Cancel Preloader

সম্পাদকীয়

মহান আল্লাহর অপার দয়ায় আমাদের সামনে আসছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক। আগামী ২৫ এপ্রিল, ২০২০ খ্রি. শুরু হচ্ছে রমজান মাস। এই রমজান মাস শুরু হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ আরবি শাবান মাাসের ১৪ তারিখ (৯ এপ্রিল, ২০২০ খ্রি.) বুধবার দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত পালিত হবে। বিশ্বের সকল মুসলিম দেশে অত্যন্ত ধুমধামের সাথে এই শবেবরাত উদযাপিত হয়ে থাকে। ‘শব’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ রাত, আর ‘বরাত’ আরবি শব্দ, যার অর্থ ভাগ্য। সুতরাং ‘শবে বরাত’ অর্থ ভাগ্য রজনি। এই পবিত্র রাতটি উদ্যাপন করার জন্য মুসলমান সম্প্রদায় সারা রাতব্যাপী আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল হয়ে থাকেন। নফল নামাজ, ওয়াজ নসিহত এবং আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করে সারারাত গুজার করে দেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। এই রাতটির গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। কারণ, শবে বরাত আসলেই মুসলমানগণ রমজান পালনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আমাদের এই বাংলাদেশের মানুষ অধিক ধর্মপরায়ণ বিধায় তারা পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা শবে বরাতকে স্বাগত জানায় নানা কর্মতৎপরতা ও ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে। তাছাড়া মুসলমানগণ তাদের ঘরে ঘরে হালুয়া রুটি তৈরি করে প্রতিবেশীদের আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে এই রাতে উন্নতমানের খাবারের সু ব্যবস্থাও করে থাকেন।

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর দরবার শরিফে পবিত্র শবেবরাতের বিশেষ আশেকে রাসুল (সা.) আয়োজন করে থাকেন। বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকা থেকেই আশেকে রাসুলগণ মহান মোর্শেদের দরবার শরিফে পবিত্র শবেবরাত পালনের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকেন। তারা সারারাত জাগরণ করে নামাজ ও ওয়াজ নসিহত-সহ নফল ইবাদত-বন্দেগি করে কাটিয়ে দেন। আল্লাহর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান উপস্থিত লক্ষ লক্ষ জাকের ও ধর্ম প্রাণ মুসলমানদের বিরিয়ানির তাবারুক দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন। তিনি মধ্যরাতে আলোচনা ও মোনাজাত করেন এবং বাদ ফজর আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে বিশ্ববাসীর শান্তি ও মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া করে থাকেন। উল্লেখ্য যে, শবে বরাত পালনের ১৫ দিন পরে আরবি রমজান মাসের ১ তারিখ শুরু হয়। পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, “হে বিশ্বাসী বান্দাগণ! তোমাদের উপরে রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পারে’’ (সূরা বাকারা-২ : আয়াত ১৮৩)। পবিত্র রমজান মাসের রোজা পালন করা প্রতিটি বয়ঃপ্রাপ্ত সুস্থ নর ও নারীর জন্য ফরজ। সোবহে সাদেক তথা সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সাথে পানাহার, কামাচার ও যাবতীয় পাপাচার থেকে মুক্ত থাকার নাম রোজা। আরবি ‘রমজ’ ধাতু থেকে রমজান শব্দের উৎপত্তি। রমজ অর্থ- জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া। রোজা যেহেতু একজন রোজাদার ব্যক্তির জীবনের সমস্ত পাপরাশিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়, সেই কারণে রোজাকে রমজান নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি পালন করা ফরজ। এই মাসে এক রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে অন্যমাসের এক রাকাত ফরজ নামাজের সমান ফজিলত দান করা হয়ে থাকে। সারাদিন উপবাসের মাধ্যমে রোজা পালন করার পরে সন্ধ্যায় কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, “কোনো মুসলমান যদি অন্য মুসলমানকে ইফতার করায়, সে ঐ রোজাদারের রোজার পূর্ণ সওয়াব লাভ করবে। কিন্তু রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।” হাদিস শরিফে আছে- “রমজান মাস আসলে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলে বন্দি করা হয়।” আমাদের সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, রমজান মাস আসলে মানুষ নফ্সের তাড়নায় নানাবিধ পাপ ও অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। তাতে প্রশ্ন জাগে, শয়তান যদি বন্দি থাকে, তাহলে রোজাদার ব্যক্তি মিথ্যা, ধোকাবাজী ও ছলচাতুরীসহ নানান ধরণের পাপ কর্মে লিপ্ত হয় কী করে? এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান যথার্থই বলেছেন যে, শয়তানকে বন্দি করা হয়, এর অর্থ- তাকে শিকলে বাধা নয়, বরং আল্লাহ্র বিধানে শয়তান বন্দি থাকে।

