Cancel Preloader

সম্পাদকীয়, মে-২০২৩

মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় আমার মহান মোর্শেদ মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর চেহারা মোবারকের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ইংরেজি ২০০৮ সালে, আরবি ১৪২৯ হিজরির শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে সর্বপ্রথম দেখা যায় এবং অদ্যাবধি দেখা যাচ্ছে। এ বছর ১৪৪৪ হিজরির শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখার ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আশেকে রাসুলদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে গত ১৪ই শাওয়াল, শুক্রবার, বাবে মোর্শেদ, দেওয়ানবাগ শরীফে ‘বিশেষ আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিল’ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামিক গবেষকবৃন্দ অনুষ্ঠানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা করেন। এছাড়া দেওয়ানবাগীর দল শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ নাতে রাসুল (সা.) ও শানে মোর্শেদ পরিবেশন করেন। আমরা দুই রাকাত সালাতুশ শোকর নামাজ আদায় করি এবং শোকরানা মিলাদ শরীফ পাঠ করি। বাদ জুমা আমার বক্তব্য ও আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়। এই অনুষ্ঠানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার আশেকে রাসুল অংশগ্রহণ করেন।


সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ব্যতীত কোনো মহামানবের চেহারা মোবারক চাঁদে প্রদর্শিত হয়নি। এটি ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ঘটনা এবং মহাকালের মহাবিস্ময়। দয়াল বাবাজানকে পূর্ণিমার চাঁদে প্রকাশিত হওয়ার নিগূঢ় রহস্য রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বলেন, “যখন চতুর্দিক থেকে মানুষ এসে আমাকে বলছে যে, আমাকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে, তখন আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, এটি কি আমার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র? আমি যোগাযোগ করলাম মহান মালিকের সাথে। যোগাযোগ করার পর আমাকে তখন যে সংবাদটা দেওয়া হলো, সেটা হলো- ‘সারা দুনিয়ার মানুষ আমাকে (আল্লাহ্) নিরাকার বলে। একমাত্র আপনিই সেই ব্যক্তি, আমার আকার পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দলিল দিয়ে প্রমাণ করেছেন। তাহলে আমি কি আপনাকে পুরস্কৃত করব না? সুতরাং আপনাকে পুরস্কৃত করার জন্য চাঁদের মধ্যে দেখিয়েছি।’ জানতে চাইলাম, ‘কতদিন দেখানো হবে?’ তখন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে জানানো হলো- ‘যতদিন প্রয়োজন, আমি ততদিন দেখাব’।” (মাসিক আত্মার বাণী, সেপ্টেম্বর-২০২০ইং, পৃষ্ঠা ২৭) সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান দয়াময় আল্লাহ্ এর প্রকৃত স্বরূপ জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরে প্রমাণ করেছেন- ‘মহান আল্লাহ্ রূপহীন নিরাকার নন, তাঁর অপরূপ সুন্দর নুরের রূপ রয়েছে’। এই বিষয়ে তিনি ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক ৮খণ্ড তাফসীর শরীফ রচনা করেন। জগত শ্রেষ্ঠ এই মহামানবের জীবদ্দশায় মুক্তিকামী মানুষেরা তাঁর চেহারা মোবারকের প্রতিচ্ছবি পূর্ণিমার চাঁদে দেখে তাঁরই প্রেমাকর্ষণে ব্যাকুল হয়ে ছুটে এসে তাঁকে সংবর্ধনা দেন। বহির্বিশ্বের ৫০টি দেশ ও বাংলাদেশের ৬৪ জেলার আশেকে রাসুলেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখার মহতী অনুষ্ঠানটি অবারিত রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে উদ্যাপন করলে মহান রাব্বুল আলামিন সন্তুষ্ট হবেন এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে।


উল্লেখ্য যে, এই মে মাসের ৮ তারিখ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের সহধর্মিণী আওলাদে রাসুল, কুতুবুল আকতাব, দুররে মাকনুন, খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম দয়াল মা (রহ.)-এর ৬৬তম শুভ জন্মদিন। মহীয়সী এই রমণী ১৯৫৭ সালের ৮ই মে, ১৩৬৪ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ, বুধবার ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলাধীন চন্দ্রপাড়া গ্রামে আপন পিত্রালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হলেন সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) এবং তাঁর মাতা হলেন হযরত ছমিরুন্নেসা খানম (রহ.)। পিতা ও মাতার পাঁচ কন্যার মাঝে হযরত দয়াল মা (রহ.) চতুর্থ। তিনি শৈশব থেকে অনুপম চারিত্রিক মাধুর্য নিয়ে বড়ো হন। ছোটো বেলা থেকেই তিনি সর্বদা মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভের আকাক্সক্ষায় তরিকতের সাধনায় মশগুল থাকতেন। তাঁর অসাধারণ গুণাবলির কারণে ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। ইমাম হুজুর কীভাবে সাধনা আরাধনা করতেন, তিনি সবসময় সেগুলো অনুসরণ করতেন। উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ১৯৭৪ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি, রবিবার বাৎসরিক ওরস শরীফে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়ায় তাঁর মোর্শেদের দরবারে গমন করেন। ইমাম হুজুর (রহ.) প্রথম দর্শনে বুঝতে পারেন যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি, যাঁর প্রতীক্ষায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। তাই ইমাম হুজুর তাঁর পরম কাক্সিক্ষত এই মহামানবকে কাছে রাখার অভিপ্রায়ে ১৯৭৪ সালের ১৬ই মার্চ স্বীয় চতুর্থ কন্যা কুতুবুল আকতাব হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-কে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের সাথে বিবাহ দেন।


জীবদ্দশায় হযরত দয়াল মা (রহ.) মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে দয়াল বাবাজানকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তিনি দয়াল বাবাজানের নির্দেশক্রমে আশেকা রাসুল বোনদের তরিকতের শিক্ষা প্রদান করতেন এবং তাদের যাবতীয় সমস্যার বিষয়গুলো দেখতেন। জগদ্বিখ্যাত এই মহীয়সী রমণীর ৬৬তম শুভ জন্মদিনে তাঁর কদম মোবারকে জানাই লক্ষ কোটি সালাম ও কদমবুসি। আল্লাহ্র বন্ধুদের শুভ জন্মদিন জগদ্বাসীর জন্য অবারিত রহমত ও বরকত বয়ে আনে। এ বছর হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য আমি ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফে আয়োজন করেছি আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিল। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে দয়াল মা (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে উদ্যাপনের তৌফিক ভিক্ষা দিন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট