Cancel Preloader

যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন


অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
(পর্ব-১৯)
পূর্ব প্রকাশিতের পর


আল্লাহ্ দর্শনের মামলায় সূফী সম্রাটের জয়লাভ
বিশ্বজাহানের মালিক ও প্রতিপালক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এ পৃথিবী সৃষ্টি করে অসংখ্য মাখলুকাতের মধ্যে মানুষকেই সৃষ্টির সেরা বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “ওয়ামা কাররামনা বানী আদাম” অর্থাৎ- আমি আদম সন্তান (মানুষ)-কে সৃষ্টির মধ্যে সম্মানিত করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭: আয়াত ৭০) যে আল্লাহ্ তায়ালা মানবজাতিসহ বিশ্বের ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করে, তাদের প্রতিপালন করে চলেছেন, সে মহান প্রভূকে মানবজাতি নিরাকার বলে বিশ্বাস করে। তাঁকে দেখা যায়, এমন বিশ্বাস মুসলিম সমাজে ছিল না। তাই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ আল্লাহ্কে নিরাকার ভেবে তিনি সাত আসমানের উপরে রয়েছেন বলে বিশ্বাস করে আসছে। মহান আল্লাহ্ ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবি-রাসুল এবং অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ জগতে প্রেরণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহ্কে নুরের আকৃতিতে দেখেছেন এবং তাঁরা আল্লাহ্র সাথে কথাও বলেছেন।
আল্লাহ্র মহান বন্ধু, যুগের ইমাম, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান স্বীয় মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর দরবার শরীফে সাধনাকালীন মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনকে দেখেছেন। স্বীয় মোর্শেদের দরবার চন্দ্রপাড়া থেকে আরামবাগে চলে আসার পরে যখন কিতাব লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন একথাটি তিনি আমাদের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন।


উল্লেখ্য যে, ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে আমি আরামবাগে সূফী সম্রাটের সান্নিধ্যে চলে আসার পর, দয়াল বাবাজান কিতাব লেখার জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদিসের তথ্যাবলি সংগ্রহ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন। আমি তথ্যাবলি সংগ্রহ করি। আল্লাহর রহমতে কিছুদিনের মধ্যেই ‘শান্তি কোন পথে?’, ‘মুক্তি কোন পথে?’ এবং ‘আল্লাহ্ কোন পথে?’ নামক কিতাব প্রকাশিত হয়। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের দরবার থেকে যখন ‘আল্লাহ্ কোন্ পথে?’ নামক গ্রন্থখানা প্রকাশিত হয়, তখন আল্লাহ্কে দেখার বিষয়টি পুস্তকে স্থান পায়। পুস্তক প্রকাশিত হওয়ার পরে ১৯৯০ সালের ১৭ রমজান কতিপয় দুষ্ট প্রকৃতির লোক, ধর্মের দোহাই দিয়ে সূফী সম্রাটের ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে হামলা চালিয়ে লুটতরাজ ও অগ্নি সংযোগ করে। তারা দরবার শরীফে সংরক্ষিত পবিত্র কুরআনসহ বহু ইসলামিক কিতাবাদি জ্বালিয়ে দেয়। এতটুকুই শেষ নয়, আলেম নামধারী, মোহাম্মদী ইসলামের দুশমন জনৈক ব্যক্তি সূফী সম্রাটের বিরুদ্ধে ধর্ম নষ্ট করার এবং আল্লাহ্কে দেখার অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান, হযরত দয়াল মা (রহ.), ইঞ্জিনিয়ার মো. হাসিবুর রহমান (খালুজান), আরামবাগের বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব মো. শফিউদ্দীন এবং আমি (আত্মার বাণী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়াসহ মোট ২৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। এ অপ্রত্যাশিত মিথ্যা মামলা দায়ের হওয়ার পরে আমি ভীষণ বিমর্ষ হয়ে পড়ি। কারণ, আমি যদি আল্লাহ্কে দেখার দলিল পুস্তকে প্রকাশ না করতাম, তাহলে দয়াল বাবাজানের বিরুদ্ধে আল্লাহ্কে দেখার জন্য দুষ্টচক্র মিথ্যা মামলা দায়ের করার সুযোগ পেত না। তাই আমি বাবাজানের কাছে গিয়ে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলেছি- বাবা! আল্লাহ্কে দেখার কথা লিখে আমি আপনাকে মামলার মধ্যে ফেলে দিয়েছি। আজ আপনার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা হয়েছে। আমার কান্না দেখে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান বীরত্বপূর্ণ ভাষায় জবাব দিলেন- আপনি লিখেছেন- আমি আল্লাহ্কে দেখেছি, আমার সহধর্মিণী আল্লাহ্কে দেখেছে। এখন আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রকাশ্যভাবে সবাইকে জানিয়ে দেবো যে, আমি আল্লাহ্কে দেখেছি। বাস্তবে হলোও তাই। সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান সাংবাদিকের সামনে দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা দিলেন যে, “আমি আল্লাহ্কে দেখেছি।” একথা বলার সাথে সাথে সাংবাদিকদের নানান প্রশ্ন শুরু হলো- আল্লাহ্কে কি দেখা যায়? তাঁকে মানুষের পক্ষে কি করে দেখা সম্ভব? সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সাংবাদিকদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সুস্পষ্ট ভাষায় দিয়েছেন। পরের দিন দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় “যিনি আল্লাহ্কে দেখেছেন বলে দাবী করেছেন”- শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। আল্লাহর কী ইচ্ছা, সূফী সম্রাটের বিরুদ্ধে আল্লাহ্কে দেখার যে মামলাটি নারায়ণগঞ্জ কোর্টে দায়ের করা হয়েছিল, একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে সে মামলাটি আমাকেই পরিচালনা করতে হয়েছে। আল্লাহর রহমতে সে মামলায় সূফী সম্রাটই বিজয়ী হয়েছেন। অথাৎ- সূফী সম্রাটের আল্লাহ্কে দেখার বিষয়টি কোর্টের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমি ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এল-এল.বি পাশ করি। ইচ্ছা করলে সে বছরই আমি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সনদ নিয়ে অ্যাডভোকেট হিসেবে আইন ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু অধ্যাপনা করার কারণে আমি তখন বার কাউন্সিলের সনদ গ্রহণ করিনি। এদিকে ১৯৮৫ সালে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান স্বীয় মোর্শেদের দরবার থেকে ঢাকার আরামবাগে চলে আসার কিছুদিন পরে আমাকে বার কাউন্সিলের সনদ নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি তখন বললাম- বাবাজান! এখন সনদ নিতে গেলে আমাকে সেরওয়ানি বানাতে হবে, আমি সনদ নেওয়ার ব্যাপারটি এই মুহূর্তে ভাবছি না। তখন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান দরবার শরীফের অর্থ বিভাগের দায়িত্বে থাকা জনাব ফজলুল হক তালুকদার (চঞ্চল) ভাইকে ডাক দিয়ে বললেন- চঞ্চল মিয়া! মান্নান সাহেবকে এক হাজার টাকা দিয়ে দেন। আমি আপত্তি করা সত্ত্বেও চঞ্চল ভাই আমাকে ১ হাজার টাকা দিলেন। তখন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আমাকে বললেন- আপনি মার্কেটে গিয়ে কোট-প্যান্ট-টাই কিনে নেন। সত্যিই আমি মার্কেটে গিয়ে কোট-প্যান্ট-টাই কিনে সে বছর অর্থাৎ- ১৯৮৬ সালে বার কাউন্সিলে সনদ লাভের জন্য পরীক্ষা দেই এবং পাশ করে অ্যাডভোকেট হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ লাভ করি। আসলে আমার এই অ্যাডভোকেট হওয়ার পিছনে কী রহস্য ছিল, সেটা আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানই ভালো জানতেন। নিশ্চয়ই তিনি জানতেন যে, ১৯৯০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হবে, আর সে মামলা আমাকেই পরিচালনা করতে হবে। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় সে মামলা পরিচালনার মূল দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী আহমদ আলী সাহেব এবং আমি এই মামলার আইনজীবী ছিলাম। নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ জনাব বাহারুল ইসলাম সাহেবের কোর্টে এ মামলাটি ছিল। যেদিন মামলার শুনানি হয়, তখন অ্যাডভোকেট কাজী আহমদ আলী সাহেব বক্তব্য শুরু করে জজ সাহেবকে বললেন- আমার এই সহকর্মী আইনজীবী বন্ধুও এই মামলার একজন আসামী। তিনি ঢাকা জাতীয় আইন কলেজের (মগবাজার) প্রফেসর। একথা শোনার পর জজ সাহেব বললেন- উনি একজন আইনজীবী এবং ‘ল’ কলেজের প্রফেসর, আবার এই মামলার একজন আসামীও। জজ সাহেব আরো বললেন- তাহলেতো তার বক্তব্য শুনতে হয়। আপনি এ মামলার বিষয়ে যা বলতে চান বলুন। আমি আল্লাহ্ দর্শনসহ প্রতিপক্ষ দলের সূফী সম্রাটের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের জবাব পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে দিতে শুরু করলাম। দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘন্টা পর্যন্ত আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করি এবং সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের আল্লাহ্কে দেখা যে সত্যি ছিল, পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দলিল দিয়ে তা প্রমাণ করতে সক্ষম হই। অপরদিকে আমাদের প্রতিপক্ষ বিজ্ঞ আইনজীবী মাত্র ১৫ মিনিট বক্তব্য দিয়েই সমাপ্ত করেন। আল্লাহর অপার দয়ায় উক্ত মামলার রায় সূফী সম্রাটের পক্ষে আসে। বিজ্ঞ জেলা জজ জনাব বাহারুল ইসলাম তাঁর সুচিন্তিত রায়ে বলেছেন- “দেওয়ানবাগী হুজুর ও তাঁর অনুসারীরা (২৪ জন সহযোগী অভিযুক্ত ব্যক্তি) সকলেই সুশিক্ষিত ও সুফি মতবাদে বিশ্বাসী ধর্মপ্রাণ সুন্নি মুসলমান। তারা পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ইসলাম ধর্ম বিষয়ে প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার উদ্দেশ্যে তাঁরা দণ্ডবিধি বর্ণিত কোনো শাস্তিমূলক অপরাধ করেনি।” আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর ‘আল্লাহ্ কোন পথে?’ নামক বিখ্যাত তাসাউফ গ্রন্থের পরবর্তী সংস্করণে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন- “বিতর্কিত ০৭/০৬/৯০ তারিখে আদেশটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আমার মনোনীত ২ জন ব্যক্তি প্রফেসর মাওলানা আবদুল মান্নান মিয়া (অ্যাডভোকেট) ও মো. ফজলুল হক তালুকদার (ব্যবস্থাপক, প্রচার ও বিতরণ, আত্মারবাণী) নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ-এর আদালত সমীপে ১১৩/৯০ নম্বর রিভিশন মোকদ্দমা দায়ের করেন।” উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্কে দেখা যায়- এ বিষয়ে কোর্টে মামলা দায়ের করার আর কোনো নজির জগতে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর সে মামলায় সূফী সম্রাটের পক্ষেই আদালত রায় প্রদান করেন।


পরবর্তী আরেকটি ঘটনা হলো- সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জনৈক মুরিদ সন্তান, কুমিল্লার বাখরাবাদ এলাকার বাসিন্দা আশেকে রাসুল সাহাজুদ্দীন মাস্টারের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোর্টে ১৯৯৩ সালের ১৭ মার্চ আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়, যার নম্বর-১২/৯৩। এতে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের আল্লাহ্কে দেখার কথাও উল্লেখ ছিল। সে মামলাটিও নারায়ণগঞ্জ কোর্টের মতো আইনজীবী হিসেবে আমাকেই পরিচালনা করতে হয়েছে। সেখানে আমার সাথে কুমিল্লা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জনাব ফজলুর রহমান ছিলেন। আমি যখন কুমিল্লা জজ কোর্টে উপস্থিত হয়েছি, তখন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান সাহেব আমার সম্পর্কে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন- ঢাকা থেকে অ্যাডভোকেট সাহেব এসেছেন, তাকে বসতে দিন। এ কথা বলার সাথে সাথে কুমিল্লা জজকোর্টে অবস্থানরত সিনিয়র আইনজীবীগণ পর্যন্ত উঠে আমাকে একেবারে সামনের আসনে বসতে দিয়েছেন। এ অবস্থা দেখে আমার মনে হয়েছিল যে, আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান কত বড়ো মহান অলী-আল্লাহ্। যিনি আমার মতো একজন নগণ্য ব্যক্তিকে কত সম্মানিত করেছেন। আল্লাহর দয়ায়, এই মামলায়ও আমরা জয়লাভ করি। আল্লাহ্কে যে দেখা যায়, অলী-আল্লাহ্গণ যে আল্লাহ্কে দেখেন, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা এই দুটি কোর্টের রায়েই তা প্রমাণিত হয়েছে।


সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান এর পরে ‘আল্লাহ্কে সত্যিই কি দেখা যায় না?’ নামক একখানা কিতাব প্রণয়ন করে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেন। এতেই শেষ নয়, মহান আল্লাহর জাত-পাক ও সিফাত বা গুণাবলির পরিচয় মানবজাতির কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে তিনি মহান আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআন এবং তাঁর প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.)-এর বাণী পবিত্র হাদিস দিয়ে তাফসীর লেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর সে মোতাবেক তিনি ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক মহামূলবান তাফসীর লিখে আল্লাহর অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তিনি আল্লাহর আকার প্রমাণ করে বলেছেন, আল্লাহ্ নিরাকার নন, তবে তিনি মানুষের মতো রক্ত মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’-এর ১ম খণ্ডে আল্লাহর জাত পাকের পরিচয় তুলে ধরে তিনি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ্কে দেখা যায়। তিনি নিরাকার নন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আল্লাহর অস্তিত্ব ও আকার প্রমাণ করে মহান প্রতিপালক আল্লাহ্কে সমহিমায় তুলে ধরেছেন, যা ইতঃপূর্বে বিশ্বের আর কোনো অলী-আল্লাহ করেননি।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের মহান আল্লাহর জাত ও সিফাতের পরিচয় তুলে ধরে, মোট ৮ খণ্ড তাফসীর প্রনয়ণ করেছেন। মহান আল্লাহর জাত পাক ও সিফাতের বর্ণনা সংবলিত তাফসীর শরীফে প্রায় ১১ হাজার পৃষ্ঠা রয়েছে। এ তাফসীর শরীফ এমন উচ্চমানের তাফসীর কিতাব, যা জ্ঞানী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদের নিকট প্রশংসিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জীবন দর্শন, তাঁর শিক্ষা, সংস্কার ও অলৌকিক কারামত নিয়ে ইতঃমধ্যে বেশ কয়েকজন গবেষক পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। আমিই ছিলাম তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পিএইচ.ডি ডিগ্রিধারী। শুধু তাই নয়, সূফী সম্রাট প্রণীত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’-এর উপরে গবেষণা করেও গবেষকগণ পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

মোহাম্মদী ইসলামের বিরোধিতাকারিদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক প্রেরিত মহাপুরুষগণ সর্বযুগেই একশ্রেণির স্বার্থন্বেষী মানুষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে থাকেন। আল্লাহর প্রিয় হাবিব, ইমামুল মুরসালিন হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কেও কাফের মোশরেকদের যড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে, অথচ তিনি সকল নবি রাসুলের ইমাম বা নেতা। কাফের মোশরেকেরা ষড়যন্ত্রের জাল এমনভাবে বিস্তার করেছিল যে, মসজিদে জিরার নামক একটা মসজিদ বানিয়ে, কতিপয় মোনাফেক মুসলমানকে দিয়ে হযরত রাসুল (সা.)-কে সেখানে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দেয়। হযরত রাসুল (সা.) সরল মনে ঐ মসজিদে যেতে রাজী হলেন। এদিকে কাফের মোশরেকরা গোপনে পরামর্শ করল যে, সেখানে এলে তারা রাসুল (সা.)-কে হত্যা করবে। মহান আল্লাহ্ তাঁর হাবিবকে সেখানে যেতে নিষেধ করলেন। শুধু তাই নয়, মসজিদে জিরার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। হযরত রাসুল (সা.) আল্লাহর নির্দেশেই ঐ মসজিদে জিরার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সাহাবিদের হুকুম দিলেন। সাহাবায়ে কেরাম তা পালন করলেন। বিষয়টি পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বর্ণনা করেছেন। এভাবেই প্রতি যুগে আল্লাহর অলীগণের বিরুদ্ধেও একশ্রেণির দুষ্ট পরায়ণ লোক বিরোধিতা করেছে, আজো করছে।


আল্লাহর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের মতো একজন মহান অলী-আল্লাহর বিরুদ্ধেও একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী কুচক্রী লোক বিরোধিতা শুরু করে। যার চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৯৯ সালের বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে। তবে সবসময়ই দেখা গেছে, অলী-আল্লাহর বিরোধীরা যতই শক্তিশালী হোক, তারা সাময়িক বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না। কারণ অলী-আল্লাহ্গণ হলেন হক বা সত্য, আর তাদের বিরোধিরা হলো বাতিল বা মিথ্যা। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের বিরোধিতাকারীদের অবস্থাও তদ্রুপ হয়েছে।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান কোনো এক জলসায় বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে এক জ্বালাময়ী ভাষণে বলেন- হুজুররা! দেওয়ানবাগীর বিরুদ্ধে লেগেছেন হিরো হওয়ার জন্য। আমি আপনাদের জিরো বানিয়ে দেবো। আপনারা আমার ধর্ম প্রচার সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন- দেখেন, আগামী ৫ বছর পরে কার ধর্মীয় আদর্শ টিকে থাকে? আপনাদের, না দেওয়ানবাগীর? আল্লাহর মহান বন্ধু যা বলেছেন, তা আল্লাহ্ কবুল করেছেন। ঠিকই ৫ বছর যেতে হয়নি, সূফী সম্রাটের বিরোধিতাকারীদের আল্লাহ্ সত্যিই জিরোতে নামিয়ে দিয়েছেন। তাদের অনেকের দেশ দ্রোহীতার অপরাধে ফাঁসিও হয়েছে।

কিন্তু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলামের প্রচার থেমে নেই, বরং ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। যারা বিরোধিতা করেছিল, তাদের অনেকেই এসে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহর অপার দয়ায় পৃথিবীর শতাধিক দেশে আজ গুরুত্বের সাথে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের আহ্বান’ নামে একটা বিজ্ঞাপন দীর্ঘদিন ধরে প্রচারিত হয়েছে, যা দেখে মানুষ অভিভূত হন। এতে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে দেখা গেছে, তিনি তাঁর শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং পরে দেখা গেছে লক্ষ লক্ষ লোকের নামাজের বিশাল জামাত। এত লোক একত্রে জামাতে নামাজ আদায় করছে, এমন চিত্র আর কোথাও দেখা যায় না। তাই সাধারণ মানুষ এবং আলেম ওলামা সকলেই এ দৃশ্য দেখে সূফী সম্রাটের প্রশংসা করেছেন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান যখন যা বলেছেন, তা মহান আল্লাহ্ বাস্তবায়িত করেছেন। তাঁর কোনো বক্তব্য থেকে তিনি পিছু হটেননি। কারণ, তিনি আল্লাহর বন্ধু। সুতরাং তিনি যা বলেছেন এবং করেছেন, সবই আল্লাহর নির্দেশেই করেছেন। তিনি স্পষ্ট করেই বলতেন, যিনি অলী-আল্লাহ্, তাঁর সঙ্গে আল্লাহর যোগাযোগ থাকতে হয়। যোগাযোগ বিহনে কেউ অলী-আল্লাহ্ হতে পারে না। করলে সেটা মিথ্যা দাবী বৈ কিছু নয়। আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান চরম অবস্থার মধ্যেও, যারা তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে, তিনি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি, বরং অত্যন্ত জোড়ালো ও তীব্র ভাষায় তাদের বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। আজো বিভিন্ন মাধ্যমে তখনকার সেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া বক্তব্য প্রচার হয়ে থাকে, যা প্রমাণ করে সূফী সম্রাটের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ্ প্রদত্ত শক্তি। ফলে তিনি এত বলিষ্ঠ বক্তব্য দিতে সক্ষম। সে কারণেই কোনো বাতিল শক্তি তাঁর মোকাবেলা করতে সাহস পায়নি। আল্লাহর শক্তি ও নির্দেশেই তিনি মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করেছেন।
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]

সম্পর্কিত পোস্ট