Cancel Preloader

মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে আত্মার বাণীর ভূমিকা

মুহাম্মদ জহিরুল আলম

দয়াময় আল্লাহ্‌ মানবদেহ সৃষ্টি করে তাতে রূহ ফুকে দিয়েছেন। মানব সৃষ্টির পূর্বে মহান আল্লাহ্‌ সকল রূহের নিকট হতে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আর এ অঙ্গীকার ছিল- আমি কি তোমাদের প্রভু নই? সকল রূহ সেদিন উত্তর দিয়েছিল নিশ্চয়ই আপনি আমার প্রভু। (সূরা আরাফ ৭: আয়াত ১৭২) আত্মা ও দেহের সম্বন্ধ সুদৃঢ় হলে, আত্মা ও দেহের মাঝে প্রীতির বন্ধন গড়ে উঠে। জগতসংসারে এসে মানুষ দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা ভুলে যায়। কিন্তু মানুষ যাতে প্রতিশ্রম্নতির কথা হতে বিস্মৃত হয়ে না যায়, সেজন্য দয়াময় আল্লাহ্‌ আসমানি কিতাব অবতীর্ণ করে মূল ঠিকানার কথা স্মরণ করে দেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্‌ তাঁর রাসুলকে (সা.) প্রতিশ্রম্নতির দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। সকল নবি, রাসুল ও মহামানবগণ সমকালীন যুগের মানুষকে ঐ প্রতিশ্রম্নতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। পৃথিবীতে এসে মানুষ নিজের রাজত্ব কায়েম করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ্‌ হলেন পরম স্রষ্টা, এই পরম সত্য হতে সে বিস্মৃত হয়ে পাপাচারে ডুবে গিয়ে প্রভুর সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। তাই যুগে যুগে মহামানবগণ মানুষকে প্রভুর সাথে যোগাযোগের শিক্ষাই দিয়েছেন। সরওয়ারে কায়েনাত, মুফাখ্‌খারে মওজুদাদ হযরত মোহাম্মদ (সা.) মানবজাতির মুক্তির জন্য যে ধর্ম প্রবর্তন করেছেন, তাই ‘†মাহাম্মদী ইসলাম’। মহান আল্লাহ্‌ দয়াল রাসুল (সা.)-কে ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ প্রচার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেন, “আর আপনার রবের নিয়ামতের কথা প্রচার করুন।” (সূরা আদ দ্বুহা: আয়াত ১১) নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে নুরে মোহাম্মদীর ধারক অলী-আল্লাহ্‌গণ সমকালীন যুগের মানুষের মাঝে আল্লাহ্‌র পরিচয় তুলে ধরে তাঁর (আল্লাহ্‌র) সাথে যোগাযোগের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন এবং মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন।

দয়াল রাসুল (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মোহাম্মদী ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিল ৫৩ বছর। হযরত রাসুল (সা.)-এর নবুয়তি জীবনের ২৩ বছর এবং †খালাফায়ে রাশেদিনের ৩০ বছর। কারবালার নির্মম ঘটনার পর উমাইয়ারা মুসলিম জাহানে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। তারা ধর্মের মুখোশ পড়ে, ইসলামকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ভ্রান্ত মতবাদ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। উমাইয়ারা ৮৯ বছর (৬৬১-৭৫০খ্রি.) ক্ষমতায় ছিল, উমাইয়াদের পতনের পর আব্বাসিয়রা ক্ষমতায় এসে উমাইয়াদের পথ অনুসরণ করে। তারা ৫০৮ বছর (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.) শাসন ক্ষমতায় থেকে দয়াল রাসুল (সা.)-এর মোহাম্মদী ইসলামকে ছেড়ে দিয়ে উমাইয়াদের প্রতিষ্ঠিত মনগড়া দ্বিন ইসলামকে সমর্থন করে। যা মুসলমান জাতিকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিপতিত করে। চক্রান্তকারীরা যতই চক্রান্ত করুক দয়াল রাসুল (সা.)-এর মোহাম্মদী ইসলামই সত্য। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান-“নিশ্চয়ই মহাপরাক্রমশালী সম্ভ্রান্ত আল্লাহ্‌ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দির শিরোভাগে এ উম্মতের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন, যিনি ধর্মকে সংস্কার অর্থাৎ সজীব ও সতেজ করে তোলেন।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৬; আবু দাউদ শরীফ)। এ সকল মহামানবই যুগের ইমাম, মোজাদ্দেদ বা সংস্কারক হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন। তাঁরা প্রত্যেকেই দয়াল রাসুল (সা.)-এর †মাহাম্মদী ইসলাম জগতের বুকে প্রচার করেছেন।

যুগে যুগে মহামানবগণ তাঁদের লেখনীর মাধ্যমেও †মাহাম্মদী ইসলামকে জগতের বুকে প্রচার করেছেন। সাধনার জগতে মেধা, মনন, প্রজ্ঞায় তারা ছিলেন অতুলনীয়। তাঁদের মূল শিক্ষাই ছিল এলমে তাসাউফ বা খোদা প্রাপ্তির জ্ঞান। জগৎশে্রষ্ঠ মহামানবগণ তাঁদের রচিত গ্রন্থাবলির মাধ্যমে সমকালীন যুগের মানুষের মাঝে ধর্মের প্রচার করেছেন। আজও জগদ্‌বাসী তাঁদের রচিত গ্রন্থাবলি পাঠ করে যাচ্ছেন। প্রত্যেক মহামানব মানবজাতির জন্য তাঁর দর্শন প্রচার করেছেন। যেমন- আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (কা.) লিখিত নাহাজ আল বালাগা ও দিওয়ান-ই-আলী। গ্রন্থগুলো তাসাউফের মণি মানিক্যে ভরা অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ।

হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) কাদেরিয়া তরিকার ইমাম। তিনি সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতা নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সিররুল আসরার, গুনিয়াতুত তালেবীন (১ম ও ২য় খণ্ড), ফতহুল গায়েব, আল-ফতহুর রাব্বানী অন্যতম। তাঁর গ্রন্থসমূহের মাধ্যমে ইসলামের অনেক নিগূঢ় রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। বিখ্যাত অলী-আল্লাহ্‌ সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতি (রহ.) চিশতিয়া তরিকার ইমাম। ইসলাম প্রচারে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আনিসুল আরওয়াহ্‌ এবং দিওয়ান-ই-মহিউদ্দীন। হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.) নকশবন্দী তরিকার ইমাম। ‘নকশবন্দ’ অর্থ চিত্রকর, নকশবন্দী তরিকার মাধ্যমে অনুসারীরা আল্লাহ্‌র মহিমার চিত্র হৃদয়ে ধারণ করতে সক্ষম হয়। হযরত শেখ আহমদ সেরহিন্দী মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রহ.) ছিলেন দ্বিতীয় সহস্রের মোজাদ্দেদ ও মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম। তিনি বাদশাহ আকবরের দ্বিন-ই-ইলাহি নামক মিথ্যা ধর্মমতের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন এবং তা ধ্বংস করেন। হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রহ.) ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট অনেক কুসংস্কার দূরীভূত করেন। তাঁর রচিত অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে। মাকতূবাতে আলফেসানি, মাবদা ওয়া মা’আদ, ইছবাতুন নবূওত, মা আরিফে লাদুন্নিয়া অন্যতম। ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমেদ চন্দ্রপুরী (রহ.) বিশ্বের পাপী-তাপী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে যুগোপযোগী তরিকার প্রবর্তন করেন। যার নাম- ‘সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকা’। তাঁর রচিত অন্যতম গ্রন্থ ‘নুরুল আসরার’ (১ম ও ২য় খণ্ড)।

