Cancel Preloader

মোরাকাবার আধ্যাত্মিক ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা – ৪র্থ পর্ব

ফায়েজের বিবরণ

আভিধানিক অর্থ: মহান আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগের ৫টি মাধ্যম। তম্মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হলো ফায়েজ। ফায়েজ হচ্ছে মহান আল্লাহ্র ঐশ্বরিক শক্তির প্রবাহ। এটি বাহ্যিক জগতের কোনো বস্তু নয়, বরং এটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জগতের বস্তু। আরবি ‘ফাইজ’ শব্দের অর্থ প্রবহমান, বেগে বহমান, চলমান ইত্যাদি। মহান আল্লাহ্র শক্তি প্রবাহমান ফায়েজ। পবিত্র কুরআনে একে ‘সাকিনা’ অর্থাৎ প্রশান্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মহান আল্লাহ্ হতে প্রবাহিত প্রেমের জোয়ার, যার সাহায্যে রাব্বুল আলামিন বিশ্বজগৎ সৃজন করে তা কায়েম রেখেছেন।


পারিভাষিক অর্থ: মহান আল্লাহ্ সৃষ্টিজগত পরিচালনার জন্য যে ঐশ্বরিক শক্তি সৃষ্টিরাজির মাঝে প্রেমের প্রবাহমানস্বরূপ বিতরণ করছেন তাকেই ফায়েজ বলে। ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) বলেনÑ “ফায়েজই ধর্মের মূল। এই ফায়েজ দ্বারাই মানুষ আত্মা শুদ্ধ করে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করিতে পারে। ফায়েজ হইল মহান আল্লাহ্ তায়ালা হইতে উৎসারিত প্রেমের প্রবাহ। এই ফায়েজ ছাড়া সৃষ্টি জগত স্থায়ী থাকিতে পারে না। অর্থাৎ এই ফায়েজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ পাক তাঁহার সৃষ্টিজগতকে কায়েম রাখিতেছেন। এই মহান দান ব্যতীত এক পলকও সৃষ্টিজগত কায়েম থাকিতে পারে না।” (আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের সহজ পথ, পৃষ্ঠা ৪৩)

ফায়েজের নাম ও সময়


মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সৃষ্টির মাঝে সদাসর্বদা ফায়েজ ওয়ারেদ হয়। সুফি সাধকগণ আউলিয়ায়ে কেরাম ফায়েজকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছেন। মূলত আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আগত ফায়েজ একই। কিন্তু সময়ের তারতম্যের কারণে ফায়েজকে ভিন্ন ভিন্ন নামে নামকরণ করেছেন। আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য তাঁর অনুসারী আশেকে রাসুলগণকে প্রতিদিন মোরাকাবা করে ফায়েজ হাসিল করার সুমহান শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রতিদিন যে ফায়েজ মোরাকাবা করে হাসিল করতে হয় সেগুলো হলোÑ
১। ফজর ওয়াক্ত হতে জোহর ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত ‘কুওয়্যাতে এলাহিয়ার ফায়েজ’ ২। জোহর ওয়াক্ত থেকে আসর ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত ‘হযরত রাসুল (সা.)-এর মহব্বতের ফায়েজ’ ৩। আসর ওয়াক্ত থেকে মাগরিবের ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত ‘তওবার ফায়েজ’ এবং মাগরিব ওয়াক্ত থেকে এশার ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত ‘তওবা কবুলিয়াতের ফায়েজ’ ৪। এশার ওয়াক্ত থেকে রাত্রির দুই তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত ‘গাইরিয়াতের ফায়েজ’ এবং ৫। রাত্রির দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর হতে ফজর ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত বা রহমতের সময় ‘রহমতের ফায়েজ’।


মূলত মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আগত ফায়েজ বা ঐশ্বরিক শক্তির প্রবাহ একই রকমের ওয়ারেদ হয়। কিন্তু সময়ের পার্থক্যের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সেই নামের ফায়েজ মোরাকাবা করে হাসিল করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হয়। তাই আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান মানুষকে মোরাকাবা করে ফায়েজ হাসিলের মাধ্যমে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, উল্লিখিত ফায়েজ ছাড়াও আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আরো ভিন্ন নামে ফায়েজও ওয়ারেদ হয়। যেমন জালালি ফায়েজ, জামালি ফায়েজ, হায়বাতের ফায়েজ, তাসকিনের ফায়েজ, সাইফুল্লাহর ফায়েজ ইত্যাদি।


মোরাকাবা করার পদ্ধতি


আপনি আদব ভক্তি মহব্বত ও আজিজির সাথে মোরাকাবায় বসে দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা ভুলে গিয়ে আপন ক্বালবের মাঝে গভীরভাবে খেয়াল করবেন। অতঃপর মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনকে তালাশ করবেন। যিনি আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত করে সৃষ্টি করলেন, অসংখ্য নাজ-নেয়ামত দান করে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তিনি কোথায় গিয়ে লুকালেন? আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি (আল্লাহ্) তোমাদের সাথেই আছেন।” মহান আল্লাহ্ অন্যত্র বলেন, “আমি তোমাদের (ক্বালবের সপ্তম স্তর নাফসির মোকামের) মাঝেই বিরাজ করি, তোমরা কি আমাকে দেখ না?”


মহান আল্লাহ্কে একাকী খুঁজে পাওয়া যায় না। তাঁকে খুঁজে পাওয়ার জন্য উসিলা ধরতে হয়। তাই আমাদের উসিলা হলেনÑ আমাদের মহান মোর্শেদ, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)। তারপর আজিজির সাথে খেয়াল করবেন, আপন মোর্শেদের নুরানিময় চেহারা মোবারক। অতঃপর খেয়ালের সাথে তাঁর নুরের কদম মোবারক জড়িয়ে ধরবেন। তারপর নিজের জীবনের সমস্ত ভুল বেয়াদবির জন্য কাকুতি-মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। তাঁর দয়া, এশক ও মহব্বত ভিক্ষা চাইবেন। পাশাপাশি আজিজির সাথে আপন মোর্শেদের নিকট নিজের মনের চাওয়া-পাওয়ার কথাগুলো বলবেন। অতঃপর তাঁর পবিত্র দিল মোবারকের সাথে নিজের দিলকে মিশাবেন।


এ পর্যায়ে আপন মোর্শেদের উসিলা ধরে সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-কে খেয়াল করবেন। অতঃপর নিজের জীবনের সমস্ত ভুল বেয়াদবির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। তারপর তাঁর দয়া, এশক ও মহব্বত ভিক্ষা চাইবেন। তারপর খেয়াল করে কাকুতি-মিনতি করে তাঁর পবিত্র দিল মোবারকের সাথে নিজের দিলকে মিশাবেন। এ পর্যায়ে আপন মোর্শেদের উসিলা ধরে হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর নিকট নিজের জীবনের সমস্ত ভুল বেয়াদবির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। তারপর তাঁর দয়া, এশক ও মহব্বত ভিক্ষা চাইবেন। তারপর মহব্বতের সাথে তাঁকে এভাবে ডাকতে পারেন


ইয়া রাহমাতাল্লিল আলামিন,
ইয়া শাফীয়াল মুজনিবিন!!
কোথায় রইলেন দয়াল রাসুল লুকাইয়া,
দেখা দেন গো দেখবো প্রাণ জুড়াইয়া। ঐ
না পাই যদি আপনার দেখা রাসুল জীবনে,
কী লাভ হবে বাঁচিয়া সাধের ভুবনে। ঐ
আমার মোর্শেদ বাবার আশেক যদি রাসুল হইতাম,
তবে বুঝি আপনার দেখা পাইতাম। ঐ
হযরত বিল্লালের মতো আশেক যদি রাসুল হইতাম,
তবে বুঝি আপনার দেখা পাইতাম। ঐ


অতঃপর খেয়ালের সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর পবিত্র দিল মোবারকের সাথে আপন দিলকে মেশাবেন। এ পর্যায়ে খেয়ালের সাথে চলে যাবেন মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের আরশে মোয়াল্লায়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছেÑ “মু’মিন বান্দার দিল হলো আল্লাহ্র আরশ।” তাই মোর্শেদের উসিলা ধরে আল্লাহ্র হুজুরে হাজির হয়ে জীবনের সমস্ত পাপের জন্য রোনাজারি করে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। অতঃপর তাঁর দয়া, এশক ও মহব্বত ভিক্ষা চাইবেন। তারপর কাকুতিমিনতি করে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের নিকট নিজের মনের চাওয়াপাওয়ার কথা বলবেন। অতঃপর মহান আল্লাহ্র নিকট ফায়েজ (যখন যেই ফায়েজ ওয়ারেদ হয়) ভিক্ষা চেয়ে তাঁর জাতি-সিফাতি নাম ধরে এভাবে ডাকতে পারেন


ইয়া আল্লাহু! ইয়া রাহ্মানু!! ইয়া রাহীম!!!
গুনাহর বোঝা মাথায় নিয়ে ডাকতেছি,
মাফ করো, মাফ করো, মাওলা এলাহি!!
ইয়া আল্লাহু! ইয়া রাহমানু!! ইয়া রাহীম!!!

