Cancel Preloader

সূফী সম্রাটের দয়ায় আকস্মিক বিপদ থেকে রক্ষা

শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী: মহান রাব্বুল আলামিন প্রেরিত মহামানব তথা নবি, রাসুল ও আউলিয়ায়ে কেরামকে জগতে প্রেরণ করে মানব জাতিকে শান্তির পথ দেখিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন। বুদ্ধিমান তারাই, যারা সতর্ক হয় এবং সুসংবাদ গ্রহণ করে। আর মহান আল্লাহ্ নবি ও রাসুলের ক্বালবে ওহি নাজিল করে তাঁদের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা এবং আদেশ-নিষেধ স্বীয় বান্দাদের জানিয়েছেন। নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগেও যুগের ইমাম, মোজাদ্দেদ ও আউলিয়ায়ে কেরাম প্রেরণ করে সেই ধারা তিনি এখনও অব্যাহত রেখেছেন। নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণ আল্লাহর দেওয়া মু‘জিজার মাধ্যমে সমকালীন যুগের মানুষের নিকট প্রমাণ করেছেন যে, তাঁরা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত মহামানব। কারণ, মু‘জিজা ছিল তাঁদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দলিলস্বরূপ। তেমনিভাবে বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ ও বালা মুছিবতে পড়ে আল্লাহর দয়া এবং সাহায্য লাভ করে থাকেন। তেমনি মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের উসিলায় প্রতিনিয়ত মানুষ মহান আল্লাহর দয়া ও সাহায্য লাভ করেছেন।


আমি শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু) এবং আমার দুই বন্ধু মো. সালাহ্উদ্দিন (রতন) ও মো. আওলাদ হোসেন (খোকন) এবং সাথে বন্ধু রতনের ছোটো ভাই মো. আলাউদ্দিন (স্বপন)-সহ মোট চারজন যেভাবে আকস্মিক বিপদ থেকে রক্ষা পেলাম, সেই অলৌকিক ঘটনা এখানে উপস্থাপন করা হলো-
২০০৫ সালের ঘটনা। আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের আহ্বাবানে ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাবে বরকত দরবার শরীফে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই এতে অংশগ্রহণ করব। দয়াল বাবাজান নিজেই সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। যার কারণে আমাদের উৎসাহের পরিমাণ হাজার গুণ বৃদ্ধি পায়। মোর্শেদের সাথে সফরসঙ্গী হওয়ার মতো সৌভাগ্য সবসময় হয় না। সুতরাং আমরা একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করলাম। সেই কাক্সিক্ষত অনুষ্ঠানের দিন কবে আসবে, সেজন্য আমাদের অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছিল না।


নির্ধারিত দিনে আমরা সবাই একত্রিত হলাম। গাড়ির চালক যথারীতি ভোর ৬টার মধ্যে গাড়ি নিয়ে বাবে রহমতের সামনে উপস্থিত হলেন। সে সময় দয়াল বাবাজানের সাথে বাবে বরকত যাওয়ার জন্য অসংখ্য আশেকে রাসুল উপস্থিত হলেন। কেউ প্রাইভেট কার, কেউ মাইক্রো বাস এবং কেউ বাসে একসাথে রওয়ানা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। বাবাজান নির্ধারিত সময়ে বাবে রহমতের সামনে চলে আসলেন এবং ভোর ৬.৩০ মিনিটের দিকে বাবাজানের গাড়ির বহরের পিছনে আমাদের গাড়িটি রওয়ানা হলো। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। প্রায় দুই শতাধিক গাড়ি একসাথে সুশৃঙ্খলভাবে রওয়ানা হলো। যাওয়ার পথে উত্তরায় আশেকে রাসুল ভাইয়েরা বাবাজানকে ফুল মোবারক দিয়ে সংর্বধনা দিলেন। পরবর্তীতে টঙ্গী ও গাজীপুরে আশেকে রাসুলগণ দয়াল বাবাজানকে ফুল মোবারক দিয়ে সেখানেও সংবর্ধনা দিলেন। মোর্শেদের প্রতি মুরিদের যে ভালোবাসা, তা নিজ চোখে আমরা অবলোকন করলাম, যা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।


এভাবে পথিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দয়াল বাবাজানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বাবাজান ত্রিশালের বাবে বরকত দরবার শরীফে পৌঁছালে, জগৎশ্রেষ্ঠ মহামানবকে দেখার জন্য দুই সারিতে দাঁড়িয়ে এলাকার আশেকে রাসুলগণ ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। বাবাজান পৌঁছানোর পরে গানে গানে মুখরিত হয়ে উঠলো বাবে বরকত এলাকা। বাবাজান আশেকেদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বাবে বরকত দরবার শরীফে প্রবেশ করলেন। আমরা সকাল ৮.৩০ মিনিটে দরবার শরীফে পৌঁছলাম। সেখানকার মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ। সবাইকে পানি এবং সরবত দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। আমাদের গাড়িটি নির্ধারিত পার্কিং স্থানে রেখে আমরা হেঁটে দরবার শরীফের দিকে রওয়ানা হলাম। শীতের সকাল খুবই অন্যরকম লাগছিল। তাছাড়া ধান ক্ষেত, সবজির বাগান, পুকুর সবকিছুই দয়ার বাবাজানকে বরণ করার জন্য সুসজ্জিত হয়ে আছে। দরবারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদেরকে অভিভূত করেছে। দরবারে পৌছানোর পর আমরা সকালের নাস্তা খেলাম। তারপর আমরা দরবারের বাইরে চলে আসলাম এবং সেখানে পাশে যে ব্রহ্মপুত্রের শাখা খিরু নদী আছে তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম এবং আলেমদের বয়ান শুনতেছিলাম।


সম্মেলন চলাকালীন সাড়ে এগারোটার দিকে দয়াল বাবাজানের সাথে দেখা করার জন্য আমাদেরকে বলা হলো। আমরা সবাই বাবাজান যেখানে কুরসি মোবারকে বসেন, ঠিক সেখানে চলে আসলাম। এক এক করে আমাদের সাথের জাকের ভাইয়েরা বাবাজানকে কদমবুসি করছে, আমিও গেলাম। বাবাজানের কদম মোবারকে স্পর্শ করার পর মনে হলো আমার ভিতরে কম্পন অনুভূত হলো। বাবাজান আমার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে রইলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি মনে মনে আজিজি করছিলাম, আমার কি কোনো ভুল বেয়াদবি হলো? আমি যখন বাবাজানের কদমে চুম্বন করলাম, তিনি আমার দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। মনে হলো যেন ঝড়ের পরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি আনন্দিত হয়ে চলে আসলাম। বাদ জুমা দয়াল বাবাজানের বাণী মোবারক প্রদান করেন এবং মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। আমরা তাবারুক খেয়ে গাড়িতে উঠলাম।


সম্মেলন শেষে গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করল। দয়াল বাবাজান এবং তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত গাড়ির পরেই আমাদের গাড়িটি ছিল। গাড়িটি ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত অতিক্রম করল। আমরা মোর্শেদ কেব্লাজানের প্রেমের ফায়েজের কথা এবং তাঁর ভালোবাসার কথা বলছিলাম। এরই মধ্যে আমাদের গাড়ির বহরটি থেমে গেলো। কেন থামলো কেউ কিছু বলতে পারছে না। বাবাজানের গাড়ি এবং নিরাপত্তার গাড়ি আগেই চলে গেছে। আমরা শুনতে পেলাম কোথায় যেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে আমরা যারা বহরের মধ্যে ছিলাম সবাই আটকে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আমাদের কিছু আশেকে রাসুল ভাই, যারা সামনে ছিল, তারা এসে জানালো যে, দুর্ঘটনায় স্থানীয় একটি লোক আহত হয়েছে। যার কারণে সেখানকার লোকজন আমাদের গাড়িগুলি থামিয়ে রেখেছে এবং আমাদের গাড়িতে আক্রমণ চালাচ্ছে। এ কথা শুনার পর আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। দেখলাম কিছু লোক খুব চিৎকার করে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমাদের ড্রাইভার বললো- স্যার এখানে থাকা ঠিক হবে না। আমরা বরং বহর থেকে বের হয়ে পাশের কোথাও থাকি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা চলে যাবো। পরবর্তীতে বহর থেকে যে যেভাবে পারে বের হয়ে যেতে লাগল। আমরা পাশেই একটি বাড়ির সামনে আমাদের গাড়িটি রাখলাম। গাড়িটির সামনের সিটে আমি ড্রাইভারের পাশে বসা ছিলাম। হঠাৎ দেখি কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। এর মধ্যে এক জনের হাতে একটি বড়ো ইট নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। সে গাড়ির সামনে এসে আমাদের দিকে ইটটি ছোড়ার জন্য টার্গেট করল। এমতাবস্থায় মোর্শেদের চেহারা মোবারক খেয়াল করে ‘দরুদে মাহদী’ জোরে জোরে পাঠ করতে শুরু করলাম। দেখি লোকটি বড়ো একটি ইট উচিয়ে আমাদের দিকে চেয়ে আছে, কিন্তু আল্লাহর কী রহমত এবং মোর্শেদের কী দয়া ইটটি সে গাড়ির দিকে ছুঁড়ে মারছে না। সে যেন কেমন দিকভ্রান্ত হয়ে গেছে। আমার তখন মনে হচ্ছিল মোর্শেদ তাঁর নুরানিময় হাত মোবারক দিয়ে আমাদের রক্ষা করছেন। লোকটি কিছুক্ষণের মধ্যে ইটটি হাতে নিয়ে সেখান থেকে উদ্ভ্রান্তের মতো চলে গেলো। আমারা বিপদ থেকে রক্ষা পেলাম।

পরবর্তীতে একজন বয়স্ক ব্যক্তি এসে আমাদেরকে বললেন, এখানে থাকা আপনাদের জন্য নিরাপদ নয়। আপনারা গ্রামের ভিতরে চলে যান। আমরা তার কথা অনুযায়ী গ্রামের ভিতর চলে গেলাম। সেখানে একজনের বাড়িতে আমাদের গাড়িটি রাখলাম। সেখানে বয়স্ক একজন কৃষক আসলেন এবং আমাদেরকে ডাবের পানি ও শীতের পিঠা দ্বারা আপ্যায়ন করলেন। পরবর্তীতে প্রায় ৪০ মিনিট পর আমরা পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেলাম।


অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহর গুণে গুণী। তাই তাঁরা তাঁদের ভক্তের বিপদ আপদে যে কোনো অবস্থায় দয়ার হাত প্রসারিত করে দেন। এ ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করে। আকস্মিক বিপদ থেকে মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান দয়া করে আমাদের সবাইকে রক্ষা করেন।
পরবর্তীতে আমরা সবাই মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী দয়াল বাবা কেব্লাজানের কাছে ঘটনাটি জানাই এবং তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন করি।
[ইসলাম বিষয়ক লেখক]

সম্পর্কিত পোস্ট