দয়াল রাসুল (সা.)-এর ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ এর পরিধি এখন বিশ্বময় বিস্তৃত। ইসলাম আজ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রম্নত বর্ধনশীল ধর্ম। যার অনুসারীর সংখ্যা ১.৯ বিলিয়ন অর্থাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৪.৭%। বিশ্বে ৫০টি মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে। ২০১৫ সালের একটি পিউ রিসার্চ স্টাডিতে দেখা যায় ২০৬০ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার তুলনায় দ্বিগুণ দ্রম্নত (৭০%) বৃদ্ধি পাবে। এ প্রত্যাশিত বৃদ্ধি অন্যান্য ধর্মীয় †গাষ্ঠীর তুলনায় অনেক †বশি। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৬.৩% মুসলমান হতে পারে। মুসলমানগণ ইউরোপের †মাট জনসংখ্যার ৮% (৫২.৮ মিলিয়ন) বৃদ্ধি পাবে এবং এই বৃদ্ধি পশ্চিম ইউরোপীয় †দশগুলিতে সবচেয়ে বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। (Pew Research Centre, Washington, June, 2021) তাই বর্তমান বিশ্বে ‘†মাহাম্মদী ইসলাম’-এর প্রচারের পরিধিও ব্যাপক। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের ১৩১৭ বছর পর বাংলার বুকে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনজীর্বনদানকারী, যুগের ইমাম, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্‌বুব-এ-†খাদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলার আগমন ঘটে। সূফী সম্রাট ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট কুসংস্কারগুলো দূর করে দয়াল রাসুল (সা.)-এর †মাহাম্মদী ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ মানবজাতির নিকট উপস্থাপন করেন। তিনি ধর্মের অসংখ্য সংস্কার করেছেন। এ মহামানব জগদ্‌বিখ্যাত অনেক গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ’ হতে প্রকাশিত গ্রন্থ এবং দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকাগুলো তাসাউফ জগতের অমূল্য রত্ন ভান্ডার।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলার লিখিত ১৫টি গ্রন্থ রয়েছে এবং প্রতিটি তাসাউফ বিজ্ঞানের অমূল্য সম্পদ। ১. তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (১ম  থেকে ৮ম খণ্ড), ২. স্রষ্টার সরূপ উদ্‌ঘাটনে সূফী সম্রাট: আল্লাহ্‌কে সত্যিই দেখা যায় না?, ৩. বিশ্বনবীর সরূপ উদ্‌ঘাটনে সূফী সম্রাট: রাসুল (সাঃ) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?, ৪. ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমেদ (রহঃ) (জীবনীগ্রন্থ), ৫. এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম, ৬. সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার-১ম ও ২য় খণ্ড, ৭. সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান: আল্লাহ্‌ কোন পথে, ৮. আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের সহজ পথ, ৯. মুক্তি কোন পথে?, ১০. শান্তি কোন পথে?, ১১. ফেরকা সমস্যার সমাধান, ১২. ঈদ সমস্যার সমাধান, ১৩. সন্তানের প্রতি মায়ের অধিকার, ১৪. কবর ও মাজার সম্পর্কে ইসলামের বিধান, ১৫. মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা। গ্রন্থগুলো তাসাউফ জগতের অমূল্য সম্পদ। প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে সহজ সরল ভাষায় বিষয়বস্তুসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। এলমুল ক্বালবের জ্ঞান দ্বারা লিখিত গ্রন্থগুলো, পাঠকের মনের নানান প্রশ্নের সমাধান দেবে। মানজাতির শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণের পথ এই গ্রন্থগুলোতে আলোচনা করা হয়েছে।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর প্রতিষ্ঠিত সূফী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র ও গ্রন্থাবলির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ প্রচার হচ্ছে। তাঁর নির্দেশনায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের অগণিত মানুষ মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা ও জ্ঞান লাভের সুযোগ পাচ্ছে। মাসিক ‘আত্মার বাণী’ (প্রথম প্রকাশ ১৯৮১ খ্রি.), সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ (১৯৮৯খ্রি.), দৈনিক ইনসানিয়াত (১৯৯১ খ্রি.), ইংরেজি সাপ্তাহিক Weekly The Message (১৯৯২ খ্রি.) পত্রিকাগুলো এ দরবার শরীফ হতে প্রকাশিত হয়। কুরআনের বাণী ও তার প্রকৃত রহস্য জগদ্‌বাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য সূফী সম্রাট ‘আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

সূফী সম্রাট বিশ্বব্যাপী মোহাম্মদী ইসলামের সুমহান আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকার মতিঝিলে ‘বাবে রহমত’ কেন্দ্রীয় দরবার শরীফসহ সারাদেশে মোট ১১টি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। পৃথিবীর শতাধিক দেশে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শত শত খানকায়ে মাহ্‌বুবীয়া ও জাকের মজলিশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বহির্বিশ্বে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড আশেকে রাসুল অর্গানাইজেশন (World Ashek-e-Rasul Organization) গঠন করেছেন।

বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আত্মার বাণীর প্রকাশ প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন, “আমার মহান মোর্শেদ, পিরানে পির দস্তগির, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর দরবার শরীফে সাধনাকালীন ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে ‘আত্মার বাণী’ পত্রিকাটি প্রকাশ করি। মূলত হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ সংবলিত চিরশান্তির ধর্ম বিশ্বময় প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি প্রকাশ করা হয়, যা ছিল সময়োপযোগী এক পদক্ষেপ।… চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফ থেকে ঢাকায় আসার পর আমি ১৫৪ আরামবাগে থাকতাম। সেসময় প্রতিদিন দল বেঁধে মানুষ আমার কাছে ‘পানি পড়া’ নিতে আসত। আল্লাহ্‌র অপার দয়ায় আমি পানি পড়া দিলে, মানুষ উপকার  পেত। একদিন আমি হুজরা শরীফে আগত জাকেরদের উদ্দেশে ‘আল্লাহ সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। সেসময় আমার খাদেম আবু সাইদ আমাকে জানালো যে, পানি পড়া নেওয়ার জন্য মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আবু সাইদকে বললাম, ‘তুমি এক কাজ করো, ‘আত্মার বাণী’ চুবিয়ে তাদেরকে পানি দিয়ে দাও।” তখন আবু সাইদ বলল, “বাবাজান! লোকগুলো তো বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছে, সকলকে কি আত্মার বাণী চুবানো পানি পান করতে বলব?।’ আমি বললাম যে, সব রোগের জন্যই আত্মার বাণীর চুবানো পানি মহৌষধ হিসাবে কাজ করবে। মহান আল্লাহ্‌র অপার দয়ায় সেদিন থেকে কোটি কোটি মোর্শেদ প্রেমিক আত্মার বাণী চুবানো পানি পান করে কঠিন কঠিন রোগ থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছে এবং বর্তমানেও করছে। এই আত্মার বাণী পত্রিকাটি এমনই এক নেয়ামতপূর্ণ পত্রিকা, যা মহান আল্লাহ্‌র রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ। এটি পাঠ করে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ মোহাম্মদী ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসার সৌভাগ্য লাভ করেছেন।” সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্‌বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলা আত্মার বাণী প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করেন, “২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আমি আমার মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদাকে মাসিক ‘আত্মার বাণী’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব অর্পণ করি। সেই সাময়িকীটিকে আধুনিক কলেবরে প্রকাশ এবং এর প্রচারসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা জেনে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি।” (মাসিক আত্মার বাণী’র ৪০ বছর পদার্পণ উপলক্ষ্যে সূফী সম্রাটের শুভেচ্ছা বাণী, আত্মার বাণী, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০)।

মূলত পত্রিকাটি জগৎশে্রষ্ঠ মহামানব সূফী সম্রাট হুজুর কেব্‌লাজানের অন্যতম অলৌকিক কারামত। সূফী সম্রাট বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি প্রকাশ করেন। আজ মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব, ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের সুযোগ্য সম্পাদনা ও দিকনির্দেশনায় ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণের মাধ্যমে হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ এবং সূফী সম্রাটের সংস্কার ও দর্শন বিশ্বময় প্রচার করছে। ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ  খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, “মোহাম্মদী ইসলাম হলো নিজের মাঝে আল্লাহ্‌কে খঁুজে পাওয়ার নাম।” আত্মিক সাধনা ও চারিত্রিক উৎকর্ষতার মাধ্যমে পরমাত্মাকে শক্তিশালী করে মানুষ কীভাবে হৃদয় সিংহাসনে প্রভুকে খঁুজে পাবে, সেই কৌশলই মুক্তিকামী মানুষ এখানে পাবে। যুগে যুগে মহামানবগণ মানব কল্যাণের লক্ষ্যে ধর্মকে সময়োপযোগী করে শিক্ষা দিয়েছেন। ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর চাচ্ছেন; শতাব্দীর এ শিরোভাগে, প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এ যুগে মানুষ যেন খুব সহজেই প্রভুর প্রতি আনুগত্য লাভের শিক্ষা লাভ করে, প্রভুর ইচ্ছায় নিজেকে বিলীন করে দিতে পারেন। তারই এক অনন্য মাধ্যম ‘আত্মার বাণী’। মোহাম্মদী ইসলামের মুখপত্র ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটির প্রতিটি সংখ্যার নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ, বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে এমন দৃষ্টান্ত আর কোথাও খঁুজে পাওয়া যাবে না।

বর্তমানে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত হতে কল্যাণকামী মানুষ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর এ নেয়ামত ‘আত্মার বাণী’ গ্রহণ করতে পারছেন। আর তা সম্ভব হয়েছে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব, ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের অক্লান্ত প্রচেষ্টার বিনিময়ে। আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্‌লা বলেন, “জন্মান্ধ কখনো পূর্ণিমার চাঁদের বর্ণনা দিতে পারে না।” ‘আত্মার বাণী’ তাসাউফের বিষয়বস্তুকে তুলে ধরে। যিনি বিশ্বময় মানব জাতির নিকট তাসাউফের বাণী প্রচার করবেন, তিনি অবশ্যই স্রষ্টাকে দেখেছেন, তাঁর স্বরূপ উপলব্ধি করেছেন, তিনি তাঁর সাথে যোগাযোগ করেই তা করতে সক্ষম হবেন। মহান মালিকের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন এ মহামানবের আনুগত্য করার সুযোগ দান করেন।

[লেখক: পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]

সম্পর্কিত পোস্ট