Cancel Preloader

সূফী সম্রাট প্রকৃত মুমিন হওয়ার শিক্ষা দেন

আশেকে রাসুল এস এ সুলতান:

মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান জগতের পথভোলা মানুষকে নুরে ইমান লাভ করার মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন হওয়ার শিক্ষা দান করেন। একজন মানুষ যখন প্রকৃত মুমিন হতে পারে, তখন তার কোনো চিন্তার কারণ থাকে না। তখন তার অভিভাবক স্বয়ং মহান আল্লাহ্ হয়ে যান এবং তার জন্য আল্লাহ্ই সকল প্রকার বিপদ আপদ, বালা মুসিবত হতে মুক্তির পথ বের করে দেন।

সামাজিকভাবে মানুষ মনে করে, যে ব্যক্তি মুসলমানের ঘরে জন্ম নেয়, সে নিজে নিজে কালেমা পড়লেই মুমেন হয়ে যায়। কিন্তু ইমান কী, ইমানদার হলে মানুষের কেমন অনুভুতি হয়, তা শুধুমাত্র কাল্পনিক বিষয়বস্তু, অনুমান, অনুভুতির ব্যপার নয়, বরং এটা বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার বিষয়। প্রকৃত ইমানদার হতে ইমানের বিভিন্ন স্তর অথবা ক্লাস অতিক্রম করতে হয়।

প্রতিটি ক্লাসে সাধনা করে, পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে, সে পরীক্ষায় পাশ করে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে হয় এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটিক্লাস পাশ করার মাধ্যমে সর্বশেষ ক্লাস অর্থাৎ আল্লাহ্তে সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে মানুষ প্রকৃত মুমিন হতে সক্ষম হয়।

একা একা সাধনা করে ইমানদার হওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য আল্লাহ্ মনোনীত শিক্ষকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করে ইমানদার হতে হয়। এই শিক্ষক হলেন নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণ, আর বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণ।

সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ ৪র্থ খণ্ডে বর্ণনা করেছেন, প্রকৃতপক্ষে ইমান থাকে মানুষের ক্বালবে, মানুষ যখন প্রেরিত মহামানব তথা নবি-রাসুল ও আউলিয়ায়ে কেরামের সান্নিধ্যে গিয়ে ঐ মহামানবের কাছ থেকে ইমানের নুর স্বীয় ক্বালবে ধারণ করে, তখনই মুমিন হিসাবে তার যাত্রা শুরু হয়।

অতঃপর সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে ঐ ব্যক্তির মাঝে ইমানের নুর থেকে ইমানের চরিত্র সৃষ্টি হতে থাকে। এ অবস্থায় মানুষ সৎকাজ করে, তখন সে স্বীয় অন্তরে পরম শান্তি অনুভব করে, ফলে ঐ ব্যক্তির মন খুশিতে ভরে উঠে। আবার তার দ্বারা যখন কোনো অন্যায় কাজ হয়ে যায়, তখন তার অন্তরে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় মুমিন ব্যক্তি অন্তরে জ্বালাপোড়া অনুভব করে চরম অস্থিরতায় ভুগতে থাকে। এমনিভাবে একজন মুমিন আল্লাহ্ প্রেরিত মহামানব তথা মোর্শেদের পরামর্শ নিয়ে যখন যত্নের সাথে স্বীয় ক্বালবে ইমান লালন করতে পারে, তখন সে ক্বালবের মাধ্যমেই সৎ-অসৎ , পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায় ও ভালো-মন্দ উপলব্দি করে পথ চলতে পারে।

এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন “যখন কোনো কিছু তোমার ক্বালবে খটকা বা অশান্তির সৃষ্টি করবে তুমি তা পাপ জেনে বর্জন করবে।“ (সহীহ ইবনে ইব্বান-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০২) আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু হাদিসের কিতাব মুসনাদে ইমাম আলীতে বলেছেন, “ইমানের চারটি স্তম্ভ আছে । যথা-১। আল্লাহর উপর নির্ভর করা, ২। যাবতীয় কাজ-কর্ম আল্লাহর বরাবর সোপর্দ করা, ৩। আল্লাহর ফয়সালায় রাজি-খুশি থাকা এবং ৪। আল্লাহর নির্দেশের কাছে নিজেকে সপে দেওয়া।” আর এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মুমিনদের শানেই আল্লাহ্ বলেন, “যারা ইমান আনে ও সৎকাজ করে , আল্লাহ্ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপুরস্কার প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন।’’ (সূরা আল মায়িদাহ-৫: আয়াত ৯)

মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, “তোমাদের নিকট এসেছে আল্লাহর থেকে এক নুর (বা জ্যোতি) ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, এর দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন।” (সূরা আল মায়িদাহ-৫: আয়াত ১৫-১৬)

প্রকৃত মুসলমান মুমিন ব্যক্তির আত্মা পরিশুদ্ধ আত্মা, যা কুরিপুকে বশীভূত করে নিজের মাঝে একমাত্র আল্লাহর প্রভুত্ব কায়েম করেছে। এ আত্মা পাপমুক্ত আত্মা এবং এটি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার সহায়ক। আল্লাহ্ বলেন-“নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে আত্মশুদ্ধি লাভ করে এবং স্বীয় প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামাজ আদায় করে।” (সুরা আ‘লা-৮৭: আয়াত ১৪-১৫)

অনুরূপভাবে পরম করুণাময় আল্লাহ্ অন্যত্র এরশাদ করেন, “কসম মানুষের নফসের এবং যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। অতঃপর তাকে তার মন্দ কর্ম ও তার তাকওয়ার জ্ঞান এলহাম করেছেন। অবশ্যই সফলকাম হয়েছে সে ব্যক্তির যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে আর ব্যর্থ হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পাপাচারে কলুষিত করেছে।’’ (সূরা আল শামস-৯১: আয়াত ৭-১০)

আত্মশুদ্ধি অর্জন করে নিজের মাঝে প্রভুর রাজত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর প্রেরিত মহামানব (নবি-রাসুল কিংবা অলী-আল্লাহ্)-এর সাহচর্য প্রয়োজন। তাঁর শক্তির প্রভাবে এবং আদর্শে ধর্মীয় বিধিবিধান অনুশীলনের মাধ্যমে চরিত্র বিশুদ্ধ করে, প্রভুর প্রতিনিধিত্বের যোগ্যতা অর্জন করে মানুষের পক্ষে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্ বলেন- “আমি যাদের সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন একদল আছে, যারা সত্য পথ দেখায় এবং সে অনুযায়ী ন্যায়বিচার করে।“ (সুরা আল আ‘রাফ-৭: আয়াত ১৮১)

অন্যত্র আয়াতে সুমহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- “হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসুলের এবং তাঁদের (ধর্মীয় নেতা অর্থাৎ অলী-আল্লাহর) যারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে) ফয়সালা দিতে পারেন।”(সূরা আল নিসা-৪: আয়াত ৫৯)

এরূপ মহামানবের সহবত লাভকারীরা সাধনার মাধ্যমে চরিত্র সংশোধন করত প্রভুর ইচ্ছায় নিজেকে পরিচালিত করতে পারে। এ যোগ্যতা অর্জনকারী নিজে প্রকৃত শান্তি অনুভব করতে সক্ষম। আল্লাহ্ প্রদত্ত এ শান্তির পথে পরিচালিত ব্যক্তিই মূলত সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় এ পথের পথিকরাই চিরশান্তি ও মুক্তি লাভের লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এরূপ ব্যক্তিদের সমষ্টির মাধ্যমে সমাজের যাবতীয় অনাচার এবং পাপাচার দূরীভূত হয়ে সমাজে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এদের শানে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন- “তারাই প্রকৃত মু’মিন, তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের কাছে মর্যাদা, ক্ষমা, এবং সম্মানজনক রিজিক।“ (সূরা আল আনফাল-৮: আয়াত ৪)

যে সমস্ত ব্যক্তি নিজেদের প্রকৃত মুমিন হিসাবে গড়ে তুলতে পেরেছে, মহান রাব্বুল আলামিন তাদের মর্যাদা, সম্মান প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে দেন, তাদেরকে ক্ষমা করেন এবং তাদের জন্য সন্মানজনক জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করেন। প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য সমন্ধে আল্লাহ্ বলেন- “মু’মিন তো তারাই, আল্লাহর জিকিরে যাদের ক্বালব কম্পিত হয়, যখন আল্লাহর বাণী তাদেরকে শুনানো হয়, তখন তা তাদের ইমান বৃদ্ধি করে দেয় এবং তারা কেবল তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে। যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। (সুরা আল আনফাল-৮: আয়াত ২ ও ৩)

প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় আশেকে রাসুল মুমিনদের মাঝে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের মুরিদ আশেকে রাসুলগণের মাঝে এই বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এ যুগের পথহারা মানুষ যখন হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া শান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী হওয়ার জন্য হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের কাছে আসে, তখন

দয়াল বাবাজান মোহাম্মদী ইসলামের কাণ্ডারী হিসাবে হযরত রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী স্বীয় ক্বালবের জাগ্রত নুর তথা নুরে মোহাম্মদীর নুর থেকে মুক্তিকামী মানুষের ক্বালবে ‘আল্লাহ্’ শব্দের বীজ বপন করে দেন। এ অবস্থায় আল্লাহর অপার দয়ায় তাদের ক্বালবে ‘আল্লাহ্’ নামের জিকির শুরু হয়ে যায়, তখন ক্বালব সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকে। শুরু হয় আল্লাহ্ প্রাপ্তির সাধনা।

এ সকল মুমিন যখন দয়াল মোর্শেদ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী বাবাজানের সহবতে আসেন, দয়াল বাবাজানের পাক জবানে আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও তাঁর দয়ার মহিমা শ্রবণ করে তাদের হৃদয় পরম শান্তিতে ভরে উঠে। এ সময় তারা আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-এর প্রেমে এতটাই ব্যাকুল বেকারার হয়ে যায় যে , তাদের বুক ফেটে কান্না আসতে থাকে, তাদের ইমানের তেজ বৃদ্ধি পেতে থাকে, ফলে সবকিছুর ঊর্ধ্বে তারা আল্লাহ্কে পেতে চায়।

তারা হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করার যোগ্যতা অর্জন করে, নামাজে মিরাজ লাভ করে এবং আল্লাহ্ তাদেরকে যে ধনসম্পদ দান করেছেন, তা থেকে আল্লাহর পথে অকাতরে ব্যয় করে। এমনিভাবে নবুয়ত ও বেলায়েত তথা সর্বযুগে যারা মুমিন হতে পারে, মহান রাব্বুল আলামিন দয়া করে তাদেরকে ক্ষমা করেন ও তাদের জন্য সম্মানজনক রিজিকের ব্যবস্থা করেন।

এই জামানায় প্রকৃত আশেকে রাসুল মুমিন হতে হলে বেলায়েতের শ্রেষ্ঠ আউলিয়া মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের নিকট বায়েত হয়ে প্রকৃত মুমিন হওয়ার শিক্ষা লাভ করতে হবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে তাঁর মহান বন্ধুর পরিচয় লাভ করে তাঁর সুমহান শিক্ষা অনুসরণের মাধ্যমে আমাদেরকে প্রকৃত মুমিন তথা প্রকৃত আশেকে রাসুল হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

[লেখক: প্রাবন্ধিক]

আরও পড়ুন:

তথ্য সুত্র:

১। তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী, ৪র্থ খণ্ড, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান।

২। মুক্তি কোন পথে? সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান।

সম্পর্কিত পোস্ট