Cancel Preloader

আশেকে রাসুল হওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ড. পিয়ার মোহাম্মদ
‘আশেকে রাসুল’ অর্থ রাসুল প্রেমিক। যিনি হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসেন তাকে আশেকে রাসুুল বলা হয়। হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার অর্থ সব সময় তাঁকে অন্তরে স্মরণ করা, তাঁর আদর্শে আদর্শবান হয়ে চলা এবং তাঁকে আল্লাহ্ ব্যতীত সবকিছুর চেয়ে বেশি মর্যাদা দেওয়া। যিনি হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসেন, রাসুল (সা.)-ও তাকে ভালোবাসেন। পারস্পরিক এমন ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষ রাসুল (সা.)-এর আলোয় আলোকিত হয়ে প্রকৃত মু’মিনে পরিণত হন। তাঁর সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর একটা রূহানি যোগসুত্র স্থাপিত হয় এবং তখনই তার পক্ষে আল্লাহ্ পাকের রহমত ও বরকত লাভ করা সম্ভব হয়। হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম যার হৃদয়ে নেই, সে মহান আল্লাহ্ পাকের রহমত থেকে বঞ্চিত হয় এবং মু’মিন হতে পারে না।


সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নাম ইমান। যে হযরত রাসুল (সা.)-কে যতটুকু ভালোবাসে তার মধ্যে ইমান ততটুকু।” রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর রহমত হিসেবে সৃষ্টির আদি থেকে আছেন এবং সৃষ্টির অন্ত পর্যন্ত থাকবেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “(হে হাবিব) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ্ও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমুহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১) হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতা, সন্তানসন্তুতি ও অন্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি ভালো না বাসবে, সে মু’মিন হতে পারবে না।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭ এবং মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯) সেজন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর অনুসারীদের সব সময় হযরত রাসুল (সা.)-কে সবার চেয়ে বেশি ভালোবেসে আশেকে রাসুল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।


সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর মুরিদ সন্তানদের আশেকে রাসুল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জগতের মানুষকে সাধনার মাধ্যমে আশেকে রাসুল হওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষামতে আমল করে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ আশেকে রাসুলে পরিণত হচ্ছেন। হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার মাধ্যমে স্বপ্ন ও মোরাকাবায় দয়াল রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাৎ পাচ্ছেন এবং তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছেন। আল্লাহ্ তায়ালা হযরত রাসুলে পাক (সা.) সম্পর্কে এরশাদ করেন- “(হে হাবিব)! আমি আপনাকে বিশ্বজাহানের রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আল আম্বিয়া ২১: আয়াত ১০৭) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন- “[হে রাসুল (সা.)!] যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম, তবে সৃষ্টিকুলের কোনো কিছুই সৃজন করতাম না।” (তাফসীরে মাজহারী ১০ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮০) সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সেজন্য রাব্বুল আলামিনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু রহমাতুল্লিল আলামিনকে ভালোবাসার জন্য নসিহত করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসুল (সা.)-কে ভালো না বাসলে তাঁর রহমত যেমন পাওয়া যাবে না, তেমনি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাও কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।


হযরত আদম (আ.) হতে শুরু করে সকল নবি-রাসুল এবং আউলিয়ায়ে কেরাম হযরত রাসুল (সা.)-এর আশেক ছিলেন। সকল নবি-রাসুল তাঁদের উম্মতদের হযরত রাসুল (সা.)-এর আগমন হলে তাঁকে অনুসরণ করার জন্য আহ্বান করেছেন। হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে তাঁর অসিলা ধরে আল্লাহর দরবারে কিছুর জন্য ফরিয়াদ জানালে, মহান আল্লাহ্ তা কবুল করেন। হযরত আদম (আ.) ৩৬০ বছর মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেও মাফ পাননি, অথচ হযরত রাসুল (সা.)-এর অসিলা ধরে ক্ষমা চাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ্ পাক তাঁকে ক্ষমা করেছেন। নবি-রাসুলগণ ছাড়াও হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত ওয়ায়েস কারনি (রহ.)। যিনি জাগতিকভাবে হযরত রাসুল (সা.)-কে দেখেননি। উহুদের যুদ্ধে হযরত রাসুল (সা.)-এর দাঁত মোবারক শহিদ হয়েছে জেনে তিনি একে একে তার সবগুলো দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। রাসুল প্রেমের এমন নিদর্শন বিরল।
আশেকে রাসুল হতে পারলে বিপদ আপদ বালা মসিবত থাকে না। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান তাই মানুষকে নিজের চরিত্র সংশোধন করে আশেকে রাসুল হওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর করুণা লাভের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে রাসুল (সা.)-এর ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম তিনি প্রচার করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে আশেকে রাসুল হতে হয়।


মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসেই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। ধুলির ধরায় রাসুল (সা.)-এর জন্ম সকল নবি ও রাসুলের পরে হলেও প্রকৃতপক্ষে, তাঁর নুরময় সত্তা সৃষ্টির মধ্য দিয়েই আল্লাহ্ পাক সৃষ্টি লীলা সূচনা করেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর সেই নুরময় সত্তা থেকে সমস্ত সৃষ্টি সৃজিত হয়েছে। তাঁকে সৃষ্টি করা না হলে জগতের কিছুই সৃষ্টি করা হতো না। সৃষ্টি হতো না এ নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলের কোনো সৃষ্টিরাজি। মহান আল্লাহ্ পাক হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে তাঁর ফেরেশতাদের নিয়ে হযরত রাসুল (সা.) এর প্রতি দরূদ পাঠ করেন। কালামে পাকে ঘোষিত হয়েছে- “নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতারা নবির উপর দরূদ পাঠ করেন, হে মু’মিনগণ! তোমরাও তাঁর উপরে দরূদ পড়ো এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৫৬) এতে বুঝা যায়, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক আশেকে রাসুল। আমরা সেই আল্লাহর বান্দা হয়ে এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর উম্মত হিসেবে আমাদের ইমানি দায়িত্ব হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে আশেকে রাসুল হওয়া। মহান আল্লাহ্ যাকে ভালোবাসেন তাঁকে ভালো না বাসলে মহান আল্লাহ্কে পাওয়ার আশা করা যায় কিভাবে? হযরত রাসুল (সা.)-কে কেউ ভালোবাসলে মহান আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুর খাতিরে তাকে ক্ষমা করে দেন। সেজন্য সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান আশেকে রাসুলদের সব সময় দরূদ পাঠ এবং মিলাদ মাহ্ফিলের পরামর্শ দিয়েছেন। মোরাকাবার মাধ্যমে হযরত রাসুল (সা.)-এর ধ্যানে মগ্ন হয়ে তাঁর ভালোবাসা ও মহব্বত হাসিলের জন্য শিক্ষা দিয়েছেন।


পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ২১) যখন আমাদের মাঝে আহম্মদি চরিত্র প্রকাশ পাবে এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর কথা আমরা স্মরণ করব তখনই অন্তরে ইমানের নুর সৃষ্টি হবে। সেজন্য রাসুল (সা.)-এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য করে আশেকে রাসুল হতে হবে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করে, সে-তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৮০) হযরত রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করতে পারলে তার হৃদয়ে পরিবর্তন আসে। তার অন্তর রাসুলের কথায় যেন পাগলপারা হয়ে উঠে। তিনি যেন রাসুল (সা.)-এর প্রেমে পাগল হয়ে যান। হযরত রাসুল (সা.)-এর জন্য তিনি যেন সব করতে পারেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে তাঁরই ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামের জন্য সারা জীবন সাধনা করেছেন। জগদ্বাসীকে আশেকে রাসুল হয়ে মোহাম্মদী ইসলাম চর্চার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি আশেকে রাসুলদের আত্মিক উন্নতির জন্য প্রতি বছর বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন করেছেন।


হযরত রাসুল (সা.)-এর চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, রীতি-নীতি সবই ছিল অপূর্ব সুন্দর সুষমণ্ডিত। তিনি মানব জাতিকে দিয়ে গেছেন সর্বোত্তম জীবন বিধান। তাইতো হযরত রাসুল (সা.)-এর শানে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “লাক্কাদ কানা লাকুম ফী রাসুলিল্লাহে উসওয়াতুন হাসানা” অর্থাৎ “তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ২১) আল্লাহ্ পাক আরো বলেছেন- “[হে রাসুল!] আমি আপনাকে বিশ্বজাহানের রহমতস্বরূপ হিসেবে প্রেরণ করেছি।” সুতরাং তাঁকে ভালোবেসেই আল্লাহ্ পাকের বিশেষ নিয়ামত পেতে হয়। হযরত রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যের বাইরে গেলে কী হবে তাও মহান আল্লাহ্ সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। ঘোষণা হয়েছে- “(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, তোমরা অনুসরণ করো আল্লাহর এবং রাসুলের। তবে যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রেখ, আল্লাহ্ কাফেরদের ভালবাসেন না।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩২)। এতে বুঝা যায় যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ ও আনুগত্যের মধ্যেই আল্লাহরআনুগত্য শামিল। সেজন্য সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে আল্লাহর ভালোবাসা হাসিলের শিক্ষা দিয়েছেন।


মানুষের উদ্দেশ্য হলো, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ। সে উদ্দেশ্যেই মানুষ ইবাদত বন্দেগি করে থাকে। এ ক্ষেত্রেও আল্লাহ্ পাক মানুষকে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে তাঁকে অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর জিকিরকারি বান্দাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন-“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ্ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণ স্মরণ করে, তাদের জন্য অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম (অনুসরণীয়) আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ২১)। অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করতে হলে হযরত রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে, তাঁকে ভালোবাসতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেছেন- “ইমানের অধিকারী হতে হলে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে এবং তাঁকে অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করতে হবে।”


মর্যাদার দিক থেকে কুলকায়েনাতের শিরোমণি হচ্ছেন মহানবি (সা.); তাই তাঁকে সর্বাবস্থায় সবারই উচিৎ হবে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা, তাঁর উচ্চ মাকামের প্রতি খেয়াল রাখা এবং তাঁকে ভালোবাসা। হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার মাধ্যমেই মুক্তি অর্জন করা সম্ভব। মহান আল্লাহ্ বলেন- “কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল যখন কোনো কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের কোনো নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করলে সে তো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৩৬) কাজেই এশ্কে রাসুল (সা.) এবং এশ্কে এলাহি অর্জন করতে হলে অবশ্যই হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান সেজন্য সবাইকে এশ্কে রাসুল অর্জন করতে শুধু মুখে রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসি না বলে বা কিছু আচার অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে তৃপ্ত হতে নিষেধ করেছেন। আশেকে রাসুল হতে কঠোর সাধনা এবং নিজের দোষ ত্রুটি দূর করে হযরত রাসুল (সা.)-কে অন্তরে স্থান দিয়ে সব সময় তাঁর নির্দেশমতে চলার জন্য বলেছেন তাঁর অনুসারী আশেকে রাসুলদের।


মানব জীবনে রাসুল (স.)-এর প্রতি ভালোবাসার গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসুল তো ইমানের রুহ, মু’মিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই এশ্ক ও মহব্বত ছাড়া না ইমানের পূর্ণতা আসে, আর না তার স্বাদ অনুভুত হয়। আর নিছক ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এ ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে হবে। ভালোবাসার সার কথা হচ্ছে, আমি যাকে ভালোবাসি তার চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়ার সাথে একাত্ম থাকা। ভালোবাসা হলো প্রেমাস্পদের সাথে সর্বাবস্থায় একাত্ম থাকা। সুতরাং হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি মহব্বতের প্রকাশ হচ্ছে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর জীবনাচার অনুসরণ করা। বারবার তাঁর আলোচনা করা। প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা। যে যত বেশি রাসুলকে স্মরণ করবে ততই তার অন্তরে রাসুলের মহব্বতের প্লাবন প্রবাহিত হতে থাকবে। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান সেজন্য আশেকে রাসুলদের অন্তরে রাসুলের প্রেম রেখে সব কাজ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।


মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধাচরণ থেকেও বিরত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে-“অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” (সূরা আল নূর ২৪: আয়াত ৬৩) এতে বুঝা যায় যে মহান আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার কোনো বিকল্প নাই। জীবনে সফল হতে হলে হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শের পূর্ণ অনুসারী হতে হবে। তাঁর আদর্শ বাদ দিয়ে অন্য কারো আদর্শ অনুসরণ করে জীবনে সফল হওয়া যাবে না। এরশাদ হয়েছে- “যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য লাভ করবে।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৭১)। আরো এরশাদ হয়েছে- “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ্ তাকে এমন জান্নাতসমুহে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ হলো বিরাট সাফল্য।” (সূরা আন নিসা ৪: আয়াত ১৩) হযরত রাসুল (সা.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে মুক্তির কাণ্ডারী হিসেবে। কেবলমাত্র তাঁকে ভালোবাসার মাধ্যমেই মহান আল্লাহর ভালোবাসা এবং মুক্তি পাওয়া যায়। সূফী সম্রাাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান সেজন্য নিঃস্বার্থভাবে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসতে বলেছেন। তাঁর এশ্কে দেওয়ানা হতে বলেছেন।
বর্বর আরব জাতির যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে আশেকে রাসুল হতে পেরেছিলেন তারাই সফলকাম হয়েছেন। এখনও যারা রাসুলের ধর্মকে আঁকড়ে ধরে দয়াল রাসুল (সা.)-এর আশেক হতে পারেন তারাই সফলকাম হয়ে থাকেন। মানব জীবন সার্থক করতে আশেকে রাসুল হওয়া জরুরি। আশেকে রাসুল হওয়ার জন্য স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। এ শুধুই বিশুদ্ধ প্রেম বা ভালোবাসার বিষয়। হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম হৃদয়ে ধারণ করতে পারলেই আশেকে রাসুল হওয়া যায়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা মুক্তি পেতে হলে আশেকে রাসুল হতে হবে। আশেকে রাসুল হতে পারলেই অন্তরে শান্তি অনুভুত হবে। সেজন্যই মোহাম্মদী ইসলাম শান্তির ধর্ম।


কলেমা তাইয়্যেবাতে মহান প্রভুর নামের সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর নাম সংযুক্ত আছে। এতে বুঝা যায়, মহান আল্লাহর প্রতি ইমান আনার সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতিও ইমান আনাও জরুরি। আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেছেন, দয়াল রাসুলকে ভালোবাসলে মহান আল্লাহ্্ খুবই খুশি হন। আল্লাহ্ পাক কারো উপর খুশি হলে তার আর চিন্তা কী? আসলে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা এতই তাৎপর্যপুর্ণ যে, কোনো মানুষ যদি আন্তরিকভাবে এ কাজটি করেন, তাহলে মহান আল্লাহ্ তার প্রতি অত্যন্ত সদয় হন এবং অবারিত রহমত দান করে থাকেন। মহান আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় হাবিবকে ভালোবাসেন এবং তিনি চান সৃষ্টিকুল তাঁকে ভালোবাসুক। হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার অর্থ আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়ন করা। আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়নই ইবাদত।


সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) দয়াল বাবা কেবলাজান আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা এবং নামাজে হুজুরির পাশাপাশি হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে মানুষকে ‘আশেকে রাসুল’ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হযরত রাসুল (সা.)-এর শাফায়াত ছাড়া কারো মুক্তি নাই। শাফায়াত কেবল সম্ভব তাঁকে ভালোবাসার মাধ্যমে। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন, আমরা যেন দয়াল মোর্শেদের দেখানো পথে আমল করে পাপমুক্ত হয়ে দয়াল রাসুলের সত্যিকার আশেক হতে পারি এবং দয়াল রাসুল (সা.) ও মহান আল্লাহর দিদার লাভ করে মুক্তি পেতে পারি। আমিন।
[লেখক: অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।]

সম্পর্কিত পোস্ট