
১২ রবিউল আউয়াল, ১৪৪২ হিজরি মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হযরত রাসুল (সা.)-এর ১৪৯৫তম (হিজরি সাল অনুযায়ী) শুভ জন্মদিন। এই বরকতময় দিনটি উপলক্ষ্যে লক্ষ কোটি সালাম ও কদমবুসি জানাই মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের কদম মোবারকে; কদমবুসি পেশ করছি দোজাহানের বাদশাহ হযরত রাসুল (সা.)-এর কদম মোবারকে, যিনি মানব জাতির মুক্তির জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ উপহার দিয়ে গেলেন; সেই সাথে কদমবুসি পেশ করছি আমার মহান মোর্শেদ মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের কদম মোবারকে, যিনি হযরত রাসুল (সা.)-এর চিরশান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামকে জগতের বুকে পুনর্জীবনদান করেছেন।
মানবজাতিকে সত্য ও শান্তির পথে আনার জন্য মহান আল্লাহ্ তাঁর সর্বোত্তম সৃষ্টি হযরত রাসুল (সা.)-কে হিজরি পূর্ব ৫৩ সালের ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার সুবেহ সাদেকের সময় এই ধূলির ধরায় প্রেরণ করেন। তাঁকে প্রেরণের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ আপন মহিমাকে প্রকাশ করেন।
তাই হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন মহান আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা আনন্দের দিন। সুফি সাধকদের মতে, যেদিন হযরত রাসুল (সা.) ধরাধামে আগমন করেন, সেদিন আল্লাহ্ নিজে, তাঁর ফেরেশতা, সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম, সমস্ত আওলিয়ায়ে কেরাম রূহানিতে হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মের আনন্দ প্রকাশ করেন এবং তাঁকে অভিবাদন জানিয়ে বলেন, ‘আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ্; আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহ্; মারহাবা ইয়া রাসুলাল্লাহ্; মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ্’। আল্লাহ্ তায়ালা নিজেই হযরত রাসুল (সা.)-এর সুউচ্চ মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছেন। হাদিসে কুদসিতে এরশাদ হয়েছে, ‘‘(হে হাবিব) আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফসীরে মাজহারী, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮০)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘‘আমি আপনাকে জগৎসমূহের প্রতি কেবল রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’’ (সূরা আল আম্বিয়া-২১: আয়াত ১০৭) এই থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন মানবজাতির জন্য অবারিত রহমত ও বরকত লাভের একটি বিশেষ দিন। অথচ পরিতাপের বিষয়, উমাইয়া শাসনামলে এজিদপন্থীরা হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিনের আনন্দকে ম্লান করার জন্য চক্রান্তমূলকভাবে তাঁর জন্ম ও ওফাৎ একই তারিখে হয়েছে বলে অপপ্রচার করেছে। কিন্তু আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় এই যে, আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ইতিহাসের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছেন হযরত রাসুল (সা.) ১ রবিউল আউয়াল ওফাৎ লাভ করেছেন। সমাজে প্রচলিত ১২ রবিউল আউয়াল ওফাতের তারিখ সঠিক নয়। তিনি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সূরা মায়েদার ৩নং আয়াতকে হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের সঠিক তারিখ বের করার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম।’’(সূরা আল মায়িদাহ-৫: আয়াত ৩) এই প্রসিদ্ধ আয়াতটি হিজরি দশম বর্ষের ৯ জিলহজ তারিখ, শুক্রবার আরাফার ময়দানে অবতীর্ণ হয়। বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘এই আয়াত দশম হিজরির ৯ জিলহজ তারিখে নাজিল হয়। এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা.) মাত্র ৮১ দিন পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন।’’ (তাফসীরে মা’রেফুল কুরআন) বিদায় হজের সময় আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া থেকে ৮১তম দিবসে হযরত রাসুল (সা.) ওফাৎ লাভ করেন বলে সর্বসম্মত অভিমত। এই অভিমতটি তাফসীরে তাবারী, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮০, তাফসীরে মাজহারী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১ এবং তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০-এ সুষ্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
বিখ্যাত তাফসীরকারকদের বর্ণনা থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, হযরত রাসুল (সা.) বিদায় হজের ৮১তম দিবসে ওফাৎ লাভ করেন। সুতরাং বিদায় হজের দিন থেকে ৮১তম দিবস কত তারিখ ও কী বার হয়, তা গণনা করলে তাঁর ওফাতের তারিখের বিষয়টি সুনিশ্চিত হওয়া যায়। হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী চান্দ্র বর্ষের একমাস ৩০ দিনে এবং পরবর্তী মাস হয় ২৯ দিনে হয়। এই হিসেবে জিলহজ মাস ২৯ দিন, মহররম মাস ৩০ দিন ও সফর মাস ২৯ দিনে হয়। সুতরাং দশম হিজরির ৯ জিলহজ হতে হিসাব করলে দেখা যায়, জিলহজ মাসের ২১ দিন, মহররম মাসের ৩০ দিন, সফর মাসের ২৯ দিন এবং রবিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ তথা ১ দিন মিলে সর্বমোট ৮১ দিন হয়। এই হিসাব মোতাবেক হযরত রাসুল (সা.) একাদশ হিজরির ১ রবিউল আউয়াল, সোমবার ওফাৎ লাভ করেন, এই ব্যাপারে সবাই একমত। সুতরাং তাঁর শুভ জন্মদিন ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উদ্যাপন করা আশেকে রাসুলদের জন্য অপরিহার্য। উল্লেখ্য যে, ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন এবং ১ রবিউল আউয়াল তাঁর ওফাৎ দিবস হওয়া সত্ত্বেও, ইতঃপূর্বে বাংলাদেশে ১২ রবিউল আউয়াল দিনটি ফাতেহায়ে দোয়াজ-দহম ও সিরাতুন্নবি (সা.) হিসেবে সরকারিভাবে পালিত হতো। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে এই দিনটিকে ‘সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তাঁর প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার ১২ রবিউল আউয়াল ফাতেহায়ে দোয়াজ-দহম ও সিরাতুন্নবি (সা.)-এর পরিবর্তে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষ্যে দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। এছাড়া এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) মহা ধুমধামের সাথে উদ্যাপিত হয়। প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষ্যে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের আহ্বানে দেওয়ানবাগ শরীফে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই বছর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হবে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অনুসারী আশেকে রাসুলবৃন্দ এই দিনটিতে পশু জবাই, বাড়িতে বাড়িতে আলোকসজ্জা ও নতুন জামা কাপড় পরিধান-সহ বাড়িতে উনড়বত মানের খাবার রান্না করে থাকেন।
পরিশেষে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের নুরানি কদম মোবারকে জানাই লাখো শুকরিয়া, যিনি দয়া করে আমাদেরকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উদ্যাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমিন।