Cancel Preloader

মানবতার কবি শেখ সাদি (রহ.)

ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান
পর্ব-০৩
মানবতার কবি শেখ সাদি (রহ.)-এর নৈতিক শিক্ষা ও মানবিকতা বোধ সম্পন্ন গল্পগুলোর এক সময় যথেষ্ট আবেদন ছিল বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে। বর্তমান বিশ্বজুড়েই নৈতিকতার মানদণ্ড ঠিক আগের মতো নেই। শুদ্ধ চিত্ত, শুদ্ধ চিন্তা, পরিপূর্ণ সততা এসব এখন মানব চরিত্রের জন্য আর অত্যাবশ্যকীয় গুণ বা বৈশিষ্ট্য হিসাবে যেন বিবেচিত নয়। অন্য সব মূল্যবোধের মতোই নৈতিক মূল্যবোধেও অবক্ষয় এসেছে।


ছোটোবেলায় শেখ সাদি (রহ.)-এর সেই পোশাকের গল্পটা এখনও মনে পড়ে। গল্পটি ছিল- শেখ সাদি (রহ.) আমন্ত্রিত হয়ে বাদশাহর দরবারে যাবার সময় পথে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন। তখন তাঁর পরনে ছিল অত্যন্ত সাধারণ পোশাক। তাই আশ্রয়দাতা তাঁকে তেমন ভালোভাবে সমাদর করলেন না। শেখ সাদি (রহ.) বিদায় নিয়ে বাদশাহর দরবারে যান এবং সেখানে কিছুদিন কাটানোর পর আবার বাড়ির পথ ধরেন। পথে রাত ঘনিয়ে এলে তিনি আবারও সেই ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন। এবারে অবশ্য তাঁর পরনে ছিল অত্যন্ত মূল্যবান এবং ঝলমলে অভিজাত পোশাক। সুতরাং আশ্রয়দাতা এবার খুব ভালো ভালো দামি খাবার-দাবারের আয়োজন করলেন সাদি (রহ.)-কে আপ্যায়ন করার জন্য। খাবার সময় শেখ সাদি (রহ.) করলেন অদ্ভুত কাজ। তিনি দামি দামি খাবারগুলো নিজের পোশাকের পকেটে পুরতে শুরু করলেন। এই দেখে ধনাঢ্য আশ্রয়দাতা খুবই অবাক হয়ে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। শেখ সাদি (রহ.) বললেন, আগেরবার আমি এতসব দামি দামি খাবার পাইনি, কিন্তু এবার পেয়েছি আমার দামি পোশাকের কারণে। সুতরাং খাবারগুলো পোশাকেরই প্রাপ্য। আশ্রয়দাতা নিজের ভুল বুঝতে পারলেন এবং শেখ সাদি (রহ.)-এর কাছে নিজের আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। এই গল্পের মূল বাণী হচ্ছে- মানুষকে মানুষ হিসাবেই মর্যাদা দিতে হবে। তার অর্থসম্পদ বা পোশাক-আশাক দেখে নয়। তাই তো এখনও বিশ্বের সর্বত্র শেখ সাদি (রহ.)-এর কদর আছে মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষের কাছে, আছে তার প্রাসঙ্গিকতা।


প্রাসঙ্গিকতা যে আছে এর প্রমাণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে বারাক ওবামা যখন নওরোজে (ইরানি নববর্ষে) ইরানবাসীকে শুভেচ্ছা জানান তখন তিনি শেখ সাদি (রহ.)-এর কবিতাই বেছে নেন নিজের ভাব প্রকাশের জন্য। ২০০৯ সালের ২০ই মার্চ নওরোজের শুভেচ্ছা বার্তায় বারাক ওবামা উদ্ধৃত করেন সাদির বিখ্যাত রচনা ‘বনি আদম’-এর প্রথম দুটি চরণ,
‘আদমসন্তান পরস্পর একই দেহের অঙ্গ
সৃষ্টির উৎসে তাদের উপাদান যে অভিন্ন।
বিশ্বের সমস্ত মানব সম্প্রদায়কে এভাবে একই দেহের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এমনকি আধুনিক কালের মানবাধিকারের অতিউৎসাহী প্রবক্তাদের কারও রচনায় সেটা দেখা যায় না। এই প্রবন্ধে শেখ সাদি (রহ.)-এর বিখ্যাত ‘বনি আদম’ (Sons of Adam or Human beings) কবিতাটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা খুবই জরুরি যে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়ও মানবতার কবি শেখ সাদি (রহ.)-এর নৈতিক ও মানবিকতার শিক্ষা সম্পর্কে কোনো আদর্শ শিক্ষা দেওয়া হয় না। যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নৈতিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সত্যিকার এবং পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
মানব সমাজকে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্তিময় করার আদর্শ ও শিক্ষা শেখ সাদি (রহ.) প্রচার করে গেছেন তাঁর অমর সাহিত্যে। মানুষের চেতনাকে উজ্জীবিত করে সুন্দর চরিত্র ও আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সাহায্য করেছেন। তাঁর রচিত গল্পগুলোতে তিনি প্রধানত শাসকদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। বিভিন্ন রাজা-বাদশাহর জীবনী তুলে ধরেছেন নানা কাহিনীর অবতারণা করে। এগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকারান্তরে শাসকশ্রেণিকে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করা এবং মন্দ কাজে বিরত থাকার তাগিদ দেওয়া। মানুষ যখন জীবন ও জগতের রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারে তখন নিজে থেকেই সুপথের অনুসারী হয়। তার কথা ও কাজে মানবীয় গুণাবলি প্রকাশ পায়। শেখ সাদি (রহ.) মানুষের ওই অন্তর্চক্ষু খুলে দেওয়ার কাজটি করেছেন। যারা ক্ষমতার মোহে অন্ধ তাদের চোখ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন শেখ সাদি (রহ.)। যাতে মহাক্ষমতাধর ব্যক্তিরাও নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী না ভাবে।

জাতিসংঘে শেখ সাদি (রহ.)-এর ‘বনি আদম’ কবিতা
শেখ সাদি (রহ.)-এর ‘বনি আদম’ কবিতাটি একটি গালিচায় লিপিবদ্ধ হয়ে আদর্শবাণী হিসেবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সভাকক্ষে শোভিত হয়েছে। শেখ সাদি (রহ.) ফারসি ভাষায় সুন্দর বাচনভঙ্গিতে ‘বনি আদম’ কবিতাটি রচনা করেছিলেন:

বনি আদম
‘বনি আদম আযায়ে ইয়েক দিগারান্দ
কে দার আফারিনেশ জে ইয়েক গওহারান্দ
ছো ওজভি বে দর্দ আভারাদ রুজেগার
দেগার ওজভা রা না মানাদ ঘারার
তু কাজ মেহনত-এ দিগারান বিঘাম-ই
না-শায়েদ কে নামাত নাহান্দ আদমি।’
কবিতাটির ফারসি থেকে ইংরেজি আক্ষরিক অনুবাদ করেন অ্যাডওয়ার্ড ইস্টউইক, যার বাংলায় অনুবাদ দাঁড়ায়-
‘আদম সন্তানরা একে অন্যের অংশ
তাদেরকে একই উৎস থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে
যদি কখনো একটি অঙ্গে আঘাত লাগে
(তখন) অন্যান্য অঙ্গ শান্ত থাকতে পারে না।
আপনি যদি অপরের দুঃখে সাড়া না দেন
তাহলে আপনি মানুষ নামের যোগ্য নন।’
এই কবিতাটি রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর একটি হাদিস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি লিখেছিলেন। হাদিসটি ছিল- ‘বিশ্বাসীদের পরস্পরের প্রতি মমত্ববোধ, করুণা এবং সমবেদনার দৃষ্টান্ত হচ্ছে একটি মানবদেহের মতো। যখন দেহের একটি অঙ্গে বেদনা হয়, অবশিষ্ট শরীর নিদ্রাহীনতা ও জ্বরাক্রান্ত হয়।’


শেখ সাদি (রহ.)-এর ‘বনি আদম’ কবিতাটি মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণার অন্তর্নিহিত অর্থের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়। ১০ই ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে প্যারিসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে উল্লিখিত ঘোষণার প্রথম অনুচ্ছেদটি এভাবে লেখা ছিল: “All human beings are born free and equal in dignity and rights. They are endowed with reason and conscience and should act towards one another in a spirit of brotherhood.” অর্থাৎ- সকল মানুষ সমঅধিকার এবং মর্যাদাসহ মুক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে। সকলেই জন্মসূত্রে বিচারবুদ্ধি এবং বিবেকের অধিকারী হয়। প্রত্যেকেই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধের মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিত।


উল্লেখ্য, এই ভাষ্যটি সম্পাদনা করেছিলেন প্রখ্যাত লেখক এবং ইরানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি ফারুকি। পরবর্তীকালে এই কবিতাটিই একটি গালিচায় বুনে ২০০৫ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের দেওয়ালে স্থাপন করা হয় এবং ২০১০ সালে ইরানের ১০০,০০০ রিয়ালের নোটের উল্টোপিঠেও ছাপা রয়েছে।
জাতিসংঘের প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন একবার তেহরানে বলেছিলেন: “জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ঢোকার মুখের দেওয়ালে একটি জমকালো গালিচা রয়েছে-আমার মনে হয় ইরানের জনগণের কাছ থেকে উপহার পাওয়া এই গালিচাটি এ যাবৎ জাতিসংঘের সংগ্রহে সবচেয়ে বড়ো গালিচা।

‘বনি আদম’ কবিতা রচনার প্রেক্ষাপট
শেখ সাদি (রহ.)-এর কবিতার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ‘গুলিস্তাঁ’ কাব্যগ্রন্থের ‘বনি আদম’ কবিতাটি। এই কবিতায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে মানুষের মধ্যেকার সকল বাধা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কবিতাটি শেখ সাদি (রহ.)-এর গুলিস্তাঁ কাব্যগ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের দশম কাহিনির একটি অংশ। কাব্যগ্রন্থটি ১২৫৮ সালে সম্পূর্ণ হয়েছিল। এই পর্বের শিরোনাম ছিল ‘রাজার আচরণের বিষয়’।
‘গুলিস্তাঁ’ গ্রন্থে কবিতাটি রচনার প্রেক্ষাপট এভাবে শেখ সাদি (রহ.)-এর ভাষায় উদ্ধৃত করা হয়েছে: সিরিয়ার রাজধানী দামেশকের জামে মসজিদে হযরত ইয়াইয়া (আ.)-এর রওজা শরীফে জিয়ারতে ছিলাম। ঘটনাচক্রে আরবের তামিম গোত্রের এক বাদশাহ, যে জুলুম ও স্বৈরাচারের জন্য কুখ্যাত ছিল, সেখানে জিয়ারত করতে আসে। সে সেখানে নামাজ আদায় করে। তারপর দোয়া করে আর নিজের অভাব অভিযোগের কথা জানিয়ে মোনাজাত করে-
‘ফকির ও ধনী এ দরবারের ভিখারি সবাই
যারা অধিক ধনী অধিক ভিখারি তারাই।’
এ সময় সে আমাকে বলল, ‘যেহেতু দরবেশদের মনোবল মজবুত এবং সততার ওপর তাদের জীবন চলে, সেহেতু আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। কারণ, শক্ত একজন শত্রুর পক্ষ হতে পেরেশানিতে আছি।’ আমি তাকে বললাম, ‘আপনি দুর্বল প্রজাদের প্রতি দয়া দেখাবেন, তাহলে সবল দুশমনের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকবেন।’ ‘সবল বাহু আর শক্তিশালী হাতের পাঞ্জায়
নিরীহ দুর্বলের হাতভাঙা বড় অন্যায়।
পতিতের প্রতি দয়া দেখায় না, সে কি ভয় পায় না
নিজে পতিত হলে কেউ যে এগিয়ে আসবে না?
মন্দের দানা বুনে যে দিন কাটে ভালোর আশায়
ভ্রান্ত চিন্তায় ঘুরপাক খায় বেভুল বাতিল কল্পনায়।
কানের তুলা বের করো, শোধ করো মানুষের প্রাপ্য
যদি আজ না দাও, সেদিন ফেরত দিবে অবশ্যই।
আদম সন্তান পরস্পরে এক দেহের অঙ্গ
সৃষ্টির উৎসে তাদের উপাদান যে অভিন্ন
কালের দুর্বিপাকে ব্যথিত হয় যদি একটি অঙ্গ
স্বস্তিতে থাকতে পারে না, বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
অন্যদের দুঃখ-কষ্টে তুমি যে নির্বিকার
তোমাকে মানুষ বলা অনুচিত, অবিচার।’ (গুলিস্তান, ১ম অধ্যায়, হেকায়াত নং ১০)
জাতিসংঘ প্রসঙ্গ
১৯২৮ থেকে ১৯৩০ সময়টিতে জাতিসংঘের পূর্বসূরি লিগ অব নেশনে ইরানের প্রথম প্রতিনিধি ছিলেন মোহাম্মদ আলি ফারুকি। ১৯২৯ সালে প্যারিসে একটি বক্তৃতায় ফারুকি বর্ণনা করেন যে, সেপ্টেম্বর ১৯২৮, জেনেভায় লিগ অব নেশনের একটি ভোজসভায় আলবেনিয়ার প্রতিনিধি প্রস্তাব করেন যে, শেখ সাদির ‘বনি আদম’ কবিতাটি এই সংগঠনের একটি চমৎকার আদর্শ বাণী হতে পারে। আলবেনিয়া তখন অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।


সম্ভবত তাঁর প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি, তবে অনেক বছর যাবৎ ইরানে একটা জনশ্রুতি প্রচলিত ছিল যে, শেখ সাদি (রহ.)-এর কবিতাটি জাতিসংঘের সদরদপ্তরের প্রধান ফটকে খোদাই করা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ জাভেদ জরিফ জেনেভা এবং নিউইয়র্ক-এই দুই জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এ ধরনের খোদাই করা কোনো লিপিফলক দেখতে পাননি।
যা-ই হোক এই জাভেদ জরিফের সময়েই ইসফাহানের একটি বিখ্যাত গালিচা তৈরির কারখানার মালিক মোহাম্মদ সেইরাফিয়ান জানালেন যে, তাঁর কাছে পাঁচ মিটার লম্বা এবং পাঁচ মিটার প্রস্থের একটি গালিচা রয়েছে, যার ওপর সোনার হরফে শেখ সাদি (রহ.)-এর ঐ কবিতাটি বোনা হয়েছিল এবং তিনি এই গালিচাটি জাতিসংঘকে উপহার দিতে চান। ইরানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত, মোহাম্মদ আলি জরিফের মতে, এই গালিচাটিই ২০০৫ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সভাকক্ষের প্রবেশদ্বারে টাঙানো হয়েছে।


আজকের দিনে কালো সাদা, ধর্ম, বংশ ও জাত-পাতের বিভিন্নতায় মানুষ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। শেখ সাদি (রহ.) কবিতার মাধ্যমে মানব জাতির সামনে যে সত্যটি উপস্থাপন করেছে, তা হলো সব মানুষ এক আদমের সন্তান, সৃষ্টির মূলে সবার অভিন্ন উপাদান। কাজেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক হওয়া চাই একটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের অন্তর্গত সম্পর্কের মতো। দেহের কোনো অঙ্গে আঘাত হলে অন্য অঙ্গগুলো যেমন স্বস্তিতে থাকতে পারে না, তেমনি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে কোনো আদম সন্তান ব্যথায় কাতর হলে কোনো মানুষ তার প্রতি সমব্যথী না হয়ে পারে না। এই দায়িত্ব যে ভুলে যায়, অন্যের দুঃখ-দুর্দশা দেখেও যে নির্বিকার থাকে, সে মানুষ নয়, শেখ সাদি (রহ.)-এর ভাষায় তাকে ‘মানুষ’ নামে আখ্যায়িত করা অন্যায়। শেখ সাদির এই বিশ^জনীন বাণীতে সাহিত্যের অলঙ্কারে ইসলামের শাশ^ত শিক্ষাই প্রস্ফুটিত হয়েছে।


রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর বাণীতে উচ্চারিত একটি হাদিসের আবেদন ব্যক্ত হয়েছে শেখ সাদি (রহ.)-এর রচনায়। আল্লাহ্র নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তুমি মু’মিনদেরকে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতায় দেখবে যে, তারা একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ যখন ব্যথায় কাতর হয়, তখন অন্য অঙ্গগুলো জ¦র ও রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে তার প্রতি সমবেদনা জানায়।” (বুখারী শরীফ ৫৬৬৫ এবং মুসলিম শরীফ ২৫৮৬)
শেখ সাদি (রহ.) তাঁর গল্প ও কবিতাগুলো সর্বজনীন মানবিকতার কারণেই আজ প্রায় ৮০০ বছর পরও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই মহান কবির রচনা পাঠ করে অনুপ্রাণিত হয় এবং নিজের জীবনে তা অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।
তথ্য সূত্র:
১. মুজতাহিদ ফারুকী, স্মরণে মহান কবি শেখ সাদি, এপ্রিল ২০, ২০২০, নিউজ লেটার, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
২. কাজী আখতারউদ্দিন, জাতিসংঘে শেখ সাদির কবিতা, দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ৩১, ২০২০
৩. ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী, মানবতার কবি শেখ সাদি, নিউজ লেটার, ৩৯তম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, মার্চ-এপ্রিল ২০১৭, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস, ঢাকা থেকে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ৩৭
৪. গুলিস্তান, ১.১০; শেখ সাদি (রহ.)
৫.

https://en.wikipedia.org/wiki/Bani_Adam


৬.

https://www.un.org/ungifts/persian-carpet


[লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক]

সম্পর্কিত পোস্ট