Cancel Preloader

সম্পাদকীয়

ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। সৃষ্টির সূচনা থেকে পবিত্র এ মাসের ১০ তারিখ নানা স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়। এ তারিখে বিশ্বজাহানের মহান স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামিন প্রতিপালক হিসেবে আরশে সমাসীন হন, তাই এই তারিখের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যধিক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও জমিন ৬ দিনে, তারপর তিনি সমাসীন হন আরশে, তিনি পরিচালনা করেন প্রতিটি কাজ।” (সূরা ইউনুস ১০: আয়াত ৩) হযরত ইকরামা (রহ.)-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা আসমান ও জমিন এবং এ দু’য়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে, তা (সবকিছু) সৃষ্টির সূচনা করেছেন রোববার দিন। অতঃপর তিনি (সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত করে) শুক্রবার (আশুরার দিনে) আরশে সমাসীন হয়েছেন।” (তাফসীরে দুররে মানছুর ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৭২)

পবিত্র আশুরার দিনটি মহান স্রষ্টার অভিষেকের দিন হিসেবে অত্যন্ত আনন্দের দিন এবং সৃষ্টির জন্যও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। তাই আশুরার দিনটি যথাযথ মর্যাদার সাথে উদ্যাপন করা সকলের জন্য অপরিহার্য। এই দিনটি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও প্রেমপূর্ণ আবেগ-অনুভূতির সাথে পালন করলে স্রষ্টার অবারিত রহমত লাভ হবে। আশুরার দিনটি কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা জাতির জন্য নয়, এ দিনটি কুল কায়েনাতের সবার জন্য অবারিত রহমত পাওয়ার দিন। এ দিনই মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয় এবং পরবর্তীতে এ দিনেই তাঁকে প্রতিনিধি করে দুনিয়াতে পাঠানো হয়। এছাড়া আশুরার পবিত্র দিবসে আদম (আ.)-এর অপরাধ ক্ষমা করা হয়। এ পবিত্র দিনে মহাপ্লাবনকালে হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা তাঁর অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল। পবিত্র আশুরার দিনেই হযরত ইব্রাহিম (আ.) ভূমিষ্ঠ হন এবং এদিনে তিনি নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার পান। পবিত্র আশুরার দিবসে হযরত আইউব (আ.) রোগমুক্ত হন। এ দিনে হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং ৪র্থ আসমানে উত্থিত হন; হযরত দাউদ (আ.) মহান আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পান; হযরত সোলায়মান (আ.) তাঁর হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন; হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট হতে মুক্তি পান; হযরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর হারানো পুত্র হযরত ইউসুফ (আ.)-কে ৪০ বছর পর ফিরে পান। পবিত্র আশুরার দিনে ফেরাউনের মু’মিনা স্ত্রী বিবি আছিয়া (আ.) শিশু মুসা (আ.)-কে গ্রহণ করেন; আবার এ দিনে হযরত মুসা (আ.) স্বীয় অনুসারীদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন, অন্যদিকে খোদাদ্রোহী ফেরাউন সদলবলে লোহিত সাগরে ডুবে মারা যান। পবিত্র আশুরার দিবসে ২ হাজার নবি ও রাসুলের শুভ জন্ম হয়। আশুরার বরকতময় দিনের উসিলায় বহু নবি-রাসুল আপদ-বিপদ হতে রক্ষা পান। আশুরা হলো বান্দাদের জন্য আল্লাহর নিকট চাইবার এবং পাবার দিন।


আশুরার দিনটি আশেকে রাসুলদের নিকট সবচেয়ে স্মরণীয় ও হৃদয়বিদারক, কেননা এ দিনেই দুরাচারী এজিদ বিন মুয়াবিয়ার নির্দেশে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, আমিরুল মু’মিনিন শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও নবিনন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রা.)-এর হৃদয়ের ধন ইমাম হোসাইন (রা.)-কে সপরিবারে কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শহিদ করা হয়। ইমাম হোসাইন (রা.) মাত্র ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে এজিদের ২২ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধ করে শাহাদত বরণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি সত্য ও ন্যায়ের জন্য আত্মত্যাগের এক সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১০ই মহররম পবিত্র আশুরার দিবসে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য দেওয়ানবাগ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় মোহাম্মদী ইসলাম হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে এবং বিশ্বময় হযরত রাসুল (সা.)-এর ধর্মের নবজাগরণ সূচিত হয়েছে। প্রতিবছর মহান আল্লাহর অভিষেকের অনুষ্ঠান এবং দেওয়ানবাগ শরীফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেওয়ানবাগ শরীফে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য যে, পূর্বে ধারণা ছিল পবিত্র আশুরা শুধুমাত্র শিয়াদের অনুষ্ঠান। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান এ ভুল ধারণা সংশোধনের জন্য ১৯৮৫ সালে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সংবলিত লক্ষ লক্ষ হ্যান্ডবিল সর্বসাধারণের নিকট বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এতে মানুষের মাঝে পবিত্র আশুরার জাগরণ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৫ সাল থেকে আশুরার দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করে থাকে।

পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা তিনি যেন দয়া করে আমাদের সকলকে তাঁর অভিষেকের অনুষ্ঠান যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক ভিক্ষা দিন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট