Cancel Preloader

যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন


অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
(পর্ব-৩১)

কলকাতার শহর কুতুবের অলৌকিকভাবে বাংলাদেশে আগমন

অলী-আল্লাহ্দের মর্যাদা অপরিসীম। তাঁরা আল্লাহর মহান বন্ধু। মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান অলী-আল্লাহ্গণের শ্রেণিবিন্যাস করে বলেছেন- এই পৃথিবীতে ৩ শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ রয়েছেন। যথা: ১. হাদি, ২. মাজ্জুব, ও ৩. দেশরক্ষক অলী-আল্লাহ্। হাদি অর্থাৎ হেদায়েতকারী, তারা আধ্যাত্মিক জগতের শিক্ষক। হাদিদের মধ্যে ৪টি স্তর রয়েছে। যথা: ১. অলী-আল্লাহ্, ২. অলীয়ে কামেল, ৩. অলীয়ে মোকাম্মেল ও ৪. মোজাদ্দেদে জামান। আমাদের দেশে ৪ শ্রেণির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যথা: ১. প্রাইমারি স্কুল, ২. হাই স্কুল, ৩. কলেজ ও ৪. বিশ্ববিদ্যালয়। অলী-আল্লাহ্ হলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতুল্য। অলীয়ে কামেল হলেন- হাই স্কুলের শিক্ষকতুল্য। অলীয়ে মোকাম্মেল হলেন- কলেজের শিক্ষকতুল্য। মোজাদ্দেদে জামান হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরতুল্য।


মাজ্জুব শ্রেণির অলী-আল্লাহ্গণ হলেন- আল্লাহর প্রেমে দেওয়ানা। তাঁরা আল্লাহর প্রেম সাগরে ডুবে থাকেন। দুনিয়ার কোনো লোভ লালসা এমনকি ঘর সংসার সবকিছুর প্রতিই তাঁরা থাকেন সম্পূর্ণ উদাসীন। তাই তাঁদের মর্যাদা সম্পর্কে না বুঝে শুধু ছদ্দবেশ দেখে সাধারণ মানুষ তাদেরকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে থাকে। আসলে মাজ্জুব অলী-আল্লাহ্গণ হলেন আল্লাহর প্রেমে দেওয়ানা। আর দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহ্গণ হলেন- দেশের সেনাবাহিনীর মতো। তাদের মধ্যে গাউস, কুতুব, আখিয়ার, আবদাল, আওতাদসহ ৪০টি পদবী রয়েছে। কুতুব হলেন দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহ্দের মধ্যে অন্যতম। এই কুতুবদের প্রধান হলেন- কুতুবুল আকতাব। পৃথিবীর দেশরক্ষক অলী-আল্লাহ্গণের প্রধান হলেন কুতুবুল আকতাব। পৃথিবীর সর্বত্রই অর্থাৎ শহর, বন্দর, নগর এক কথায় সকল স্থানই কুতুব থাকেন। তাঁদের মাধ্যমেই দেশ পরিচালিত হয়ে থাকে। মহান আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশরক্ষক অলী-আল্লাহ্গণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।


একমাত্র হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ ব্যতীত মাজ্জুব ও দেশ রক্ষক অলী আল্লাহ্গণ সাধারণত ছদ্দবেশে চলাফেরা করেন। আবার কখনোবা নীরবে নির্জনে ধ্যানমগ্ন থাকেন। দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহ্গণের জাতি, ধর্ম, বর্ণ পার্থক্য করা যায় না। কেননা পৃথিবীর যেখানে যে ভাষা এবং ধর্ম রয়েছে, সেখানে নিয়োজিত কুতুব ঐ ভাষায় কথা বলেন এবং জন্মের পর থেকে ঐ ধর্মীয় বিশ্বাসে বেড়ে ওঠেন। কিন্তু একটা স্তরে গিয়ে তাঁরা জাতি, ধর্মের ঊর্ধ্বে চলে যান। তাঁদের মধ্যে শুধু পুরুষ নয়, নারীও থাকেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান জীবনে সর্ব প্রথম ভাওয়াল এলাকার কুতুবের পরিচয় পেয়েছিলেন এবং তাঁর কাছেই জানতে পেরেছিলেন তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ অলী-আল্লাহ্ ও মোজাদ্দেদে জামান ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর নাম ও পরিচয়। এছাড়া ঢাকার শহর কুতুবসহ অনেক দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহ্ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের সাধনা জীবনের প্রথমদিকে তাঁর কাছে আসতেন। কেননা, তাঁরা জানতেন দেওয়ানবাগী হুজুরই একদিন হাদিদের ইমাম এবং অলীদের বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও শহরে-নগরে যেমন কুতুব রয়েছেন, ঠিক তেমনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা শহরেও একজন কুতুব রয়েছেন। তিনি একজন মহিলা। নাম তার ইলা চক্রবর্তী। কলকাতার মানুষ তাঁকে বাঙালি মা বলেই জানেন।


