Cancel Preloader

রুহানিতে আবুল কালামকে মোহাম্মদী ইসলামের সবক

আশেকে রাসুল হাজি আবুল কালাম চৌধুরী চট্টগ্রাম মীরেরশরাই উপজেলাধীন দক্ষিণ আলিনগর গ্রামের অধিবাসী। তিনি প্রথম জীবনে আবুধাবিতে চাকুরি করতেন। ঘটনাটি ১৯৮৬ সালের, তখন তিনি আবুধাবিতে চাকুরি করতেন। ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে পাওয়ার বাসনা তার দীর্ঘদিনের। এই তীব্র বাসনাই তাকে আবুধাবিতে পরিচয় করিয়ে দেয়, মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্Ÿুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের মুরিদ সন্তান আশেকে রাসুল আবদুল বারেকের সাথে। একদিন আশেকে রাসুল আবদুল বারেক আবুল কালামকে বলেনÑ বাংলাদেশে তার একজন মোর্শেদ আছেন, আর তিনি হলেনÑসূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান। অতঃপর তিনি একে একে আশেকে রাসুল বারেক ভাইয়ের কাছ থেকে এই মহামানবের মহান শিক্ষা, ধর্মীয় সংস্কার, অলৌকিক কারামত ও তাঁর প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। আশ্চর্যের ব্যাপার হলোÑ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুরের নাম মোবারক শোনা মাত্রই তিনি আল্লাহ্র এই বন্ধুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ক্রমেই তাঁর প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আপন অন্তরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি তখন আল্লাহ্র এই বন্ধুকে সরাসরি দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। এক অজানা প্রেমাকর্ষণে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান যেন তাকে কাছে ডাকছেন। অবস্থা এমন হলো যে, যখনই সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের কথা স্মরণ হতো, তখনই তার ভীষণ কান্না পেতো, চোখের জলে তার বুক ভেসে যেত। তখন আবুল কালাম তাঁর কাছে মুরিদ হয়ে মোহাম্মদী ইসলামের দীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো আর আবুধাবি থেকে চট করে বাংলাদেশে আসা যায় না।
এদিকে আবুল কালামের আর বিলম্ব সহ্য হচ্ছিল না। তিনি বারবার ঐ আশেকে রাসুল বারেক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং একে একে জেনে নেন, তার এই মাশুক, যুগের ইমাম হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) দয়াল দরদি কীভাবে মানুষকে তরিকার সবক দেন, তাঁর তরিকায় শামিল হওয়ার পর ওয়াজিফার কী কী আমল করতে হয়। বিষয়টি অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর চেষ্টার মতো ছিল। কিন্তু এই চেষ্টা তার তৃষ্ণা আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিলো। তিনি মনে মনে আরজ করলেনÑ “ওগো আল্লাহ্র বন্ধু, যুগের ইমাম বাবা দেওয়ানবাগী! রাসুলের যুগে রাসুলের দেশে জন্মগ্রহণ না করেও যদি হযরত রাসুল (সা.)-কে বিশ্বাস করার কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষ মুসলমান হতে পারে, তবে আমি কেন আবুধাবিতে বসে আপনাকে বিশ্বাস করে আশেকে রাসুল হতে পারব না?” এ সময় তিনি নিজেকে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের একজন মুরিদ মনে করে তরিকার আমল করতে শুরু করেন।
এক রাতের ঘটনা। রাতে ইবাদত-বন্দেগি, ওয়াজিফার আমল করছিলেন, এমন সময় মহান মোর্শেদের মহব্বতে তার বুক ফেটে কান্না আসছিল। তাঁকে দেখার জন্য এবং কাছে পাওয়ার জন্য তিনি ছটফট করছিলেন। আরজ করলেন, “হে আল্লাহ্র বন্ধু! আপনি তো রুহানিতে সবই দেখেন। বাবা! আমি তো আর সহ্য করতে পারছি না। বাবা! দয়া করে আমাকে আপনার নুরের চেহারা মোবারকের দর্শন দিয়ে আমার তাপিত হৃদয়কে শীতল করুন।” এমনিভাবে আজিজি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আজানের ধ্বনিতে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফজরের নামাজ শেষ করে তিনি বসে আছেন। ব্যথাভরা হৃদয়ে বাবাজানকে স্মরণ করে অঝোর নয়নে কাঁদছেন। এই সময় আল্লাহ্র বন্ধুর যে প্রেমাকর্ষণে তিনি জ্বলছেন, তা সহ্য করা তার পক্ষে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠল। ঠিক তখনই সে দেখতে পায়, আবুধাবিতে আকাশে একজন জ্যোতির্ময় মহামানব পাখির মতো উড়ে তার দিকে আসছেন। অতঃপর তিনি দয়া করে তার সম্মুখে তশরিফ নিলেন। জ্যোর্তিময় এ মহামানবের গায়ে সাদা পাঞ্জাবি এবং পরনে সাদা লুঙ্গি মোবারক। তখন আবুল কালাম পরম ভক্তি ভরে উঠে দাঁড়ালেন। তার হৃদয় মন স্বর্গীয় শান্তিতে ভরে উঠল। স্বর্গীয় ঘ্রাণে তার চারপাশের পরিবেশ বিমোহিত হয়ে উঠল। অতঃপর মহাপুরুষ নিজেই দয়া করে তাঁর পরিচয় দিয়ে বললেনÑ “আমিই আপনার কাক্সিক্ষত মোর্শেদ।” মহান মোর্শেদের পাক জবানে এ পরিচয় লাভ করে তিনি দয়াল বাবাজানের কদম মোবারকে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকেন। এ সময়ে দয়াল বাবাজান তাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং তাঁর সাথে তওবা পড়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি মহান মোর্শেদের সাথে তওবা পড়লেন। তারপর তিনি দয়া করে তাঁর ডান হাত মোবারকের শাহাদত অঙ্গুলি মোবারক দিয়ে তার ক্বালবে স্পর্শ করে বললেনÑ “কালাম মিয়া! লক্ষ্য করুন, আপনার ক্বালবের ভিতর আমার নির্দেশে ‘আল্লাহ্’ ‘আল্লাহ্’ জিকির জারি হচ্ছে। এভাবে সবক দেওয়ার পর বাবাজান নির্দেশ করলেন, আপনি নামাজের কায়দায় বসে খেয়াল ক্বালবে ডুবিয়ে আপন ক্বালবে ‘আল্লাহ্’ ‘আল্লাহ্’ জিকিরের স্পন্দন খেয়াল করুন। তিনি বাবাজানের নির্দেশে তাই করলেন।” কিছুক্ষণ পরে চক্ষু খুলে দেখেন, দয়াল বাবাজান তার সামনে নেই। বাবাজান কোথায় গেলেন, জানার জন্য তিনি ব্যাকুল বেকারার হয়ে উঠেন। এ সময় হঠাৎ আকাশের দিকে লক্ষ্য করে দেখেন, বাবাজান যেভাবে পাখির মত উড়ে বাংলাদেশ থেকে আবুধাবিতে তশরিফ নিয়েছিলেন, অনুরূপভাবে তিনি উড়ে আবার বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছেন। তিনি তন্ময় হয়ে মহান মোর্শেদের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বাবাজান অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, প্রায় বছরখানেক পরে তিনি আবুধাবি থেকে বাংলাদেশে আসে। অতঃপর ১৯৮৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তিনি রাজধানী ঢাকার আরামবাগে এসে মহান মোর্শেদ যুগের ইমাম বাবা দেওয়ানবাগীর সাথে সাক্ষাৎ করে। এ মহামানবকে দেখার সাথে সাথে তিনি চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান। তারপর কী হয়েছে, কিছুই বলতে পারেনি! মূলত তার বেহুঁশ হওয়ার কারণ হলো, বাবাজান যে চেহারায়, যে পোশাকে আবুধাবিতে গিয়ে তাকে দিদার দিয়ে মোহাম্মদী ইসলামের সবক দিয়েছিলেন, সেই একই চেহারায় একই পোশাকে তিনি আরামবাগে কুরসি মোবারকে উপবিষ্ট রয়েছেন। অতঃপর হাজি আবুল কালাম চৌধুরি মোর্শেদ কেব্লাজানের কাছে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ব্যক্ত করেন এবং আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র বন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সংকলনে- শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী, ইসলামি গবেষক

সম্পর্কিত পোস্ট