আমি ডকি তুমি মাওলা শোনো না,
না জানি করেছি আমি কী গুনাহ!
না বুঝে গুনাহ আমি করেছি
মাফ করো, মাফ করো, মাওলা এলাহি!! ঐ
তোমার ইমামের কদম ধরে ডাকতেছি,
মাফ করো মাফ করো মাওলা এলাহি!! ঐ
সূফী সম্রাটের কদম ধরে ডাকতেছি,
মাফ করো, মাফ করো মাওলা এলাহি!! ঐ
আমার মোর্শেদ বাবার কদম ধরে ডাকতেছি,
মাফ করে মাফ করো মাওলা এলাহি!! ঐ
করি নাইও করি নাই করি নাই,
তোমার রহমতের চেয়ে বড়ো গুনাহ করি নাই!
তোমার দয়ার চেয়ে বেশি গুনাহ করি নাই!!
ইয়া আল্লাহু! ইয়া রাহমানু!! ইয়া রাহীম!!!


তারপর খেয়াল করবেন ফায়েজ (যখন যেই ফায়েজ ওয়ারেদ হয়) মহান আল্লাহ্র জাত-পাক হতে হযরত রাসুল (সা.)-এর দিল মোবারক হয়ে ইমাম হুজুরের দিল মোবারক হয়ে আপন মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর দিল মোবারক হয়ে ঐ ফায়েজ আপন দিলের মাঝে পড়ছে এবং দিলের জাহের-বাতেন পাকসাফ হয়ে আল্লাহ্ আল্লাহ্ জিকির জারি হচ্ছে। এভাবে খেয়াল করে মোরাকাবা শেষ করবেন। মোরাকাবা করার পদ্ধতি শিরোনামে যেভাবে মোরাকাবা করতে বলা হয়েছে, আপনি দৈনিক ছয় বার ঐ একই নিয়মে মোরাকাবা করে ফায়েজ হাসিল করবেন।

মোরাকাবায় মোর্শেদের নিকট আজিজির উদাহরণ


আপনি মোরাকাবায় বসে যখন মোর্শেদের নিকট আজিজির সাথে মনের চাওয়া-পাওয়ার কথাগুলো বলবেন, তখন মনে মনে এভাবেও বলতে পারেনÑ “ওগো দয়াল মোর্শেদ আমি দুনিয়ার পাপাচার ত্যাগ করে, অসৎ সঙ্গ ছেড়ে আপনাকে মোর্শেদ হিসেবে গ্রহণ করেছি। আপনি দয়া করে অধমকে আপনার মুরিদ হিসেবে কবুল করুন। আমি মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে পাওয়ার জন্য আপনার সুমহান শিক্ষা গ্রহণ করেছি। আপনি দয়া করে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। ওগো দয়াল মোর্শেদ! আপনি দয়া করে আমার ষড়রিপুগুলোকে দমন করে দেন, আমি যেন নিজেকে পাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি। আমি মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায় চলতে চাই, আপনি দয়া করে রুহানিতে আমাকে সাহায্য করুন। আমার অন্তরে আল্লাহ্র জজবা পয়দা করে দেন।” অতঃপর আপনি যদি কোনো বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, অভাব-অনটন, রোগ-শোকে পতিত থাকেন, মোর্শেদের নিকট আজিজি করে বলুন, মোর্শেদ যেন দয়া করে মহান আল্লাহ্র নিকট সুপারিশ করেন, মহান আল্লাহ্ যেন নিজ গুণে মোর্শেদের উসিলায় বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, অভাব-অনটন, রোগ-শোক থেকে আপনাকে মুক্তি দেন।”

মোরাকাবায় হযরত রাসুল (সা.)-এর নিকট কাকুতি-মিনতির উদাহরণ


আপনি মোরাকাবায় বসে যখন মহান মোর্শেদের উসিলা ধরে হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর হুজুরে হাজির হবেন, তখন কাকুতি-মিনতি করে এভাবে আপনার চাওয়া-পাওয়ার কথা বলবেন


“ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়া হাবিবাল্লাহ!! আমি পাপী গুনাহগার! আপনার উম্মত বলে দাবি করি, অথচ আপনার আদর্শ, চরিত্র আমার মাঝে নাই। আপনি দয়া করে আমাকে আপনার আদর্শ চরিত্র ভিক্ষা দিন। আমাকে আপনার উম্মত হিসেবে কবুল করে নেন। আমাকে আপনি দয়া করেন, আমি যেন চরিত্রবান হতে পারি। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি দয়া করে আপনার জিয়ারত ও দিদার নসিব করে দেন। আমাকে আশেকে রাসুল হিসেবে কবুল করে নেন। আমাকে আপনার শাফায়াত নসিব করবেন। অতঃপর আপনি আপনার বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, অভাব-অনটন, রোগ-শোক থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এভাবে বলতে পারেন “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.)! আপনি তো রাহমাতাল্লিল আলামিন! আপনার রহমত পেলে মুসিবত ও আজাব-গজব দূর হয়ে যায়। তাই আপনার রহমতের ভান্ডার থেকে আমাকে রহমত ভিক্ষা দেন, যেন আপনার এ রহমতের উসিলায় মহান আল্লাহ্ আমার যাবতীয় বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, অভাব- অনটন, রোগ-শোক দয়া করে দূর করে দেন।


মোরাকাবায় মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনার উদাহরণ


আপনি যখন মোরাকাবার মাধ্যমে মোর্শেদের উসিলা ধরে মহান আল্লাহ্র হুজুরে হাজির হয়ে নিজের মনের চাওয়া-পাওয়ার কথা বলবেন, তখন এভাবে বলতে পারেনÑ “ওগো দয়াল মাওলা, দয়াল খোদা! আমি পাপীতাপী গুনাহগার! আপনি ক্ষমাশীল, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দেন। হে আল্লাহ্! আমি নিকৃষ্ট পাপী। পাপ করতে করতে অন্তরকে কলুষিত করে ফেলেছি। তাই ক্ষমা পাওয়ার জন্য আপনার বন্ধু সূফী সম্রাটের উসিলা ধরেছি, ইমাম হুজুরের উসিলা ধরে, হযরত রাসুল (সা.)-এর উসিলা নিয়ে আপনার হুজুরে হাজির হয়েছি। আপনি দয়া করে তাঁদের উসিলায় আমাকে কবুল করে নেন। আমার জীবনের সমস্ত পাপ মাফ করে দেন। আপনার নুরের কদম মোবারকে আশ্রয় ভিক্ষা দেন। আমার অন্তরের কলুষতা দূর করে দেন। আমার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে দেন। আমাকে আপনার ইচ্ছায় পরিচালিত করেন। হে আল্লাহ্! আপনি যেভাবে রাজি ও খুশি থাকেন, আমি যেন সেভাবে চলতে পারি, আপনি সেই তাওফিক দান করেন। অতঃপর আপনি দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, রোগ-শোক, অভাব- অনটন, সবকিছু থেকে মুক্তি পেতে মহান আল্লাহ্র নিকট সাহায্য চেয়ে মনে মনে বলবেন। আপনার মনের সকল চাওয়া ও পাওয়ার বিষয়ে রোনাজারি করে মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করবেন।


উল্লেখ্য যে, মোরাকাবার সময় মুরিদকে প্রথমে আপন মোর্শেদের চেহারা মোবারক খেয়াল করতে হয়। কেননা মোর্শেদ হচ্ছেন মুরিদের সাধনার কেন্দ্রবিন্দু। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার্থীরা যেমন হট্টগোল ও হৈ-চৈ করতে থাকে, অথচ শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশ করার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা নীরব হয়ে যায়। তদ্রƒপ আপন মোর্শেদকে নিজের ক্বালবে বসাতে পারলে শয়তান আর ধোঁকা দিতে পারে না। তখন শয়তান ঐ মুরিদের ক্বালব থেকে দূরে সরে যায়। অতঃপর আপন মোর্শেদের মাধ্যমে রাহমাতুল্লিল আলামিনের হুজুরে হাজির হতে হয়। সবশেষে আল্লাহ্র হুজুরে হাজির হয়ে নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ফায়েজ ভিক্ষা নিতে হয়। মোরাকাবার সময় আপন মোর্শেদের মাঝেই আল্লাহ্ এবং রাসুল (সা.)-কে খুঁজতে হবে। কেননা, তাঁরা একের ভিতর তিন। অর্থাৎÑ মোর্শেদের মধ্যেই হযরত রাসুল (সা.) এবং মহান আল্লাহ্র নুরময় সত্তা বিরাজমান রয়েছে। মোর্শেদ বিহনে আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-কে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আজিজির সাথে উল্লিখিত নিয়মে মোরাকাবা করতে হয়। এটিই মোরাকাবা করার পদ্ধতি। যুগে যুগে সাধকগণ এ পদ্ধতিতে মোরাকাবা করে সাধনার উচ্চতর মোকাম হাসিল করতে সক্ষম হয়েছেন। (চলবে)


[লেখক: মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম; পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।]

সম্পর্কিত পোস্ট