Cancel Preloader

সম্পাদকীয়


মানুষের ভাব বিনিময়, আবেগ-অনুভূতি ও চিন্তা প্রকাশের বাহন হচ্ছে ভাষা। ভাষাকে আশ্রয় করেই বিকশিত হয় মানুষের চিন্তা-চেতনা, সভ্যতা, সমাজ ও সংস্কৃতি। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- “খালাকাল ইনসানা আল্লামাহুল বায়ান।” অর্থাৎ তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে ভাষা শিখিয়েছেন। (সূরা আর রহমান ৫৫: আয়াত ৩-৪) পৃথিবীতে যেমন নানা দেশ রয়েছে, তেমনি রয়েছে নানা জাতি, গোত্র, বর্ণ, ধর্ম ও ভাষা। যত প্রাণী পৃথিবীতে রয়েছে তাদের প্রত্যেকের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন। এমনকি একই ভাষাভাষী মানুষের কণ্ঠস্বর, উচ্চারণভঙ্গী পৃথক। এটি আল্লাহ্ তায়ালার এক অপূর্ব নিদর্শন। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, “আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন জ্ঞানবানদের জন্য।” (সূরা আর রূম ৩০: আয়াত ২২)


বাংলা ভাষা পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাঙালি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অধিকারী একটি প্রাচীন জাতি। মাতৃভাষার প্রতি গভীর আবেগ, ভালোবাসা শ্রদ্ধা না থাকলে একটি জাতির স্থায়িত্ব ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠা কঠিন। বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। জাতিসংঘ বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এদেশ ভাষা অধিকার আদায়ের দেশ। ইতিহাসে আজ এই জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।


বিশ্বে বাংলা ভাষার অবস্থান ৫ম। এই ভাষায় কথা বলেন প্রায় ৩০ কোটি মানুষ। বাঙালিরা আজ ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। বাঙালিরা যেখানেই গেছেন সেখানেই বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন নানাভাবে। বিশ্বের ৪টি মহাদেশের ৩০টি দেশের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা ও চর্চা হচ্ছে। ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে বাংলা ভাষাকে ২য় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। ২০০২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন আমাদের মাতৃভাষাকে সম্মানসূচক সেদেশের সরকারি ভাষায় মর্যাদা দিয়েছে। তাছাড়া ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, ও পশ্চিমবঙ্গে অফিসিয়ালি বাংলা ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাস্তবিকভাবে বাংলা ভাষার চর্চা বহির্বিশ্বে হচ্ছে এবং সেটি দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গর্বের বিষয় হচ্ছে এই বাংলা মায়ের গর্ভে এমন এক মহারত্মের জন্ম হয়েছে, যিনি বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি দান করে ইতিহাসে অমর অক্ষয় হয়ে আছেন, তিনি হলেন মহান সংস্কারক যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান। এই মহামানব দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধ করে একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। আমরা এই মহামানবকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। যার প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শের অনুসারী বাংলাদেশের আশেকে রাসুলেরা পৃথিবীর যে প্রান্তে গিয়েছেন, সেখানেই বাংলা ভাষায় প্রচার করছেন।
মহান আল্লাহ্ মানুষকে হেদায়েতের জন্য ১০৪টি আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন, সেগুলো প্রত্যেক রাসুলের ক্বালবে নিজ নিজ কওমের ভাষায় নাজিল করেছেন। এর মধ্যে প্রধান ৪টি আসমানি কিতাব যথাক্রমে- হযরত মুসা (আ.)-এর ক্বালবে তাওরাত হিব্রু বা ইবরানি ভাষায়, হযরত ঈসা (আ.)-এর ক্বালবে ইনজিল সুরিয়ানি ভাষায়, হযরত দাউদ (আ.)-এর ক্বালবে জাবুর ইউনানি বা আরামাইক ভাষায় এবং মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হয় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ক্বালবে আরবি ভাষায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “আমি সব রাসুলকেই তাঁদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই পাঠিয়েছি, যাতে তাদের (পরিষ্কারভাবে আল্লাহর বাণী) বুঝাতে পারে।” (সূরা ইব্রাহিম ১৪: আয়াত ৪) পবিত্র কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাতৃভাষা আরবি।


বর্তমান বেলায়েতের যুগে এই বাংলায় বিশ্বে মানবতার মুক্তির কাণ্ডারী সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ক্বালবে নাজিলকৃত ঐশী জ্ঞান সংবলিত আধ্যাত্ম দর্শন বাংলা ভাষায় ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ তাফসীর গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যাকে আধ্যাত্মবাদ ও মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শনের কোষ ঐশী দর্শন সমৃদ্ধ কিতাব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই তাফসীর গ্রন্থ কেয়ামত অবধি বিশ্ব মানবতার শান্তি ও মুক্তির দিক নির্দেশনা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান এই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করায় তাঁর মাতৃভাষা বাংলা। তিনি সর্বপ্রথম মাতৃভাষায় খুৎবা প্রদানের রীতি প্রচলন করেন। মহান আল্লাহ্ এই মহামানবের ক্বালবে তাঁর মাতৃভাষায় তাফসীর শরীফ প্রণয়ন করার জ্ঞান দিয়েছেন। আজ বিশ্বের শতাধিক দেশে তাঁর ঐশী দর্শন ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ বাংলা ভাষায় গবেষণা ও চর্চা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জীবন দর্শন ও মিলাদ মাহ্ফিল বাংলা ভাষায় প্রচারিত হচ্ছে। তাঁর জীবন দর্শন আত্মস্থ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ মহান আল্লাহ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর পরিচয় লাভ করছে। মহামূল্যবান কিতাব ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ সম্বন্ধে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী বলেন, “কুরআনের বাণী ও আমার কথা দুরকম হবার নয়। কেননা যে মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ.) হতে শুরু করে হযরত রাসুল (সা.) পর্যন্ত সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের মাঝে ছিলেন, সেই মহান আল্লাহ্ই আমার মাঝে বিরাজিত। সুতরাং আল্লাহ্ যেহেতু একজনই, বাণী তো দুরকম হবার কথা নয়।” ভাষার মাসে আমরা এই মহামানবকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

সম্পর্কিত পোস্ট