Cancel Preloader

সম্পাদকীয়

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পবিত্র হজ পালিত হয়ে থাকে। ধনীদের উপরে জীবনে একবার হজ করা ফরজ। পবিত্র জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ২০ লক্ষাধিক মুসলমান মক্কার আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হয়ে ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ বলে নিজেদের উপস্থিতির কথা আল্লাহর কাছে জানান দেন। আরাফার ময়দানে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হওয়াকেই মূলত হজ বলে। হজের দিন খতিব আরাফার ময়দানে উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে খুৎবা প্রদান করেন। জিলহজের ৯ তারিখ হজ শেষ করে হাজিগণ পরের দিন অর্থাৎ- ১০ জিলহজ পশু কোরবানি করে থাকেন। পৃথিবীর সব দেশেই মানুষই হজের পরের দিন কোরবানি করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সৌদি আরবের একদিন পরে বাংলাদেশে পশু কোরবানি করা হয়ে থাকে। অথচ হজের পরের দিন বিশ্বের সকল মুসলমান কোরবানি করলেও বাংলাদেশে কোরবানি হয় আরো ১ দিন পরে অর্থাৎ ১১ জিলহজ। এ বিষয় নিয়ে মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে ‘ঈদ সমস্যার সমাধান’ নামক কিতাব লিখে প্রমাণ করেছেন যে, সারা বিশ্বে একই তারিখে রোজা, ঈদ ও কোরবানির ঈদসহ সকল ধর্মীয় অনষ্ঠান উদ্যাপন করা সম্ভব।

আমাদের দেশের একশ্রেণীর গোড়াপন্থি আলেম চাঁদ দেখার অজুহাতে সৌদি আরবের ১ দিন পরে রোজা ও ঈদ পালন এবং ঈদুল আজহা বা কোরবানি করে থাকেন। অথচ সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান মাত্র ৩ ঘন্টা। তাছাড়া শুক্রবার দিনে আমরা যেমন জুমার নামাজ পড়ি, মাত্র ৩ ঘন্টার ব্যবধানে সৌদি আরবেও জুমার নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান অত্যন্ত সুন্দর ও যুগোপযোগী বৈজ্ঞানিক সমাধান দিয়েছেন। তা মেনে নিলেই বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ রোজা পালন, ঈদুল ফিতর উদ্যাপন এবং পশু কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান একই তারিখে করতে সক্ষম হবে। ফলে মুসলমানগণ ধর্ম পালনের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পারবেন।

এ বছর পৃথিবীর ২১৪টি দেশে করোনা ভাইরাস মারাত্মক মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী এক চরম আতংক বিরাজ করছে। ফলে এবছর পৃথিবীর সকল দেশের মুসলমানদেরই হজ করতে সৌদি আরবে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে শুধুমাত্র সৌদি আরবের কিছু সংখ্যক লোক হজ করতে পারবেন। অথচ প্রতিবছর পৃথিবীর ২০ লক্ষাধিক লোক মক্কায় হজে যেতেন। বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার জন্য ৬৫ হাজার মানুষ প্রস্তুত ছিলেন। তারাও এবার হজে যেতে পারবেন না। হজে মাথাপিছু খরচ ৩ লক্ষ টাকা হলে ৬৫ হাজার মানুষের মোট প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয় হবে। হজের এই বিপুল পরিমাণ টাকা এবং সাথে পশু কোরবানি করার মতো কোটি কোটি টাকা এবছর করোনা মহামারিতে আক্রান্ত এবং সেই কারণে কর্মহীন অভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ খুশি হবেন এবং হজ কবুলিয়াতের সওয়াব দান করবেন। পৃথিবীতে এমন ইতিহাস রয়েছে যে, হজে যাওয়ার জন্য ইয়েমেনের এক গরিব মুচি তার জমানো সব টাকা ক্ষুধার্ত মানুষকে দান করায়, হজ করতে না যাওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ্ তার হজ কবুল করেছেন। এমন ইতিহাস বিশ্বাবাসীর সামনেই রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে যে সকল ধনী ব্যক্তি হজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছেন, আপনাদের হজের টাকার কিছু অংশ অসহায় ও বিপদগ্রস্থ মানুষকে দান করুন, এটাই হবে আপনাদের জন্য আল্লাহ্র দয়া ও রহমত লাভের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আসলে আল্লাহর কাছে নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি সকল ইবাদতের চেয়ে বড়ো ইবাদত হচ্ছে মানব সেবা। আমরা যদি মানব সেবায় এগিয়ে আসি, নিঃসন্দেহে সেটা হবে আমাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে উত্তম পথ। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে মানব সেবার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট