Cancel Preloader

রমজান পরবর্তী শাওয়ালের ৬টি রোজা


আলহাজ হযরত সাব্বির আহমাদ ওসমানী
‘শাওয়াল’ আরবি শব্দ। হিজরি দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস। প্রতিবছর রমজান মাসের পরেই শাওয়াল মাস আগমন করে। এ মাসের আমলের দ্বারা আত্মিক উন্নতি লাভ হয়, গৌরব অর্জন হয় ও সাফল্য আসে। ফলপ্রার্থী আল্লাহর কাছে হস্ত সম্প্রসারিত করে প্রার্থনা করে। পূর্ণমাস রোজা পালনের পর আরো কয়েকটি রোজা রাখে, প্রাপ্তির আনন্দে বিভোর হয়। ফরজ রোজা পালন শেষে নফল রোজার প্রতি মনোনিবেশ করে। আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জন করে, পরিকল্পনা ও স্থিতি লাভ করে। এসবই হলো শাওয়াল মাসের নামের যথার্থতা। আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলেন, “অতএব যখনই আপনি অবসর পাবেন, তখনই একান্তে ইবাদত করবেন এবং স্বীয় রবের প্রতি মনোনিবেশ করবেন।” (সূরা ইনশিরাহ্ ৯৪: আয়াত ৭-৮)
বিশাল এক রহমতের মাস ‘রমজান’, আমাদের মাঝ থেকে চলে গেল। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রই ১২ মাসের মধ্যে রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করেন। কারণ এ মাসের রহমত আর বরকতের পরিমান বহু গুণ বেশি। তাছাড়া রোজার পুরস্কার আল্লাহ্ তায়ালা নিজেই। হাদিসে এসেছে- “রোজা আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান।” (বুখারী শরীফ ১ম খ, পৃষ্ঠা ২৫৪)
একমাস রোজা রাখার উপহারস্বরূপ আল্লাহ্ নিজেই আমাদের জন্য পুরস্কার হবেন। তাহলে চিন্তা করুন রোজা রাখার কারণে যে ফজিলত ও রহমত আমরা পাই সেটা যদি বাকি ১১ মাসে পাওয়া যেত তাহলে কতইনা ভালো হতো। কিন্তু ৩৬৫ দিন রোজা রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া আল্লাহ্ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- “আল্লাহ্ চান তোমাদের বোঝা হালকা করতে কারণ মানুষ তো সৃষ্ট হয়েছে দুর্বল।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ২৮) তাই মন খারাপ বা হতাশ হবার কিছু্ নেই। হযরত রাসুল (সা.) আমাদের সহজ সরল সমাধান দিয়েছেন।
রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা পালন করল। তারপর শাওয়াল মাসের ৬ দিনকে তার অনুগামী করল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।” (মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২৯) চান্দ্রমাস হিসেবে ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে ১ বছর হয়। প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- “যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে সে তার দশ গুণ পাবে এবং যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করবে তাকে শুধু তার কর্ম পরিমাণই প্রতিফল দেওয়া হবে। আর তাদের উপর জুলুম করা হবে না।” (সূরা আন‘আম ৬: আয়াত ১৬০) এই হিসেবে রমজান মাস এক মাসের ৩০ দিনের রোজা ১০ গুণ হয়ে ৩০x১০= ৩০০ দিনের সমান হয়। অবশিষ্ট ৫৪ বা ৫৫ দিনের জন্য আরাও ৬টি পূর্ণ রোজার প্রয়োজন হয়। তাহলে ৩০+৬= ৩৬টি রোজার বাকী লাভ ৩৬x১০= ৩৬০ দিন রোজা রাখার ফজিলত লাভ করবে।
শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ারও পরিচায়ক। আল্লাহ্ তায়ালা কোনো বান্দার আমল কবুল করলে, তাকে অনুরূপ আরো আমল করার তৌফিক দান করেন। নেক আমলের প্রতিদানের একটি রূপ হলো আবার আরও নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই নামাজ, রোজা, তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত বন্দেগি বাকি ১১ মাসও বজায় রাখতে হবে।
মূলত শাওয়াল ইসলামি মাসগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের বহুবিধ তাৎপর্য রয়েছে। আরবি চান্দ্রবর্ষের ১০ম মাস শাওয়াল। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) অগ্রণী। এ মাসের ১লা তারিখ ঈদুল ফিতর। পয়লা শাওয়াল সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই মাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে হজের, এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে ঈদের, এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সদকা ও যাকাতের। তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই মাসে আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত উর্বর ও উপযোগী।
নামাজ, রোজা, ইবাদত বন্দেগি সবই করতে হবে মহান আল্লাহ্ বিধান ও হযরত রাসুল (সা.) এর নির্দেশ মোতাবেক। তাই হযরত রাসুল (সা.)-এর নিদের্শনা যথাযথ আমল ও তালিমের জন্য আমাদেরকে যেতে হবে তাঁর উত্তরসূরি আউলিয়ায়ে কেরামের কাছে। এমন একজন জগতশ্রেষ্ঠ মহামানব ছিলেন যুগের মোজাদ্দেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)। তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে অসংখ্য মানুষ ইবাদত করে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভে ধন্য হয়েছেন। তাঁর ওফাতের পরে তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর আজ সেই আধ্যাত্মিক শিক্ষা মানুষকে প্রদান করে যাচ্ছেন।
পরিশেষে মহান আল্লাহ নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখার তৌফিক দান করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ করে দেন। আমিন।
[লেখক: ইসলামি আলোচক; সদস্য, দেওয়ানবাগীর দল ওলামা মিশন বাংলাদেশ]

সম্পর্কিত পোস্ট