Cancel Preloader

সুফিদর্শন : আল্লাহ্কে জানার বিজ্ঞান

ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান
বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞানে চরম উৎকর্ষতা লাভ করেছে। মানুষ বিভিন্ন গবেষণার দ্বারা বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বকে উন্নত করেছে বটে, কিন্তু তারা নিজেদের সম্পর্কে জানার ব্যাপারে তেমন কোনো গবেষণা করেনি। তাই আল্লাহ্কে জানার বিজ্ঞান তথা নিজেকে জানার বিজ্ঞান সম্বন্ধে আলোকপাত করা দরকার। গ্রীক দার্শনিকগণ আত্মাকেই জীবনের মূলসত্তা বলে জানতেন। আত্মা ব্যতীত জীবদেহ জড় পদার্থে পরিগণিত হয়। মধ্যযুগীয় দার্শনিকগণও মানুষের মধ্যে দেহ ও আত্মা বলে দু‘টি পৃথক ও স্বাধীন সত্তার কল্পনা করেছিলেন।

হাদিস শরিফে আল্লাহ্র রাসুল (সা.) ফরমান- “মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফা রাব্বাহু।” অর্থাৎ- যে নিজেকে চিনতে পেরেছে, সে তার প্রভুকে চিনতে পেরেছে। তাই অনেক মনীষী নিজেকে জানার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কিন্তু নিজেকে জানার তাগিদ মানুষের কাছে গুরুত্ব পায়নি। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস নিজেকে জ্ঞানী বলে পরিচয় দিতেন না। তিনি নিজেকে জ্ঞানানুরাগী বলে পরিচয় দিতেন। তিনি বলতেন, কহড়ি ঞযুংবষভ অর্থাৎ- নিজেকে জানো। এই আত্মজ্ঞানই সকল জ্ঞান ও মূল্যবোধের কেন্দ্রবিন্দু। সংস্কৃতে প্রবাদ আছে, আত্মানং বিদ্ধি অর্থাৎ আত্মাকে জানো।

সুফিবাদ বা তাসাউফ বিজ্ঞান বলতে বুঝায়- যে বিজ্ঞান সাধনার মাধ্যমে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জন করে আল্লাহ্ ও রাসুলের সাথে পরিচয় লাভ করা যায়, তকে তাসাউফ বিজ্ঞান বলে। ‘তাসাউফ’ শব্দটি আরবি শব্দ সউফ বা সুফি মূল ধাতু হতে নির্গত। যার অর্থ পবিত্র আত্মার অধিকারী। গ্রিক ভাষায়, এ শব্দটির অর্থ ‘প্রভুর জ্ঞান’ বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেন, “নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি পরিত্রাণ পেয়েছে, যে তার মনের (আত্মিক) পবিত্রতা অর্জন করতে পেরেছে। আর সেই ব্যক্তি ধ্বংস হয়েছে যে তার আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।” এ তাসাউফ বিজ্ঞানকে সুফিদর্শন বা এলমে তাসাউফ বা সুফিবাদ বা এলমূল ক্বালব বলা হয়। অর্থাৎ যে বিদ্যা অর্জন ও চর্চার মাধ্যমে নিজের মনের (আত্মার) পরিচয় লাভ করা সম্ভব তাই তাসাউফ বিজ্ঞান। ইসলামের মূলমন্ত্র হচ্ছে আত্মা সম্পর্কিত। এ প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “আল্লাহ্ তো বাহ্যিক নিদর্শনসমূহ লক্ষ্য করেন না, তিনি লক্ষ্য করেন তোমার অন্তরের দিকে।”

তাসাউফ সম্বন্ধে এ যুগের শ্রেষ্ঠ তাসাউফ বিজ্ঞানী সুফিবাদের প্রাণপুরুষ মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, ‘যে বিজ্ঞান সাধনা করলে আল্লাহ্র সাথে পরিচয় লাভ করা যায় এবং যোগাযোগ স্থাপন করা যায়, উহাই এলমে তাসাউফ বা সুফিবাদ’।

গবেষক, বৈজ্ঞানিক এবং যারা মন বা আত্মা নিয়ে গবেষণা করেন, তারা কি সত্যিই আত্মা সম্বন্ধে সঠিক তথ্য উদঘাটিত করতে পেরেছেন? আসলে এ আত্মার সঠিক জ্ঞান আমাদের মাঝে না থাকায় আমরা আজ আমাদের চরিত্রকে পশুর চরিত্রে রূপান্তরিত করেছি এবং সমাজের শান্তি বিনষ্ট করেছি। সূফীবাদের শিক্ষা পৃথিবীর আদি থেকেই আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত বিভিন্ন নবি-রাসুলগণের মাধ্যমেই শিক্ষা দিয়ে আসছেন। যারা তাঁদেরকে বিশ্বাস করতে পেরেছেন এবং তাঁদের দেওয়া বিশেষ জ্ঞান বা তাসাউফ বিজ্ঞানকে গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালনা করেছিলেন, একমাত্র তারাই নিজেদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন এবং প্রকৃত জ্ঞানীর পরিচয় দিয়েছেন।

মানুষ শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণ একটি- তা হচ্ছে, তার ভিতরে মন বা আত্মার অবস্থান। এজন্যই মানুষ চিন্তাশক্তির অধিকারী, মানুষ ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারে, মানুষ উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো চিন্তাকে প্রজ্ঞা (ৎবধংড়হ) বা বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন বিবেক বলেছেন। এই প্রজ্ঞা বা চিন্তাই হচ্ছে মন বা আত্মার আসল রূপ অর্থাৎ আত্মার বিশুদ্ধ ক্রিয়া। অর্থাৎ মন হলো দেহের সাথে কার্য সম্পাদনের সম্পর্কযুক্ত। লাইবনিজ (খবরনহরু) মনকে আধ্যাত্মিক বিন্দু নামে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এই আধ্যাত্মিক বিন্দুই জগতের প্রকৃত সত্তা। অর্থাৎ- মন বা বিবেক (আত্মা) বলতে ব্যক্তি যেভাবে আচরণ (নবযধারড়ঁৎ) প্রদর্শন করে, তাই বুঝায়। আত্মা বা নিজকে জানার বিজ্ঞান দেহ ও মনের মধ্যকার সম্পর্কে সমস্যা (ঢ়ৎড়নষবস ড়ভ সরহফ নড়ফু ৎবষধঃরড়হ) আলোচনা করে। দেহ কী? মন কী? দেহ ও মন কি সম্পূর্ণভাবে অস্তিত্বশীল দু‘টি স্বাধীন সত্তা। আল্লাহ্র রাসুল (সা.) বলেন, প্রত্যেক বস্তুরই জাহের ও বাতেন আছে, তেমনি মানুষেরও জাহের ও বাতেন আছে। কারণ মানবদেহ ও মন (আত্মা) এই দু‘য়ের দ্বারা সৃষ্টি। তাহলে এখানে তার দেহ হচ্ছে- জাহের (প্রকাশ্য) এবং অপ্রকাশ্য বা বাতেন হচ্ছে আত্মা। জাহের হচ্ছে- একজন মানুষের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা তার ব্যবহার, কথাবার্তা, আচরণ, স্বভাব ইত্যাদি। অন্যদিকে বাতেন হচ্ছে আত্মা। অর্থাৎ- যে অংশটি স্পর্শ করা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায়। তাইতো হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “ফেকাহ্ শাস্ত্র মানুষের জাহেরকে শুদ্ধ করে আর তাসাউফ বা সুফিদর্শন মানুষের অন্তর বা আত্মাকে শুদ্ধ করে”। মানব কল্যাণে এই বিজ্ঞান (তাসাউফ বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান)-কে কাজে লাগানোই জ্ঞানার্জনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। মানুষ তাই প্রকৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে প্রকৃতিকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করেছে ও করছে। আর ঠিক একই কারণে মানুষ নিজেকে জেনে নিজের ব্যবহারকে এমনভাবে পরিচালিত করবে, যা মানব জীবনের জন্য কল্যাণপ্রসূ হয়। এ বিশেষ উদ্দেশ্যটি হলো মানবজীবনকে সুন্দর ও কল্যাণময় করে তোলা। পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে যে, ‘সৃষ্টির সবকিছুই নিজ নিজ আইন মেনে চলে এবং স্বভাব অনুযায়ী কাজ করে।’ মানুষেরও ঠিক তার নিজের স্বভাব সম্বন্ধে সচেতন হওয়া এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা উচিৎ। সুতরাং তাসাউফ বিজ্ঞানকে মানব স্বভাবের বিজ্ঞান বলা যেতে পারে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ আরও বলেন, ‘আমার (আল্লাহ্) প্রকৃতি ও স্বভাব, যে প্রকৃতি ও স্বভাব অনুযায়ী আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি’ (সুরা রূম, আয়াত ৩০)। আমরা এটা হতে কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী বুঝতে পারি যে, হযরত আদম (আ.)-কে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর আপন প্রকৃতি ও স্বভাব অনুযায়ী নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং যাবতীয় জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে তাঁকে প্রতিনিধির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। তাহলে এই বিশেষ জ্ঞান অর্থাৎ তাসাউফ বিজ্ঞান সম্পর্কে জানার জন্য মহান আল্লাহ্ তাগিদ করেছেন।

এজন্যই আল্লাহ্র রাসুল রাহ্মাতুল্লিল আলামিন বলেন- ‘তালাবুল ইলমী ফারিয়াতুন আলা কুল্লী মুসলিমিনা ওয়ালা মুসলিমাত’ অর্থাৎ- প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর বিদ্যা অর্জন করা ফরজ’। রাসুল (সা.) অন্যত্র আরও বলেন- বিদ্যা অর্জনের জন্য তোমরা সুদূর চীন দেশে হলেও যাও। আর এই বিদ্যা বা জ্ঞানই হচ্ছে- তাসাউফ বিজ্ঞান। মানুষের মন বা আত্মা হচ্ছে ঈমানের মূল বা বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু। পবিত্র মনের অধিকারী ব্যক্তি হতেই শুধু পবিত্র কর্ম আশা করা যায়। আল্লাহ্র রাসুল (সা.) ঘোষণা করেছেন- ‘আল মুসলিমু মান সালিমাল মুসলিমুনা মিল্লিসানিহী ওয়া ইয়াদিহী।’ অর্থাৎ- সেই ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলমান, যার হাত ও সুখের দ্বারা অন্য মানুষ নিরাপদ থাকে (আল হাদিস)। অপরের প্রতি কটুবাক্য প্রয়োগ না করা, অশ্লীল ভাষায় কারো মনে আঘাত না দেওয়া এবং অপরকে কষ্ট দেওয়া থেকে স্বীয় হাত, পা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযত রাখা তথা অন্যের প্রতি সুন্দর আচরণের নামই ইসলাম। অপরদিকে হাদিস শরিফ থেকে আরেকটি জিনিস বুঝা যায়; তা হচ্ছে- ‘ধর্ম একটি চরিত্রের নাম’, এই উত্তম চরিত্রের সুমহান আদর্শ প্রচার করার জন্যই যুগে যুগে মহামানগণ জগতে আগমন করেছেন। আমরা জানি, যে জিনিসের যে গুণ বা যে স্বভাব বা যে আচরণ তাই তার ধর্ম। মানব সমাজের মাঝেও বিভিন্ন চরিত্র, স্বভাব বা আচরণের মানুষ দেখা যায়। যার যে স্বভাব-চরিত্র সেটাই তার ধর্ম। শান্তিময় আচরণ বা স্বভাব বা ব্যবহারই হচ্ছে ইসলাম। তবে যে তা ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে সে এর দ্বারা মুক্তি পেয়েছে। এজন্য জগৎ বিখ্যাত তাসাউফ বিজ্ঞানী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, ‘যার চরিত্র নেই তার কোনো ধর্ম নেই। মানুষের ভিতর কিছু পশু প্রবৃত্তি রয়েছে। বলগাহীনভাবে এ প্রবৃত্তিগুলোকে কাজ করতে দিলে মানুষের ব্যবহার বা আচরণ পশুর ব্যবহারের পর্যায়েই অবনমিত হবে। এসব প্রবৃত্তিকে জেনে এ প্রবৃত্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করে মানুষের কল্যাণে নিজের ব্যবহারকে পরিচালিত করাই একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় কর্তব্য। হাদিস শরিফে হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নফসের সাথে যুদ্ধই সবচেয়ে বড় জেহাদ।’ কারণ মানুষের ভিতরে দু’ প্রকার আত্মা রয়েছে। একটি হচ্ছে- জীবাত্মা এবং অন্যটি হচ্ছে মানবাত্মা। এই জীবাত্মা বা পশু প্রবৃত্তিকে বা নফসে আম্মারাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার অবিরাম যে সংগ্রাম, তাই হলো মানুষের জন্য বড় জেহাদ। পাশ্চাত্যের মনোবিজ্ঞানীরা শুধু মানুষের বড় বিষয়গুলি গবেষণা করে, তারা আত্মিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে না। কিন্তু একমাত্র আত্মিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মানব জীবনে উন্নয়ন সম্ভব। আর ইসলামই হচ্ছে- একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।

মানুষের দেহের সাথে আত্মা যুক্ত হওয়ার ফলেই তার মধ্যে কামনা, বাসনা, সুখ-দুঃখ, ভোগ এসে পড়ে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ পাক বলেন- “মানুষের অসংযমী নফস বা জীবাত্মাই মানুষকে নফসের ছুদুর মাকাম হতে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে।” অন্যত্র বলা হয়েছে- ‘নফসে আম্মারা মানুষকে কু-প্ররোচনা দেয়।’ মানুষ যদি সাধনার মাধ্যমে এই অসংযমী নফসকে আয়ত্বে আনতে পারে, তাহলে সে আল্লাহ্র নৈকট্য হাসিল করতে সক্ষম হবে। মানুষের দেহ রূহ বা আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র।

কুরআনুল কারিমের ঘোষণা হচ্ছে- ‘কুল্লু নাফসিন যাইকাতুল মাউত’ অর্থাৎ- সকল নফসের (জীবাত্মার) মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু রূহ বা আত্মার মৃত্যু নেই। দেহ আত্মার কারাগারের মতো, যারা মু’মেন তাদের জন্য। আমাদেরকে আত্মার চিকিৎসকের নিকট যাওয়া অত্যাবশ্যক। জাহেরীভাবে দেহের অসুখ হলে যেমন ডাক্তারের নিকট যাই, তেমনি আত্মার অসুখের জন্য আমাদেরকে অলী-আল্লাহ্গণের সোহবত লাভ করতে হবে। তাঁদের সান্নিধ্যে গেলে আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রেম জাগ্রত হয় এবং এর মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে আত্মার উন্নতি সাধিত হয়। তখন আর এ অসংযমী নফস অন্যায় বা পাপ করতে পছন্দ করে না। এভাবে সাধনা করে আত্মার উন্নয়ন সাধিত হয়ে থাকে। এরূপ আত্মাকেই আল্লাহ্ পাক বলেন, হে প্রশান্ত আত্মা। তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। আমার দাসদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর।’

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মনই হচ্ছে দেহের ইঞ্জিন। মন যদি পাগলা ঘোড়ার মত দৌঁড়ায়, তাহলে তো মানুষ আর পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য রইলো না। এজন্য আমাদেরকে কোন কামেল মোর্শেদ (অলী-আল্লাহ্)-এর নৈকট্য লাভ করতে হবে। অন্যথায়, সারা জিন্দেগী ভর সাধনা করলেও এ পশু প্রবৃত্তিকে দমন করা যাবে না। তাসাউফের ভাষায়- যে ব্যক্তি আপন হৃদয়ের যাবতীয় কামনা-বাসনা পরিত্যগ করে অর্থাৎ অন্তরকে পাপ-কালিমা থেকে মুক্ত করে আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন, তিনিই সূফী। আর যে বিজ্ঞান মানুষের হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের দ্বারা আল্লাহ্র সাথে বান্দার যোগাযোগ স্থাপন করত আল্লাহ্র চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দেয়, তাই তাসাউফ বিজ্ঞান বা সুফিদর্শন।

সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বলেন- ‘বর্তমান যুগে মানুষ ক্বালবী বিদ্যা বা এলমে তাসাউফের আদর্শ ছেড়ে দিয়ে পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর করে কিতাব সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। ফলে তারা ইসলামের প্রকৃত শান্তি লাভে ব্যর্থ হচ্ছে। সূফী সম্রাট আরো বলেন, ‘ইসলাম হলো একটি আদর্শ চরিত্রের নাম, যা অর্জন করলে সৃষ্টি তার স্রষ্টার উপর পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে শান্তিতে বসবাস করতে সক্ষম হয়। এজন্য তাসাউফ বিজ্ঞান শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। যতদিন পর্যন্ত মানুষ এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকবে, ততদিন পর্যন্ত সমাজে শান্তি আসবে না।’ বিবেকবান মানুষ মাত্রেই স্বীকার করবেন যে, বর্তমান যুগের বহুবিধ বিজ্ঞানসম্মত উন্নত চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান মানুষের আত্মিক শান্তি দিতে পারে না, এজন্য প্রয়োজন আত্মিক চিকিৎসক অলী-আল্লাহ্ বা আধ্যাত্মিক সাধকের সান্নিধ্য লাভ। তাঁদের শিক্ষাই হচ্ছে তাসাউফ বিজ্ঞান। সুতরাং আমাদেরকে আত্মশুদ্ধি লাভ করত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই তাসাউফ বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান সুফিদর্শনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের কালিমা দূরীভূত করত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভের পথ-প্রদর্শন করে যাচ্ছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

1 Comment

  • মহা মূল্যবান আলোচনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *