Cancel Preloader

অলৌকিক কারামত

বিমান দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা
শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু):
মানুষ তার দেহ এবং আত্মা, এই উভয় অংশের উৎকর্ষ সাধন ব্যতীত পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। তাই হযরত রাসুল (সা.) মানুষের চরিত্র সংশোধনের পদ্ধতি শিক্ষা দানের পাশাপাশি আত্মার উন্নতি সাধনের পদ্ধতিও শিক্ষা দিয়েছেন, যেন মানুষ আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে। আত্মিক উন্নতির বলেই মানুষ সৃষ্টির সেরা তথা আল্লাহর প্রতিনিধির মর্যাদা লাভ করতে পারে।


নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে হিদায়েতের দায়িত্বে নিয়োজিত রাসুলের উত্তরসূরি অলী-আল্লাহ্গণ হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসারেই মানুষকে সুশিক্ষা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ মানুষের বাহ্যিক চরিত্র এবং আত্মিক উন্নতি বিধানই তাদের লক্ষ্য। তাঁদের শিক্ষা পদ্ধতি অনুসারেই হযরত রাসুল (সা.)-এর সুন্নত আদায় হয়। ফলে মানুষ তার আধ্যাত্মিক উন্নতি নিজেই সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারে। এজন্য বেলায়েতের যুগে মানবজাতির উত্তম চরিত্র শিক্ষাদানকারী শিক্ষক, যুগের ইমাম, মোজাদ্দেদ ও আউলিয়ায়ে কেরামের মর্যাদা অপরিসীম। নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণ আল্লাহর দেওয়া মু‘জিজার মাধ্যমে সমকালীন যুগের মানুষের নিকট প্রমাণ করে দিয়েছেন তাঁরা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত মহামানব, তাঁরা আল্লাহর বন্ধু। কারণ মু‘জিজা ছিল তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দলিলস্বরূপ। তেমনিভাবে বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণের মাধ্যমে তা প্রকাশ পায় কারামত হিসেবে। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের কাছে এসে অসংখ্য আশেকে রাসুল বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ ও বালা মুছিবতে পড়ে প্রতিনিয়ত মহান মোর্শেদের উসিলায় আল্লাহ্র দয়া ও সাহায্য লাভ করেছেন। তেমনি বর্তমান মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের উসিলায়ও মানুষ আল্লাহর দয়া ও সাহায্য লাভ করছে।


আমি শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু) এবং আমার পরিবার মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে যেভাবে রক্ষা পেলাম তারই সংঘটিত ঘটনা এখানে উপস্থাপন করা হলো।


আমি মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের কাছ থেকে তরিকা গ্রহণ করি ১৬ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৯০ সালে। আমার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার রুপসপুর গ্রামে। আমি বর্তমানে ঢাকার আফতাবনগরে বসবাস করি। পেশায় আমি একজন ব্যাংকার। আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই মহান মোর্শেদের রুহানি দয়া পেয়ে ধন্য হয়েছি এবং তাঁর উসিলায় আল্লাহর খাস রহমত সবসময় পেয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি থেকে শুরু করে চাকুরি পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনাই অলৌকিকতায় ভরপুর। যখনই কোনো বিপদে পড়েছি সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের কথা স্মরণ করেছি মহান আল্লাহর অপার দয়ায় সাথে সাথে সেই বিপদ দূর হয়ে গিয়েছে।


৬ই মে, ২০২৩ সালের ঘটনা। একদিনের ছুটি ছিল। আর সাথে শুক্র এবং শনিবার নিয়ে তিনদিন ছুটি পাওয়া গেল। সেই অনুযায়ী আমার পরিবার এবং আমি কক্সবাজার যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আমি বাংলাদেশ বিমান-এর টিকেট কাটি। যথারীতি বৃহস্পতিবার দিন ১১টায় বিমানে আমরা কক্সবাজার পৌঁছাই। সেখানে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করি এবং সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করি। আমরা শনিবার দিন ফিরব বলে রিটার্ন টিকেট কাটি। দেখতে দেখতে শনিবার চলে আসে। আমাদের বিমান ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় ছিল দুপুর ২টা। সেই অনুযায়ী আমি এবং আমার পরিবার বিমানে উঠি।


বিমানে উঠার সময় আমার মনটা ভালো ছিল না। কয়দিন পরে একটি ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল, যেটির নাম ছিল মোখা। আমরা বিমানে উঠার সময় একটু বৃষ্টি হচ্ছিল। বিমান সঠিক সময়ে ছাড়ে। আমি মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)-এর নিকট উসিলা ধরে আজিজি করি, আল্লাহর দয়া পাওয়ার জন্য আমরা যেন ঠিকমতো পৌঁছাতে পারি। বিমান আকাশে উড়ে ঠিক ২টায়। সেই অনুযায়ী আমাদের ২.৪৫ মিনিটে পৌঁছানোর কথা। প্রথমে আকাশ দেখে মনে হলো যে মেঘ থাকলেও বিমান খুব সুন্দরভাবে যাচ্ছিল। কিন্তু বিধি বাম। ১৫ মিনিট চলার পরে বিমানে একটু ঝাকি লাগলো, পর পর চারবার। আমি একটু বিচলিত হলাম এবং বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য একটা মানত করলাম। ঝাকিটা বন্ধ হয়ে গেলো।
পরবর্তীতে কেবিন ক্রু ঘোষণা করলো যে, আমরা ঢাকা চলে এসেছি, কিছুক্ষণের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমানটি অবতরণ করবে। সেই অনুযায়ী আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম। আমার অফিস যেহেতু উত্তরায় সুতরাং ১৮ নম্বরের রাজউকের ভবনগুলো দেখতে পেলাম। আমি আশ্বস্ত হলাম, যাক বিমান শেষ পর্যন্ত ঢাকায় পৌঁছালো। কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিমানটি আর নিচে নামলো না। আমি দেখি বিমানটি পুনরায় উপরে উঠে যাচ্ছে। ৫ মিনিটের মধ্যে অনেক উপরে উঠে গেলো। আমি নিচের দিকে তাকালাম। বুড়িগঙ্গা নদীর মতো মনে হলো। বিমানটি পুনরায় ঘুরতে লাগলো এবং ১০ মিনিটের মধ্যে আবারও ১৮নং সেক্টরের ভবনগুলো দেখতে পেলাম। তবে আমরা বুঝতে পারলাম বিমানটি নিচে নামার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনো কারণে নামতে পারছে না।


আবারও বিমানটি না নেমে চলে গেলো এবং দ্বিতীয়বার বিমানটি যখন একটু উপরে মেঘের ভিতর উঠলো আমি আরও বেশি চিন্তিত হয়ে গেলাম। সেই সময়ে হঠাৎ বিমানটি একটি ঝাকি দিলো। পরবর্তীতে বিমানটিতে প্রচণ্ড রকমের ঝাকি দেওয়া শুরু হলো। মনে হলো এখনই বিমানটি ভেঙ্গে পড়বে। বিমানটিকে আর পাইলট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। আমি এবং আমার পরিবার সবাই একসাথে। আমি প্রচণ্ড ভয় পেলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে দরুদে মাহদি পড়তে শুরু করলাম এবং সাথে সাথে আমার মানতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলাম। আমি দয়াল বাবাজান এবং দয়াল মেজো হুজুরের কথা স্মরণ করে তাঁদের উসিলা ধরে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য আজিজি করতে থাকলাম।


আমার একসময় মনে হলো বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে যাবে, বিমানের প্রতিটি যাত্রী তখন প্রাণভয়ে কান্নাকাটি শুরু করলেন এবং আল্লাহর কথা স্মরণ করতে লাগলেন। মনে হলো বিমানটি নিচে নেমে যাচ্ছে এবং পাইলট সিটবেল্ট পরে নিতে বললেন। আমি চোখ বন্ধ করে মোর্শেদের কথা এবং মেজো হুজুরের কথা স্মরণ করতে ছিলাম আর তাঁদের উসিলায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করছিলাম। আস্তে আস্তে দেখলাম ঝাঁকি বন্ধ হতে থাকলো। পরবর্তীতে ১৫ মিনিটের মধ্যে আবারও আমি উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউকের বিল্ডিংগুলি দেখতে পেলাম এবং বিমান নিচে নেমে বিমান বন্দরে পৌঁছাল। ৪৫ মিনিটের ফ্লাইটে ৯০ মিনিট লাগলো। ৪৫ মিনিট পুরোটা সময় আমরা ঢাকা শহরের উপরেই ছিলাম। পরবর্তীতে জানতে পারলাম নিচে অনেক ঝড় হচ্ছিল এবং ঝড়টি ৩০ মিনিট স্থায়ী হয় অর্থাৎ আমাদের বিমানটি ঝড়ের কবলে পড়েছিল। যেহেতু ছোটো বিমান, সেই কারণে ঐ সময়টি ছিল খ্বুই বিপদজনক। কিন্তু মোর্শেদের উসিলায় আল্লাহর অসীম দয়ায় আমরা প্রাণে বেঁচে গেছি। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। যাত্রীরা সবাই বলাবলি করছিল এখানে কেউ একজন অলী-আল্লাহ ভক্ত আছেন, যার কারণে যাত্রীরা সবাই রেহাই পেয়েছেন।


দয়াল বাবাজানের উসিলায় দয়াময় আল্লাহ্ যে এতো বড়ো বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন, সেজন্য তাঁর দরবারে লাখো লাখো শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
[লেখক: ইসলামি গবেষক ও ব্যাংকার]

সম্পর্কিত পোস্ট