Cancel Preloader

প্রচণ্ড ঝড় থেকে ট্রলারটি রক্ষা পেল


শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু)
এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামিন। আর মানুষ হলো তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাইতো মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়। দয়াময় আল্লাহ্ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতির নিকট স্বীয় পরিচয় তুলে ধরার জন্য নবুয়তের যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। নবুয়তের যুগের পরিসমাপ্তির পর এরই ধারাবাহিকতায় একই উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ পাক বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্ প্রেরণ করছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “আমার সৃষ্টির মাঝে একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা মানুষকে সৎপথ দেখায় ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে।” (সূরা আ‘রাফ ৭: আয়াত ১৮১)


মহান আল্লাহর এই শাশ্বত চিরন্তন বাণী হতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সমগ্র মানবজাতির মাঝে দুটি সম্প্রদায় বিদ্যমান। একটি হলো হেদায়েতকারী, আর অপরটি হলো হেদায়েত প্রার্থী। যাঁরা হেদায়েতকারীরূপে জগতে আবির্ভূত হন, তাঁরাই হলেন মোর্শেদ তথা নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্। নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ মানবকুলে জন্মগ্রহণ করলেও তারা সাধারণ মানুষ নন। তারা জ্যোতির্ময় আল্লাহর নুরময় সত্তাকে নিজ হৃদয়ে ধারণ করেন বিধায় তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমতা, পরাক্রমশীলতা ও প্রভুত্বের বিকাশ ঘটে এবং অলৌকিকত্ব প্রকাশ পায়।
নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণের মাধ্যমে যে সকল অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল তাকে মু‘জিজা বলা হয়, আর বেলায়েতের যুগে আওলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনাকে কারামত বলা হয়। মহান সংস্কারক যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের কাছে এসে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ বালা মুছিবতে পড়ে প্রতিনিয়ত মহান মোর্শেদের দয়া ও সাহায্য লাভ করেছেন। মোর্শেদের অসিলায় অসংখ্য মানুষ মহান আল্লাহ্ দয়া করে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। তেমনি আশেকে রাসুল শামীম-এর ট্রলারটি ঝড় বিক্ষুব্ধ নদীতে কীভাবে রক্ষা পেল, সেই ঘটনা এখানে উপস্থাপন করা হলো-


আশেকে রাসুল শামীম আহমেদ কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত হোমনা থানার সাজলিজি গ্রামে বসবাস করেন। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তার নিজের একটি ট্রলার ছিল। চার বছর পূর্বের ঘটনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় খরমপুরে একটি মাজার শরীফ রয়েছে, যাকে কেল্লাবাবার দরবার শরীফ বলে। একদা খরমপুর কেল্লাবাবার দরবার শরীফে বাৎসরিক ওরশে যোগদানের জন্য তাঁর ভক্তগণ আশেকে রাসুল শামীম ভাইয়ের ট্রলারসহ আরো অনেকগুলি ট্রলার ভাড়া করেন। তারা সবাই জানতো শামীম আহমেদ দেওয়ানবাগী হুজুরের মুরিদ সন্তান। নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রীসহ আশেকে রাসুল শামীম রওয়ানা দেন। তার ট্রলারে ধারণ ক্ষমতা ছিল ২২ জন। কিন্তু সেখানে তিনিসহ যাত্রী সংখ্যা ছিল ১৯ জন। ফলে যাত্রার সাথে সাথে ট্রলারটি খুব ভালোভাবে পানির সাথে তাল মিলিয়ে চলা শুরু করলো। উল্লেখ্য যে, সেখানে অনেক ট্রলার ব্যবসায়ী ছিল। ব্যবসায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকার কারণে মানুষের মনে হিংসার উদ্রেগ হয়। অপরদিকে অন্যান্য ট্রলারের মাঝিরা বলে দেওয়ানবাগীর নায়ে উঠছো ডুবে মারা যাবে, আর নিস্তার নেই। তাদের এ ধরনের কথায় আশেকে রাসুল শামীম খুবই মর্মাহত হন। তিনি মোর্শেদের কথা স্মরণ করতে থাকেন, যার কারণে মোর্শেদের প্রেমে তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠে। আশেকে রাসুল শামীমের ট্রলারটি তিতাস নদীর উপর দিয়ে যাচ্ছিল। ট্রলারটি নদীর মাঝ পথ দিয়ে অতিক্রান্ত হওয়ার সময় হঠাৎ আকাশের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মেঘে চারিদিক কালো হয়ে আসে এবং প্রচণ্ড বাতাস বইতে শুরু করে। তখন তিনি বাঁশবাজার নামক একটি স্থানে পৌঁছান। যেটি একটি স্বনামধন্য বাজার হিসেবে পরিচিত। তখনও প্রচণ্ড বাতাস এবং আকাশের গর্জন হচ্ছিল। যাত্রীদেরকে কীভাবে আশেকে রাসুল শামীম গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাবেন সেই চিন্তায় তিনি বিভোর হয়ে গেলেন।
বাঁশবাজারে থামানোর পর তিনি ট্রলার থেকে নিচে নেমে আসেন এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে ট্রলারটি রেখে সেখানে নেমে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষ করে তিনি দুচোখ বন্ধ করেন এবং আপন মোর্শেদের কাছে আজিজি করতে থাকেন। তিনি মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজানকে বলতে থাকেন- সবাই বলছে যাত্রীরা সব দেওয়ানবাগীর নৌকায় উঠেছে। কেউ তাকে বলে না শামীমের নৌকায় উঠেছে। সবাই বলে দেওয়ানবাগীর নৌকায় উঠছো ডুবে মারা যাবে। এই বলে তিনি রোনাজারি করতে থাকেন। এমতাবস্থায়, দয়াল মোর্শেদ কেবলাজান রূহানিতে তার সামনে হাজির হন। মহান মোর্শেদের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারকের আলোয় শামীম ভাইয়ের অন্তর আলোকিত হয়ে যায়। মহান মোর্শেদ দয়ার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি তাকে বললেন, তোমার ট্রলারের সামনের মাথা নদীর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেল। তোমার কোনো ভয় নেই। আমি তো আছি। তাকে দরূদ শরীফ পড়তে বললেন।
মোর্শেদের পরামর্শ অনুযায়ী আশেকে রাসুল শামীম তার ট্রলারের সামনের মাথা নদীর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেন। তিনি দেখেন, মোর্শেদের দয়ায় সাথে সাথে তার ট্রলারটি পানি থেকে দেড় হাত উপরে উঠে যায়। যেখানে আগে একটু বাতাসেই ট্রলারটি ডুবার উপক্রম হয়েছিল। ১৯ জন যাত্রীকে তখন বোঝা মনে হচ্ছিল, সেখানে কোনো সমস্যা মনে হচ্ছিল না। তিনি পুনরায় নদীর মাঝখান দিয়ে চলতে শুরু করলেন। এদিকে বাতাসের বেগও বাড়তে ছিল। শামীম আহমেদ একটু ভয় পেলেন। তিনি পুনরায় মোর্শেদের কাছে আজিজি করতে থাকলেন এবং মোর্শেদের নির্দেশ অনুসারে দরূদ শরীফ পাঠ করতে লাগলেন। তিনি পুনরায় চোখ বন্ধ করলেন এবং খেয়াল করে দেখতে পেলেন, দয়াল বাবাজানের হাত মোবারকের উপরে তার ট্রলারটি রয়েছে। যার ফলে আশেকে রাসুল শামীমের ভয় সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে যায়। যেখানে আকাশের পরিস্থিতি দেখে অন্যান্য ট্রলাররা নদীর পাড় ঘেষে যাচ্ছে, সেখানে আশেকে রাসুল শামীমের ট্রলারটি দয়াল বাবাজানের দয়ায় তিনি নিশ্চিন্তে নদীর মাঝ পথ দিয়ে খুব দ্রুত বেগে ট্রলার নিয়ে অগ্রগামী হন। যার ফলে তিনি অন্যান্য ট্রলার থেকে ৩০ মিনিট পূর্বে খরমপুরে কেল্লাবাবার দরবারে যাত্রীদেরকে নিয়ে পৌছান। এই রকম একটি দিনে যেখানে ঝড় বাতাস বহমান, সেখানে অন্যান্য ট্রলার থেকে আগে পৌঁছে যান এবং নদীর মাঝ বরাবর চলে আসা দেখে সেখানকার যাত্রীরাও অবাক হয়ে যান। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান যে, যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব তা তারাও অকপটে স্বীকার করে নেন। পরবর্তীতে মহান মোর্শেদের কাছে আশেকে রাসুল শামীম নিজে এসে ঘটনার বর্নণা দেন।

সম্পর্কিত পোস্ট