আমাদের সামনে রহমত, বরকত ও ফজিলত নিয়ে যে রমজান আসছে, তা সমগ্র বিশ্বে একই তারিখে পালন করা মুসলমান জাতির জন্য ফরজ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সৌদি আরবসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে দিন রমজান মাস শুরু হয়, আমাদের দেশে চাঁদ না দেখার অজুহাতে তার ১দিন পরে রোজা পালন করা হয়ে থাকে। ঠিক ঈদ পালনের ক্ষেত্রেও তদ্রূপ। সৌদি আরবে ঈদ পালিত হয়, অথচ আমাদের দেশে চাঁদ দেখা যায়নি বলে আমরা রোজা পালন করে থাকি। আল্লাহর বিধান মোতাবেক রোজার দিনে পানাহার করা যেমন হারাম, অনুরূপভাবে ঈদের দিন রোজা পালন করাও হারাম। আমরা বিশ্ব মুসলিমের সাথে একই তারিখে রোজা ও ঈদ পালন করতে না পেরে ভিন্ন দিনে রোজা ও ঈদ পালন করায় হারাম কাজটি করে বসি। এই কঠিন সমস্যার সমাধান দিয়েছেন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান। তাঁর লিখিত ‘ঈদ সমস্যার সমাধান’ নামক কিতাবে সুস্পষ্টভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আমরা যেমন শুক্রবার দিন জুমার নামাজ আদায় করি, সৌদি আরবেও ঐ একই দিনে জুমার নামাজ হয়ে থাকে। তবে আমাদের ৩ ঘন্টা পরে। কেননা বাংলাদেশের ৩ ঘন্টা পরে সৌদি আরবে সূর্যোদয় ও সূর্যান্ত হয়ে থাকে। সুতরাং সময়ের ৩ ঘন্টা ব্যবধানে যদি একই শুক্রবার দিন দুই দেশে জুমার নামাজ হতে পারে, তাহলে একই তারিখের (শুধু সময়ের ব্যবধানে) রোজা ও ঈদ পালন করতে না পারার কী কারণ থাকতে পারে? সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বলেন, সৌদি আরবে যেদিন রোজা শুরু হয় অথবা ঈদ পালন হয়, আমরাও চাঁদের অজুহাত না দেখিয়ে যদি ঐ একই তারিখে রোজা পালন শুরু করি, আবার রোজা শেষে একই তারিখে ঈদ পালন করি, তাহলে মুসলিম বিশ্বের রোজা ও ঈদ পালনের ক্ষেত্রে যে সমস্যা রয়েছে, তার সমাধান হওয়া সম্ভব। আর এটা সূফী সম্রাটের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য সংস্কার। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে সূফী সম্রাটের এই সংস্কারটি বিশ্বময় কার্যকরী হবে এবং মুসলিম জাতির ঈদ সমস্যার সমাধান হবে।

সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, পবিত্র মাহে রমজান আমাদের কাছে যে রহমতের বারতা নিয়ে এগিয়ে আসছে, তাকে আমরা বরণ করব এই বলেন, ‘মাহে রমজান স্বাগতম’।

আসছে ১৪ এপ্রিল শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ-১৪২৭ বঙ্গাব্দ। প্রত্যেক জাতিই তাদের নিজস্ব রীতি নীতির মাধ্যমে নববর্ষ পালন করে থাকেন। আমরা বাঙালি জাতি পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে পালন করে থাকি। তাই এদিনে পালিত হয়ে থাকে নবান্নসহ নানা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এটা বাঙালি জাতির নিজস্ব রীতি বা সংস্কৃতি। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো রীতি রেওয়াজের সম্পর্ক নেই। তাই আগামী ১৪ এপ্রিল তারিখ ১লা বৈশাখকে জানাচ্ছি, ‘বাংলা শুভ নববর্ষ।’

সম্পর্কিত পোস্ট

1 Comment

  • রোজার সম্পর্কে সুন্দর আলোচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *