Cancel Preloader

নামাজে হুজুরি অর্জন করার উপায়


ড. মোবারক হোসেন
সালাত আরবি শব্দ, ফারসিতে নামাজ বলা হয়। নামাজের আভিধানিক অর্থ হলো- দোয়া, রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। বাংলা অর্থ- স্মরণ বা সংযোগ সংস্থাপন করা। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ দ্বিতীয়। কালেমা বা ইমানের পরেই নামাজের স্থান। সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর নামাজ ফরজ। পবিত্র কুরআনে ৮২ বার নামাজ কায়েমের কথা বলা হয়েছে। সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত রাসুল (সা.) ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ রজব দিবাগত রাতে মি‘রাজের সময় মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ লাভ করেন।


মহান আল্লাহ্ নামাজের মাধ্যমে মু’মিন ব্যক্তিদের মি‘রাজ লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ এবং বান্দার কথোপকথনকে নামাজ বলে। এ প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) বলেনÑ“নামাজ মু’মিন ব্যক্তির জন্য মি‘রাজ।” যিনি ইমানদার হয়েছেন তাকে মু’মিন বলে। মু’মিন ব্যক্তি নামাজে আল্লাহর দিদার পেতে সক্ষম। ইসলামের প্রাথমিক যুগে হযরত রাসুল (সা.) নিজেই সাহাবায়ে কেরামকে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন। নামাজের হুকুম ফরজ হওয়ার পূর্বে নামাজ শিক্ষার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে ১২ (বার) বছর ইমানদার হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। অতঃপর যখন তারা মু’মিনে কামেল পরিণত হয়েছেন, তখন নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে, তাঁর দিদার লাভ করার সৌভাগ্য হয়েছে। বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর কেবলার ভাষায়- “নামাজ হচ্ছে এমন একটি ইবাদত, যা বান্দাকে দিনে ৫ (পাঁচ) বার মহান প্রভুর সামনে হাজির করে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার শিক্ষা দেয়।”
একজন মুসলমানের জীবনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। নামাজ মানুষের সাথে মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। নামাজ আদায় করার মাধ্যমে বান্দা তাঁর প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে, ইমান মজবুত হয়, আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। মানুষ তার মহান মালিক রাব্বুল আলামিনের সমীপে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হয় নামাজের সময়। সে প্রেমময় সত্তার স্মরণে বিভোর হয়ে যায় নামাজ আদায় করার সময়।


ইমানের পূর্ণতা অর্জনকারী ব্যক্তিকে মু’মিন বলা হয়। ইসলামি বিশ্বকোষে ইমান প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে: ইসলামের প্রধান ও প্রাথমিক ভিত্তি ইমান ব্যতীত কোনো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। সুউচ্চ ইমারত নির্মাণ করতে গেলে প্রথমে এর জন্য যথোপযুক্ত ভিত্তি নির্মাণ করে নিতে হয়। সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত না হলে যে কোনো নির্মাণ কাজ হয়ে পড়ে দুর্বল, ভঙ্গুর ও বিপদজনক। ইমান হলো আমলের মাধ্যমে অর্জিত ইসলামের চরিত্র ধারণ করার বুনিয়াদ বা ভিত্তি। হযরত রাসুল (সা.) নবুয়ত লাভের পর মি‘রাজ গমনের পূর্ব পর্যন্ত এক যুগ তাঁর উম্মতদেরকে ইমান অর্জনের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
ধর্ম পালনের বিধান রচিত হবার পর ক্রমান্বয়ে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি ইবাদতসমূহের বিধান আল্লাহ্ তায়ালা প্রদান করেছেন। মানুষের মনকে যাবতীয় পাপাচার, শিরক ও কুফর থেকে সর্ম্পূণ মুক্ত ও পুতঃপবিত্র করে তোলা ইমানের কাজ। হৃদয় বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতা অর্জনের পরই কেবল নামাজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদতসমূহ মানুষের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
নামাজ হচ্ছে মহান আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের একান্ত বিনয় প্রদর্শন ও আত্মসমর্পণ করার মাধ্যম। নামাজে কেয়াম ও রুকুর মাধ্যমে মানুষ হাত, পা প্রভৃতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা স্রষ্টার নিকট বিনয় প্রকাশ করে। অবশেষে, দেহের শ্রেষ্ঠ অঙ্গ মস্তক মহান আল্লাহ্র কদম মোবারকে সিজদায় অবনত করে। সেজদা করে নিজের সব কিছুই অকুন্ঠভাবে বিলিয়ে দেয় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। এটাই নামাজের হাকিকত বা বৈশিষ্ট্য। মহান প্রভুর সঙ্গে একান্তভাবে এক হওয়ার এটাই মোক্ষম মুহূর্ত। নামাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসুল (সা.)-কে একান্তভাবে নিজের সান্নিধ্যে নিয়ে নামাজের বিধান অর্পণ করেছেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে মহান আল্লাহর যে কথোপকথন হয়েছে, তা আমরা প্রতি নামাজের বৈঠকে অনুশীলন করে থাকি। হযরত রাসুল (সা.) ছিলেন তাঁর মহান প্রভুর একান্ত আপন। হযরত রাসুল (সা.)-কে মহান রাব্বুল আলামিন একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সরাসরি সম্পর্কের নমুনা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মি‘রাজ রজনিতে আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় মাহ্বুব হযরত রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন- “আপনি আমার জন্য কী-উপহার নিয়ে এসেছেন?” হযরত রাসুল (সা.) উত্তরে বললেন “আত্তাহিইয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালা ওয়াতু ওয়াত্তাইয়্যিবাতু” অর্থাৎ- সমস্ত প্রশংসা এবং সমস্ত ইবাদত বন্দেগি ও সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর জন্য।


মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন- “আস্সালামু আলাইকা আইয়্যু হান্নাবিইয়্যু ওয়া রাহ্মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” অর্থাৎ- “হে নবি (সা.)! আপনার প্রতি সালাম (শান্তি), আল্লাহ্র রহমত ও আল্লাহর বরকত। শুধু নিজের জন্য না নিয়ে সমগ্র নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদতকারি উম্মতের জন্য। হযরত রাসুল (সা.) আরও বলেন- “আল্লাহ্ পাক বান্দাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি যথাসময়ে পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে নামাজ আদায় করে, তার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেন।” পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- “যে ব্যক্তি আপন প্রভুর সাক্ষাৎ লাভের আকাক্সক্ষা রাখে, সে যেন নেক কাজ করে এবং ইবাদতে আপন প্রভুর সাথে অপর কাউকে শরিক না করে।” (সূরা কাহ্ফ ১৮: আয়াত ১১০) নামাজে মু’মিন ব্যক্তি মহান প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে কুরআন তেলাওয়াত করে বলে আমরা তোমারই ইবাদত করি, আমরা তোমার নিকট সাহায্য চাই।
হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সা.) বলেন- “লা সালাতা ইল্লা বিহুজুরিল ক্বালব।” অর্থাৎ- হুজুরি দিল ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হয় না। (যাদুত্তাকওয়া ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ২২২; নুরুল আসরার ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ১৫) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- “অতিশয় দুর্ভোগ ঐসব নামাজীর জন্য, যারা নিজেদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন। যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।” (সূরা মাউন ১০৭: আয়াত ৪ থেকে ৬) যে নামাজে দুনিয়ার বিভিন্ন কল্পনা আসে সেই নামাজ সুফল দিতে পারে না। নামাজ তখনই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যে নামাজ শুদ্ধভাবে আদায় হবে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিশ^নবি হযরত রাসুল (সা.)-এর সহবতে যাওয়ার পর তাঁর আত্মার শক্তি বা ফায়েজের প্রভাবে মানুষ শয়তানের ওয়াছ ওয়াছা থেকে মুক্ত হয়ে যেতেন এবং একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করতেন।


হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- হুজুরি দিল ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হয় না। এই একাগ্রতা অর্জনের জন্য কোনো একজন মহান অলী-আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর শিক্ষা মোতাবেক নামাজ আদায় করলে হুজুরি দিল বা একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করা সম্ভব হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ ফরমান- “হে মু’মিনগণ তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গ লাভ করো। ” (সূরা আত তাওবাহ ৯: আয়াত ১১৯) আল্লাহ্র কোনো না কোনো বন্ধুর সংস্পর্শে গিয়ে এই পদ্ধতিগুলো শিখে নিতে হয়। নিজে নিজে চেষ্টা করে এ পদ্ধতি শিখা সম্ভব নয়। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত নবি-রাসুল, অলী-আল্লাহ্গণ এসেছেন তাদের সবার প্রতি আল্লাহ্র নির্দেশ ছিল মানুষকে আল্লাহর সাথে যোগাযোগের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে আল্লাহর নির্দেশমত ইবাদত বন্দেগি করানো। মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুর্নজীবনদানকারী, সূফী সমাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের প্রধান চারটি শিক্ষার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা ছিল নামাজে হুজুরি। তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসুল হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের কাছে এসে অন্তরের কলুষতা দূর করে মানুষের পক্ষে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হয়ে এবং ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি করে দুনিয়ার চিন্তা মুক্ত হয়ে একাগ্রতার সাথে নামাজ কায়েম করা সম্ভব হয়েছে। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের শিক্ষা লাভ করে বহু মানুষ প্রকৃত মু’মিন হয়ে ইসলামের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) এর সুযোগ্য উত্তরসূরি, সিরাজুম মুনিরার ধারক ও বাহক ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর কেবলা এ সুমহান শিক্ষা দিচ্ছেন। তাঁর কাছে এলে একজন মানুষ ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি করে হাকিকতে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হন। যাদের সাথে আল্লাহর যোগাযোগ আছে তাঁদের অনুসরণ ও গোলামি করে নামাজ কায়েম করার পদ্ধতি শিখতে পারলে নামাজে মি‘রাজ বা আল্লাহর দিদার লাভ করা সম্ভব হবে।


নামাজ কবুলের পূর্ব শর্ত হলো দিল থেকে শয়তানকে বিতাড়িত করা। যে দিলে শয়তান বাস করে সেই দিলে কোনো ইবাদত শুদ্ধভাবে করা সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “অবশ্যই সফলকাম হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে; আর বিফলকাম হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পাপাচারে কলুষিত করেছে।” (সূরা শামস ৯১: আয়াত ৯-১০) পরিশুদ্ধ দিল ছাড়া কোনো ইবাদত আল্লাহ্ কবুল করেন না। দিল থেকে শয়তানকে বিতাড়িত করে সেই দিলে আল্লাহ্র নামে জিকির জারি করতে পারলে শয়তান দূর হবে। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে এক আল্লাহ্র প্রতি নিমগ্ন জিকিরকারী দিলই হলো হুজুরি দিল। এই প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে- “হুজুরি দিল হচ্ছে সেই অবস্থা যখন নামাজে দাঁড়ালে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা বা কল্পনা আসে না। মনকে সর্বদা আল্লাহ্র প্রেমে বা ধ্যানে নিমগ্ন রাখা এবং প্রেম ও মহব্বতে ডুবে থাকা ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হয় না।”
হুজুরি দিল অর্জনের জন্য আল্লাহ্র প্রেরিত মহামানবের সহবতে গিয়ে এই পদ্ধতিগুলো শিখে নিতে হয়। নিজে নিজে চেষ্টা করে এ পদ্ধতি শিখা সম্ভব নয়। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত নবি-রাসুল, অলী-আল্লাহ্গণ এসেছেন তাঁদের সবার প্রতি আল্লাহ্র নির্দেশ ছিল- মানুষকে আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে আল্লাহ্র নির্দেশমত ধর্ম পালন করানো।
যাঁদের সাথে আল্লাহর যোগাযোগ আছে তাঁদের গোলামি করে নামাজ কায়েম করার পদ্ধতি শিখতে পারলে নামাজে মি‘রাজ বা আল্লাহ্র দিদার লাভ করা সম্ভব হবে। আল্লাহর মহান বন্ধু, মহান সংস্কারক, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের সুমহান শিক্ষা গ্রহণ করে একজন মানুষ আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা লাভ করে হুজুরি দিলে নামাজ কায়েম করত প্রকৃত আশেকে রাসুল হয়ে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে ।


পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেনÑ “অবশ্যই আল্লাহ্ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন। তিনি আল্লাহ্র আয়াত তাদের পাঠ করে শুনান, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত; যদিও তারা পূর্বে প্রকাশ্য গোমরাহিতে ছিল।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৬৪) আল্লাহ্র পরিচয় লাভ করে তার উপর পূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ্র বান্দা বলে গণ্য হয় এবং প্রকৃত মু’মিন হয়। এ অবস্থায় আল্লাহ্র নির্দেশে পরিচালিত হয়ে মানুষ যে কাজসমূহ করে এটিই ইবাদত বলে গণ্য হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- হযরত ঈসা (আ.) সম্প্রদায়কে বলেছিলেন “তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং আমার অনুসরণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ই আমার প্রতিপালক তোমাদেরও প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদত করো এটি হলো সরল সঠিক পথ।” (সূরা আঝ ঝুখরুফ ৪৩: আয়াত ৬৩ ও ৬৪)
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য মানুষকে নবুয়তের যুগে নবি-রাসুল এবং নবুয়ত পরবর্তী বেলাতের যুগে যুগের ইমাম মোজাদ্দেদ ও আওলিয়ায়ে কেরামের আনুগত্য স্বীকার করতে হয়। অর্থাৎ সমকালীন যুগের মহামানবের তাওয়াজ্জোহ নিয়ে আত্মার কুরিপুসমূহ দূর করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন “হে মু’মিনগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসুলের ও আনুগত্য করো তাঁদের তোমাদের মধ্যে যাঁরা (আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগ করে) ফয়সালা দিতে পারেন। (সূরা আন নিসা ৪: আয়াত ৫৯) নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে মানুষ যখন নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক অলী-আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে এবং মহামানবের তাওয়াজ্জোহ নিয়ে আত্মার কুরিপুসমূহ দূর করতে সক্ষম হয়, তখনই মানুষের মানবিক গুণগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠে। সাধনার এ পথ ধরেই মানুষ আল্লাহর পরিচয় লাভ করে। এ স্তরে উন্নীত মানুষকে সকল কাজেই আল্লাহর ইচ্ছায় পরিচালিত হতে হয়। আর তখন তার যাবতীয় কর্মই ইবাদত বলে গণ্য হবে।


হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “মু’মিন ব্যক্তি নামাজে তার প্রতিপালকের সাথে নামাজে কথোপকথন করে থাকেন।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা নামাজ কায়েম করতে বলেছেন। কায়েম অর্থ প্রতিষ্ঠা করা। নামাজ কায়েম করা বলতে বুঝায়- আল্লাহর স্মরণ ও সংযোগকে চিরস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন- “অবশ্যই মু’মিনগণ সফলকাম হয়েছে। যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র, যারা অনর্থক বিষয় থেকে দূরে থাকে।” (সূরা আন মু’মিনুন ২৩: আয়াত ১-৩) রাব্বুল আলামিনের স্মরণ এবং সংযোগ চিরস্থায়ী করার জন্য নামাজের বিধান দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- “দুর্ভোগ সেই কঠিন হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য, যাদের ক্বালব আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল। আর তারাই রয়েছে সুষ্পষ্ট গোমরাহিতে।” (সূরা যুমার ৩৯: আয়াত ২২) নামাজ সঠিক এবং নির্ভুলভাবে আদায় করতে হলে ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি করা শর্ত। ক্বালব পরিশুদ্ধ না হলে কোনো ইবাদত মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। মহান আল্লাহ্ যুগে যুগে মানবজাতিকে সঠিক পথের সন্ধান এবং ইবাদত বন্দেগি করার জন্য মহামানবদেরকে পাঠিয়েছেন। তাঁরা এসে মানুষকে আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য সঠিক দিক নিদের্শনা দিয়েছেন তাঁদের শিক্ষা অনুসরণ করে মানুষ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলো পরিশুদ্ধভাবে আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- “আমি তোমাদের (ক্বালবের ৭ম স্তর) নাফসির মোকামে বিরাজ করি, তবুও কি তোমরা দেখ না?” (সূরা আয যারিয়াত ৫১: আয়াত ২১)
অনেক সময় দেখা যায় মুসুল্লি কত রাকাত নামাজ পড়েছে, তাও মনে থাকে না। শয়তানের হাত থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর দিদার লাভ করার বিধান রয়েছে। হযরত রাসুল (সা.)-এর সহবতে গিয়ে সাহাবায়ে আজমাইন যখন নামাজ পড়তেন তখন তাদের নামাজে হুজুরি হতো ।


হযরত রাসুল (সা.)-এর পরে আর কোনো নবি-রাসুল পৃথিবীতে আসবেন না। যাঁরা হযরত রাসুল (সা.)-এর উত্তরসূরি তাঁদের সিনা ব সিনা হয়ে নুরে মোহাম্মদীর নুর কেয়ামত পর্যন্ত মুক্তিকামী মানুষের হেদায়তের জন্য বিদ্যমান থাকবে। এ নুর হযরত আদম (আ.)-এর পৃষ্ঠদেশে নুরে মোহাম্মদী ছিল। এ নুরের বদৌলতে নবিগণ হেদায়েতের আলো দিয়ে জগত আলোকিত করেছেন। বেলায়েতের যুগে আওলিয়ায়ে কেরামের নুরে হেদায়েত কেয়ামত পর্যন্ত জগদ্বাসীর মুক্তির অসিলা হিসেবে চলমান থাকবে ।
আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান এই সুমহান শিক্ষা দিয়ে আমাদের মতো পাপি-তাপিদেরকে পরিশুদ্ধ ইবাদত করার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর কেবলাকে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনিও প্রতিনিয়ত হযরত রাসুল (সা.)-এর সেই শিক্ষা মানুষকে দিয়ে যাচ্ছেন।
পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা, আমরা যেন বর্তমান মোহাম্মদী ইসলামের কর্ণধার ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর কেবলার শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করে মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করতে পারি, আল্লাহ্ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।
[লেখক: ইসলামি গবেষক]

সম্পর্কিত পোস্ট