Cancel Preloader

Sufi Samrat Hazrat Syed Mahbub-e-Khoda Dewanbagi (Maddazilluhul Ali) Hujur Quiblajan.

যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
[বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক মহান আল্লাহ নিরাকার নন। তিনি আকার, তবে মহান আল্লাহ মানুষের মতো রক্ত মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। এই মহাসত্যটি পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল দিয়ে যিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি হলেন মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। এটিই তাঁর শতাধিক সংস্কারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কার। তিনি তাঁর মহান মোর্শেদের দরবারে সাধনারত থাকা অবস্থায় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর জীবনে সংঘটিত হওয়া বহুল ঘটনাপঞ্জির মধ্য থেকে আমার দেখা, শোনা এবং জানা ঘটনাগুলো থেকে নিম্নের ঘটনা উপস্থাপন করা হলো]।
সৃষ্টির প্রতি সূফী সম্রাটের ভালোবাসা
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ পৃথিবীতে যত নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ প্রেরণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন মানব দরদী। মানুষকে ভালোবাসা ও সেবা করার বিষয়ে তাঁরা অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। আর সে কারণেই তাঁরা নিজ নিজ অনুসারীদেরকে মানব প্রেমের শিক্ষা দিয়েছেন। তাছাড়া আল্লাহর সৃষ্টি একটা ছোটো প্রাণীও যেন খাদ্যের অভাবে মারা না যায়, সে ব্যাপারে তাঁরা নিজ অনুসারীদেরকে সচেতন করতেন। কেননা, মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্ট জীবের প্রতি যেন সবাই ভালোবাসা প্রদর্শন করে, তিনি সেটাই পছন্দ করেন। মহান আল্লাহ আমাদের রব বা প্রতিপালক। তিনি রাজ্জাক তথা রিজিকদাতা। এ পৃথিবীর জলে, স্থলে ও অন্তরিক্ষে যত প্রাণী রয়েছে, তাদের প্রতিপালন যেমন আল্লাহ করেন, তেমনি সাগরের গভীরে যে অতিকায় বিশাল জলজ প্রাণী রয়েছে, যেমন তিমি, যার এক একটির ওজন ৪/৫ টন অর্থাৎ ১০০/১৫০ মণ। এই বিশাল প্রাণীর প্রতিপালক ও রিজিকদাতাও স্বয়ং আল্লাহ। আবার পিপিলিকা ও মশার মতো ক্ষুদ্র প্রাণীর প্রতিপালক ও রিজিকদাতা আল্লাহ। তিনি অতিকায় প্রাণীর জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্যেরও যেমন ব্যবস্থা করেন. আবার ক্ষুদ্র প্রাণীর প্রয়োজনীয় খাবারও তিনি জোগান দিয়ে থাকেন। এমন মহান প্রভুর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যায় কি? সকল সৃষ্টির প্রতি মহান আল্লাহর যেমন রয়েছে অশেষ প্রেম, তদ্রƒপ আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.)-এরও রয়েছে সৃষ্টির প্রতি অশেষ ভালোবাসা।
একদা হযরত রাসুল (সা.) কয়েকজন সাহাবিকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে দুটো পাখি রাসুল (সা.)-এর সাওয়ারি উটের পাশ দিয়ে উড়ে যেতে লাগলো। এভাবে কয়েকবার উড়ে যেতে দেখে রাসুল (সা.) উটের বহর থামাতে বললেন। রাসুলের নির্দেশ পেয়ে সাহাবিদের উটের বহর থেমে গেল। রাসুল (সা.) সাহাবিদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- তোমাদের মধ্যে কেউ কি পাখির বাসা থেকে বাচ্চা এনেছো? জনৈক সাহাবি বললেন, হ্যাঁ! হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমি পাখির বাচ্চা এনেছি। তখন রাসুল (সা.) তাকে নির্দেশ দিলেন- পাখির বাচ্চা তার বাসায় রেখে এসো। রাসুলের নির্দেশ পেয়ে সাহাবি পাখির বাচ্চা বাসায় রেখে এলেন। তখন রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.) বললেন- এই পাখি দুটো তাদের বাচ্চার ব্যাপারে আমার কাছে নালিশ জানানোর জন্যই বারবার আমার সওয়ারির সামনে দিয়ে উড়ে গেছে।
আল্লাহর মহান বন্ধু, হযরত রাসুল (সা.)-এর সুযোগ্য উত্তরসুরী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুরের দরবার শরীফেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ১৯৯৫ সালের। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান ঢাকার আরামবাগ থেকে ‘বাবে জান্নাত’ দেওয়ানবাগ শরীফে গমন করেন। সফরসঙ্গী হিসেবে ঐ গাড়ীতে আমিও ছিলাম। দরবার শরীফের যাবতীয় কাজ তদারক করার পরে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ঢাকার আরামবাগের উদ্দেশে রওয়ানা করেন।
গাড়ী যখন দরবার শরীফের বাইরে মসজিদের নিকটে এলো, এমন সময় দুটি পাখী সূফী সম্রাটের গাড়ীর পাশ দিয়ে উড়ে যেতে লাগলো। এভাবে পাখী দুটি কয়েকটি চক্কর দিলে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান গাড়ীটি থামাতে বললেন। ড্রাইভার গাড়ী থামালে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান জানতে চাইলেন যে, তোমরা গাড়ীর ভিতরে কেউ কি পাখীর বাচ্চা এনেছো? এ কথা শুনে আমাদের গাড়ীর ভিতরের একজন বালক পাখির দুটি বাচ্চা বের করে দিলে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাকে ঐ বাচ্চা দুটো পাখীর বাসায় রেখে আসার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি তখন মনে মনে ভাবলাম, হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুরের সাথে আদর্শের কত মিল। তিনি রাসুল (সা.)-এর উত্তরসূরী বিধায়, সব কাজ কর্মেই এমন মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ
প্রবাদ আছে- ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এ পৃথিবীতে প্রায় ৭শত কোটি লোকের বাস। এদের মধ্যে কেউ ধনী, কেউ গরিব, আবার কেউ মান-সম্মান ও অর্থ সম্পদে ঐশ্বর্যবান। কেউ প্রচুর প্রাচুর্য নিয়ে সুখ শান্তিতে দিন কাটায়। আবার কেউ বা অর্থাভাবে ঐ ধনী ব্যক্তিদের দ্বারন্থ হয়ে তাদের কলকারখানায় হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে অতিকষ্টে জীবন ধারণ করে থাকে। আবার অনেকে রোগ শয্যায় কাতর হয়ে অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারে না। ফলে তাদেরকে মানুষের দ্বারস্থ হতে হয় এবং অর্থ সাহায্য চাইতে হয়। এজন্য মানুষকে বিপদে আপদে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে হয়। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) মানুষের প্রতি ভালোবাসা দিয়েছেন এবং মানবসেবা করেছেন। হযরত রাসুল (স.) বলেছেন- “ইরহামু মান ফিল আরদি, ইয়ার হামুকা মান ফিস সামায়ী”। অর্থাৎ- ‘তুমি যদি সৃষ্টিকে ভালোবাস তবে উর্ধ্বলোকের অধিপতি মহান স্রষ্টাও তোমাকে ভালোবাসবেন’। আসলে শুধু মানুষই নয়, যে কোনো সৃষ্টজীবকে ভালোবাসাটাই হলো ধর্মের তথা ইসলামের মূল শিক্ষা। হযরত রাসুল (সা.)-এর চাচি (আবু লাহাবের স্ত্রী) উম্মে জামিল তাঁকে কষ্ট দেওয়ার জন্য রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখতো। রাসুল (সা.) জানতে পেয়ে তার বাড়িতে গিয়ে সেই বৃদ্ধা রমণীর সেবা করেছেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবনের এমন সুন্দর দৃষ্টান্ত আমরা জানার পরেও আমাদের সমাজের অধিকাংশ লোকই মানব সেবা তো করেই না, বরং বিপদগ্রস্থ মানুষের সর্বস্ব লুট করে নেওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রোডে বাস দুর্ঘটনা ঘটলে আহতদের উদ্ধার করার পরিবর্তে তাদের মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার অনেক ঘটনাই পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। ১৯৭০ সালে স্বাধীনতা পূর্বকালীন সময়ে এমন একটি নির্মম ঘটনার কথা আমার এবং সহপাঠির মুখে শুনেছিলাম, যা আজো মনে বেদনার সৃষ্টি করে। বর্তমান পিরোজপুর জেলার কাউখালি এলাকার লঞ্চ টার্মিনাল থেকে একটি ছোটো একতলা লঞ্চ ছেড়ে পিরোজপুরের হুলারহাট যাচ্ছিল। যাত্রীসংখ্যা ছিল অনেক। তাছাড়া আবহাওয়া ছিল দুর্যোগপূর্ণ। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ে লঞ্চটি চলছিল। যাত্রীদেরও আর বিকল্প কোনো যানবাহন না থাকায় তারা লঞ্চে উঠে পড়ে। টার্মিনাল থেকে লঞ্চটি কিছুদুর অগ্রসর হলে প্রচণ্ড একটা ঝড়ো হাওয়ায় লঞ্চটি কাত হয়ে ডুবে যায়। এ অবস্থায় যাত্রীরা বিপদের আশংকায় নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং সাঁতরিয়ে নদীর ওপারে চলে যায়। কিন্তু চরম বিপদে পড়ে যান একটি বোরখা পরিহিতা মহিলা। লঞ্চ ডুবে গেলে তিনিও বোরখা কিছুটা হালকা করে নদীতে সাঁতরাতে থাকেন। ধনীর মেয়ে বলে সাতরানোর অভ্যাস কম, তাছাড়া তার গলায় ছিল মোটা স্বর্ণের নেকলেস। কিছুক্ষণ সাঁতরানোর পরে ঐ মহিলা আর ভেসে থাকতে পারছিলেন না। এই বুঝি ডুবে যাবেন। এ অবস্থা দেখে একটি নৌকা দ্রুত বেগে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। মহিলা উপরের দিকে হাত তুলে সাহায্য চাইলেন। নৌকাটি যখন মহিলার কাছে পৌঁছে, তখন তিনি হাত বাড়ালেন, যেন মাঝি তাকে নৌকায় তুলে নেয়। কিন্তু তার হাত ধরে নৌকায় না তুলে নৌকার মাঝি মহিলার হাতের পরিবর্তে তার গলার স্বর্ণের মোটা নেকলেসটি ছিড়ে নিল। এর মধ্যে ক্লান্ত শ্রান্ত ঐ মহিলা পানিতে ডুবে গেলেন। মাঝি যদি তার হাত ধরে উপরে তুলতো, তাহলে মহিলা হয়তো বেঁচে যেতে পারতেন। হায়রে মানবতা! এ ধরনের ব্যক্তিকে কি মানুষ বলা যায়? এভাবেই আমাদের সমাজ থেকে আজ মানবতা যেন সম্পূর্ণ হারিয়ে যাচ্ছে, অথচ হওয়া উচিৎ ছিল এর বিপরীত। মূলত মানবতা বোধ না থাকার জন্য এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর মানবতা বোধ জাগ্রত করতে হলে প্রয়োজন চরিত্রবান হওয়া। তবে চরিত্রবান হতে হলে কঠোর সাধনার প্রয়োজন হয়। তা না হলে কোনটি অপরাধ আর কোনটি কল্যাণকর কাজ, তা বুঝা সম্ভব নয়। আর সে কারণেই দেখা যায়, একটি চরম অপরাধ ও গর্হিত কাজ করেও আমরা কোনোরকম অনুতপ্ত হই না। বরং ঐ অপরাধটিকেই ভালো কাজ বলে প্রমাণ করতে সচেষ্ট হই। এটার মূল কারণ হচ্ছে- আমাদের আত্মা কলুষিত। এ প্রসঙ্গে অত্যন্ত সুন্দর একটি উদাহরণ আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) দয়াল বাবা কেবলাজান তাঁর আলোচনার মাঝে দিয়ে থাকেন। তাহলো- জ্বরের রোগীর মুখে মিষ্টি খাবারও তিতা লাগে। তাই বলে মিষ্টি তিতা নয়। জ্বরের কারণে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই ঐ ব্যক্তির মুখে মিষ্টি তিতা লাগে। ঔষধ খাইয়ে তাকে ভালো করে দিলে তার মুখে মিষ্টি আর তিতা লাগবে না। সে মিষ্টিকে মিষ্টিই বলবে এবং খেতে স্বাদ পাবে। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তির আত্মা যখন পাপের দ্বারা কালিমাযুক্ত হয়ে পড়ে, তখন ঐ ব্যক্তি আর ভালো কাজ করতে পারে না। যাবতীয় পাপ কাজের প্রতি সে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। জ্বরে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেলে যেমন মিষ্টিকে সে তিতা বলে, তদ্রƒপ কলুষিত আত্মার অধিকারী ব্যক্তি পাপকাজ করলেও সেটাকে সে পাপ এবং অপরাধ বলে মনে করে না। কারণ পাপ পূণ্যের বোধটুকু সে হারিয়ে ফেলে। জ্বরের