Cancel Preloader

সূফী সম্রাট হযরত মাহবুব-এ-খোদা (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলাজান।

যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন

-অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
[বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক মহান আল্লাহ্ নিরাকার নন। তিনি আকার, তবে মহান আল্লাহ্ মানুষের মতো রক্ত মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। এই মহাসত্যটি পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অকাট্য দলিল দিয়ে যিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি হলেন মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। এটিই তাঁর শতাধিক সংস্কারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কার। তিনি তাঁর মহান মোর্শেদের দরবারে সাধনারত থাকা অবস্থায় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর জীবনে সংঘটিত হওয়া বহুল ঘটনাপঞ্জির মধ্য থেকে আমার দেখা, শোনা এবং জানা ঘটনাগুলো থেকে নিম্নের ঘটনা উপস্থাপন করা হলো]।

ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-কে তরিকার ইমাম ঘোষণা
মহান আল্লাহর অলীগণের জন্ম ও ওফাত দিবস সাধারণ মানুষের জন্য রহমত ও বরকত পরিপূর্ণ। আর সেজন্যই অলীগণের দরবার শরীফে নানাবিধ অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে।

অলী-আল্লাহর দরবারে ওরছ পালন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অলী-আল্লাহর দরবার ও মাজারে ওরছ পালনের রীতি বিদ্যমান রয়েছে। ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.), তাঁর মোর্শেদ হযরত শাহ্ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর ওরছ পালন করতেন।

১৯৮৪ সাল ছিল ইমাম হুজুরের জীবনের শেষ ওরছ। আর এই ওরছেই সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) তাঁর মোর্শেদ ইমাম হুজুরকে ‘সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকার’ ইমাম ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৮২ সালে আমি ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) হুজুরের তরিকা গ্রহণ করেছি। পরবর্তী বছর ব্যক্তিগত কারণে আমি ওরছে যেতে পরিনি। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালের ওরছে আমি চন্দ্রপাড়া গমন করি। সেই প্রথম ওরছেই সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর আমাকে সকাল বেলায়ই চন্দ্রপাড়ায় অনুষ্ঠিত ওরছ শরীফের অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেন। তাই সকাল ৮টা থেকে ওরছের অনুষ্ঠান ঘোষণা করে আলেম-ওলামা ও অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্য চালাতে থাকি। এভাবে সারাদিন চলে গেল। সারাদেশ থেকে অসংখ্য লোক এসে ওরছে যোগদান করেছেন। বাদ মাগরিব থেকে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ অনুষ্ঠান। আর এ বিশেষ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর। ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) মঞ্চে কুরসি মোবারকে উপবিষ্ট আছেন। তাঁর সম্মানে লিখিত শ্রদ্ধাঞ্জলী পাঠ করেন ইমাম হুজুরের ৪র্থ জামাতা ইঞ্জিনিয়ার মো. হাসিবুর রহমান সাহেব। তাতে ইমাম হুজুরকে ‘সুলতানীয়া মোজাদ্দেদীয়া তরিকার ইমাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রদ্ধাঞ্জলী পাঠ শেষে সূফী সম্রাট হুজুর ইমাম হুজুরকে বলেন- বাবা! মানপত্রে আপনাকে ‘সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম বলা হয়েছে। আপনি কি তা শুনেছেন? ইমাম হুজুর বললেন- হ্যাঁ শুনেছি। তাহলে আপনি দয়া করে কবুল করে নিন। ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) বললেন- আমি কবুল করলাম, আল্লাহ্ দয়া করে কবুল করুন। ওরছের সেই অনুষ্ঠানের পর থেকেই হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-কে ‘সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম হিসেবে প্রচার করা হয়। বহু মানুষ তাঁকে ইমাম বলে গ্রহণ করে নেয়। আজও ইমাম হুজর (রহ.)-কে ‘সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম’’ হিসেবে মানুষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকে।

উল্লেখ্য, যে ওরছে ইমাম হুজুরকে তরিকার ইমাম ঘোষণা করা হয়, সে বছর ‘আত্মার বাণী’ পত্রিকায় সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী একটা প্রবন্ধ লেখেন। সেই প্রবন্ধে ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-কে তরিকার ইমাম বলা হয়। প্রবন্ধটি পত্রিকায় ছাপানোর পূর্বে সূফী সম্রাট ইমাম হুজুরকে পড়ে শোনান এবং পত্রিকায় ছাপানোর অনুমতি চান। তিনি ছাপানোর নির্দেশ প্রদান করেন। ইমাম হুজুরের জীবনের শেষ ওরছে সূফী সম্রাট হুজুর ইমাম হুজুরকে বলেন- বাবা! আপনার নামে যে ‘সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকা’ হয়েছে, এর সংবিধান দিতে হবে। ইমাম হুজুর সূফী সম্রাটকে বললেন- এই তরিকার সংবিধান আপনি দিবেন। পরবর্তীতে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান স্বীয় মোর্শেদের নির্দেশ পালনার্থে ইমাম হুজুরের ওফাতের পরে সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরীকার সংবিধান তথা ওয়াজিফা প্রণয়ন করেন। সে নিয়ম মোতাবেক আজও দেওয়ানবাগ দরবার শরীফের ওয়াজিফায় ফজরের নামাজের পরে ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর নামে দু’শ বার দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়ে থাকে।

ওফাতের পরেও ইমাম হুজুরের চেহারা মোবারক থেকে ঘাম ঝরছিল
মহান আল্লাহর কাছে অলী-আল্লাহ্গণের মর্যাদা ও সম্মান অপরিসীম। হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- অলী-আল্লাহ্গণ অমর। তাঁর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়, হযরত রাসুল (সা.)-এর সাহাবাগণের জীবনে। মৃত্যুর দেড় হাজার বছর পরেও কবরে তাঁদের অনেকের দেহ মোবারক অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। অনুরূপ ঘটনা বহু অলী-আল্লাহর জীবনেও পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। উচ্চস্তরের কোনো অলী-আল্লাহ্ ইন্তিকালের পরে রওজা শরীফে সমাহিত করার পূর্বেই, তাঁদের দেহ মোবারক থেকে এমন কিছু অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হয়ে পড়ে, যা দেখে মনে হয়, তিনি ইন্তেকাল করেননি বরং জীবিতই আছেন।

মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) ১৯৮৪ সালের ২৮ মার্চ, বুধবার বিকেল ৩:১০ মিনিটে ওফাত লাভ করেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সারা দেশের জাকেরগণকে এ সংবাদটি জানানোর জন্য বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। ফলে বিটিভির রাতের সংবাদে ইমাম হুজুরের ওফাতের খবরটি প্রচারিত হয়। আমার ভাই ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রাজ্জাক মিয়া রাতে আমার কাছে মিরপুরে খালাম্মার বাসায় এসে এ খবরটি জানালেন। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পরের দিন সকালে আমরা দু’ভাই এবং আমার ছাত্র মো. আবদুল হান্নানসহ গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে যাই। কিন্তু সেদিন ছিল গাড়ী ধর্মঘট। কোনো গাড়ি ছাড়ছে না। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে পরিচিত লোকদের সাথে দেখা হলো। আমরা বেশ কিছু লোক অনুরোধ করায় একটি বাস আরিচার উদ্দেশ্যে ছাড়তে রাজী হয়। আমরা সেই গাড়িতে করে দীর্ঘ সময় পরে আরিচা ঘাটে এসে পৌঁছি। সেখান থেকে লঞ্চ যোগে দৌলদিয়া হয়ে বারবার গাড়ি বদল করে অতি কষ্টে বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে এসে পৌঁছাই। সেখানে গিয়েই দেখতে পাই সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত। কারণ সারা দেশ থেকে ইমাম হুজুরের ভক্ত মুরীদগণ আপন মোর্শেদকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসছেন। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা, ইমাম হুজুরের রওজা শরীফের স্থান নির্বাচন ও অন্যান্য জরুরি কাজে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন। তিনিই ইমাম হুজুরের রওজা শরীফের স্থান নির্বাচন করেন। সূফী সম্রাট যে স্থানে রওজা শরীফ নির্মাণের জন্য নির্দেশ করেন, আমরা রাতে সেখানে মাটি কেটে নীচুস্থান ভরাট করার কাজ করি। তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, শুক্রবার বাদ জুমা ইমাম হুজুরের জানাযা হবে। সেজন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার সকালে ইমাম হুজুরের দেহ মোবারক কফিনে করে জাকেরদের দেখার জন্য হুজরা শরীফে রাখা হয়। উপস্থিত সকল মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ইমাম হুজুরের চেহারা মোবারক দেখতে থাকেন। আমিও হুজরা শরীফে লাইনে এসে দাঁড়ালাম। তাকিয়ে দেখি দু’জন জাকের ভাই ইমাম হুজুরের দেহ মোবারকে বাতাস করছেন। ইমাম হুজুরের চেহারা মোবারক থেকে ঘাম ঝরছে। এমন ঘটনা আগে কেউ কোনোদিন দেখেনি যে, কোনো মানুষ মৃত্যুর পরেও ঘামতে থাকে এবং চেহারা থেকে ঘাম বের হয়। ইমাম হুজুরের জীবনে এ ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। ইমাম হুজুরের প্রধান খলিফা সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ইমাম হুজুরের চেহারা মোবারক থেকে বের হওয়া সেই ঘাম তুলা দিয়ে মুছে একটি শিশিতে ভরে রাখেন। পরবর্তীতে ঢাকায় আসার পরে ১৫৪, আরামবাগে অবস্থানকালে একদিন ঐ ঘাম মোবারক উপস্থিত লোকদের সামনে বের করেন। আমিও সেসময় উপস্থিত ছিলাম। সে ঘাম থেকে এতই সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল, যা আমার জীবনে আর কোন দিনও পাইনি।

শুক্রবার জানাজায় ইমাম হুজুরের ২ স্ত্রী, কন্যাগণ ও জামাতাগণসহ সকল আত্মীয়স্বজন এই মর্মে একটি লিখিত দলিল তৈরি করে স্বাক্ষর করেন যে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের পরিচালক হিসেবে ইমাম হুজুরের পরিবারবর্গের দেখাশুনার সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পালন করেছেন।
জানাযার নামাজ সম্পন্ন হলে ইমাম হুজুরকে পাকা রওজা শরীফে একটি স্টিলের কফিনে করে ঐ রওজা শরীফে সমাহিত করা হয়। এর পূর্বে একটি হৃদয় বিদারক ভাষণ দিয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান উপস্থিত ইমাম হুজুরের সকল ভক্ত ও মুরিদগণকে শান্তনা দেন এবং আশ্বস্ত করেন যে, তিনি ইমাম হুজুরের দরবার শরীফের সকল দায়িত্ব পালন করবেন। উপস্থিত সকল লোক ও ইমাম হুজুরের মুরিদগণ সূফী সম্রাটের এ কথায় আশ্বস্ত হন এবং স্বস্তিলাভ করেন। উল্লেখ্য যে, ইমাম হুজুর যেদিন ওফাত লাভ করেছিলেন, সেদিনই তাঁর জন্য স্যালাইন ও ঔষধ আনার জন্য কামাল উদ্দিন নামে তাঁর একজন ভক্ত চন্দ্রপাড়া থেকে ফরিদপুর শহরে যায়। সে তখনও ফরিদপুর থেকে রওয়ানা করেনি, এসময় কামাল উদ্দিন দেখতে পায়, তার সামনে ইমাম হুজুর এসে উপস্থিত হলেন। তিনি তাকে ডাক দিয়ে বললেন- কামাল! দেরী না করে তাড়াতাড়ি দরবারে চলে যাও। একথা বলেই ইমাম হুজুর অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কামাল উদ্দিন ইমাম হুজুরকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে, ব্যাপার কী? আমিতো চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে ইমাম হুজুরকে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শায়িত দেখে এলাম। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় এখানে আসলেন কীভাবে? এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর কামাল উদ্দিন দ্রুত চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে এসে উপস্থিত হয় এবং দেখতে পায় ইমাম হুজুর ওফাত লাভ করেছেন। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর অলীগণের জীবিত অবস্থা এবং মৃত অবস্থার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাঁরা সত্যিই অমর।

ইমাম হুজুরের রওজা শরীফের ঘটনা
মহান আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সান্নিধ্যে আরবের অনেক লোকই যাতায়াত করতো। তাঁদের মধ্যে প্রকৃত বিশ্বাসী মু’মেন যেমন ছিলেন, আবার অনেক মোনাফেকও ছিল। অলী-আল্লাহ্গণের দরবারেও পূর্ণ বিশ্বাসী মুরিদান যেমন থাকে, আবার ত্রুটিপূর্ণ বিশ্বাসী মোনাফেকও থাকে।

সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের প্রাণপ্রিয় মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) ১৯৮৪ সালের ২৮ মার্চ, বুধবার বিকাল ৩:১০ মিনিটে ওফাত লাভ করেন। তাঁর ওফাতের ২ দিন পরে, শুক্রবার বাদ জুমা অগণিত মুরিদানের উপস্থিতিতে তাঁর জানাজার নামাজ শেষ হয়। জানাজার পরে নির্দিষ্ট স্থানে নির্মিত রওজা শরীফে তাঁকে সমাহিত করতে তাঁর কফিন মোবারক উত্তোলন করার জন্য বহুলোক আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিন্দুমাত্রও উঠাতে পারেনি। এভাবে অনেকক্ষণ চেষ্টা চালাতে থাকে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এভাবে অনেকক্ষণ চেষ্টার পরেও যখন কোনো ফল হলো না অর্থাৎ আপ্রাণ চেষ্টা করেও যখন ইমাম হুজুরের কফিন মোবারক উত্তোলন করা গেল না, তখন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাদের সকলকে কফিন ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিলেন এবং ইমাম হুজুরের মুখের কাছে গিয়ে কান পেতে রাখলেন। অতঃপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান উপস্থিত হাজার হাজার লোকের মধ্য থেকে মাত্র ১০ জন লোককে ডাকলেন। আল্লাহ্র কি মহিমা! যেখানে বহুসংখ্যক লোক কফিন ওঠাতে পারেনি, সেখানে মাত্র ১০ জন লোক কফিন তুলে ইমাম হুজুরকে রওজা শরীফে সমাহিত করেন। এমন আশ্চর্যজনক দৃশ্য আমি সেদিন প্রত্যক্ষ করেছি। এর রহস্য জানতে চাওয়া হলে- সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান বলেছেন- প্রথমবারে ইমাম হুজুরের কফিন মোবারক না ওঠার কারণ হলো- এদের মধ্যে অনেক মোনাফেক ছিল, তাই কফিন মোবারক ওঠেনি।

অলী-আল্লাহ্গণ হলেন আল্লাহর বন্ধু, তাঁরা যে কোনো কাজ করতে ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তা মঞ্জুর করে থাকেন। তাছাড়া তাঁরা যেহেতু পবিত্র আত্মার অধিকারী, তাই কোনো অন্যায় কাজ তাঁদের দ্বারা সংঘটিত হয় না। অপরদিকে কোনো অন্যায় ও পাপ কর্মের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদেরকে তাঁরা সংশোধন হওয়ার সুযোগ করে দেন বটে, কিন্তু কোনো পাপ ও অপরাধমূলক কাজ তাঁরা পছন্দ করেন না। সে কারণেই হয়ত মোনাফেক ব্যক্তিদের হাতে কফিন উঠুক, এটা ইমাম হুজুর চাননি।

অলী-আল্লাহ্গণের জীবিত অথবা মৃত অবস্থা একই রকম। সে কারণে হযরত রাসুল (সা.) অলী-আল্লাহ্গণকে অমর বলেছেন। তাই মৃত্যুর পরেও তাঁরা যা করতে ইচ্ছা করেন, তা করতে সক্ষম হন। এ প্রসঙ্গে আমার শোনা একটা ঘটনার বর্ণনা করছি। একজন মহান ব্যক্তির কাছে শুনেছিলাম, হযরত শেখ আহমদ সেরহিন্দী মোজাদ্দেদ আলফেসানি (রহ.)-এর ৪ জন সাহেবজাদা ছিলেন। তাঁরা ৪ জনই কামেল অলী-আল্লাহ্ ছিলেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় বড় সাহেবজাদা তাঁর দরবার শরীফ থেকে অন্য এক জায়গায় ইনতিকাল করলেন। মেজো সাহেবজাদা তাঁর দেহ মোবারক দরবার শরীফে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে সেখানে গমন করলেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে তাঁকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন।

অলী-আল্লাহ্গণের অনেক কর্মই রহস্যপূর্ণ। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়। মোজাদ্দেদ আলফেসানি (রহ.)-এর বড় সাহেবজাদার মৃত দেহটি যে কফিনে রাখা হয়েছিল, মেজো সাহেবজাদা দেখতে পেলেন যে, বড় সাহেবজাদার দেহ মোবারক কফিনের ভিতরে নেই। এমতাবস্থায় মেজা সাহেবজাদা চিন্তিত হয়ে পড়লেন যে, কফিনটি খালি পড়ে আছে, তাঁর দেহ মোবারক গেল কোথায়? তখন মেজো সাহেবজাদা বড় সাহেবজাদাকে লক্ষ্য করে বললেন- হযরত! আপনি আল্লাহর বন্ধু। আপনি যা চান, তাই করতে পারেন। কিন্তু আমি আপনার দেহ মোবারক দরবার শরীফে নেওয়ার জন্য এসেছিলাম। এখন যদি আপনার দেহ মোবারক ছাড়া শুধু কফিন নিয়ে আমি দরবার শরীফে যাই, তাহলে মানুষ আমাকে অবিশ্বাস করবে। আমি তাদের কাছে কি জবাব দিবো? আমি তো লোকের কাছে অসম্মানিত হবো। আপনি দয়া করে এই বিপদ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। এভাবে আকুতি জানানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর দেহ মোবারক কফিনের ভিতরে দেখতে পান। অতঃপর তিনি দরবার শরীফে চলে আসেন।

পরবর্তীতে যখন তাঁকে রওজায় রাখা হচ্ছিল, তখন তাঁর চেহারা মোবরক থেকে কাপড় সরানের পরে দেখা গেল তিনি চোখ মেলে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছিল এই বুঝি কথা বলে ফেলবেন। তখন মেজা সাহেবজাদা বড় সাহেবজাদাকে বললেন- হযরত! চোখ বন্ধ করুন, তা না হলে যে শরিয়ত লংঘন হয়ে যাবে, এর পরে তাঁকে দাফন করা হলো। মনে হলো- যেন একজন জীবিত মানুষকেই রওজা শরীফে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনাটি সত্যিই রহস্যে পরিপূর্ণ। ইমাম হুজুর (রহ.)-এর দরবারের ঘটনাটিও ছিল অত্যন্ত রহস্যপূর্ণ।

সম্পর্কিত পোস্ট