Cancel Preloader

সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী(মাঃ আঃ) হুজুর কেবলাজান।

বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) গরিব ছিলেন না; তিনি ছিলেন ধনী ও মদীনার শাসনকর্তা

মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সমাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান

সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, কুল কায়েনাতের রহমত, সকল নবি ও রাসুলের ইমাম হযরত মোহাম্মদ (সা.)। দোজাহানের বাদশাহ হযরত মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে- “তিনি নিতান্তই গরিব ছিলেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতের কারণে তিনি ঠিকমত আহার করতে পারতেন না। দিনের পর দিন অনাহারে কাটাতেন। ক্ষুধার তাড়নায় অনন্যোপায় হয়ে পেটে পাথর বেঁধে তিনি একটু স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করতেন। তাঁর পরিধান করার মতো কোনো ভালো জামা-কাপড় ছিল না। ছেঁড়া জামায় সত্তর তালি দিয়ে তা তিনি পরিধান করতেন। নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি ইহুদির বাড়িতে গিয়ে গভীর কুয়া থেকে এক বালতি পানি উত্তোলনের বিনিময়ে একটি খুরমা লাভের আশায় কাজ করতেন।” অথচ এ কথাগুলো ছিল কাফেরদের মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। উপরন্তু এই ধারণাটি পবিত্র কুরআন ও হাদিস বিরোধী। প্রকৃত সত্য এই যে, কুল কায়েনাতের রহমত বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) কখনো গরিব ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন সম্পদশালী, ধনী এবং দোজাহানের বাদশাহ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন-

وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ

অর্থাৎ-‘‘হে রাসুল! আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’’ (সূরা আল আম্বিয়া ২১: আয়াত ১০৭)

এমনিভাবে হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ্ ফরমান-

لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ

অর্থাৎ- “হে রাসুল (সা.) যদি আমি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তবে সৃষ্টিকুলের কোনো কিছুই সৃজন করতাম না।” (তাফসীরে মাজহারী ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮০)
সুতরাং মহান আল্লাহ্ মহাবিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টির জন্য যাঁকে রহমতরূপে সৃজন করলেন এবং যাঁকে সৃষ্টি না করলে তিনি মহাবিশ্বে কোনো কিছুই সৃজন করতেন না, এ মহান রাসুলকে গরিব বলা, দিবসকে রাতের সাথে তুলনা করারই শামিল। দরিদ্রতা একটি অভিশাপ, এটা গজবতুল্য। অন্যদিকে হযরত রাসুল (সা.) হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন। দিবসের আগমনে রাতের অন্ধকার যেমন বিলুপ্ত হয়ে যায়, তদ্রুপ রাহমাতুল্লিল আলামিনের রহমতের বরকতে দরিদ্রতা দূর হয়ে মানব জীবনে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর অনুগ্রহে মানুষের অভাব দূর হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন-

وَلَوۡ أَنَّهُمۡ رَضُواْ مَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ سَيُؤۡتِينَا ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ وَرَسُولُهُۥٓ إِنَّآ إِلَى ٱللَّهِ رَٰغِبُونَ

অর্থাৎ- “কতইনা ভালো হতো, যদি তারা পরিতুষ্ট হতো তাতে, যা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সা.) তাদের দিয়েছেন এবং বলতো আল্লাহ্ই আমাদের জন্য যথেষ্ট, ভবিষ্যতে আল্লাহ্ স্বীয় অনুগ্রহে আমাদের আরও দেবেন এবং তাঁর রাসুলও, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই প্রতি অনুরক্ত।” (সূরা আত তাওবাহ ৯ : আয়াত ৫৯)
অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ্ নিজেকে যেমন সম্পদ দানকারীরূপে আপন পরিচয় উপস্থাপন করেছেন, তেমনি তিনি হযরত রাসুল (সা.)-কেও সম্পদ দানকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ যেমন রাব্বুল আলামিন ( رَبُّ الْعٰلَمِيَْن ) অর্থাৎ জগতসমূহের প্রতিপালক তেমনি হযরত মোহাম্মদ (সা.) হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন ( رَحْمَةُ لَّلْعٰلَمِيَْن ) অর্থাৎ জগতসমূহের রহমত। এজন্য মহান আল্লাহ্ পৃথিবীর যাবতীয় ধনভাণ্ডারের চাবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর হাতে অর্পণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজেই এরশাদ করেন-

অর্থাৎ- “একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আমাকে দেখানো হলো যে, পৃথিবীর সকল ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ আমার হাতে অর্পণ করা হয়েছে।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৫১২) এমনিভাবে মহান আল্লাহ্ কুল কায়েনাতের রহমত বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর হস্ত মোবারকে তাঁর ধনভাণ্ডারের চাবিসমুহ অর্পণ করে আপন মাহ্বুবকে স্বীয় খাজানাতের মালিক বানিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে হযরত মোহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী। জগৎশ্রেষ্ঠ এ মহামানবের মাধ্যমেই আল্লাহর ধনভাণ্ডারের অসীম সম্পদ কিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্টিকুলের মাঝে বন্টিত হবে। এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-

অর্থাৎ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ দানকারী এবং আমি বন্টনকারী।” (বোখারী ও মুসলিমের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩২)
এজন্য হযরত রাসুল (সা.)-এর মহব্বত হৃদয়ে ধারণ করে আজও আদব ভক্তি, মহব্বত ও আজিজির সাথে প্রিয় রাসুল (সা.)-এর উপর মিলাদ শরীফ পাঠ করলে ৫টি পুরষ্কার পাওয়া যায়। আর তা হলো-
১। মিলাদ শরীফ পাঠকারীর সংসারের অভাব অনটন দূর হয়।
২। বালা মুসিবত দূর হয়।
৩। সংসারের অশান্তি দূর হয়।
৪। আয়-রোজগারে বরকত হয় এবং
৫। হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার ও শাফায়াত লাভ হয়।
মিলাদ শরীফ পাঠের বিপরীতে প্রাপ্ত এ সমস্ত পুরস্কার প্রমাণ করে, এখনও আল্লাহ্র ধনভাণ্ডারের চাবি হযরত রাসুল (সা.)-এর হস্ত মোবারকে, যা কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। এমনিভাবে মহান আল্লাহ্ ওহির বাণী আল কুরআনে এ মহাসত্য জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি নিজেই তাঁর শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে সম্পদশালী বানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন-

وَوَجَدَكَ عَآئِلٗا فَأَغۡنَىٰ

অর্থাৎ- “হে রাসূল (সা.)! আমি আপনাকে অসহায় অবস্থায় পেয়েছি, অতঃপর আপনাকে সম্পদশালী করেছি।” (সূরা আদ দ্বুহা ৯৩ : আয়াত ৮)
সুতরাং মহান আল্লাহ্ নিজেই যাকে সম্পদশালী-ধনী বানালেন। উপরন্তু তিনি যাঁর হস্ত মোবারকে পৃথিবীর যাবতীয় ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ অর্পণ করলেন, তাঁকে গরিব বলা আমাদের অজ্ঞতা নয় কি? এভাবে পবিত্র কুরআন ও হাদিস বিরোধী আক্বিদাহ আমাদের ধর্ম বিশ্বাসে বিজাতিরা ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদেরকে আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.) থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে?

কুল কায়েনাতের রহমত হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশ পরম্পরা নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যায়, হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সম্মানিত দাদাজান হযরত আব্দুল মুত্তালিব (আ.) ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা। ফলে মোহাম্মদ (সা.) শৈশবকালেই রাজপরিবারে লালিত-পালিত হন। এই মহামানবের সম্মানিত পিতা হযরত আব্দুল্লাহ (আ.) ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। হযরত রাসূল (সা.) নিজেও ছিলেন মদীনার শাসনকর্তা, অর্থাৎ মদীনার ইসলামী জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। ‘মদীনার সনদ’ নামে তিনিই এ রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন করে সকলের জীবনে ইনসাফ কায়েম করে অনুকরণীয় শান্তির সমাজ নির্মাণ করেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর লঙ্গরখানায় প্রতিদিন সাড়ে তিনশ থেকে চারশ লোক আহার করতেন। হযরত রাসুল (সা.) এতবেশি দান সদকা করতেন যে, তাঁর মতো এত বড়ো দানশীল আর কেউ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তিনি হলেন সাইয়্যেদুল ক্বাওনাঈন ( سَيَّدُ الْكَوْنَيَْن ) অর্থাৎ ‘ইহাকাল ও পরকালের বাদশাহ।’
এ কথা আমরা সকলেই জানি জাকাত দেওয়া, হজ করা, কোরবানি করা এ বিধানগুলো কোনো গরিবের উপর ফরজ নয়। বরং এ বিধান ধনী ব্যক্তি তথা সম্পদশালীর উপর ফরজ। কুল কায়েনাতের রহমত হযরত রাসুল (সা.) নিজে জাকাত দিয়ে ধনী ব্যক্তিদের জন্য অনুসরণীয় উত্তম আদর্শ স্থাপন করেছেন। অথঃপর তিনি ধনী ব্যক্তিদের থেকে জাকাত উত্তোলন করে আল্লাহর বিধান মোতাবেক তা বন্টন করেন এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।

হযরত রাসুল (সা.) প্রতিবছর কোরবানি করে বিশ্বের ধনী উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য অনুসরণীয় এ উত্তম আদর্শ স্থাপন করেন যে, তারাও বছরান্তে আল্লাহর নামে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোরবানি করবে। বিদায় হজে আল্লাহর রাসুল (সা.) একশত উট কোরবানি করেন। বর্ণিত আছে, ৬৩টি উট হযরত রাসুল (সা.) নিজ হাতে কোরবানি করেছেন, আর অবশিষ্ট ৩৭টি উট হযরত রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু কোরবানি করেন।


এমনিভাবে আল্লাহ্ রাসুল (সা.) বাইতুল্লাহ্ শরীফে বিদায় হজ সম্পাদনের মাধ্যমে সারা জাহানের ধনী মুসলমানদের জন্য এ বার্তা রেখে যান যে, তাদেরকেও হজের নিয়তে এহরামের পোশাক পরিধান করে মৃত্যুর পুর্বেই মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এবং মহামানবদের পদাংক আনুসরণের প্রশিক্ষণ নিতে জীবনে একবার হজ করতে হবে।

মূলত পৃথিবীর সকল মানুষের ন্যায় ধনী মুসলমানদের জন্যও করণীয় উত্তম আদর্শ রয়েছে হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে। হযরত রাসুল (সা.)-এর বহু খাদেম ও দাস-দাসী ছিল। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত রাসুল (সা.)-এর গোলাম ছিল ৩৬ জন, দাসী ছিল ২২ জন এবং খাদেম ছিল ১৯ জন। তাছাড়া তাঁর পবিত্র দরবার শরীফে সর্বদা মেহমানের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় ছিল। তিনি সকলের উত্তমরূপে খাবারের ব্যবস্থা করতেন। কখনো যদি রাসুল (সা.)-এর পাকশালায় খাদ্য প্রস্তুত হতে দেরী হতো, দেখা যেত মেহমানদের জন্য অলৌকিকভাবে খাদ্য প্রস্তুত হয়ে যেত। এ প্রসঙ্গে একখানা হাদিস ইমাম বায়হাকী (রহ.) সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “একবার আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-এর নিকট কয়েকজন মেহমানের আগমন ঘটে। তিনি তাদের মেহমানদারীর জন্য উম্মাহাতুল মু’মিনিনের কাছে লোক প্রেরণ করেন এ বলে যে, তোমাদের কাছে (এ মুহূর্তে ) মেহমানদারীর জন্য কোনো ভুনা খাদ্য প্রস্তুত আছে কি? তারা খবর পাঠালেন যে, এ মুহূর্তে আমাদের নিকট মেহমানদারীর জন্য ভুনা করা খাদ্য প্রস্তুত নেই। আল্লাহ্র রাসুল (সা.) তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন- হে আল্লাহ্! আমি আপনার অনুগ্রহ ও রহমত কামনা করছি। আপনিই একমাত্র অনুগ্রহের মালিক। বর্ণনাকারী বলেন- সাথে সাথে আল্লাহর পক্ষ হতে একটি ঘিয়ে ভাজা ভুনা খাসী প্রেরণ করা হলো। আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন বললেন- এটা আল্লাহর তরফ থেকে বরকতময় খাদ্য।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৫
মূলে যে নদীর সংযোগ সাগরের সাথে, সেই নদী যেমন শুকিয়ে যায় না, তদ্রুপ যে মহামানবের সংযোগ আসমান ও জমিনের মালিক আল্লাহর সাথে, জীবনের কোনো স্তরে ঐ মহামানবের সম্পদে কোনো অভাব হতে পারে না। এজন্য হযরত রাসুল (সা.) হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী।
মদীনার জীবনে হযরত রাসুল (সা.) রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মুসলিম জাতি গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় তাঁকে শত্রুদের চাপিয়ে দেওয়া ছোটো বড়ো বহু যুদ্ধের মোকাবিলা করতে হয়। প্রফেসর ড. এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান রচিত বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীর ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে ২৮টি গাযওয়া ও ৫৭টি সারিয়াসহ মোট ৮৫টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ সমস্ত যুদ্ধের সামরিক ব্যয়ভার হযরত রাসুল (সা.) নিজে নির্বাহ করেছেন। তাছাড়া যুদ্ধে রাসুল (সা.) বিপুল পরিমাণ গণিমতের মাল লাভ করেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-এর জন্য যুদ্ধলব্ধ গণিমতের মালের এক পঞ্চমাংশ হালাল বলে ঘোষণা করেছেন। এজন্য বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদের সাথে যুদ্ধ করে তিনি গণিমতের মালের যে বৃহৎ অংশ লাভ করেছিলেন, তাতে তিনি এমনিতেই কয়েক রাজার ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। এ কথা তো সহজেই অনুমেয়, হযরত রাসুল (সা.) অগাধ ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলেন বলেই তার পক্ষে রাজা-বাদশাহদের সাথে যুদ্ধ করার মতো বিপুল সামরিক ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব ছিল। অতঃপর হযরত রাসুল (সা.) মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা সুসংহত করার লক্ষ্যে বায়তুল মাল গড়ে তোলেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর নবুয়তের সংবাদ শুনে কোনো কোনো রাষ্ট্র প্রধান তাঁর কাছে বহু উপহার উপঢৌকন প্রেরণ করতেন। যেমন হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-

অর্থাৎ- ‘হিমইয়ারের মুসলমান বাদশাহ মু-ইয়াযান নবি (সা.)-কে এমন একটি পোশাক হাদিয়া দিলেন, যা তেত্রিশটি উটের বিনিময়ে খরিদ করা হয়েছিল। অতঃপর নবি (সা.) এই কাপড় জোড়া মাত্র একবার পরিধান করেন।’ [ইফাবা কর্তৃক প্রকাশিত আখলাকুন নবী (সাঃ), পৃষ্ঠা ১৮৩]
কুল কায়েনাতের রহমত হযরত রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জীবনী মোবারক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হযরত রাসুল (সা.) ব্যক্তিগত জীবনেও খুব সৌখিন ছিলেন। ফলে তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা পছন্দ করতেন। নিজে উন্নতমানের পোশাক পরিধান করতেন এবং সবসময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। উল্লিখিত হাদিসে দেখা যায়, তেত্রিশটি উটের বিনিময় খরিদ করা পোশাক হযরত রাসুল (সা.) মাত্র একবার পরিধান করে রেখে দেন, যা প্রমাণ করে আল্লাহর ধনভান্ডারের চাবি যথার্থই তাঁর হস্ত মোবারকে রয়েছে।
এমনিভাবে হযরত রাসুল (সা.) নিজেও স্বর্ণের কারুকার্যমণ্ডিত মূল্যবান পোশাক ক্রয় করে পরিধান করতেন। হযরত ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-

অর্থাৎ- ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ নবি (সা.) সাতান্নটি উটের বিনিময়ে এক সেট পোশাক খরিদ করেছিলেন এবং তা পরিধানও করেছিলেন।” [আখলাকুন নবী (সাঃ), পৃষ্ঠা ১৯৪]
এজন্য দেওয়ানবাগ শরীফ থেকে প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী আশেকে রাসুলদের মধ্যে যারা স্বপ্ন ও মোরাকাবায় হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই বলেছেন যে, হযরত রাসুল (সা.)-কে তারা অতি মূল্যবান ও শান শওকত বিশিষ্ট পোশাক পরিধান করা অবস্থায় দেখেছেন।
পরিশেষে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বাণী মোবারকে বিষয়টি দ্বি-প্রহরের সূর্যের মতই আলোকোজ্জ্বল যে, বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) গরিব ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন ধনী ও মদীনার শাসনকর্তা। মহান আল্লাহ্ পৃথিবীর যাবতীয় ধন ভাণ্ডারের চাবি এ মহামানবের হস্ত মোবারকে অর্পণ করেছেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত তাঁরই বরকতময় হাতে থাকবে। উম্মতে মোহাম্মদী যদি এ মহাসত্য বিষয়টি বিশ্বাস করে হৃদয়ে গেঁথে রাখতে পারে যে, তাদের রাসুল কখনো গরিব ছিলেন না, বরং তিনি ইহকাল ও পরকালের বাদশাহ। তবে তাদেরও অভাব-অনটন দূর হয়ে যাওয়ার কথা। কেননা হযরত রাসুল (সা.) হলেন আশেকে রাসুল মু’মিনের ইমানের পিতা। সুতরাং পিতা ধনী হলে পিতার যথাযোগ্য সন্তানের অবস্থাও অনুরূপ হওয়ার কথা। অতএব কেউ যদি হযরত রাসুল (সা.)-এর ব্যাপারে সঠিক আক্বিদাহ পোষণ করতে পারে এবং হযরত রাসুল (সা.)-কে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসে হাকিকতে আশেকে রাসুল হতে পারে, অতঃপর নিয়মিত রাসুল (সা.)-এর উপর মিলাদ শরীফ পাঠ করতে পারে, তবে দো-জাহানের বাদশাহ হযরত রাসুল (সা.)-এর বরকতে ঐ ব্যক্তির জীবনেও দরিদ্রতার গজব দূর হয়ে স্বচ্ছলতার রহমত দ্বারা জীবন পূর্ণ হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ মাহ্বুব হযরত রাসুল (সা.)-এর যথার্থ মর্যাদা উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী; দেওয়ানবাগ শরীফ এবং তাফসীর প্রণেতা ও ধর্মের মহান সংস্কারক]

সম্পর্কিত পোস্ট

45 Comments

  • অনেক ভালো লাগলো দেওয়ানবাগী হুজিরের বানি পড়ে হে যুগের ইমাম আপনার কদম মোবারকে শত কোটি সালাম ও কদমবুচি।

  • Thanks of lot who write the subject

  • মহা মূল্যবান বাণী মোবারক

  • alhamdulillah

    • আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহ্‌ তা’য়ালা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সম্মান ও মর্যাদা বোঝার তৌফিক দান করুন…আমিন।

  • আলহামদুলিল্লাহ মহান মুর্শেদের উছিলায় দয়া রাসুল (সঃ) এর সান মান তিনি যে বাদশার বাদশা ছিলেন জানতে পারলাম ।

  • অনেক ভালো লাগলো পুরাটা পরলাম।

  • আলহামদুলিল্লাহ

  • আমিন

    • আলহামদুলিল্লাহ

  • আলহামদুলিল্লাহ

  • সর্ব যুগের , সর্ব কালের, সর্ব শ্রেষ্ঠ ধনী ছিলেন দয়াল রাসূল সঃ ! আমরা শাহ্ দেওয়ানবাগী হুজুরের নিকট কৃতজ্ঞ তিনি দয়া করে রাসূল সঃ এর শান-মান প্রতিষ্ঠা করেছেন ! আল্লাহ হুজুরের মঙ্গল করুক !! আমীন

  • আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মানুষই একটা ভুল ধারনায় ছিল যে, রাসূল (সাঃ) গরিব ছিলেন।কিন্তু সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী (মাঃআঃ) হুজুর কেবলাজান কুরআন-হাদীসের আলোকে প্রমাণ করেছেন রাসূল (সাঃ) গরিব ছিলেন না, তিনি ছিলেন দোজাহানের বাদশা রাহমাতাল্লিল আলামিন।

  • মহা মূল্যবান বাণী মোবারক

  • আলহামদুলিল্লাহ

  • আলহামদুলিল্লাহ
    অনেক কিছু জান্তে পারলাম।

  • আলহামদুলিল্লাহ
    অনেক কিছু জানতে পারলাম।

  • আজ এই আত্ত্বারবানি অনলাইনে পেলাম সেইজন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া।

  • আলহামদুলিল্লাহ

  • মহা মূল্যবান বাণী মোবারক

  • আমার মোহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কোরআন হাদিস দলিল দিয়ে প্রোমান করেছেন রাসূল ধনী ছিলেন।

  • মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামেরপূর্নজীবনদানকারী, বীর মুক্তিযো, যুগের ইমাম, সুফী সম্রাট হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী (মাঃআঃ) হুজুর কেবলা জানের মহা মুল্যবান বানী মোবারক।

  • আলহামদুলিল্লাহ্।
    অনেক কিছু জানতে পারলাম।

    • আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পারলাম আমাদের রাসুল (সঃ) কখনোই গরীব ছিলেন নাহ। তিনি ধনীদেরও ধনী ছিলেন। সেটা জ্ঞানে হোক, গুনে হোক, ধন-সম্পদে হোক অথবা রহমতের দিক দিয়েই হোক। এজিদের দোসর’রা শান্তির ধর্ম মুল ইসলাম’কে কারবালার প্রান্তরেই হত্যা করে দিয়েছে।

  • খুব সুন্দর কথা বলেছেন।

  • আলহামদুলিল্লাহ্।

  • -“প্রফেসর ড. এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান রচিত বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীর ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে ২৮টি গাযওয়া ও ৫৭টি সারিয়াসহ মোট ৮৫টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ”
    এখানে ‘গাযওয়া’ ও ‘সারিয়া’ শব্দের অর্থ কি? এটি কি কোন স্থানের নাম? নাকি যুদ্ধের প্রকারভেদ? মনে হচ্ছে আরবি শব্দ। আমি জানতে চাচ্ছি এ দুটির আভিধানিক অর্থ কি?

  • গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারলাম

  • আলহামদুলিল্লাহ্ খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।

  • খুবই গুরুত্বপূর্ণইতিহাসজানতেপেরেউপকৃত হলাম।

  • আলহামদুলিল্লাহ্ এখান থেকে সত্য টা জানতে পারলাম

  • আলহামদুলিল্লাহ্। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা জাতে পারলাম।

  • Alhamdulillah

  • মহামূল্যবান বানী মোবারক।।

  • আলহামদুলিিল্লাহ্‌

  • মহা মূল্যবান বাণী মোবারক

  • অনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন পড়ে ভালো লাগলো।

  • অনেক মূল্যবান কথা জানতে পারলাম ধন্যবাদ

  • দুজাহানের বাদশাকে যে গরীব বলে রাসূলকে আপমান করে,আর যারা রহমাতাল্লিল আলামিনকে গরীব বানানোর ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত প্রকৃত পক্ষে তারাই গরীব আত্তিক ভাবে মিসকিন।
    সুন্দর পোষ্ট।

  • আলহামদুলিল্লাহ সত্যি ঘটনা জানতে পারলাম। চক্রান্তের কারনে আজ মানুষ নানা মিথ্যা অপপ্রচার বিশ্বাস করে ধর্ম করায় ধর্মের প্রকৃত স্বাদ মানুষ পাচ্ছে না।

  • আলহামদুলিল্লাহ

  • আলহামদুলিল্লাহ্! এজিদের চক্রান্তের কারনে মানুষ এতদিন জেনে আসছে আমাদের রাসূল (সাঃ) গরিব ছিলেন। দেওয়ানবাগী হুজুর এজিদের চক্রান্তের বেড়াজাল ধ্বংস করে জাতির সামনে পবিত্র কোরআনের দলিল দিয়ে প্রমান করেছেন রাসূল (সাঃ) কখনো গরিব ছিলেন না। তিনি ছিলেন আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী।

  • মহা সত্যবানীমোবারক

  • আমিন

  • আলহামদুলিল্লাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *