অর্থ উপার্জনের জন্য বিদেশ যেতে হলো না
আশেকে রাসুল হাজী মো. তুহিনুর রহমান (নূরু), পিতা-মৃত হাজী মো. রহমত আলী, রাজধানী ঢাকার ৩০৯/এ দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির অধিবাসী। আল্লাহ্ ও আল্লাহর বন্ধুর অপার দয়ায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় তাকে অনেকেই ‘নূরু হাজী’ নামে পরিচিত। তিনি ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের কাছ থেকে মোহাম্মদী ইসলামের সবক গ্রহণ করেন।
যদিও তিনি ২০১৬ খিষ্ট্রাব্দের ২১ মার্চ, সোমবার বাবে রহমতে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করছে, তার জীবনে ঘটে যাওয়া অবিশ্বাস্য এ অলৌকিক ঘটনাটি ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসের। ঘটনাটি ছিল এ রকম-তিনি তখন ২৫ বছর বয়সী যুবক। ঢাকার স্থানীয় অধিবাসী হওয়ায় তার অনেক বন্ধু ছিল, যাদের অনেকেই অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে একে একে জাপান, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকায় চলে যাচ্ছিল। তিনিও বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অতঃপর টাকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তার মায়ের একটি জমি দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করলেন। মোটামুটি টাকা সংগ্রহ হয়ে গেলে তিনি তার মুর্শেদ যুগের ইমাম বাবা দেওয়ানবাগীর কাছে এসে, বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আল্লাহর বন্ধুর দয়া প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন-ঠিক আছে, চেষ্টা করেন, আর দেখেন আল্লাহ্ কি করেন! তারপর তিনি ও তার বন্ধু সরোয়ার হোসেন স্বপন একসাথে পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন করলেন। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সর্বশেষ যখন টিকেট ও ডলার ক্রয় করবেন, ঠিক তখনই তিনি তার বন্ধুকে নিয়ে মতিঝিলের আরামবাগে আসেন।
উল্লেখ্য, তখন মুর্শেদ কেবলাজান ১৫৪ আরামবাগে থাকতেন। উদ্দেশ্য, যুগের ইমাম বাবা দেওয়ানবাগীর সাথে সাক্ষাৎ করে শেষ বারের মতো দয়া চেয়ে নেওয়া। এদিকে তার বন্ধু তার সাথে আসলেও, দোতলায় উঠলো না, সে বলল-তুমি যাও দয়াল বাবাজানের কাছে, আমি নিচে আছি। তিনি দোতলা চলে আসলেন। মহান মুর্শেদ যুগের ইমাম বাবা দেওয়ানবাগীকে কদমবুসি করার সাথে সাথে তিনি জিজ্ঞেস করলেন- “কি নূরু মিয়া, কিছু বলবেন?” নুরু হাজী বললেন- “বাবা! জাপানে যাওয়ার ব্যাপারে সব আয়োজন সম্পন্ন করেছি, এখন টিকেট ও ডলার কিনতে যাব, আমাকে দয়া করেন।” তার এ কথাশুনে বাবাজান রাগ করলেন, ফলে তিনি অনেকটা থ হয়ে গেলেন। বিষয়টি তিনি মোটেই পছন্দ করলেন না। অতঃপর বললেন- অর্থের জন্য বিদেশে যাবেন? বিদেশে আল্লাহ্ আছে, দেশে আল্লাহ্ নেই? যিনি বিদেশে দিতে পারেন, তিনি দেশে দিতে পারেন না? যান মিয়া, বাসায় যান। আপনার বিদেশে যাওয়া লাগবে না। দেখেন, আল্লাহ্ কি করেন।
মহান মুর্শেদের এরূপ নির্দেশের প্রেক্ষিতে তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে আসলেন। তার বন্ধুকে বলল -“আমি বিদেশে যাবো না, তুমি যাও।” অতঃপর তাকে বিদায় দিয়ে সোজা যাত্রাবাড়ির বাসায় চলে গেলেন। বাসায় যাবার পর তার বোনেরাসহ পরিবারের সকলেই বলতে লাগল- তোমাকে বিদেশে যেতে হবে না, তুমি বিদেশে যাবে না। কি আশ্চর্য! এতদিন সবাই উৎসাহ দিয়েছে, আর এখন সবাই বাধা দিচ্ছে। অথচ বাবাজানের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তিনি তখনো তাদের বাসায় কাউকে জানাননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আরামবাগ থেকে যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছার পূর্বেই আল্লাহর বন্ধুর সিদ্ধান্ত আল্লাহ্ তার পরিবারের লোকদের অন্তরে পৌঁছে দিয়েছেন! যাই হোক বিদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জনের মিশন এখানেই থেমে গেল। কিন্তু তখনো বুঝতে পারেনি। তিনি অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ঐ দিনই সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ির একটি মার্কেটের ২য় তলায় বসে আছেন। হঠাৎ দেখেন তার এক ফুপাত ভাই হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছে। তাকে দেখামাত্রই বলল-তার পিতা অর্থাৎ তার ফুপা তাকে এখনই দেখা করতে বলেছে। ফুপার বয়স তখন ১১২ বছর। তারা আগে থেকেই তাকে নিয়ে শংকিত ছিল। জানতে পারলেন তার শারীরিক অবস্থা ভালো না। তিনি তার কাছে ছুটে গেলেন। কিন্তু গিয়ে দেখলেন ঘটনা উল্টো। ফুপা তাকে বললেন-“আমার একটা জায়গা আছে, তুমি এটি নিয়ে নাও। আমার টাকার খুব দরকার।” তার ফুপা পাঁচ লক্ষ টাকা দাবী করলেও তাকে মাত্র দু’লক্ষ টাকায় জায়গা দিয়ে দিলেন। তার কাছে তখন এক লক্ষ বারো হাজার টাকা ছিল। তিনি এক লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়ে বাকী বারো হাজার টাকায় বালু ভরাট করেন। আশ্চর্যের ব্যাপার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ঐ জমি ১২ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়ে যায়! এভাবেই তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। অতঃপর মহান আল্লাহ্ তাকে একের পর এক ব্যবসারা সাফল্য দান করেন, যা ছিল অকল্পনীয়!
এদিকে আরো একটি ঘটনা ঘটেছিল। ব্যবসা শুরু করার কিছুদিন পর তিনি মহান মুর্শেদ যুগের ইমাম বাবা দেওয়ানবাগীর সহবতে একটি শক্ত কাঠ নিয়ে হাজির হয়। তিনি তখন নিয়মিত শরীর চর্চা করতেন এবং মার্শাল আর্ট শিখতেন। তাই তার হাতের বাহু, পেশীমূল খুব শক্ত করে বাবাজানকে অনুরোধ করে, “বাবা! আপনি যদি দয়া করে আমার বাহুতে শক্ত করে একটি বাড়ি দেন, আমার কিছুই হবে না।” বাবাজান তার ছেলেমানুষী দেখে মুচকি হেসে দিয়ে বললেন-“আমি বাড়ি দিলে তো আপনার হাতের হাড় ভেঙ্গে যাবে।” নুরু হাজী বললেন- “বাবা! আপনার দয়ায় ভাঙ্গবে না, দয়া করে আমাকে এ কাঠ দিয়ে একটি বাড়ি দেন না!” নুরু হাজীর বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে যুগের ইমাম বাবা দেওয়ানবাগী তার বাহুতে কাঠ দিয়ে আঘাত করেন। মুহুর্তেই তিনি কদম মোবারকে জড়িয়ে ধরে বলেন- “বাবা! আমি শুনেছি আল্লাহর অলী-বন্ধু যদি কাউকে একটা ধমক দেয়, কিংবা কোনো প্রকারে কোনো আঘাত করে, তবে এতেও রহমত পাওয়া যায়। এর বিনিময়ে ঐ ব্যক্তির কোনো মুসিবত দূর হয় অথবা ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায়। বাব! আপনি তো আমাকে এ শক্ত কাঠ দ্বারা আঘাত করেছেন, দয়া করে আমাকে কিছু দেন।” মহান মুর্শেদ তার কথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন- আপনি কি চান? তিনি বললেন-“বাবা! আপনি আমাকে সম্পদশালী ধনী বানিয়ে দেন, আমার টাকার দরকার।” বাবাজান বললেন- “আপনি বরং আমার কাছে ইমান চান, আল্লাহ্ আমাকে এ নিয়ামত দান করেছেন যে, আমি আপনাকে ইমানের ধনে ধনী বানিয়ে দেই।” তিনি বললেন-“বাবা! আপনার দয়ায় আমি আল্লাহ্ ও আল্লহর রাসুলকে বিশ্বাস করি। আপনি দয়া করে আমাকে টাকা-পয়সা দান করেন, তবে আমি খুবই উপকৃত হব।” মহান মুর্শেদ দ্বিতীয়বারও তাঁর কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। কিন্তু এবারো তিনি নাছোড়বান্দা! অবশেষে তৃতীয়বার বাবাজান বললেন- ‘ঠিক আছে, যান। আপনার অর্থ সম্পদ হবে।’ মহান মুর্শেদের এ অমিয় বাণী মোবারক বুকে ধারণ করে তিনি বাসায় চলে যান।
যুগের ইমাম বাবা দেওয়নবাগীর অপার দয়ায় সেদিন থেকে তিনি যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পেয়েছেন। যে ব্যবসায় তিনি হাত দিয়েছেন, অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। এভাবেই তার অভাব দূর হয়ে গেল। মহান আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুর বরকতে তাকে অঢেল ধন-সম্পদ দান করেছেন- আলহামদুলিল্লাহ। তার এই উন্নতি দেখে যাত্রাবাড়ির স্থানীয় অনেক লোকেই তাদের নিজস্ব ভাষায় বলে থাকে- ‘নূরু হাজীকে দেওয়ানবাগী উঠাইয়া দিছে, সে যে ব্যবসায়ই হাত দেয়, তাতেই অর্থে লাল হয়ে যায়।’ কেউ কেউ বলে- ‘দেওয়ানবাগী নূরু হাজীকে এমন জিনিস দিয়েছে যে, সে ছাই ধরলে সোনা হয়ে যায়।’