১৯৯২ সালে কলকাতার খিদিরপুরে প্রথম সূফী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতা শহরে বহু মানুষ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুরের ভক্ত হন। আর সে কারণেই সেখানে তরিকা প্রচারের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর দরবার থেকে মো. শাহ আলম সাহেবকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন। সেই সময়কার ঘটনা, কলকাতার শহর কুতুব ইলা চক্রবর্তী কুতুবুল আকতাবের কাছ থেকে একটি বিষয়ে রূহানি নির্দেশ পেয়েছিলেন। তাঁকে জানানো হয়েছিল যে, বর্তমান জামানার মোজাদ্দেদ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবল্জানের প্রতিনিধি কলকাতায় রয়েছেন। কুতুব যেন তার সাথে দেখা করে ঐ নির্দেশিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। সত্যিই নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে কলকাতার শহর কুতুব মো. শাহ আলম সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তখন শাহ আলম সাহেব বললেন- আপনাকে সর্বপ্রথম আমাদের তরিকা গ্রহণ করতে হবে। একথা শুনে ঐ কুতুব বললেন-তরিকা গ্রহণ করতে হবে? তবে মালিকের কাছ থেকেই তরিকা নেবো। একথা বলার পরে তাঁকে আর সেখানে দেখা গেল না। তিনি মুহূর্তের মধ্যেই অলৌকিকভাবে কলকাতা শহর থেকে ঢাকার আরামবাগস্থ সূফী সম্রাটের বাসভবনে কুতুবুল আকতাব হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর সামনে এসে হাজির হয়ে বললেন- মা! আমি এসেছি। অতঃপর কুতুবুল আকতাবের সাথে প্রায় ১৫ মিনিট একান্তে আলাপ শেষে কদমবুসি করে পুনরায় কলকাতায় এসে উপস্থিত হলেন। এ ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার পরে দয়াল মা (রহ.) সূফী সম্রাটের কাছে সবকিছু জানালেন। পরক্ষণেই দয়াল বাবাজান কলকাতার শহর কুতুবের অলৌকিকভাবে বাংলাদেশে আসার ঘটনাটি আমাদের কাছে বর্ণনা করেন।


২০০২ সালের ঘটনা। কলকাতার খিদিরপুরে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের বিরাট আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় আমি ঐ বছরও সম্মেলনে যোগদান করার জন্য কলকাতায় যাই। সম্মেলনের আগের দিনের ঘটনা। আমরা সম্মেলনে যোগদানকারী বাংলাদেশের কয়েকজন প্রতিনিধি কলকাতায় শরীফ ভাইয়ের বাসায়, যাদের মধ্যে আমি ছাড়াও প্রফেসর ড. ফিরোজ আই ফারুকী এবং কলকাতার আশেকে রাসুল মো. শরীফ, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং কলকাতা পুলিশ বাহিনীর সদস্য সেলিম সাহেব একত্রে বসে সম্মেলনের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এমন সময় কলকাতার শহর কুতুব ইলা চক্রবর্তী এসে ঐ মজলিসে উপস্থিত হলেন। তখন ইলা চক্রবর্তী ছদ্মবেশে নয়, সাধারণ মানুষের মতো উপস্থিত হন। তাঁকে দেখে কলকাতার বয়স্ক এবং পাকা দাঁড়িওয়ালা সেলিম ভাই সর্বপ্রথম তাঁকে মা সম্বোধন করে বললেন- মা! বসুন। তাঁকে বসার জায়গা করে দেওয়া হলো। তখন কলকাতার শরীফ ভাই বললেন- মা! কালতো আমাদের আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন। আপনি আমাদের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দয়ার দৃষ্টি রাখবেন। তখন কলকাতার শহর কুতুব ইলা চক্রবর্তী বললেন- তোদের কোনো চিন্তা করতে হবে না। তোরা কাজ করে যা, আমি তো এসে গেলাম। সম্মেলনের বিষয়ে দয়াল বাবাজান রয়েছেন, দয়াল মা রয়েছেন, তাঁরাই সব ব্যবস্থা করবেন। একথা বলার পরে তিনি মজলিস থেকে উঠে চলে গেলেন। ঐ বছর সম্মেলনে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সত্যিই দেখলাম, শহর কুতুব চলে যাওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে সকল সমস্যা দূর হয়ে গেল। সেই বছর কলকাতার খিদিরপুরে অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনেক বড়ো একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই শহর কুতুবের কথা দয়াল বাবা কেবলাজানের কাছে পূর্বে অনেকবার শুনেছি। কিন্তু সামনা সামনি কখনো দেখিনি। ঐ বছর দেখা এবং তাঁর কথার বাস্তব প্রমাণ পেয়ে বুঝতে পারলাম যে, আসলেই আল্লাহর অলী কুতুবগণ অনেক ক্ষমতার অধিকারী।

