Cancel Preloader

সম্পাদকীয়

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের সহধর্মিণী আওলাদে রাসুল, কুতুবুল আকতাব, দুররে মাকনুন, খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম দয়াল মা (রহ.) ১৯৫৭ সালের ৮ই মে, ১৩৬৪ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ, বুধবার ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলাধীন চন্দ্রপাড়া গ্রামে আপন পিত্রালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হলেন পিরানে পির, দস্তুগির, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) এবং তাঁর মাতা হলেন বিশিষ্ট সুফি সাধক হযরত ছমিরুন্নেসা খানম (রহ.)। পিতা ও মাতার পাঁচ কন্যার মাঝে হযরত দয়াল মা (রহ.) চতুর্থ। তিনি শৈশব থেকে অনুপম চারিত্রিক মাধুর্য নিয়ে বড়ো হন। তিনি ছোটো বেলা থেকেই সর্বদা মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভের আকাঙ্ক্ষায় তরিকতের সাধনায় মশগুল থাকতেন। তাঁর অসাধারাণ গুণাবলির কারণে পিতা ইমাম হুজুর (রহ.) তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। পিতা কীভাবে সাধনা আরাধনা করতেন, তিনি সবসময় সেগুলো অনুসরণ করতেন।


তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী, ১ম খণ্ডের ৩১১ পৃষ্ঠায় কুতুবুল আকতাব হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম দয়াল মা (রহ.)-এর ৬ বছর বয়সের একটি ঘটনা উপস্থাপন করা হয়, ঘটনাটি হলো- “স্বীয় পিতা পিরানে পির, দস্তুগির, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদেদ্দিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) এনায়েতপুর দরবার শরীফের ওরস মোবারকে গমন করেন। তিনি পিতার সাথে এনায়েতপুর যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) তাঁকে বুঝিয়ে বাড়িতে রেখে যান। অতঃপর ওরসের দিন সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.) চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের সকল বাচ্চাদের বললেন- চলো আমরা সবাই মিলে জিকির করি। তাঁর কথায় বাচ্চারা ওজু করে একসাথে জমায়েত হলো। তারপর তিনি সবাইকে নিয়ে জিকির আজকার শুরু করেন। বাচ্চারা যখন একত্রিত হয়ে জিকিরে মশগুল, ঠিক সেসময়ে ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর সহধর্মিণী হযরত বড়ো মা (রহ.) নামাজ আদায় করার জন্য ঘরে প্রবেশ করে বললেন, বাচ্চারা তোমরা চুপ করো, আমি এখন নামাজ পড়বো। নির্দেশ শুনে বাচ্চারা চুপ হয়ে গেলো। কিন্তু কুতুবুল আকতাব থামলেন না। হযরত বড়ো মা (রহ.) স্বীয় কন্যাকে হাতে টান দিয়ে বসতে বলেন। তিনি জবাব দিলেন- না আমি বসবো না। মা, আপনি কি দেখেন না, এনায়েতপুরের ওরসে গণ্ডগোল হচ্ছে?’ অতঃপর তিনি এনায়েতপুর দরবার শরীফের চলমান ঘটনা একে একে বর্ণনা করতে লাগলেন। উল্লেখ্য, কুতুবুল আকতাব সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.) কাশফ বা অন্তরদৃষ্টির মাধ্যমে ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফ হতে সিরাজগঞ্জ জেলাধীন এনায়েতপুর দরবার শরীফের ওরসের গণ্ডগোল এভাবেই দেখছিলেন। এনায়েতপুর দরবারে সংঘটিত ঘটনার বিবরণ শুনে হযরত বড়ো মা (রহ.)-এর আর বুঝতে বাকি রইল না যে, কুতুবুল আকতাব এখন বিশেষ এক হালতে আছেন। ফলে তিনি তাঁকে আর কিছুই বললেন না। কয়েকদিন পর ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) এনায়েতপুরের ওরস শেষ করে বাড়ি ফিরে আসেন। অতঃপর হযরত বড়ো মা (রহ.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, এবার এনোয়েতপুর ওরসে কি গণ্ডগোল হয়েছিল? জবাবে ইমাম শাহ চন্দ্রপুরী (রহ.) বললেন, এ কথা তোমাদেরকে কে বলল? হযরত বড়ো মা (রহ.) কুতুবুল আকতাবের কথা জানালে ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং বিস্তারিত আলোচনা করেন।”

কুতুবুল আকতাব হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর গৌরবময় জীবনে এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, যেগুলো প্রমাণ করে তিনি জন্মগত অলী-আল্লাহ্ ছিলেন। মে মাসের ৮ তারিখ জগদ্বিখ্যাত মহামানবী হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর ৬৫তম শুভ জন্মদিন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “তাঁর প্রতি শান্তি, যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে, যেদিন সে ওফাত লাভ করে এবং যেদিন সে জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।” (সূরা মারইয়াম ১৯: আয়াত ১৫) সুতরাং আল্লাহর বন্ধুদের শুভ জন্ম মানবজাতির জন্য অবারিত রহমত ও বরকত বয়ে আনে। এবছর হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য দেওয়ানবাগ শরীফের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন প্রতিবছর গভীর শুদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে উদ্যাপনের তৌফিক ভিক্ষা দিন।


অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আরবি ১৪৪৩ হিজরির শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখার ১৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। আরবি ১৪২৯ হিজরির শাওয়াল মাসে সর্বপ্রথম সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারকের প্রতিচ্ছবি পূর্ণিমার চাঁদে দেখা যায় এবং অদ্যাবধি দেখা যাচ্ছে। সৃষ্টির শুরু থেকে এই পর্যন্ত সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ব্যতীত কোনো মহামানবের চেহারা মোবারক চাঁদে প্রদর্শিত হয়নি। অবশ্যই এর পিছনে নিগুঢ় রহস্য রয়েছে। এই প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “যখন চতুর্দিক থেকে মানুষ এসে আমাকে বলছে যে, আমাকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে, তখন আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, এটা কি আমার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র? আমি যোগাযোগ করলাম আমার মহান মালিকের সাথে। যোগাযোগ করার পর আমাকে তখন যে সংবাদটি দেওয়া হলো, সেটা হলো- ‘সারা দুনিয়ার মানুষ আমাকে (আল্লাহ্) নিরাকার বলে। একমাত্র আপনি সেই ব্যক্তি আমার আকার পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দলিল দিয়ে প্রমাণ করেছেন। তাহলে আমি কি আপনাকে পুরস্কৃত করব না? সুতরাং আপনাকে পুরস্কৃত করার জন্য চাঁদের মধ্যে দেখিয়েছি।’ জানতে চাইলাম, ‘কতদিন দেখানো হবে?’ তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হলো- ‘যতদিন প্রয়োজন, আমি ততদিন দেখাব’।” (মাসিক আত্মারবাণী, সেপ্টেম্বর ২০২০ইং, পৃষ্ঠা ২৭)

এই বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশের কোটি কোটি আশেকে রাসুল ‘পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি’ দেখার ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করেন। অনুষ্ঠানটি যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য দেওয়ানবাগ শরীফের পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই দিনটিতে আশেকে রাসুলগণ দুই রাকাত সালাতুস শোকর নামাজ আদায় করেন এবং শোকরানা মিলাদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। এই দিনটি যথাযথ মর্যাদার সাথে উদ্যাপন করতে পারলে মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট