একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিস্ময়কর ঘটনা, পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি প্রকাশ
ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা
মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানর চেহারা মোবারকের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ২০০৮ সালে, ১৪২৯ হিজরির শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে সর্বপ্রথম দেখা যায় এবং অদ্যাবধি দেখা যাচ্ছে। সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ব্যতীত কোনো মহামানবের চেহারা মোবারক চাঁদে প্রদর্শিত হয়নি। এটি ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ঘটনা এবং মহাকালের মহাবিস্ময়। এ বছর ১৪৪৩ হিজরির শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখার ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়ানবাগ শরীফ থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ‘আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি’-এর বার্ষিক শোকরানা অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হয়। অনুষ্ঠানটি যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য দেওয়ানবাগ শরীফের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই পবিত্র রজনিতে আশেকে রাসুলগণ দুই রাকাত সালাতুশ শোকর নামাজ আদায় করেন এবং শোকরানা মিলাদ শরীফ পাঠ করে থাকেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে পূর্ণিমার চাঁদে প্রকাশিত হওয়ার নিগূঢ় রহস্য রয়েছে। এই প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “যখন চতুর্দিক থেকে মানুষ এসে আমাকে বলছে যে, আমাকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে, তখন আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, এটা কি আমার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র? আমি যোগাযোগ করলাম আমার মহান মালিকের সাথে। যোগাযোগ করার পর আমাকে তখন যে সংবাদটা দেওয়া হলো সেটা হলো, ‘সারা দুনিয়ার মানুষ আমাকে (আল্লাহ্) নিরাকার বলে। একমাত্র আপনিই সেই ব্যক্তি, আমার আকার পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দলিল দিয়ে প্রমাণ করেছেন। তাহলে আমি কি আপনাকে পুরস্কৃত করব না? সুতরাং আপনাকে পুরস্কৃত করার জন্য চাঁদের মধ্যে দেখিয়েছি।’ জানতে চাইলাম, ‘কতদিন দেখানো হবে?’ তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হলো- ‘যতদিন প্রয়োজন, আমি ততদিন দেখাব’।” (৭ জুন, ২০২০ খ্রি. রবিবার বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ১ যুগ পূর্তি উপলক্ষ্যে দেওয়া বক্তব্য মোবারক থেকে সংকলিত)
একবিংশ শতাব্দীর শিরোভাগে পৃথিবীর মানুষকে শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তির পথপ্রদর্শন করে নুর বা আলোর চরিত্রে চরিত্রবান করে গড়ে তোলার জন্য নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহকরূপে, যুগের ইমামের সুমহান দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট কুসংস্কারগুলো দূর করে, হযরত রাসুল (সা.)-এর হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে জগতের বুকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেন; দয়াল রাসুল (সা.) সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত সত্য তুলে ধরে মানুষকে ‘আশেকে রাসুল’ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত স্বরূপ জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরে প্রমাণ করেছেন- মহান আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর নুরের রূপ রয়েছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান এ বিষয়ে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক ৮ খণ্ড তাফসীর শরীফ রচনা করেছেন।
জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানব ১৯৮৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রহমতের সময় মহান আল্লাহর পক্ষ হতে জামানার মোজাদ্দেদ বা সংস্কারকের দায়িত্ব পান; ১৯৮৮ সালের ১০ই মহররম যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন; পরবর্তীতে বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.) তাঁকে ১৯৮৯ সালের ৫ই এপ্রিল রহমতের সময় ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে বিভূষিত করেন; ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর সমস্ত নবি-রাসুলের বেলায়েত ও তাঁদের ধর্ম পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর, শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি প্রকাশ করেন। বিশ্বের অগণিত মানুষ আজও এই মহামানবের চেহারা মোবারকের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি পূর্ণিমার চাঁদে দেখতে পাচ্ছেন।
