Cancel Preloader

হজ এবং প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা
হজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম। হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। যে সকল মুসলমান আর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে সামর্থবান, তাদের উপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। শরিয়তের পরিভাষায় হজের সংজ্ঞা হলোÑ আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান অর্থাৎ কাবাঘর জিয়ারত, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান ইত্যাদি কার্যাদি সম্পন্ন করে মোহাম্মদী ইসলামের বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করার সংকল্প করাকে হজ বলা হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন- “মানুষের মধ্যে তার উপর আল্লাহ্র জন্য এই ঘরের হজ করা ফরজ, যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ আছে।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৯৭)
হজ ফরজ হওয়ার শর্তাবলি
১। মুসলমান হওয়া।
২। সুস্থ ও বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া (অসুস্থ ও পাগলের উপর হজ ফরজ নয়)।
৩। বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
৪। আজাদ তথা স্বাধীন হওয়া।
৫। শারীরিক ও আর্থিক দিক থেকে হজ পালনে সক্ষম হওয়া।
৬। হজের নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়া।
হজের ফরজসমূহ
১। ইহরাম বাঁধা।
২। ৯ই জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
৩। কাবা শরীফ জিয়ারত করা।
হজের ওয়াজিবসমূহ
১। মুজদালিফায় অবস্থান করা।
২। সাফা-মারওয়ায় সায়ি করা অর্থাৎ এই দুই পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করা।
৩। রমি করা অর্থাৎ শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
৪। ইহরাম খোলার জন্য মাথার চুল মুণ্ডানো।
৫। বিদায়ি তাওয়াফ করা। অর্থাৎ বহিরাগত হাজিগণ দেশে ফেরার পূর্বে বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা।
উল্লেখ্য যে, হজে ইফরাদ-এর ক্ষেত্রে কোরবানি ঐচ্ছিক, কিন্তু হজে তাসাত্তু ও হজে কিরান-এর ক্ষেত্রে কোরবানি ওয়াজিব।
হজের সুন্নতসমূহ
১। কাবা শরীফ পৌঁছেই প্রথমে তাওয়াফ করা।
২। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে সায়ি করার সময় দ্রæতগতিতে চলা।
৩। কোরবানির দিনগুলোতে রাতে মিনায় অবস্থান করা।
৪। ১০ই জিলহজ সূর্যোদয়ের পূর্বে মুজদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা করা।
৫। তিন জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
হজের প্রকারভেদ
(ক) হজে ইফরাদ, (খ) হজে তামাত্তু, (গ) হজে কিরান।
(ক) হজে ইফরাদ: শুধু হজ পালনের উদ্দেশে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ করাকে ‘হজে ইফরাদ’ বলে।
এক নজরে হজে ইফরাদ
১। ইহরাম-ফরজ।
২। তাওয়াফে কুদুম-সুন্নত।
৩। আরাফায় অবস্থান- (রুকন) ফরজ।
৪। মুজদালিফায় অবস্থান-ওয়াজিব।
৫। জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা-ওয়াজিব।
৬। কোরবানি-ঐচ্ছিক।
৭। মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাটা-ওয়াজিব।
৮। তাওয়াফে জিয়ারত- (রুকন) ফরজ।
৯। সায়িÑওয়াজিব।
১০। তাওয়াফে বিদা-ওয়াজিব।
(খ) হজে তামাত্তু: হজের মাসসমূহে প্রথমে উমরা আদায় করে হালাল হয়ে বাড়ি প্রত্যাবর্তন না করে এ বছরই হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে হজে তামাত্তু বলে।
এক নজরে হজে তামাত্তু
১। উমরার ইহরাম শর্ত ও ফরজ।
২। রমলসহ উমরার তাওয়াফ রুকন ও ফরজ।
৩। উমরার সায়ি ওয়াজিব।
৪। মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল ছাঁটা ওয়াজিব।
৫। ৮ই জিলহজে হজের ইহরাম বাঁধা শর্ত ও ফরজ।
৬। উকুফে আরাফা রুকন ও ফরজ।
৭। উকুফে মুজদালিফা ওয়াজিব।
৮। ১০ তারিখে জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
৯। দমে তামাত্তু ওয়াজিব।
১০। মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল ছাঁটা ওয়াজিব।
১১। তাওয়াফে জিয়ারত রুকন ও ফরজ।
১২। সায়ি ওয়াজিব।
১৩। জামরাত্রয়ে কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
১৪। বিদায়ি তাওয়াফ ওয়াজিব।
(গ) হজে কিরান: একই সময়ে হজ ও উমরা পালনের নিয়ত করে
ইহরাম বাঁধাকে হজে কিরান বলে।
এক নজরে হজে কিরান
১। হজ ও উমরার ইহরাম শর্ত ও ফরজ।
২। উমরার তাওয়াফ রুকন ও ফরজ।
৩। উমরার সায়ি ওয়াজিব।
৪। ‘তাওয়াফে কুদুম’ সুন্নত।
৫। সায়ি ওয়াজিব।
৬। ‘উকুফে আরাফা’ রুকন ও ফরজ।
৭। উকুফে ‘মুজদালিফা’ ওয়াজিব।
৮। ১০ই জিলহজে জামরায়ে আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
৯। দমে কিরান ওয়াজিব।
১০। মাথা মুণ্ডন করা অথবা চুল ছাঁটা ওয়াজিব।
১১। তাওয়াফে জিয়ারত রুকন ও ফরজ।
১২। জামরাত্রয়ে রমি বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
১৩। তাওয়াফে বিদা ওয়াজিব।
হজ আদায়ের নিয়ম ও ধারাবাহিক আমলসমূহ
৮ই জিলহজে করণীয়:
১। ইহরাম অবস্থায় মক্কা থেকে মিনায় রওয়ানা হওয়া।
২। মিনায় পৌঁছে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ আদায় করা।
৩। মিনায় রাত্রি যাপন করা।
৯ই জিলহজে করণীয়:
১। ফজরের নামাজ আদায় করে মিনা থেকে তাকবির ও তালবিয়া পাঠ করে আরাফাতের ময়দানে রওনা হওয়া।
২। আরাফাতের ময়দানে দ্বিপ্রহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। এই দিনকে হজের দিন বলা হয়।
৩। আরাফাতের ময়দানে খুতবা শোনা এবং জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে জোহরের ওয়াক্তে আদায় করা। (আরাফাতে অবস্থানকালে বেশি পরিমাণে তালবিয়া পাঠ করবে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এমনকি সকলের জন্য আল্লাহ্র নিকট বেশি করে দোয়া করবে। তওবা ও ইস্তেগফার করে মোনাজাত করবে।)
৪। সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ আদায় না করে মুজদালেফায় রওনা হওয়া।
৫। মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজান ও দুই একামতে আদায় করা এবং রাত্রি যাপন করা।
১০ই জিলহজে করণীয়:
১। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়া।
২। মুজদালিফা থেকে মিনায় যাওয়ার সময় ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করে সাথে নেওয়া।
৩। মিনায় পৌঁছে প্রথমে একমাত্র বড়ো জামরাতে (বড়ো শয়তানের স্তম্ভে) ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
৪। অতঃপর কোরবানি করা এবং মাথা মুণ্ডন করা। (তবে মহিলাদের জন্য চুলের অগ্রভাগ কেটে নিলেই হবে।) উল্লেখ্য যে, মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে হজের ইহরাম ভঙ্গ করবে।
৫। তারপর কাবাঘরে তাওয়াফে জিয়ারতের জন্য মক্কায় যেতে হবে।
৬। তাওয়াফ শেষে মিনায় রাত্রি যাপন করা।
১১ই জিলহজে করণীয়: (তাওয়াফে জিয়ারত ও কোরবানি, মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা ১০ই জিলহজে না করে থাকলে এই দিনে আদায় করতে হবে।)
১। দ্বিপ্রহরের পর থেকে মিনায় ৩টি জামরাতে অর্থাৎ স্তম্ভে (প্রথমে ছোটো, তারপর মেজো, এবং শেষে বড়ো) ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা। (শয়তানের প্রথম স্তম্ভে কঙ্কর নিক্ষেপ করে সামান্য অগ্রসর হয়ে কেব্লামুখী হয়ে তাসবিহ, তওবা, ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফ পাঠ করে দুই হাত তুলে মোনাজাত করবে। এমনিভাবে শয়তানের দ্বিতীয় স্তম্ভে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপের পর প্রমবারের মতো নিয়ম পালন শেষে দোয়া করবে। কিন্তু জামরায়ে আকাবায় (বড়ো শয়তানের স্তম্ভে) কঙ্কর নিক্ষেপের পর দোয়া করবে না। বরং রমি বা কঙ্কর নিক্ষেপ শেষ করে যথাশীঘ্র নিজের অবস্থানে ফিরে আসবে।
১২ই জিলহজে করণীয়:
১। মিনায় দ্বিপ্রহরের পর থেকে পূর্বের ন্যায় একই নিয়মে মিনার ৩টি জামরাতে (শয়তানের ৩টি স্তম্ভে ধারাবাহিকভাবে) ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
২। অতঃপর হাজি ইচ্ছা করলে মক্কায় চলে আসতে পারবে।
১৩ই জিলহজে করণীয়:
যদি হাজি জিলহজের ১৩ তারিখ ফজর পর্যন্ত মিনায় থাকে তবে দ্বিপ্রহরের পর যথানিয়মে ৩টি জামরাতে (শয়তানের স্তম্ভে ধারাবাহিকভাবে) ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপের পর সেখান থেকে চলে আসবে। এটাই উত্তম। আর যদি হাজি ইচ্ছা করে তবে দ্বিপ্রহরের পূর্বেও কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা থেকে চলে আসতে পারবে।
বিদায়ি তাওয়াফ
সারাবিশ্ব থেকে আগত হাজিদের জন্য দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে বিদায়ি তাওয়াফ করা ওয়াজিব। বিদায়ি তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের নিকট তাওয়াফের ২ রাকাত নামাজ আদায় করবে। এরপর জমজম কূপের নিকট এসে কেব্লামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পেট ভরে তিন শ্বাসে পানি পান করবে এবং প্রত্যেকবার বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে তাকাবে।
উল্লিখিত হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত আদায়ের পাশাপাশি হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা অপরিহার্য কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-“মান হাজ্জা ফাঝারা ক্বাবরী বা‘দা মাওতী কানা কামান ঝারানী ফী হাইয়াতী।” অর্থাৎ- আমার ওফাতের পর যে ব্যক্তি হজ সম্পাদন করবে, অতঃপর আমার রওজা জিয়ারত করবে, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল। (ইমাম বায়হাকীর সুনানে কুবরা ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৩)
হযরত উমর (রা.) বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন-“যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করবে, অথবা তিনি বলেছেন-যে ব্যক্তি আমার রওজায় এসে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে, আমি তার জন্য শাফায়াতকারী হবো, অথবা আমি তার জন্য সাক্ষ্যদাতা হবো।” (ইমাম বায়হাকীর সুনানে কুবরা ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৩)
সুতরাং হজের সময় দয়াল রাসুল (সা.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারত করে তাঁর উসিলা নিয়ে আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করলে মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-এর উসিলায় বান্দার হজ কবুল করবেন। তাই হজের সময় হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা আবশ্যক।
হজের হাকিকত
মহান আল্লাহ্ সামর্থবান তথা ধনী মুসলমানদের উপর হজ ফরজ করেছেন। ধনীদের উপর হজ ফরজ করার কারণ হলো-ধনীদের সাধারণত পার্থিব বিষয় অর্থাৎ দুনিয়ার ভোগবিলাসের প্রতি অধিক মাত্রায় আসক্তি থাকে। হজের আহকাম পালনের মাধ্যমে দুনিয়ার এ আসক্তি হ্রাস পায় এবং আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি মন আকৃষ্ট হয়। যেমন ইহরাম বাঁধার সময় সেলাইবিহীন দুই খণ্ড সাদা কাপড় পরিধান করে খালি মাথা ও খালি পা হওয়ার মাধ্যমে হাজিদের হৃদয়ে মৃত্যুর চিন্তা উদয় হয়। এজন্য ইহরাম অবস্থায় সকল প্রকার কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহ্র ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার প্রশিক্ষণ লাভ হয়।
প্রকৃতপক্ষে ইহরাম হলো মৃতবৎ আচরণের প্রশিক্ষণ। মৃত ব্যক্তি যেমন জীব হত্যা করতে পারে না, তেমনি ইহরাম অবস্থায় প্রানী হত্যা নিষিদ্ধ। কেউ তা করে ফেললে তার জীবপ্রবৃত্তিকে মৃতবৎ করার ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়। যে কারণে কাফফারা হিসেবে অন্য একটি হালাল জীবন কোরবানি দিতে হয়।
অতঃপর বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করার সময় মন আল্লাহ্র প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাঁর প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে উঠে। আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে আদি পিতা হযরত আদম (আ.)-এর গুনাহ মাফের ঘটনা স্মরণ করে নিজের জীবনের গুনাহের জন্য মনের মধ্যে অনুতাপ-অনুশোচনা সৃষ্টি হয়। ফলে এ ময়দানে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে গুনাহ মাফ হয় এবং পবিত্র জীবনযাপনের প্রশিক্ষণ লাভ হয়। সাফা-মারওয়া পর্বতে সায়ি করার সময় হযরত বিবি হাজেরা (আ.) ও শিশু পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠে। এ সময় তাঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধায় মন ব্যাকুল হয়ে উঠে।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ করে নিজে সেখানে অবস্থান করতেন। এ মহামানবের প্রতি সম্মান ও আনুগত্য প্রকাশ করে তাঁর অনুসারীরা কাবাঘর তাওয়াফ করতেন এবং তা আজও অব্যাহত আছে। অতঃপর হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর প্রার্থনায় মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-কে প্রেরণ করেন।
হযরত রাসুল (সা.) বিদায় হজে ৯ই জিলহজ তারিখে লক্ষাধিক সাহাবির সামনে বিদায় হজের বাণী মোবারক প্রদান করেন। এজন্য হজ করতে গিয়ে উম্মতে মোহাম্মদীকে জিলহজের ৯ তারিখে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে নিজেদেরকে পরিচালিত করার জন্য সংকল্প করাই হাকিকতে হজ।
মিনায় গিয়ে হাজিগণকে কোরবানি করতে হয়। কোরবানি মূলত সুন্নতে ইব্রাহীম। যে সুন্নতের অনুসরণে কুল-কায়েনাতের রহমত, সাইয়্যেদুল আম্বিয়া হযরত মোহাম্মদ (সা.) বিদায় হজে একশ’ উট কোরবানি করেছেন। ফলে আজও উম্মতে মোহাম্মদীর হাজি সাহেবান স্বীয় নবি ও তাঁর পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আনুগত্য প্রকাশ করতে মিনায় গিয়ে পশু কোরবানি করতে হয়। শুধু তাই নয়, কোরবানির উদ্দেশ্যে মিনায় যাওয়ার পথে পাথরে নির্মিত ফলককে প্রতীকী শয়তান মনে করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়, কেননা হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্দেশে মিনায় নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান ইসমাঈল (আ.)-কে কুমন্ত্রণা দিয়েছিল। বিষয়টি পুত্র পিতাকে জানালে পিতার নির্দেশে পুত্র শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিল। এমনিভাবে হজের প্রতিটি ক্রিয়া-কর্ম, আনুষ্ঠানিকতার নেপথ্যে রয়েছে আল্লাহ্র প্রেরিত ও মনোনীত মহামানবের আচার-অনুষ্ঠান। এজন্য হজের হাকিকত হচ্ছে মহামানবগণের পদাঙ্ক অনুসরণ, তাঁদের চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার প্রশিক্ষণ লাভ এবং আজীবন তাঁদের অনুসরণের সংকল্প করা।
উপসংহার
আপনি মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী একজন আশেকে রাসুল হিসেবে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে সামর্থবান হলে আপনার জন্য জীবনে একবার হজ আদায় করা ফরজ। এক্ষেত্রে হজের হাকিকত অর্জনে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন। স্মরণ রাখবেন-আপন মোর্শেদের শিক্ষা অনুযায়ী হজের সকল কার্য সম্পন্ন করলে হজের ফায়েজ, বরকত, রহমত ও ফজিলত লাভ সহজ হয়।
[লেখক: মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম; পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]

সম্পর্কিত পোস্ট