্রেক্ষাপট
আমি সবসময়ই ভাবতাম আশেকে রাসুল ভাই ও বোনদের জন্য এমন একটি কিতাব প্রয়োজন, যেই কিতাব অধ্যয়ন করে আশেকে রাসুলেরা মোহাম্মদী ইসলামের ৫টি স্তম্ভ তথা কালিমা, নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজের নিয়মকানুনসহ মহান আল্লাহ্কে লাভ করার অন্যতম মাধ্যম মোরাকাবা সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হতে পারবেন। এছাড়া মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ধর্ম পালনের জন্য কী কী করণীয় আছে, সেগুলো কিতাবের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হলে মুসলমানগণ একটি গাইড লাইন পাবেন, ফলে ধর্ম সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন। এতে করে সঠিকভাবে ধর্ম চর্চার মাধ্যমে ধর্মের প্রকৃত স্বাদ উপলদ্ধি করা যাবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ কিতাবটি আমি রচনা করি। এই কিতাবটি রচনার পূর্বে আমি দয়াল বাবাজানের অনুমতি গ্রহণ করি। তিনি খুশি হয়ে দয়া করে আমাকে লেখার অনুমতি প্রদান করেন। ২০১২ সালে কিতাবটি রচনার কাজ শুরু করি। প্রথম পর্যায়ে ৩০ পৃষ্ঠা লিখি। এরপর নিজের পড়াশোনা এবং দরবারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ততার দরুণ লেখার কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। সময় ও সুযোগ করে ধীরে ধীরে লিখতে থাকি।


দয়াল বাবাজানের ওফাতের ৬ মাস পূর্বে প্রাথমিকভাবে কিতাবটির লেখার কাজ শেষ করি। অতঃপর ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ কিতাবের পাণ্ডুলিপি দয়াল বাবাজানকে দেখানোর জন্য বাবে রহমতের ৩ তলায় হুজরা শরীফে যাই। সেসময় বাবাজান খাট মোবারকে বসা ছিলেন, আমি বাবাজানের হাত মোবারকে পাণ্ডুলিপিটি দিলাম, বাবাজান পাণ্ডুলিপিটির ১ম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত উল্টিয়ে দেখলেন। এরপর আমাকে কিতাবের সূচিপত্রটি পড়ে শোনানোর জন্য বললেন। আমি পুরো সূচিটি বাবাজানকে শোনালাম। এরপর বাবাজান পুনরায় কিতাবের পাণ্ডুলিপিটি তাঁর হাত মোবারকে নিয়ে আমার হাতে দিয়ে স্মিত হাস্যে বললেন, “এটা আমার সময় পারবা না, এটা তোমার সময় করিও।” আমি দয়াল বাবাজানকে কদমবুসি করে চলে আসলাম।
দয়াল বাবাজান ২০২০ সালের ২৮শে ডিসেম্বর, সোমবার ওফাত লাভ করেন। ওফাতের আগের দিন ২৭শে ডিসেম্বর, রবিবার সঠিকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য অছিয়ত করেন। তাঁর সর্বশেষ অছিয়তনামায় তিনি আমাকে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার নেতৃত্ব দেওয়ার সুমহান দায়িত্ব অপর্ণ করেন। মহান মোর্শেদের পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য দেশ ও বিদেশে ব্যাপকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করি এবং সেই সাথে ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ কিতাবটির পাণ্ডুলিপি আরো তথ্য সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে লেখায় মনোনিবেশ করি। কিন্তু দয়াল বাবাজানের ওফাতের পর থেকে বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার ও প্রসারে আমাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। ফলে কিতাবটির লেখা সম্পন্ন করতে আরো ২ বছর সময় লেগে যায়। মহান আল্লাহ্ এর অপার দয়ায় আমার ৩৮তম শুভ জন্মদিন অর্থাৎ ২০২৩ সালের শবে কদরের মহিমান্বিত রজনিতে (২৭শে রমজান, ১৪৪৪ হিজরি) ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ কিতাবটি প্রকাশ করি। উল্লেখ্য যে, এই কিতাবটি প্রকাশের পূর্বে এর পাণ্ডুলিপিটি দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দের নিকট প্রেরণ করি। তাঁরা পাণ্ডুলিপি পড়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাঁদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেন।


কিতাবটির আদ্যোপান্ত
‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ কিতাবটিতে সর্বমোট ১৩টি অধ্যায় রয়েছে। অধ্যায়গুলোতে যে বিষয়গুলো অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো-


প্রথম অধ্যায়: মোহাম্মদী ইসলাম
এই অধ্যায়টি পাঠ করে পাঠক মোহাম্মদী ইসলামের পরিচয়, বিলুপ্তির প্রেক্ষাপট এবং পুনর্জীবন লাভের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। এছাড়া মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী মোবারক এবং তাঁর প্রধান শিক্ষাগুলো সম্পর্কে জানার সুযোগ হবে।


দ্বিতীয় অধ্যায়: ইমান
আরবি ইমান শব্দের বাংলা অর্থ বিশ্বাস, দৃঢ় প্রত্যয়। ইমানের আভিধানিক অর্থ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা। মূলত প্রকৃত ইমান হচ্ছে একটি নুর বিশেষ। এই অধ্যায়ে ইমানের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং ৫ কালেমার হাকিকত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।


তৃতীয় অধ্যায়: সালাত (নামাজ)
এই অধ্যায়ের প্রথমে ওযু ও তায়াম্মুম সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এরপর আযান, আযানের দোয়া, ইকামত দেওয়ার নিয়ম, সালাতের সংজ্ঞা এবং এর হাকিকত, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, আহকাম ও আরকানসমূহ বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া সালাতের মাধ্যমে আহমদি চরিত্র অর্জনের পদ্ধতি এবং নামাজের শুরুতে করণীয়, পঠিত দোয়া, তাসবিহ ও অন্যান্য আমলসমূহ সম্পর্কে জানা যাবে। আরো জানা যাবে নামাজে নিয়ত করার পদ্ধতি, জামাতে নামাজে ইমাম ও মুক্তাদির নিয়তের ভিন্নতা, ৫ ওয়াক্ত নামাজের আমল, রহমতের ওয়াক্তের আমল, জুমার নামাজ, লাইলাতুল বরাতের নামাজ, তারাবির নামাজ, লাইলাতুল ক্বদরের নামাজ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ, সালাতুশ শুকুর, কসর নামাজ এবং কাযা নামাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা।


চুতর্থ অধ্যায়: সাওম (রোজা)
এই অধ্যায়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে রোজার সংজ্ঞা, রোজাদারের শ্রেণিবিন্যাস, হাকিকতে রোজা, রোজার ফরজসমূহ, রোজার নিয়ত, সেহরি ও ইফতারের বিবরণ, ইফতারের দোয়া, রোজা ভঙ্গের কারণ, যে সকল কারণে রোজা না রাখা বৈধ, রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া এবং ফিতরা সম্পর্কিত বিষয়।


পঞ্চম অধ্যায়: যাকাত

এই অধ্যায় পাঠের মাধ্যমে পাঠকেরা যাকাতের সংজ্ঞা, যাকাতের নিসাব, যেসব বিষয়ে যাকাত দিতে হয়, যাকাত প্রদানের খাত, যাকাতের খাতসমূহের ব্যাখ্যা, যারা যাকাত পাওয়ার সঠিক হকদার ও হাকিকতে যাকাত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।


ষষ্ট অধ্যায়: হজ
এই অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজের বিস্তারিত বিবরণ যথা- হজের সংজ্ঞা, হজ ফরজ হওয়ার শর্তাবলি, হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ, হজের প্রকারভেদ, হজ আদায়ের নিয়ম ও ধারাবাহিক আমলসমূহ, বিদায়ি তাওয়াফ, উমরা আদায়ের পদ্ধতি এবং হজের হাকিকত সবিস্তারে উপস্থাপন করা হয়েছে।


সপ্তম অধ্যায়: কোরবানি ও আকিকা
মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হলো পবিত্র ঈদুল আজহা। এই দিনে সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু জবেহ করার মাধ্যমে কোরবানি দিয়ে থাকেন। এই অধ্যায়ে কোরবানি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে, যেমন- কোরবানির সংজ্ঞা, যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব, কোরবানি করার উত্তম সময় ও মেয়াদকাল, কোরবানির পশুর বিবরণ, কোরবানি করার নিয়ম, কোরবানির মাংস বণ্টনের নিয়ম, কোরবানির হাকিকত ইত্যাদি। এছাড়া এই অধ্যায়ে আরো সন্নিবেশিত করা হয়েছে আকিকার বিবরণ, আকিকার পশু, জবেহ করার নিয়ম, আকিকা করার সময় আকিকার মাংসের বিধান, আকিকার মাংসের ব্যাপারে কুসংস্কার এবং আকিকা উপলক্ষ্যে শিশুদের প্রদত্ত হাদিয়া সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ।

অষ্টম অধ্যায়: দৈনন্দিন আমল
একজন সাধককে সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করে মনজিলে মকসুদে পৌঁছানোর জন্য দৈনন্দিন আমলের বিকল্প নেই। এই অধ্যায়ে দৈনন্দিন আমলের বিস্তারিত বিররণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এই অধ্যায় পাঠ করে সাধক জানতে পারবেন প্রত্যেক ওয়াক্তে ফরজ নামাজের পর মোনাজাত করার নিয়ম ও এর ফজিলত, ফাতেহা শরীফ পাঠের নিয়ম, ফজিলত ও মোনাজাত, নফল শরীফ ও ফাতেহা শরীফের মোনাজাতের ফজিলত, খতম শরীফের পাঠের নিয়ম ও ফজিলত, মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ পাঠের ফজিলত ও পাঠের পদ্ধতি, জন্মদিন ও বিবাহসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ, জানাজার পর ও দাফনের সময় মোহাম্মদী ইসলামের কাসিদা ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদ ধারণা।


নবম অধ্যায়: মোরাকাবা
মহান আল্লাহ্ এর সাথে যোগাযোগ ও তাঁর দিদার লাভ করার অন্যতম মাধ্যম হলো মোরাকাবা। এই অধ্যায়ে মোরাকাবা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এই অধ্যায় পাঠ করে জানা যাবে মোরাকাবার বিবরণ, সংজ্ঞা, গুরুত্ব ও ফজিলত, উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, মোরাকাবা করার পদ্ধতি ইত্যাদি। এছাড়া মোরাকাবার মাধ্যমে যেহেতু বিভিন্ন প্রকার ফায়েজ হাসিল করা যায়, তাই ফায়েজের বিবরণ, ফায়েজের নাম ও সময় সম্পর্কে জানা যাবে। শুধু তাই নয়, এই অধ্যায়ে মোরাকাবায় মোর্শেদের নিকট আজিজির উদাহরণ, হযরত রাসুল (সা.)-এর নিকট কাকুতি-মিনতির উদাহরণ এবং মোরাকাবায় মহান আল্লাহ্ এর নিকট প্রার্থনার উদাহরণ উপস্থাপন করা হয়েছে।


দশম অধ্যায়: বিবাহ
মহান আল্লাহ্ মানবজাতির বংশ বিস্তার এবং সুশৃঙ্খলভাবে বসবাস ও পারিবারিক দাম্পত্য বন্ধনের জন্য বিবাহের বিধান দিয়েছেন। বিবাহের নিয়ম-নীতি সম্পন্নের মাধ্যমে বৈধভাবে সমাজে দাম্পত্য জীবনের সূচনা হয়। এই অধ্যায়ে বিবাহ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই অধ্যায় পাঠের মাধ্যমে পাঠকগণ ইসলামে বিবাহের বিধান, বিবাহের আবশ্যকীয় বিষয়, বিবাহ পড়নোর নিয়ম, বিবাহের খুতবা সম্পর্কে জানতে পারবেন।


একাদশ অধ্যায়: শিশু সন্তানের নাম
বিবাহিত জীবনে পিতামাতার কোল জুড়ে শিশু সন্তানের আগমন হয়। ইসলামি বিধান মতে, সন্তান ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার পর পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো শিশু সন্তানের একটি অর্থবোধক নাম রাখা। তাই এই অধ্যায়ে নাম রাখার গুরুত্ব ও তাৎপর্য, সন্তানের মন্দ নাম রাখা নিষেধ, আল্লাহ্ এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম, ছেলে ও মেয়ে শিশুর অর্থবহ নাম ইত্যাদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এছাড়া ২০০টি নাম ছেলে শিশুর এবং ২০০টি মেয়ে শিশুর নাম বর্ণের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে, যেন পিতা ও মাতা সেই নামগুলো থেকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী নাম রাখতে পারেন।


দ্বাদশ অধ্যায়: মানত
মানত সকল নবি ও রাসুলের যুগে ছিল। মানত করা এবং কার্যসিদ্ধির পর মানত আদায় করার এই রেওয়াজ কেবলমাত্র মোহাম্মদী ইসলামে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মুসলিম জাতির আদি পিতা হয়রত ইব্রাহিম (আ.) প্রবর্তিত ইব্রাহিমী ইসলামেও ছিল। এই অধ্যায় পাঠ করে মানতের সংজ্ঞা, কুরআন ও হাদিসের আলোকে মানতের বিধান, মানত করার পদ্ধতি এবং মানত আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।


ত্রয়োদশ অধ্যায়: মৃত্যু
একজন মানুষ মায়ের গর্ভেই মহান আল্লাহ্্র পক্ষ থেকে জীবন লাভ করে এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তার দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি হয়। মানুষের মৃত্যু অবধারিত। এই অধ্যায়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে মৃত্যু সম্পর্কে আলোচনা, জানাজার বিবরণ, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি, কাফনের বিবরণ, কাফনের পরিধান করানোর নিয়ম, কবর খনন, কবর খননের পদ্ধতি, জানাজা নামাজের বিবরণ, জানাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম, কবরে লাশ রাখার নিয়ম, দাফনের পর দোয়া এবং কবর জিয়ারতের নিয়ম ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়েছে।


উপসংহার: ১৩টি অধ্যায় সংবলিত ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ কিতাবটি অধ্যয়ন করে পাঠকেরা মোহাম্মদী ইসলামের বিধিবিধান সর্ম্পকে জ্ঞান লাভ করতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তবে সেই জ্ঞানের বাস্তবিক বা ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য নিয়মিত আমল করা অত্যাবশ্যক, এর কোনো বিকল্প পথ নেই। এই কিতাব অধ্যয়নের মাধ্যমে কোন পদ্ধতিতে তালিম বা অনুশীলন করলে মহান আল্লাহ্ এর সাথে বান্দার যোগাযোগ হবে, সেই সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যাবে। আর এই নিদের্শনা যথাযথভাবে আমলের মাধ্যমে মনজিলে মুকসুদে পৌঁছানোর জন্য মহান আল্লাহ্ কর্তৃক মনোনীত পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহ্ এর মনোনীত বন্ধু বা প্রতিনিধির পরামর্শ অনুযায়ী ধর্ম পালন করতে পারলে মহান আল্লাহ্্র সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করা সম্ভব হবে, তখন বান্দার মাঝে আল্লাহ্ এর গুণ বিকশিত হবে। এভাবে বান্দা আধ্যাত্মিক জগতে উচ্চতর মাকাম হাসিল করে মহান আল্লাহ্র প্রতিনিধির মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হবে।


[লেখক: মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম; পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]

সম্পর্কিত পোস্ট