রোগীকে যেমন ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে মুখের স্বাদ ফিরিয়ে নিতে হয়, তদ্রƒপ অলী-আল্লাহ্গণ হলেন আত্মার চিকিৎসক। তাঁদের কাছ থেকে তাওয়াজ্জোহ তথা ফায়েজ গ্রহণ করে কলুষিত আত্মাকে রোগমুক্ত করতে হয়। তাহলেই ঐ ব্যক্তির দ্বারা সমাজে কোনো পাপ কাজ সংঘটিত হবে না। তখন সে ভালো কাজের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং মানুষের প্রতি সৃষ্টি হবে তার মমত্ববোধ। এ শিক্ষাই আল্লাহর মহান বন্ধু, যুগের ইমাম, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান মানুষকে দিয়ে থাকেন। তিনি নিজে যেমন মানব দরদী, মানুষকে তিনি শিক্ষাও দেন তাই। এমনও দেখা গেছে, সূফী সম্রাটের বিরুদ্ধে নানাবিধ মিথ্যাচার, কুৎসা ও গর্হিত কাজ করে সাধারণ মানুষকে উস্কে দিয়ে, একটা গণআন্দোলনের ডাক দিয়ে মানুষকে আল্লাহর অলীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া, কোনো কোনো আলেম ব্যক্তি মারাত্মক বিপদে পড়েছে। তাদের কেউ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক চেষ্টার পরে উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের কাছে এসে নিজের ভুল স্বীকার করে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান এমন দয়ালু যে, তিনি ঐ ব্যক্তিকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কিভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে তার বিপদ দূর হবে, সে পদ্ধতিও তিনি বলে দিয়েছেন। আসলে অলী-আল্লাহগণ হলেন আল্লাহর বন্ধু এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর সিরাজাম মুনিরার ধারক ও বাহক। তাই মানুষ শত অপরাধ করেও যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে তাঁদের কাছে এসে ক্ষমা চায়, অলী-আল্লাহ্গণ তখন ঐ অপরাধী ব্যক্তিকেও ক্ষমা করে দেন। শুধু তাই নয়, যদি সে একজন আদর্শ মানুষে পরিণত হতে চায়, অলী-আল্লাহ্গণ তাদেরকে সেই সুযোগ করে দেন। পূর্ববর্তী অলী-আল্লাহ্গণের জামানায়ও তেমন ঘটতে দেয়া যায়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের দরবার শরীফেও সে ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে। মূলত অলী-আল্লাহগণ মানুষের অনিষ্ট চান না, তাঁরা চান মানুষকে পাপের কাজ এবং অনিষ্টের হাত থেকে রক্ষা করে মুক্তির ব্যবস্থা করতে।
তাই আমরা দেখতে পাই আল্লাহর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান নিজের ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি কথা ভুলে গিয়ে, এমনকি অনেক সময় বিশ্রামের সময়টুকু পর্যন্ত না নিয়ে, দেশ বিদেশ থেকে আগত বহু সংখ্যক সমস্যা জর্জরিত ভক্ত মুরিদানের বিপদ আপদের কথা তাদের মুখ থেকে শুনে, তার সমাধান দেওয়ার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তাছাড়া তাদের বিপদ সম্পূর্ণ দূর হলো কি না, সেটা পর্যন্ত খবর নিয়ে থাকেন। এমন মানব প্রেমিক, ভক্ত মুরিদের দরদী মোর্শেদ জগতে আর হবে কি? তাই সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের মতো এমন একজন মহান অলী-আল্লাহকে পেয়ে সত্যিই আমাদের জীবন ধন্য।
মানবতার এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন
বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) একদিকে যেমন ছিলেন শ্রেষ্ঠ রাসুল, অপরদিকে তিনি ছিলেন মানবদরদী একজন শ্রেষ্ঠ মহামানব। আর অলী-আল্লাহগণ যেহেতু আল্লাহর বন্ধু এবং রাসুলের উত্তরসূরী, সেহেতু তাঁদের মধ্যে মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ বিদ্যমান থাকে। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের জীবনেও মানবতার সেই গুণ পরিলক্ষিত হয়।
১৯৮৫ সালের ১৪ই জানুয়ারি সোমবার। রংপুরের বিভিন্ন স্থানে মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রংপুর থেকে একটি জীপগাড়ী পাঠানো হয়েছে। সে গাড়ী আরামবাগ হতে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওয়ানা করে। দেওয়ানবাগ শরীফের তখনকার ম্যানেজার মরহুম জনাব বদরুজ্জামান ভাই ও আমিসহ সফরসঙ্গী ৮ জন। কমলাপুরের খোকন ভাইও আমাদের সঙ্গে ছিল। তখনকার সফরসঙ্গীদের অনেকেই মারা গেছেন। ঢাকা থেকে সকালে রওয়ানা করে আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে আমরা আরিচা পৌঁছলাম। ফেরী পার হয়ে নগরবাড়ী, পাবনা হয়ে রংপুরে যেতে হবে। আরিচা ঘাটে নগরবাড়ী যাওয়ার ফেরী ভিড়লো। বদরুজ্জামান ভাই আমাকে ডেকে বললেন- চলুন, ফেরীতে গিয়ে উঠি। এসময় সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী বললেন- ম্যানেজার সাহেব কোথায় যান? তিনি বললেন- ফেরীতে গিয়ে উঠি, কেননা আমরাতো এই ফেরীতেই যাব। একথা শুনে সূফী সম্রাট হুজুর বললেন- যান, দেখেন কি হয়? এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেরীতে গাড়ী উঠতে শুরু করলো। সিরিয়ালে আমরা ছিলাম সবার শেষে, কিন্তু ফেরীতে উঠতে কিছুটা দেরী হচ্ছিল। আমাদের জীপ গাড়ীটির সামনের দুটি চাকা ফেরীতে উঠেছে। এমন সময় পিছন থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে গেল। অ্যাম্বুলেন্সে একজন ইমার্জেন্সী রোগী ছিল। ঐ অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরীতে উঠার জন্য এগিয়ে এলো। কিন্তু মাত্র একটি গাড়ীর জায়গা খালি। এরই মধ্যে আমাদের জীপ গাড়ীটির সামনের ২টি চাকা ফেরীতে উঠে গেছে। এমতাবস্থায় ফেরীর কর্তৃপক্ষও একেবারে নীরব। আমাদের ড্রাইভার গাড়ীটি ফেরীতে উঠানোর জন্য চেষ্টা করছে। ওদিকে অ্যাম্বুলেন্সটিতে ইমার্জেন্সী রোগী, সেটিও ফেরীতে উঠতে চায়। এমতাবস্থায় সবার দৃষ্টি সূফী সম্রাটের দিকে। তিনি যা বলবেন, যে সিদ্ধান্ত দিবেন, সেটিই বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু আল্লাহর মহান বন্ধু নিজে যে গাড়ীতে বসে আছেন, সে গাড়ী পার হতে না পারলে রংপুর পৌঁছাতে ৪/৫ ঘন্টা দেরী হবে, এটা নিশ্চিত জেনেও তিনি আমাদের জীপ গাড়ীর ড্রাইভারকে গাড়ী পিছাতে নির্দেশ দিলেন। অর্থাৎ সামনের দুটি চাকা ফেরীতে উঠা সত্ত্বেও গাড়ী ফেরী থেকে নামাতে বললেন। আমাদের গাড়ীটি নেমে গেল এবং রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি উঠে গেল। সেদিন দেখলাম- মানবতার কি নিদর্শন সূফী সম্রাট সৃষ্টি করলেন। পরবর্তী ফেরীতে উঠে আমরা সন্ধ্যা রাতের পরিবর্তে গভীর রাতে রংপুরের পীরগাছায় পৌঁছলাম। মাঘের সে রাতে গাড়ী চালাচ্ছিলেন রংপুরের হাসান ভাইয়ের ড্রাইভার আসলাম ভাই, পীরগাছার লাভলু ভাই, আনিসুর রহমান চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক খন্দকার ও মো. সানোয়ার হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেদিন নিজের গাড়ী অনেক বিলম্বে রংপুরে পৌঁছাবে, এটা নিশ্চিত জেনেও মানব দরদী, আল্লাহ্র মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান মানবতার যে শ্রেষ্ঠ নিদর্শন দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এটা মানব জাতির জন্য একটি অতীব স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে চির অম্লান হয়ে থাকবে, একথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
[লেখক: ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]

সম্পর্কিত পোস্ট