সূফী সম্রাটের ঘোষণা: ‘কলকাতা শহরে প্লেগ রোগ ঢুকবে না’
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ ফরমান- জলে স্থলে যত রকমের বিপর্যয় আসে, সবই মানুষের কৃতকর্মের ফল। তাই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নবিদের আমলে ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, অনাবৃষ্টি এবং মারাত্মক রোগব্যাধিতে বহু মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। এক সময় কুষ্ঠ রোগ ছিল মরণব্যাধি। এই রোগ হলে মানুষের বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে যক্ষ্মা রোগটি বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তখন একটি প্রবাদ ছিল- ‘যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা’। এই যক্ষ্মা রোগটি দেখা দিলে মানুষের মধ্যে চরম ভীতির সঞ্চার হতো। কিন্তু আজ আর যক্ষ্মা রোগ মরণ ব্যাধি নয়। এর সফল চিকিৎসা রয়েছে। অপরদিকে পূর্বেকার যুগে যে কুষ্ঠরোগ দেখা দিলে অবধারিত মৃত্যুই ছিল শেষ পরিণতি, আজ তারও রয়েছে উন্নত চিকিৎসা। ফলে কুষ্ঠ রোগ আজ আর ভীতির কারণ নয়। স্বাধীনতার পূর্বে বসন্ত রোগটি ছিল চরম এক মরণব্যাধি। এই গুটি বসন্ত দেখা দিলে শুধু বাড়ি-ঘর নয়, গ্রাম পর্যন্ত লোক শূন্য হয়ে পড়তো। আর এই রোগে আক্রান্ত মানুষ করুণভাবে মৃত্যুবরণ করত। আমাদের ছোটোবেলায় বসন্ত রোগে এরকম অগণিত মানুষের মৃত্যুর কথা মনে আজো শোকের স্পন্দন জাগায়। ইতিহাস থেকে জেনেছি, বহু পূর্ব যুগের প্লেগ রোগের কথা। কোনো এক নবির আমলে মহামারিরূপে এই প্লেগ রোগ দেখা দেয় এবং অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করে। সুতরাং সেই প্লেগ রোগটি আজো মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করে। অবশ্য এই রোগটির কথা সচারচর শোনা যায় না। ১৯৯৫ সালের কথা। হঠাৎ করে শোনা গেল ভারতে বিখ্যাত মুম্বাই শহরে প্লেগ রোগ দেখা দিয়েছে। ইঁদুরের শরীর থেকে এই ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়ে অন্য ছোঁয়াছে রোগের ন্যায় ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ রোগের তেমন একটা ভালো চিকিৎসাও ছিল না। এই রোগটি আস্তে আস্তে ভারতের রাজধানী শহর দিল্লি হয়ে আগ্রাসহ অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু ইঁদুর থেকে এই ভাইরাস ছড়াতো, তাই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ইঁদুর নিধন করার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতেই শেষ নয়, প্লেগ রোগের ভয়ে অসংখ্য মানুষ নিজেদের বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এই প্লেগ রোগ এতটাই বিস্তার লাভ করেছিল যে, এ ভয়াবহ রোগের কারণে গোটা ভারতবর্ষের সকল কর্মকাণ্ড যেন স্থবির হয়ে গেল। প্লেগ রোগের আশঙ্কা এবং ভয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গও অনেকটা নীরব ও নিথর হয়ে যায়। কলকাতা থেকে সূফী সম্রাটের ভক্ত মুরিদানগণ টেলিফোনে এ পরিস্থিতি বাবাজানকে জানানোর জন্য খিদিরপুরের মো. শরীফ ভাইয়ের বাসায় একত্রিত হন। আশেকে রাসুল শরীফ ভাই বাবাজানের কাছে ফোন করে প্লেগ রোগের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত সকল কলকাতাবাসীর পক্ষ থেকে দয়া ভিক্ষা চান। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ ছিল। কলকাতার জাকেরবৃন্দ মনে করেছিল যে, গোটা ভারতের অনেকগুলো রাজ্যে যখন মরণব্যধি প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, সুতরাং পশ্চিমবঙ্গ আক্রান্ত হওয়াটা যেন সময়ের ব্যাপার। আর এই ভয়াবহ প্লেগ যদি একবার ঢুকে পড়ে, তাহলে আর রক্ষা নেই।


মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান ভারতের কলকাতায় বসবাসরত তাঁর ভক্তবৃন্দের জন্য দয়ার হস্ত প্রসারিত করলেন। কারণ তারা যে তাঁর মুরিদ সন্তান। তাদের বিপদে সাহায্য করার জন্য তিনি অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ভারতের কলকাতার ভক্ত মুরিদানদের টেলিফোনের মাধ্যমে সান্ত্বনা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, দয়াল বাবাজান আমাকে নির্দেশ দিলেন কলকাতায় যাওয়ার জন্য।
আমি নির্দেশ পেয়ে, পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা নিয়ে নিলাম। সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের এজাজত ও দয়া কামনা করে আমি ঢাকা থেকে স্থলপথে কলকাতা রওয়ানা হলাম। বর্ডারের যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বনগাঁও ট্রেন স্টেশনে রওয়ানা করার সময় আর একজন লোকের সাথে দেখা হলো। তিনিও একটি বিশেষ কাজে কলকাতার খিদিরপুরে যাবেন। রাস্তা ঘাটে কোনো রকম ভীড় না থাকায় সকাল ১০টার পরেই আমি কলকাতার খিদিরপুরে পৌঁছে যাই। আমাকে দেখে কলকাতার শরীফ ভাই ও আফজাল ভাইসহ অন্যান্য জাকের ভাইয়েরা অবাক হয়ে যান। কারণ এই নাজুক পরিস্থিতিতে কেউই যেখানে এলাকার বাইরে সহজে যেতে চায় না, সেখানে বাংলাদেশ থেকে আমি কলকাতায় কীভাবে এবং কেন গেলাম, তা নিয়ে তারা যখন অনেকটা ভাবনায় পড়ে গেলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে আমি তাদেরকে জানালাম যে, সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান একটা বিশেষ ম্যাসেজ দিয়ে আমাকে কলকাতায় পাঠিয়েছেন। আপনারা আজ বাদ মাগরিব সকলকে খানকায় আসতে বলুন এবং জলসার আয়োজন করুন। ঠিকই বাবাজান আমাকে পাঠিয়েছেন একথা শুনে সকল জাকের ভাই এবং পর্দার আড়ালে জাকের বোনেরা জমায়েত হলেন। তাছাড়া আমি কলকাতার জাকের ভাইদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তি। কেননা প্রতিবারের সম্মেলনেই আমি কলকাতায় গিয়েছি। সেদিন খানকাহ শরীফে আমরা মাগরিবের নামাজ জামাতে আদায় করলাম। ফাতেহা শরীফ, মোনাজাত ও মোরাকাবা শেষ করে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজান আমাকে কেন কলকাতায় পাঠিয়েছেন, তা বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে শুরু করলাম। বক্তব্যের এক পর্যায়ে আমি যখন বললাম যে, সূফী সম্রাট দয়াল বাবা কেবলাজান আমাকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন- ভারতে কলকাতায় আমার জাকেরবৃন্দ রয়েছে, আপনি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে জানিয়ে দিবেন যে, প্লেগ রোগ ভারতবর্ষে যতই ছড়িয়ে পড়–ক না কেন, কলকাতা শহরে প্লেগ রোগ ঢুকবে না। কেননা, আমার আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো আল্লাহ্ নেই, যে কলকাতায় প্লেগ রোগ দিবে। আমি যখন সকল জাকের ভাই-বোনদের মধ্যে সূফী সম্রাটের এই বাণী মোবারক পৌঁছে দিলাম, তখন এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হলো, যা ভাষায় ব্যক্ত করা কঠিন। প্রবল ফায়েজের প্রভাবে তখন অনেকেই উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলেন। আর দয়াল বাবাজানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে লাগলেন। আমি একদিন পরে বাংলাদেশে ফিরে এলাম। সত্যিই সে বছর মরণব্যাধি প্লেগ রোগ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লেও সূফী সম্রাটের ঘোষণা অনুযায়ী কলকাতায় প্রবেশ করেনি। ফলে সূফী সম্রাটের প্রশংসা কলকাতায় আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]

সম্পর্কিত পোস্ট