Cancel Preloader

যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
(পর্ব-৩৬)
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ওফাত
মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২০ইং সোমবার ভোর ৬টা ৪৮ মিনিটে তাঁর কোটি কোটি ভক্ত ও মুরিদ সন্তানদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে, ৭১ বছর বয়সে ওফাত লাভ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। প্রাণপ্রিয় মোর্শেদ এবং আত্মার পিতার এই আকস্মিক তিরোধানের খবর পেয়ে দেশ ও বিদেশের আশেকে রাসুল জাকেরবৃন্দ গভীর শোকাহত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেসময় বিশ্বের করোনা মহামারির মধ্যেও সারাদেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল মুরিদ সন্তান রাজধানী ঢাকার বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে এসে উপস্থিত হন। তারা প্রাণপ্রিয় মোর্শেদ কেব্লাজানকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন।


সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের দেহ মোবারকের কফিন মোবারক বিকাল ৪টার দিকে বাবে রহমতের নিচ তলায় মসজিদে ভক্তবৃন্দের দেখার উদ্দেশ্যে রাখা হয়। এ সময় সারিবদ্ধভাবে আশেকে রাসুল জাকেরবৃন্দ মহান মোর্শেদ দয়াল বাবাজানকে দেখে উচ্চস্বরে বিলাপ করতে থাকেন। বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অগণিত মানুষ এই মহামানবকে শেষবারের মতো দেখে তাদের তাপিত হৃদয়কে কিছুটা শীতল করার সুযোগ পান। দরবার শরীফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানের নামাজে জানাজা পরের দিন ২৯শে ডিসেম্বর, মঙ্গলবার বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে এবং মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বপার্শ্বে অবস্থিত বাবে মদীনা, দেওয়ানবাগ শরীফে তাঁর সহধর্মিণী হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-এর রওজার পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে। সেই মোতাবেক তাঁর রওজা শরীফ প্রস্তুতের কাজও শুরু হয়। মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর থেকে পুনরায় লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল দয়াল বাবা কেবলাজানকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। সকালে সূফী সম্রাটের কফিন মোবারক বাবে রহমতের নিচ তলায় মসজিদে রাখা হয়। তখন থেকে জোহরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল প্রাণপ্রিয় মোর্শেদকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ পান।


বাদ জোহর তাঁর নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য আরামবাগ, ফকিরাপুল ও কমলাপুর-সহ গোটা মতিঝিল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। জোহরের নামাজ শেষ হওয়ার পরে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজে ইমামতি করেন সূফী সম্রাটের জ্যেষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ এফ এম নূর-এ-খোদা আল আজহারী (মা. আ.) হুজুর। তাঁর নামাজে জানাজায় দেশের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বহু আলেম ওলামাসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ এই জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ করেন। জানাজা নামাজের পূর্বে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের একটি অছিয়তনামা পাঠ করে শোনান কনিষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ এফ এম মঞ্জুর-এ-খোদা (মা. আ.) হুজুর। উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান তাঁর ওফাতের পূর্বে তাঁর ৪ সাহেবজাদাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ডেকে কিছু অছিয়ত করে যান। সেই অছিয়তনামার আলোকে সূফী সম্রাটের ৪ সাহেবজাদা লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে তাদের কাছে মোর্শেদের করে যাওয়া শেষ অছিয়তের বর্ণনা দেন। এতে সকল আশেকে রাসুল মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাটের নির্দেশনা জানতে পেরে আশ্বস্ত হন এবং ৪ সাহেবজাদার সাথে সম্মিলিতভাবে দয়াল মোর্শেদ কেবলাজানের রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলাম ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হন।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জানাজা শেষে একজন দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সূফী সম্রাটের নামাজে জানাজা এবং গার্ড অব অনার অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে দেশ বিদেশের আশেকে রাসুল ভক্ত মুরিদানকে লাইভ প্রোগ্রামে দেখানো হয়। সূফী সম্রাটের জানাজা ও গার্ড অব অনার শেষে বাবে মদীনা দরবার শরীফে তাঁর সহধর্মিণী হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-এর পাশে সমাহিত করা হয়।
উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সব সময়ই বলতেন, আমার দরবারে কোনো পির হবে না। আমার ৪ সাহেবজাদাই হবে ইমাম। কেননা, আমি কোনো তরিকা প্রচার করি না। আমি মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করি। মোহাম্মদী ইসলামে কোনো পির হওয়ার সুযোগ নেই। সূফী সম্রাটের ওফাতের পরে তাঁর অছিয়তনামায় তাঁর ৪ সাহেবজাদাকে তিনি ইমাম হিসেবে যার যার দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেন এবং মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরকে নেতৃত্ব করার নির্দেশনাও দিয়ে যান।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের পবিত্র ফাতেহাখানি
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের প্রিয় বন্ধু, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) দয়াল বাবা কেবলাজানের পবিত্র ফাতেহাখানি অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে ঢাকার বাবে রহমত কেন্দ্রীয় দরবার শরীফে ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ইং শুক্রবার বিশেষ আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিলের আয়োজন করা হয়। রওজা শরীফ জিয়ারত পরিচালনার পর আখেরি মোনাজাত করেন মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর।
সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের চেহলাম অনুষ্ঠানটি দেশ ও বিদেশের অসংখ্য আশেকে রাসুল ভক্তগণ দেখার সুযোগ পান। দয়াল বাবাজানের অছিয়ত মোতাবেক ইমামগণের ৩ জনই মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে তাঁদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।


সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান তাঁর ওফাতের পূর্বেই তাঁর ৪ জন সাহেবজাদা ও ২ জন সাহেবজাদির সামনে অছিয়ত করে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম কীভাবে চলবে, তা বলে গেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি, ২০২১ইং, শুক্রবার বাবে রহমতে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের ফাতেহাখানি উপলক্ষ্যে আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়। তখন সূফী সম্রাটের ৪ জন সাহেবজাদা দয়াল বাবাজানের নির্দেশনা এবং অছিয়তনামার কথা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেই কারণেই তাঁর জানাজা নামাজের পরে তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করা হয়। গার্ড অব অনার অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব প্রদান করন ম্যাজিস্ট্রেট আশেকে রাসুল মোশারেফ হোসাইন। অপরদিকে তাঁর ওফাত লাভে শোকাহত হয়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও শিক্ষকবৃন্দ শোকবার্তা জানান।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সর্বশেষ অছিয়তনামা কনিষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. মঞ্জুর-এ-খোদা হুজুর উপস্থিত লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুলদের উদ্দেশে পাঠ করে শুনান। এর ফলে সকল আশেকে রাসুল ভক্ত মহান মোর্শেদ সুফী সম্রাটের দিক নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে পেরে আশ্বস্ত হন। তারা ৪ সাহেবজাদার সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে দয়াল মোর্শেদ কেবলাজানের রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলাম ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য অঙ্গীকার করেন।
সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের পবিত্র ফাতেহাখানি উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে সর্বশেষে বক্তব্য পেশ করেন সূফী সম্রাটের মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর । তিনি তাঁর আলোচনায় আশেকে রাসুল ভক্তবৃন্দকে কিছু দিক নির্দেশনা দেন। ড. মেজো হুজুর বলেন- মোর্শেদ কেবলাজান আমাদের ৪ ভাইকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, আমরা যেন সম্মিতিলভাবে তাঁর আদর্শ ধরে রাখি। এক শ্রেণির মোনাফেক দয়াল বাবাজানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে আশেকে রাসুলদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে, কিন্তু তা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন- মোনাফেকরা ফেসবুক ও ইউটিউবে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান এবং আমার সম্পর্কে যতই অপপ্রচার করুক না কেন, দেওয়ানবাগীর মুরিদকে ইমানহারা করা এত সহজ নয়। মনে রাখবেন যারা নিজেরা ফেতনা লাগাচ্ছেন, আপনার ভুল তথ্যের জন্য আপনাকেই জবাব দিতে হবে। তিনি বলেন- আমরা ৪ ভাই এবং ২ বোন বাবাজানের ঔরশজাত সন্তান, আর আপনারা দয়াল বাবাজানের আত্মার সন্তান। সুতরাং মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের জন্য আপনাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।


মেজো সাহেবজাদা হুজুর আরো বলেন- দয়াল বাবাজান আমাকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সেগুলো পর্যায়ক্রমে আপনাদেরকে জানাবো। ড. মেজো হুজুর বলেন- সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান আমাকে যখন জোড়ালোভাবে দায়িত্ব পালনের হুকুম দিলেন- তখন আমি বলেছিলাম, আমার স্ত্রী ও আমার সন্তান আপনার জন্য কোরবান হোক এবং আমি নিজেকেও আপনার জন্য কোরবানি করব। কিন্তু জান থাকতে আপনার আদর্শ ছেড়ে যাব না। আমি জীবন দিয়ে হলেও আপনার প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলাম ধরে রাখবো। তিনি সূফী সম্রাটের আশেক ভক্তদের আশ্বস্ত করে বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ইং থেকে আপনাদের জিয়ারতের জন্য দয়াল বাবাজান ও দয়াল মায়ের রওজা শরীফ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জিয়ারত করতে পারবেন।
আখেরি মোনাজাতের পূর্বে ড. মেজো সাহেবজাদা হুজুর অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুরের রওজা শরীফ জিয়ারত পরিচালনা করেন। দেশে-বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন আঞ্চলিক দরবার শরীফ, খানকা শরীফ এবং আশেকে রাসুল জাকের মজলিস থেকেও একযোগে সকল জাকেরবৃন্দ রওজা শরীফ জিয়ারতে অংশগ্রহণ করেন। পরিশেষে তিনি আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন।


আমাদের মহান মোর্শেদ, সূফী সম্রাট হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজান তাঁর প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলাম এবং তাঁর কোটি কোটি আশেক ভক্তদের কথা চিন্তা করে ওফাতের পূর্বেই তাঁর সন্তানদের সামনে অছিয়ত করে যান। আর সেই অছিয়তে দয়াল বাবাজান তার সুযোগ্য উত্তরসূরি মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরকে সবার উপরে নেতৃত্ব প্রদান করে ইহজগত ত্যাগ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। তাঁর এই মহৎ কর্মের ফলে সম্মানিত মেজো হুজুরের নেতৃত্বে আজ মোহাম্মদী ইসলাম বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত হলো। মহান আল্লাহ্ মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানবের সহায়ক হোন। আমিন।
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা।]

সম্পর্কিত পোস্ট