সমগ্র বিশ্বের অগণিত মানুষ পূর্ণিমার চাঁদে যে মহামানবের চেহারা মোবারক দেখছেন তিনি যুগের ইমাম, নুরে মোহাম্মদীর ধারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান-এর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। যুগে যুগে আল্লাহ্ প্রেরিত মহামানবগণ তাঁদের হৃদয়ে সিরাজুম মুনিরের নুর ধারণ করেন; তাঁরা মানুষ হিসেবে আমাদের মাঝে অবস্থান করলেও দয়াময় আল্লাহ্ তাঁদের সাথে মিশে থাকেন। তাঁদের হৃদয় মহান আল্লাহর আরশ। পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট-এর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে মহান আল্লাহ্ প্রমাণ করে দিলেন, যদি আমাকে পেতে চাও, তবে এই চেহারার অধিকারী মহামানবের কাছে যাও। তাঁর মাঝেই আমি বিরাজমান। পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর চেহারা মোবারক প্রকাশ বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য নেয়ামত।
ড. মাসুদ রানা ‘সূফী সম্রাট’ স্মরণিকার ৭ম সংখ্যায় ১১৭-১১৮ পৃষ্ঠায় ‘পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাটকে দেখার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’ শিরোনামে বর্ণিত প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, “ন্যাচার ম্যাগাজিনের ৬ই ডিসেম্বর ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জাপানের হিরোশিমা ইউনিভার্সিটির গবেষক কেনটারো টেরাডা এবং যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির মাহেস আনন্দ যৌথ গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেন যে, চন্দ্রপৃষ্ঠে যে মানবাকৃতি চেহারা দৃশ্যমান রয়েছে তাঁর বয়স চাঁদের বয়সের সমান। অর্থাৎ প্রায় ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর। তারা বিভিন্ন গবেষণা ও প্রমাণের ভিত্তিতে উপস্থাপন করেন যে, পৃথিবী সৃষ্ট থেকে চন্দ্রপৃৃষ্ঠে যে চেহারা দেখা যাচ্ছে তা মোটামুটি ৫টি চন্দ্র গহ্বরের উপস্থিতির কারণে। তিনি সেগুলোর ব্যাখ্যায় বলেন যে, মানবাকৃতি চেহারার চোখের অংশ Mare Imbrium ও Mare Serenitatis গহ্বর (Crater) দ্বারা গঠিত। অনুরূপভাবে নাকের অংশ Sinus Aestuum ও Mare Nubium গহবর দ্বারা গঠিত। মুখের অংশ হয়েছে Mare Congnitum গহবর দ্বারা। এই সম্পূর্ণ চেহারা আয়তনে চন্দ্র পৃষ্ঠের ৬ ভাগের এক ভাগ, যা পৃথিবী থেকে খালি চোখেই দৃশ্যমান হয়।
আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি প্রকাশিত ‘ইকারুস (Icarus) জার্নালের মে ২০১২ সংখ্যায় Oded Aharonson, Peter Goldreicha ও Re’em Sarib রচিত Why do we see the man in the moon’’এ প্রবন্ধে চন্দ্রে কেন মানবাকৃতি চেহারা দৃশ্যমান হচ্ছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত একটি গবেষণা পত্র পেশ করা হয়েছে। (www.sciencedirect.com)
এর পাশাপাশি বর্তমান সময়েই মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আকস্মিকভাবে চাঁদের মাঝে একটা অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, সমসাময়িককালে চাঁদের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, এমতাবস্থায় চাঁদটি প্রায় ৫০ হাজার কিলোমিটার পৃথিবীর কাছে চলে এসেছে। চাঁদের এই বিস্ময়কর পরিবর্তিত রূপকে বিজ্ঞানীরা ‘সুপার মুন’ (যার বৈজ্ঞানিক নাম Perigce- Syzygy) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন নৌ পর্যটকদের একটি দল জানায় ১৯শে মার্চ, ২০১১ইং তারিখে যে সুপার মুন হয়, তাতে চাঁদ পৃথিবীর ১৫,৩০০ মাইল কাছে চলে আসে। নাসার প্রেস নোট অনুযায়ী, এদিন চাঁদ নিজ আয়তনের চেয়ে শতকরা ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পায় এবং আলো শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।” www.science.nasa.gov
উল্লেখ্য যে, ইতালির মহাকাশ বিজ্ঞানীরা চন্দ্রপৃষ্ঠে মানবাকৃতি চেহারা দর্শনের ভিত্তিতে চান্দ্র মাসের কোন তারিখে সেই চেহারা কীভাবে দেখা যাচ্ছে, সেই অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ক্যালেন্ডার প্রকাশ করছে। এই প্রসঙ্গে জার্নালিস্ট ও প্রাবন্ধিক ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘সূফী সম্রাট’ স্মরণিকার ৪র্থ সংখ্যা ৭৩ পৃষ্ঠায় তার প্রবন্ধে ‘Image of the great man on the moon telecast in Italy’ তে উপস্থাপন করেন,ÒItalian National Broadcasting Centre and news agencies telecasted and broadcasted the live image and movment of the great man on the moon in 2008. Not only that, having realized this miracle Italian government has made yearly calendar, on which day and when the holy image will be seen on the moon. They also have indicated the image of the great man in the calendar. After sighthing the image of that great man on the moon, the Italian government has made calendar marking the image in the year of 2008, 2009 and 2010 where the Image of the great man have been showing on the moon. From that persective, it is crystal clear that the great man who has been showing on the moon, is the great man of the age, the great reformer Sufi Samrat Hazrat Dewanbagi Hujur Qibla.”
মূলত পবিত্র কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী, হযরত রাসুল (সা.)-এর বাণী মোবারক এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে সুস্পষ্ট যে, পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের নুরময় চেহারা মোবারকের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে, এটি বাস্তব ভিত্তিক।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের কর্মময় গৌরবোজ্জ্বল জীবন গবেষণা করলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করেন, তিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব। যুগ যুগ ধরে আমরা সবাই বিশ্বাস করেছিলাম আমাদের স্রষ্টা অস্তিত্বহীন নিরাকার, সূফী সম্রাট একক ব্যক্তি হয়ে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের এ বিশ্বাসের বিপরীতে অবস্থান করে প্রমাণ করেছেন আমাদের মহান আল্লাহ্ অস্তিত্বহীন নিরাকার নন, তাঁর অপরূপ সুন্দর নুরের আকার রয়েছে। এছাড়া যাঁকে সৃষ্টি না করলে দয়াময় আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখেরাত কিছুই সৃষ্টি করতেন না, যিনি সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত, সে দয়াল রাসুল (সা.) সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার অবসান করে তিনি সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি কারবালা প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে জগতের বুকে পুনরায় উপস্থাপন করেছেন। পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি তারই পুরস্কার। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জীবদ্দশায় মুক্তিকামী মানুষেরা পূর্ণিমার চাঁদে মোর্শেদ কেবলাজানের প্রতিচ্ছবি দেখে তাঁর প্রেমাকর্ষণে ব্যাকুল হয়ে ছুটে এসে আপন মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে সংবর্ধনা দেন। বহির্বিশ্বের ৫০টি দেশসহ বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার আশেকে রাসুলেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আজও প্রতি পূর্ণিমায় বাবা দেওয়ানবাগীর চেহারা মোবারক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবির প্রকাশ জগদ্বাসীর জন্য মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। আমাদের এ পৃথিবী আজ ব্যাধিগ্রস্ত। মহান প্রভু অত্যন্ত স্পষ্টভাবে মানবজাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, সৃষ্টি তার স্রষ্টাকে ভুলে গিয়ে কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে তার পরিণাম কী হতে পারে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য নয়, প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আমরা কৃতকর্মের জন্যই ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছি।” সমস্ত পৃথিবীর জন্য চাঁদ একটিই। পূর্ণিমার চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর ঝর্ণাধারা সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করে। দয়াময় আল্লাহ্ যেমন মহাজ্ঞানী, নিজের পরিচয় প্রকাশের জন্য ঠিক তেমনি মনোহর মাধ্যম বেছে নিয়েছেন। তবুও আমরা যদি তাঁর দিদারকে অস্বীকার করি তাহলে বুঝতে হবে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহর দিদার লাভের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করে না, তারা সৎপথ প্রাপ্ত নয়, তারা পার্থিব ভোগ বিলাসেই পরিতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট। কিন্তু প্রকৃতি এ সন্তুষ্টি দীর্ঘকাল মেনে নেয় না। তাই যুগে যুগে ধরণীর বুকে নেমে এসেছে দুর্যোগ-মহামারি। মুক্তি পেতে হলে, মানবজাতির মুক্তির জন্য দয়াময় আল্লাহ্ যে মহামানব প্রেরণ করেন তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ গ্রহণ করতেই হবে। যুগে যুগে এটিই ছিল বিধান, আজও এর ব্যতিক্রম নয়। দয়াময় আল্লাহ্, পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাটের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক দেখিয়ে মানবজাতির নিকট সিরাতুল মোস্তাকিমের পথ কোনটি, তা সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। যাতে মু’মিন নর-নারীগণ নয়নভরে তা প্রত্যক্ষ করে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় লাভ করতে পারেন।
নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে যুগের ইমামের ক্বালবে হযরত রাসুল (সা.)-এর সিরাজুম মুনির সংরক্ষিত থাকে, সেহেতু মহামানবগণের সহবত লাভ ব্যতীত মু’মিন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান বেলায়েতের যুগে আল্লাহর রাসুলকে পাওয়ার এটিই খোদায়ি বিধান। আর মানুষ যাতে আল্লাহর ঠিকানা জানতে পারে সেজন্য সর্বজ্ঞ আল্লাহ্ একটি উপমার মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন যে, আলো যেমন বাল্বের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, একইভাবে নুরময় সত্তা আল্লাহ্ প্রেরিত মহামানবের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর এ ব্যবস্থাপনা এজন্য যে, যাতে মানুষ সহজেই তাঁর পরিচয় লাভ করতে পারে।
পবিত্র কুরআনে দয়াময় আল্লাহ্ বলেন, “আমি তোমাদের (ক্বালবের সপ্তম স্তর) নাফসির মোকামে অবস্থান করি, তবুও কি তোমরা দেখ না?” (সূরা আয্ যারিয়াত ৫১: আয়াত ২১) আল্লাহর রাসুল (সা.) ফরমান, “মু’মিন ব্যক্তির হৃদয় আল্লাহর আরশ।” অর্থাৎ নুরময় সত্তা আল্লাহ্ মু’মিন ব্যক্তির হৃদয়কে আরশ বানিয়ে তিনি নিজে তথায় অবস্থান করেন। দয়াময় আল্লাহ্ এ আরশের প্রতিপালক। জগৎশ্রেষ্ঠ সুফিগণ বলেন- “আরশ বলতে আল্লাহর প্রেরিত মহামানব তথা নবি, রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণের ক্বালব বা হৃদয়কে বুঝায়।” এ কারণেই হযরত ইউসুফ (আ.)-কে তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.), মা ও এগারো ভাই সিজদা করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন-“ইউসুফ তাঁর পিতা-মাতাকে সিংহাসনের উপর বসালেন এবং তারা সবাই সিজদায় পতিত হলো তার সামনে।” (সূরা ইউসুফ ১২: আয়াত ১০০) হযরত ইয়াকুব (আ.) নবুয়তের আলো দ্বারা দেখেছিলেন, মহান আল্লাহ্ হযরত ইউসুফ (আ.)-এর হৃদয়কে আরশ বানিয়ে নিয়েছেন। এভাবে মহান আল্লাহ্ যুগে যুগে তাঁর বন্ধুদের ক্বালবের ৭ম স্তর নাফসির মোকামে অবস্থান করে তাঁর বন্ধুদের হৃদয়কে আরশ বানিয়ে জগৎ পরিচালনা করে থাকেন।
নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণ মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। নবুয়ত পরবর্তী যুগে তাহলে কী হবে? এ প্রসঙ্গে বলা যায় যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর জগতে আর কোনো নবি-রাসুল আসবেন না। এরপরে শুরু হয়েছে বেলায়েত বা বন্ধুত্বের যুগ। নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পর থেকে অলী-আল্লাহ্গণ মানুষের জন্য মোর্শেদ বা পথ প্রদর্শকরূপে প্রেরিত হয়ে মানুষকে মহান আল্লাহ্কে পাওয়ার বিদ্যা শিক্ষা দিচ্ছেন। মূলত তাঁরা নবিগণের উত্তরসূরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।”
পরিশেষে বলা যায় যে, পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখার মহতি অনুষ্ঠানটি রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ একটি রজনি। এই দিনটি যথাযথ মর্যাদার সাথে উদ্যাপন করতে পারলে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন এবং আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। আমিন।
তথ্য সূত্র:
১। আল কুরআন
২। আল হাদিস
৩। সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী, তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী, ১ম খণ্ড, দেওয়ানবাগ শরীফ, পৃষ্ঠা ১৭৫-১৭৬
৪। সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী, তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী, ৩য় খণ্ড, দেওয়ানবাগ শরীফ, পৃষ্ঠা ৮৭৫
৫। ‘সূফী সম্রাট’ স্মরণিকা, ২০১১ খ্রি. পৃষ্ঠা ২৮
৬। ড. মুহাম্মদ নাছিরউদ্দীন (সোহেল), পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত মাসিক আত্মার বাণী, সেপ্টেম্বর-২০২০, পৃষ্ঠা ২৬-২৯
৭। মুহাম্মদ জহিরুল আলম, পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত মাসিক আত্মার বাণী, মে-২০২১, পৃষ্ঠা ২৬-২৭
৮। ড. মাসুদ রানা, পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাটকে দেখার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, ‘সূফী সম্রাট’ স্মরণিকা ২০১৩ খ্রি. পৃষ্ঠা ১১৭-১১৮
৯। www.sciencedirect.com
১০। www.science.nasa.gov
১১। Dr. Syed Mehadi Hasan, Image of the great man on the moon telecast in Italy, ‘Sufi Samrat Smaranika’ 2010, Page 73
[লেখক: মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম; পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]