
এই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক দয়াময় রাব্বুল আলামিন। সেই মহান রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি জগতে যত গাছ আছে সব গাছ যদি কলম হয়, আর যত নদী ও সাগরের পানি রয়েছে সব পানি যদি কালি হয় এবং সেই কলম ও কালি দিয়ে সারা জীবন ধরে দয়াময় রাব্বুল আলামিনের প্রশংসার কথা লিখতে থাকি, লিখতে লিখতে কলম ক্ষয় হয়ে যাবে, কালি ফুরিয়ে যাবে, তবুও লেখা শেষ হবে না। মহান রাব্বুল আলামিন যুগে যুগে মানুষকে হেদায়েত করার জন্য তাঁর মনোনীত মহামানব প্রেরণ করে থাকেন। প্রত্যেক মহামানবকে রাব্বুল আলামিন স্বীয় গুণে গুণান্বিত করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন, আর এই কারণে আল্লাহ্র মনোনীত মহামানব তথা আল্লাহ্্র অলীগণের কাছে সাহায্য ভিক্ষা চাইলে, তাঁরা যে কোনো বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। পরম পবিত্র রাহমানুর রাহিম একবিংশ শতাব্দীর পথভোলা মানুষের পরিত্রাণের জন্য মহা নেয়ামত হিসেবে জগতে প্রেরণ করেছেন সিরাজাম মুনিরের ধারক ও বাহক, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্্লাজানকে। এই পরশ পাথরের সান্নিধ্যে এসে মানুষ মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি বিভিন্ন বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত থেকে উদ্ধার পাচ্ছেন। মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের অসিলায় অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী আশেকে রাসুলদের জীবনে প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতামতকে ভুল প্রমাণ করে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) দয়াল বাবাজানের দয়ার বদৌলতে কীভাবে মুমূর্ষু নবজাতক রাফা নবজীবন ফিরে পেল, সেই ঘটনাটি রাফার পিতার বর্ণনায় উপস্থাপন করা হলো-
আমি আশেকে রাসুল মুহাম্মদ ওমর ফারুক। পেশায় সাংবাদিক। চ্যানেল আই নিউজে কর্মরত আছি। ২০১৩ সালের ৬ জুলাই রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত আদ দ্বীন হাসপাতালে আমার স্ত্রী এক পুত্র সন্তান প্রসব করেন। দয়াল বাবাজানের অপার দয়াতে সে সুস্থই ছিল। ৮ জুলাই রাত ৮টার দিকে হঠাৎ করে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আমি তাকে সাথে সাথে হাসপাতালের এনআইসিইউ বিভাগে নিয়ে যাই। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমাকে বলেন, আমার ছেলের শ্বাসকষ্টসহ আরো কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাকে এখনি এনআইসিইউ বিভাগে ভর্তি করতে হবে এবং যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম ভাবে অক্সিজেন দিতে হবে। কিন্তু তাদের এখানে এনআইসিইউ বিভাগে কোনো সিট খালি নেই, অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতে হবে। আমি তখন দিশেহারা হয়ে পড়ি। কী করব বুঝতে না পেরে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের সেজ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. ফজল-এ-খোদা (মা. আ.) হুজুরকে ফোন করি। তিনি তখন দয়াল বাবাজানের পরামর্শে আমাকে বললেন, আমার ছেলেকে এনআইসিইউতে ভর্তি করার জন্য। ড. সেজো সাহেবজাদা হুজুরের নির্দেশে আমি তখন আদ দ্বীন হাসপাতাল থেকে আমার ছেলেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ অ্যাম্বুলেন্সে করে মহাখালিস্থ আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমার ছেলেকে তাদের হাসপাতালের এনআইসিইউ বিভাগে ভর্তি করে নেন। এনআইসিইউ বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মনির হোসেন আমার ছেলের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাকে বলেন, আপনার ছেলের ফুসফুসের সমস্যার কারণে সে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না। আমরা তাকে কৃত্রিমভাবে যন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেন দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করব এবং পাশাপাশি ঔষধ দিবো, যেন সে দ্রুত সেরে উঠে। তবে তার অবস্থা বেশি ভালো না। আমি এমন পরিস্থিতিতে একদম ভেঙ্গে পড়লাম। মনে হচ্ছিল আমি কোনো সাগরের মাঝে পড়ে গেছি। তখনই আমার মনে পড়লো এই বিপদের সাগর থেকে উদ্ধার পেতে হলে আমার দয়াল মোর্শেদ, আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) দয়াল বাবাজানের দয়া ব্যতীত অন্য কোনো পথ নেই। হাসপাতাল থেকে আমি বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে আমার মহান মোর্শেদের দরবারে ছুটে আসলাম। এসে দয়াল বাবাজানের কদম মোবারক জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম- “ওগো দয়াল বাবাজান! আপনি ছাড়া তো আমার এই জগতে দয়া করার আর কেউ নেই। আপনি দয়া করে আমাকে এই মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করুন। আমার ছেলেকে সুস্থ করে দিন।” বাবাজান আমাকে কান্না থামাতে বললেন এবং আমার ছেলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি দয়াল বাবাজানকে বিস্তারিত জানালাম। তিনি আমাকে মানত করে বেশি করে ‘দরূদে মাহদি’ ‘পড়তে বললেন এবং আজিজি করতে বললেন, যেন আমার ছেলে সুস্থ হয়ে যায়। দয়াল বাবাজানের সাথে সাক্ষাত শেষ করে আমি পুনরায় হাসপাতালে ফিরে গেলাম। কিন্তু সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমাকে জানালো যে, আমার ছেলের অবস্থা ভালো নয়। তারা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে জন্মের সময়ই তার হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস পরিপূর্ণ ভাবে তৈরি হয়নি। তাই তারা কৃত্রিমভাবে আমার ছেলের শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন আমার ছেলে সুস্থ হবে কি হবে না বা কতদিনে সুস্থ হবে, সেটা বলা সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের এইকথা শুনে আমি একেবারে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লাম। এদিকে দয়াল বাবাজানের নির্দেশ অনুযায়ী আমি মানত করি এবং মোরাকাবা করে অঝোর নয়নে কেঁদে কেঁদে দয়াল বাবাজানের অসিলা ধরে দয়াময় রাব্বুল আলামিনের সাহায্য কামনা করতে থাকি। এরই মাঝে দুই সপ্তাহ কেটে যায়। কিন্তু আমার ছেলের কোনো প্রকার শারীরিক উন্নতির খবর চিকিৎসকরা দিতে পারছে না। এতে আমি এবং আমার স্ত্রী উভয়ই তখন দিশেহারা হয়ে পড়ি। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। আমি হাসপাতাল থেকে রাস্তায় বের হয়ে আনমনে হাঁটছিলাম, আর দয়াল বাবাজানের কাছে আজিজি করছিলাম। হঠাৎ আমার দৃষ্টি চলে যায় আকাশের পূর্ণিমার চাঁদে। পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখে আমি যেন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে করজোড়ে দয়াল বাবাজানের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারকের দিকে তাকিয়ে অঝোর নয়নে কেঁদে কেঁদে বলতে থাকিÑ “ওগো দয়াল দরদি বাবাজান! আজ আমি তো চরম অসহায়, কিন্তু আপনি তো পরম দয়ালু। আজ আমার এই কঠিন বিপদের সময় আপনি যদি সাহায্য না করেন, আমি কোথায় যাব! আমার তো জগতে আপনি ছাড়া আর কোনো দরদি নেই।”
পরদিন বিকেলে দয়াল বাবাজানের সাথে সাক্ষাত করার জন্য আবার দরবারে গেলাম। দয়াল বাবাজানের কদম মোবারক ধরে কিছু না বলেই কাঁদতে থাকলাম। এমতাবস্থায় দয়াল বাবাজান আমাকে বললেন, “ফারুক! বিপদের সময় ধৈর্য ধরতে হয়। বিপদে ধের্য হারালে বিপদ দূর হয় না।” দয়াল বাবাজানের এই বাণী মোবারক শোনার পর আমি যেন নিজেকে হালকা অনুভব করতে থাকি। আমার মনে হতে থাকে কোনো একটা ভারী বোঝা আমার উপর থেকে নেমে গেছে। হলোও তাই। দয়াল বাবাজানের অসিলায় মহান রাব্বুল আলামিনের করুণা ধারা আমার উপর বর্ষিত হতে লাগলো। আমি আবার হাসপাতালে চলে আসি। আসার পর শুনতে পাই এনআইসিইউ বিভাগের চিকিৎসকরা আমাকে খুঁজছেন। আমি তাদের সাথে দেখা করলে তারা বলেন, “আপনার ছেলের অবস্থা হঠাৎ করে আজকে বিকেল থেকে অলৌকিকভাবে উন্নতির দিকে। সে স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। তাকে আর কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে না। বিষয়টা সত্যিই অবাক করার মতো। এই ধরনের রোগীর হঠাৎ এমন পরিবর্তন অলৌকিক ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা আশা করছি কালকের মধ্যেই আপনার ছেলেকে কেবিনে সিফট করতে পারবো।” দয়াল বাবাজানের সাথে দেখা করে আসার ৭ দিনের মধ্যে আমার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায় এবং টানা ২২ দিন হাসপাতালে থাকার পর আমরা বাসায় ফিরে আসি। বাসায় যাওয়ার আগে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে দেওয়ানবাগ শরীফে দয়াল বাবাজানের কদম মোবারকে যাই। দয়াল বাবাজান আমার ছেলেকে দেখে খুশি হলেন এবং তার নাম রাখলেন আশেকে রাসুল গোলাম মাহ্্দী, আর সেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. ফজল-এ-খোদা (মা. আ.) আমার ছেলের ডাক নাম রাখলেন রাফা।
মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা, ওগো দয়াময়, পরম করুণাময় রাব্বুল আলামিন। কল্যাণ অকল্যাণের মালিক তো আপনিই। আপনার ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছুই নেই। আমরা আপনার মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের অসিলা ধরে আপনার কাছে ফরিয়াদ জানাই, যেমনি করে আপনি দয়াল বাবাজানের অসিলায় আমার মৃত প্রায় সন্তানকে সুস্থ করে নবজীবন দিয়েছেন; তেমনি করে আমাদেরকে দয়া ভিক্ষা দিন, আমরা যেন আজীবন আপনার প্রিয় বন্ধুর কদম মোবারকে থেকে গোলামি করে যেতে পারি। আমিন।